রাতে লুট হচ্ছে মধুমতি নদীর বালু : ভাঙন আতঙ্কে ৩ গ্রাম

গোপালগঞ্জে মধুমতি এমবিআর চ্যানেল থেকে রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে বালু কেটে নেয়া হচ্ছে। মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের হিন্দু ও খ্রীস্টান অধ্যুষিত জলিরপাড়, বানিয়ারচার ও কলিগ্রাম থেকে একটি প্রভাবশালী চক্র বালু কেটে নিচ্ছে। রাত ১২ থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত মধুমতি এমবিআর চ্যানেলের ওই সব গ্রামে ড্রেজার বসিয়ে বালু কাটা হয়। এতে ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে ৩ গ্রামের বিভিন্œ স্থান। অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু কাটার ছবি ফেসবুকে আপ করার পর গত বৃহস্পতিবার মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে মধুমতি এমবিআর চ্যানেল থেকে বালু কাটা বন্ধে বৃহস্পতিবার রাত থেকে পাহারা বসানো হয়েছে। প্রভাবশালী বালু লুট চক্রের বিরুদ্ধে ৩ গ্রামের হিন্দু ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় তহসিল অফিস ম্যানেজ করে প্রভাবশালী মহলটি নদীর বালু লুট করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ৩ গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার নয়াকান্দি গ্রামের জমির শেখের ছেলে সাদ্দাম শেখের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী মহল প্রতি রাতেই ড্রেজার বসিয়ে কোন না কোন গ্রাম থেকে বালু কেটে নিচ্ছে। স্থানীয় জলিরপাড় তহসিল অফিস ম্যানেজ করে রাতে আধারে বালু লুট করা হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। রাতের পর রাত বালু কেটে নেয়া হলেও সেদিকে জলিরপাড় তহসিল অফিসের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অবৈধভাবে বালু কাটায় ৩ গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বালু কাটতে জলিরপাড়, বানিয়ারচর ও কলিগ্রামের কেউ বাঁধা দিলে প্রভাবশালী মহলটি তার ওপর অত্যাচর নির্যাতন করছে। ফলে ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। বালু বিক্রি করে প্রভাবশালী মহলটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এটিই এখন তাদের প্রধান ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। জলিরপাড় তহসিল অফিসের তহসিলদার রাকিব সরদার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে বালু কাটা বন্ধে মধুমতি এমবিআর ক্যানেলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গ্রাম পুলিশ ও তহসিল অফিসের লোকজনের সমন্বয়ে পাহারা বসানো হয়েছে। আমার ছত্র ছায়ায় এখানে বালু কাটা হচ্ছে না। স্থানীয়রা আমার বিরুদ্ধে যে, অভিযোগ এনেছে, তা সত্য নয়। গ্রামের লোকজন বালু কাটার ব্যাপার আমাকে কখনো জানায়নি। জানালে ব্যবস্থা নিতাম। আমার জানামতে গত ২ রাত বালু কেটে নেয়া হয়েছে। গত ৩ দিন আমি অসুস্থ ছিলাম। তাই অফিসে আসিনি। তাই বালু কাটার বিষয়টি আমি জানি না। উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বালু কাটার বিষয়টি জানতে পারি। পরে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে বালু কাটা রোধে পাহারা বসিয়েছি। সেই সাথে বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

অভিযুক্ত বালু ব্যবাসয়ী সাদ্দাম শেখ বলেন, আমি ৮ বছর ধরে বালুর ব্যবসা করছি। জলিরপাড়, টেকেরহাট ও গোপালগঞ্জের অন্তত ১০ জন এখানে বালুর ব্যবসা করেন। সুযোগ পেলেই প্রভাবশালীরা অনেককেই ম্যানেজ করে বালু কাটে কাচা টাকা হাতিয়ে নেন। ব্যবসায় আমার প্রতিপক্ষ আছে। তারা আমার বিরুদ্ধে বালু কাটার মিথ্যা অভিযোগ করতে পারে। রাতের অন্ধকারে বালু কাটা হচ্ছে। আমিই বালু কেটেছি, তার কি কোন প্রমান আছে ? থাকলে প্রশাসনকে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করতে অনুরোধ করছি। তখন বোঝা যাবে কারা এ জন্য তদবির করে। আর তখন এ ঘটনায় জড়িতদের নাম বেড়িয়ে আসবে।

সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২

রাতে লুট হচ্ছে মধুমতি নদীর বালু : ভাঙন আতঙ্কে ৩ গ্রাম

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জে মধুমতি এমবিআর চ্যানেল থেকে রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে বালু কেটে নেয়া হচ্ছে। মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের হিন্দু ও খ্রীস্টান অধ্যুষিত জলিরপাড়, বানিয়ারচার ও কলিগ্রাম থেকে একটি প্রভাবশালী চক্র বালু কেটে নিচ্ছে। রাত ১২ থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত মধুমতি এমবিআর চ্যানেলের ওই সব গ্রামে ড্রেজার বসিয়ে বালু কাটা হয়। এতে ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে ৩ গ্রামের বিভিন্œ স্থান। অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু কাটার ছবি ফেসবুকে আপ করার পর গত বৃহস্পতিবার মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে মধুমতি এমবিআর চ্যানেল থেকে বালু কাটা বন্ধে বৃহস্পতিবার রাত থেকে পাহারা বসানো হয়েছে। প্রভাবশালী বালু লুট চক্রের বিরুদ্ধে ৩ গ্রামের হিন্দু ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় তহসিল অফিস ম্যানেজ করে প্রভাবশালী মহলটি নদীর বালু লুট করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ৩ গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার নয়াকান্দি গ্রামের জমির শেখের ছেলে সাদ্দাম শেখের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী মহল প্রতি রাতেই ড্রেজার বসিয়ে কোন না কোন গ্রাম থেকে বালু কেটে নিচ্ছে। স্থানীয় জলিরপাড় তহসিল অফিস ম্যানেজ করে রাতে আধারে বালু লুট করা হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। রাতের পর রাত বালু কেটে নেয়া হলেও সেদিকে জলিরপাড় তহসিল অফিসের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অবৈধভাবে বালু কাটায় ৩ গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বালু কাটতে জলিরপাড়, বানিয়ারচর ও কলিগ্রামের কেউ বাঁধা দিলে প্রভাবশালী মহলটি তার ওপর অত্যাচর নির্যাতন করছে। ফলে ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। বালু বিক্রি করে প্রভাবশালী মহলটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এটিই এখন তাদের প্রধান ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। জলিরপাড় তহসিল অফিসের তহসিলদার রাকিব সরদার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে বালু কাটা বন্ধে মধুমতি এমবিআর ক্যানেলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গ্রাম পুলিশ ও তহসিল অফিসের লোকজনের সমন্বয়ে পাহারা বসানো হয়েছে। আমার ছত্র ছায়ায় এখানে বালু কাটা হচ্ছে না। স্থানীয়রা আমার বিরুদ্ধে যে, অভিযোগ এনেছে, তা সত্য নয়। গ্রামের লোকজন বালু কাটার ব্যাপার আমাকে কখনো জানায়নি। জানালে ব্যবস্থা নিতাম। আমার জানামতে গত ২ রাত বালু কেটে নেয়া হয়েছে। গত ৩ দিন আমি অসুস্থ ছিলাম। তাই অফিসে আসিনি। তাই বালু কাটার বিষয়টি আমি জানি না। উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বালু কাটার বিষয়টি জানতে পারি। পরে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে বালু কাটা রোধে পাহারা বসিয়েছি। সেই সাথে বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

অভিযুক্ত বালু ব্যবাসয়ী সাদ্দাম শেখ বলেন, আমি ৮ বছর ধরে বালুর ব্যবসা করছি। জলিরপাড়, টেকেরহাট ও গোপালগঞ্জের অন্তত ১০ জন এখানে বালুর ব্যবসা করেন। সুযোগ পেলেই প্রভাবশালীরা অনেককেই ম্যানেজ করে বালু কাটে কাচা টাকা হাতিয়ে নেন। ব্যবসায় আমার প্রতিপক্ষ আছে। তারা আমার বিরুদ্ধে বালু কাটার মিথ্যা অভিযোগ করতে পারে। রাতের অন্ধকারে বালু কাটা হচ্ছে। আমিই বালু কেটেছি, তার কি কোন প্রমান আছে ? থাকলে প্রশাসনকে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করতে অনুরোধ করছি। তখন বোঝা যাবে কারা এ জন্য তদবির করে। আর তখন এ ঘটনায় জড়িতদের নাম বেড়িয়ে আসবে।