করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্যাপক ধসের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনীতির দেশ ভারতে। এতোদিন দেশটিতে করোনা সংক্রমণ ছিল স্বাভাবিক পর্যায়ে। তবে সম্প্রতি দিন দিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। এতে দেশটির অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রয়টার্স।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে ভারতের বৃহৎ অর্থনৈতিক রাজ্য মুম্বাইয়ের অন্তত ছয় লাখ বাসিন্দা সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। ফলে এসব শহরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণীর মাঝে করোনাভাইরাস কতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে তা বোঝা যায়। সরকারি তথ্য বলছে, মুম্বাইয়ের ১ লাখ ৬৪ হাজার বস্তিবাসীকে কনটাইনমেন্ট জোনে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। দরিদ্রতা সত্ত্বেও তাদের প্রতি কোন প্রকার ছাড় দেয়া হচ্ছে না। মুম্বাইয়ের উপ-মিউনিসিপ্যাল কমিশনার সুরেশ কাকানি বলেন, ‘বিল্ডিংগুলো থেকেই বেশি আক্রান্তের খবর আসছে। সে তুলনায় বস্তিগুলো থেকে তেমন কভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার খবর আসেনি।’
তথাকথিত ভোক্তাশ্রেণীর এমন আক্রান্ত হওয়ার খবর উদ্বিগ্ন করছে অন্যদেরও। ফলে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ ভারতের অর্থনীতির ৬০ শতাংশই আসে ব্যক্তিগত ব্যয় থেকে। দেশটির বেসরকারি ব্যাংক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া কর্তৃক পরিচালিত ভোক্তাদের আস্থা জরিপে দেখা যায়, চাকরির বাজারে ক্রমেই হতাশা বাড়ছে। নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বর্তমান মহামারীর কেন্দ্রস্থল হিসেবে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সব চেষ্টাই করে যাচ্ছেন তারা।
সাবেক ব্যাংকার ও তহবিল ব্যবস্থাপক অজয় বাগ্গা বলেন, ‘সময়টা এমন যাচ্ছে যে লোকজন তাদের চারপাশে সম্ভাব্য সব ক্ষেত্র থেকে সাহায্য খুঁজছে। মানুষজনই হাসপাতালগুলোর শয্যা, অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে নানা তথ্য দিচ্ছে। ফলে বাজার বিশ্লেষণের জন্য ব্যবসায়ীদের আলোচনা আর নতুন কিছু নয়।
চলতি সপ্তাহে মুম্বাইয়ে ৯০ শতাংশের বেশি আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত ও উঁচু দালানগুলো থেকেই। অন্যদিকে মাত্র ১০ শতাংশ বা তারও কম আক্রান্তের খবর এসেছে অঞ্চলটির বস্তিগুলো থেকে। দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। দেশটির অন্যান্য শহরের বর্তমান অবস্থার চিত্র না পাওয়া গেলেও তাদের অবস্থাও অনেকটা এমন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ব্যাংকাররা টুইট করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য চিকিৎসা সাহায্য প্রত্যাশা করছেন। ধনীরা তাদের আশেপাশের সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে অনুরোধ করছেন। এসব ব্যক্তিই এতদিন অন্য নাগরিকদের তুলনায় যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধাভোগ ভোগ করে আসা সত্ত্বেও এখন হাসপাতালের শয্যা ও অক্সিজেনের জন্য অনুনয় করছেন।
কভিডের নতুন এ রূপের দ্বারা ধনীদের উল্লেখযোগ্য হারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন, প্রথম লকডাউনের সময় তারা সম্পূর্ণরূপে ঘরে অবস্থান করার ফলে সে সময় আক্রান্ত হয়নি। অন্যদিকে বস্তিবাসীরা প্রথমবার যথেষ্ট আক্রান্ত হয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে করা এক জরিপে দেখা যায়, মুম্বাইয়ের অন্তত অর্ধেক বস্তিবাসীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। ফলে তারা নতুন এ রূপের ক্ষেত্রে ধনীদের চেয়ে অনেকটা বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২
সংবাদ ডেস্ক
