পাশে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ

শিকল বন্দী আল্পনা পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতা

শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গুরুচরণ দুধনই গ্রামের আল্পনা (২০) প্রায় ১২ বছর ধরে শিকলে বন্দী শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তার পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে মানসিক ভারসাম্যহীন আল্পনাকে দেখতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জয়নাল আবেদীন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন আল্পনার বাড়িতে যান। আল্পনা গুরুচরণ দুধনই গ্রামের দরিদ্র কৃষক ছিদ্দিক আলীর মেয়ে। এ সময় ইউএনও রুবেল মাহমুদ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিন আল্পনার পরিবারের সাথে কথা বলেন এবং তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।

খোঁজ খবর শেষে উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ এ কর্মকর্তাগণ আল্পনাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা ও আল্পনার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড প্রদানের আশ্বাস দেন। উপজেলা প্রশাসন ও আল্পনার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছয় ভাইবোনের মধ্যে আল্পনা তৃতীয়। আল্পনার জন্ম ২০০১ সালে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০০৮ সালে ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে যায় আল্পনা। সেখানে হঠাৎ করেই জ্বর ওঠে তার। এরপর থেকেই দেখা দেয় মানসিক সমস্যা। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হলে কিছুদিন একটু সুস্থ থাকার পর আবার আগের মতো অসুস্থ হয়। ২০০৯ সাল থেকে তাকে শিকলবন্দী করে রেখেছে তার পরিবার। বাবা ছিদ্দিক আলী বলেন, মেয়েটার চিকিৎসা করাতে আমার ১০ শতাংশ জমি, পাঁচটা গরু বিক্রি করেছি। ২০ হাজার টাকা ঋণও করছি। ইচ্ছা থাকার পরেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় সে বাড়ি ছেড়ে এদিক-সেদিকে চলে যায়। এ জন্যই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন আল্পনা ‘সিজোফ্রেনিয়ায়’ ভুগছে। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রদান করা হবে। এছাড়া পরিবার চাইলে তাকে (আল্পনা) উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র স্থানান্তর করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে ইউএনও রুবেল মাহমুদ বলেন, দরিদ্র পরিবারটিকে ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে একটি দুর্যোগ সহনীয় ঘর প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু ওই পরিবারে মানসিক ভারসাম্যহীন একটি মেয়ে আছে, এটি তার জানা ছিল না। তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি জানতে পেরেছেন তিনি। এখন শিকল বন্দী আল্পনার চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা ও একটি প্রতিবন্দী ভাতার কার্ড প্রদান করা হবে। এছাড়াও সরকারের অন্যান্য সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২

পাশে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ

শিকল বন্দী আল্পনা পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতা

প্রতিনিধি, ঝিনাইগাতী (শেরপুর)

image

শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গুরুচরণ দুধনই গ্রামের আল্পনা (২০) প্রায় ১২ বছর ধরে শিকলে বন্দী শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তার পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে মানসিক ভারসাম্যহীন আল্পনাকে দেখতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জয়নাল আবেদীন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন আল্পনার বাড়িতে যান। আল্পনা গুরুচরণ দুধনই গ্রামের দরিদ্র কৃষক ছিদ্দিক আলীর মেয়ে। এ সময় ইউএনও রুবেল মাহমুদ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিন আল্পনার পরিবারের সাথে কথা বলেন এবং তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।

খোঁজ খবর শেষে উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ এ কর্মকর্তাগণ আল্পনাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা ও আল্পনার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড প্রদানের আশ্বাস দেন। উপজেলা প্রশাসন ও আল্পনার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছয় ভাইবোনের মধ্যে আল্পনা তৃতীয়। আল্পনার জন্ম ২০০১ সালে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০০৮ সালে ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে যায় আল্পনা। সেখানে হঠাৎ করেই জ্বর ওঠে তার। এরপর থেকেই দেখা দেয় মানসিক সমস্যা। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হলে কিছুদিন একটু সুস্থ থাকার পর আবার আগের মতো অসুস্থ হয়। ২০০৯ সাল থেকে তাকে শিকলবন্দী করে রেখেছে তার পরিবার। বাবা ছিদ্দিক আলী বলেন, মেয়েটার চিকিৎসা করাতে আমার ১০ শতাংশ জমি, পাঁচটা গরু বিক্রি করেছি। ২০ হাজার টাকা ঋণও করছি। ইচ্ছা থাকার পরেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় সে বাড়ি ছেড়ে এদিক-সেদিকে চলে যায়। এ জন্যই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন আল্পনা ‘সিজোফ্রেনিয়ায়’ ভুগছে। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রদান করা হবে। এছাড়া পরিবার চাইলে তাকে (আল্পনা) উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র স্থানান্তর করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে ইউএনও রুবেল মাহমুদ বলেন, দরিদ্র পরিবারটিকে ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে একটি দুর্যোগ সহনীয় ঘর প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু ওই পরিবারে মানসিক ভারসাম্যহীন একটি মেয়ে আছে, এটি তার জানা ছিল না। তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি জানতে পেরেছেন তিনি। এখন শিকল বন্দী আল্পনার চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা ও একটি প্রতিবন্দী ভাতার কার্ড প্রদান করা হবে। এছাড়াও সরকারের অন্যান্য সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হবে।