শ্রমজীবী নারীদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি

করোনাভাইরাসের এই সময়ে গার্মেন্টস শ্রমিক, গৃহশ্রমিকসহ সব শ্রমজীবী নারীর খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, এনজিও ঋণ মওকুফ ও মহাজনের সুদের কারবার বন্ধসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনটি আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানান।

তাদের অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, গার্মেন্টস ও গৃহকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে পরিবার পিছু পর্যাপ্ত খাবার ও পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ করা, সব নাগরিকের বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা, চিকিৎসা ও টিকা দেয়া ইত্যাদি।

মানববন্ধন থেকে বক্তারা বলেন, করোনাভাইরাস অতিমারি গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। দেশে ভাইরাস প্রতিরোধে সময়োপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। জনজীবনে খাদ্য-স্বাস্থ্য সুরক্ষা-নীতি নৈতিকতা- মানবিক মূল্যবোধ সব ক্ষেত্রেই ধস নেমেছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা এমন যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই তীব্র সংকট ঘনীভূত। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। জনমনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতা চরম রূপ নিয়েছে। বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

তারা আরও বলেন, সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, এ সময়ে আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। অন্যদিকে কোটিপতি বেড়েছে তিন হাজার ৪১২ জনেরও বেশি। ছাত্র-যুবকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পণ্যে পরিণত করার চলমান প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে মহামারী করোনাভাইরাস। আজ সবচেয়ে বড় ব্যবসা এবং দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্র এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান নেই। ফলে সাধারণ জনগণ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কোভিড-১৯ এর কারণে সব শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষের কাজের ক্ষেত্র একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

বক্তারা আরও বলেন, দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত গার্মেন্টসে লাখ লাখ নারী-পুরুষ কর্মরত। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। গার্মেন্টস খোলা রেখে তাদের মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। কাজ হারিয়ে গৃহকর্মীদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা নাজুক। কাজ না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন গ্রামীণ শ্রমজীবী নারীরা। বেঁচে থাকার জন্য তাদের ঘরে ন্যূনতম খাদ্য নেই। মাথার ওপর এনজিও ঋণের কিস্তি, মহাজনী সুদের চাপে মানুষ দিশেহারা। সহায়-সম্বলহীন রিক্ত নিঃস্ব মানুষের কবরই এখন একমাত্র ঠিকানা। তাই শ্রমজীবী মানুষদের বাঁচিয়ে রাখতে, জীবন-জীবিকা সচল রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি সীমা দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিনসহ সংগঠনের অন্যান্য কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২

শ্রমজীবী নারীদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

করোনাভাইরাসের এই সময়ে গার্মেন্টস শ্রমিক, গৃহশ্রমিকসহ সব শ্রমজীবী নারীর খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, এনজিও ঋণ মওকুফ ও মহাজনের সুদের কারবার বন্ধসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনটি আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানান।

তাদের অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, গার্মেন্টস ও গৃহকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে পরিবার পিছু পর্যাপ্ত খাবার ও পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ করা, সব নাগরিকের বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা, চিকিৎসা ও টিকা দেয়া ইত্যাদি।

মানববন্ধন থেকে বক্তারা বলেন, করোনাভাইরাস অতিমারি গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। দেশে ভাইরাস প্রতিরোধে সময়োপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। জনজীবনে খাদ্য-স্বাস্থ্য সুরক্ষা-নীতি নৈতিকতা- মানবিক মূল্যবোধ সব ক্ষেত্রেই ধস নেমেছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা এমন যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই তীব্র সংকট ঘনীভূত। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। জনমনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতা চরম রূপ নিয়েছে। বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

তারা আরও বলেন, সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, এ সময়ে আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। অন্যদিকে কোটিপতি বেড়েছে তিন হাজার ৪১২ জনেরও বেশি। ছাত্র-যুবকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পণ্যে পরিণত করার চলমান প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে মহামারী করোনাভাইরাস। আজ সবচেয়ে বড় ব্যবসা এবং দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্র এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান নেই। ফলে সাধারণ জনগণ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কোভিড-১৯ এর কারণে সব শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষের কাজের ক্ষেত্র একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

বক্তারা আরও বলেন, দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত গার্মেন্টসে লাখ লাখ নারী-পুরুষ কর্মরত। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। গার্মেন্টস খোলা রেখে তাদের মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। কাজ হারিয়ে গৃহকর্মীদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা নাজুক। কাজ না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন গ্রামীণ শ্রমজীবী নারীরা। বেঁচে থাকার জন্য তাদের ঘরে ন্যূনতম খাদ্য নেই। মাথার ওপর এনজিও ঋণের কিস্তি, মহাজনী সুদের চাপে মানুষ দিশেহারা। সহায়-সম্বলহীন রিক্ত নিঃস্ব মানুষের কবরই এখন একমাত্র ঠিকানা। তাই শ্রমজীবী মানুষদের বাঁচিয়ে রাখতে, জীবন-জীবিকা সচল রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি সীমা দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিনসহ সংগঠনের অন্যান্য কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।