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্যাপক ধসের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনীতির দেশ ভারতে। এতোদিন দেশটিতে করোনা সংক্রমণ ছিল স্বাভাবিক পর্যায়ে। তবে সম্প্রতি দিন দিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। এতে দেশটির অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রয়টার্স।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে ভারতের বৃহৎ অর্থনৈতিক রাজ্য মুম্বাইয়ের অন্তত ছয় লাখ বাসিন্দা সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। ফলে এসব শহরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণীর মাঝে করোনাভাইরাস কতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে তা বোঝা যায়। সরকারি তথ্য বলছে, মুম্বাইয়ের ১ লাখ ৬৪ হাজার বস্তিবাসীকে কনটাইনমেন্ট জোনে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। দরিদ্রতা সত্ত্বেও তাদের প্রতি কোন প্রকার ছাড় দেয়া হচ্ছে না। মুম্বাইয়ের উপ-মিউনিসিপ্যাল কমিশনার সুরেশ কাকানি বলেন, ‘বিল্ডিংগুলো থেকেই বেশি আক্রান্তের খবর আসছে। সে তুলনায় বস্তিগুলো থেকে তেমন কভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার খবর আসেনি।’
তথাকথিত ভোক্তাশ্রেণীর এমন আক্রান্ত হওয়ার খবর উদ্বিগ্ন করছে অন্যদেরও। ফলে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ ভারতের অর্থনীতির ৬০ শতাংশই আসে ব্যক্তিগত ব্যয় থেকে। দেশটির বেসরকারি ব্যাংক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া কর্তৃক পরিচালিত ভোক্তাদের আস্থা জরিপে দেখা যায়, চাকরির বাজারে ক্রমেই হতাশা বাড়ছে। নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বর্তমান মহামারীর কেন্দ্রস্থল হিসেবে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সব চেষ্টাই করে যাচ্ছেন তারা।
সাবেক ব্যাংকার ও তহবিল ব্যবস্থাপক অজয় বাগ্গা বলেন, ‘সময়টা এমন যাচ্ছে যে লোকজন তাদের চারপাশে সম্ভাব্য সব ক্ষেত্র থেকে সাহায্য খুঁজছে। মানুষজনই হাসপাতালগুলোর শয্যা, অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে নানা তথ্য দিচ্ছে। ফলে বাজার বিশ্লেষণের জন্য ব্যবসায়ীদের আলোচনা আর নতুন কিছু নয়।
চলতি সপ্তাহে মুম্বাইয়ে ৯০ শতাংশের বেশি আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত ও উঁচু দালানগুলো থেকেই। অন্যদিকে মাত্র ১০ শতাংশ বা তারও কম আক্রান্তের খবর এসেছে অঞ্চলটির বস্তিগুলো থেকে। দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। দেশটির অন্যান্য শহরের বর্তমান অবস্থার চিত্র না পাওয়া গেলেও তাদের অবস্থাও অনেকটা এমন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ব্যাংকাররা টুইট করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য চিকিৎসা সাহায্য প্রত্যাশা করছেন। ধনীরা তাদের আশেপাশের সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে অনুরোধ করছেন। এসব ব্যক্তিই এতদিন অন্য নাগরিকদের তুলনায় যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধাভোগ ভোগ করে আসা সত্ত্বেও এখন হাসপাতালের শয্যা ও অক্সিজেনের জন্য অনুনয় করছেন।
কভিডের নতুন এ রূপের দ্বারা ধনীদের উল্লেখযোগ্য হারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন, প্রথম লকডাউনের সময় তারা সম্পূর্ণরূপে ঘরে অবস্থান করার ফলে সে সময় আক্রান্ত হয়নি। অন্যদিকে বস্তিবাসীরা প্রথমবার যথেষ্ট আক্রান্ত হয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে করা এক জরিপে দেখা যায়, মুম্বাইয়ের অন্তত অর্ধেক বস্তিবাসীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। ফলে তারা নতুন এ রূপের ক্ষেত্রে ধনীদের চেয়ে অনেকটা বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলে মনে করা হচ্ছে।