ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ কেউ আসতে পারবে না

ভারতে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ। আজ থেকে ১৪ দিন সীমান্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এর আগে থেকেই দেশটির সঙ্গে আকাশপথে চলাচল বন্ধ হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে শুধু সীমান্ত বন্ধ করলেই চলবে না, ভারত থেকে পণ্য নিয়ে যেসব ট্রাক আসে, তার সঙ্গে ট্রাক-হেলপারসহ যে লোকজন আসেন তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা এবং করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে সুফল পাওয়া যাবে না।

সীমান্ত বন্ধ রাখার কথা জানিয়ে রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেউই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞা ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আগামীকাল থেকে ১৪ দিনের জন্য স্থলবন্দর বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন চলবে।’

রোববার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভারতে করোনার নতুন রূপ শনাক্ত হওয়ায় দেশটির সঙ্গে জরুরি পণ্য পরিবহন ছাড়া সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে সামস জানিয়েছেন, গতকাল এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি বলেন, সীমান্ত বন্ধ থাকলেও সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। এছাড়া যেসব বাংলাদেশির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে কোভিড টেস্ট ও কলকাতা মিশনের ছাড়পত্র সাপেক্ষে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ থাকবে। ওইসব বাংলাদেশির দেশে প্রবেশের পর বাধ্যতামূলক ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।’

সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় ছিল উল্লেখ করে করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সল সংবাদকে বলেন, সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত অবশ্যই ভালো হয়েছে। তবে এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়। তা হলো আমরা জানি সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে শত শত ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ট্রাকের সঙ্গে আসে চালক, হেলাপারসহ কয়েকজন স্টাফ। সীমান্ত বন্ধ হলেও তারা কিন্তু বাংলাদেশে প্রবেশ করে করোনা ছাড়ানোর একটি কারণ হতে পারেন। এজন্য ট্রাকে সঙ্গে আসা লোকজনকে অবশ্যই কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে। শুধু কোয়ারেন্টিনে রাখলেই চলবে না, তাদের করোনা পরীক্ষারও ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষা কারো করোনা পজিটিভ পাওয়া গেলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশনের রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, পাশাপাশি চিকিৎসাও দিতে হবে। এটা করা সম্ভব হলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে সীমান্ত বন্ধ করা হচ্ছে তার সুফল আমরা পাবো। তা না হলে পুরো কার্যক্রমটিই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।

এদিকে ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ভারতকে বেসামাল অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে অক্সিজেনের চরম সংকট। দেশটিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৭৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩১১ জনে।

সর্বশেষ হিসাবে ভারতে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার মানুষ। গত ১০ দিনে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে দুই হাজারের বেশি।

এমন পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত আপাতত বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

মার্চের শেষে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশে বিধিনিষেধ অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকলেও কয়েক দিন ধরে সংক্রমণের হার কিছুটা কমছে। মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে, যদিও তা এখনও উদ্বেগজনক।

সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ কেউ আসতে পারবে না

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ভারতে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ। আজ থেকে ১৪ দিন সীমান্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এর আগে থেকেই দেশটির সঙ্গে আকাশপথে চলাচল বন্ধ হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে শুধু সীমান্ত বন্ধ করলেই চলবে না, ভারত থেকে পণ্য নিয়ে যেসব ট্রাক আসে, তার সঙ্গে ট্রাক-হেলপারসহ যে লোকজন আসেন তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা এবং করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে সুফল পাওয়া যাবে না।

সীমান্ত বন্ধ রাখার কথা জানিয়ে রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেউই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞা ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আগামীকাল থেকে ১৪ দিনের জন্য স্থলবন্দর বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন চলবে।’

রোববার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভারতে করোনার নতুন রূপ শনাক্ত হওয়ায় দেশটির সঙ্গে জরুরি পণ্য পরিবহন ছাড়া সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে সামস জানিয়েছেন, গতকাল এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি বলেন, সীমান্ত বন্ধ থাকলেও সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। এছাড়া যেসব বাংলাদেশির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে কোভিড টেস্ট ও কলকাতা মিশনের ছাড়পত্র সাপেক্ষে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ থাকবে। ওইসব বাংলাদেশির দেশে প্রবেশের পর বাধ্যতামূলক ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।’

সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় ছিল উল্লেখ করে করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সল সংবাদকে বলেন, সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত অবশ্যই ভালো হয়েছে। তবে এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়। তা হলো আমরা জানি সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে শত শত ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ট্রাকের সঙ্গে আসে চালক, হেলাপারসহ কয়েকজন স্টাফ। সীমান্ত বন্ধ হলেও তারা কিন্তু বাংলাদেশে প্রবেশ করে করোনা ছাড়ানোর একটি কারণ হতে পারেন। এজন্য ট্রাকে সঙ্গে আসা লোকজনকে অবশ্যই কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে। শুধু কোয়ারেন্টিনে রাখলেই চলবে না, তাদের করোনা পরীক্ষারও ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষা কারো করোনা পজিটিভ পাওয়া গেলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশনের রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, পাশাপাশি চিকিৎসাও দিতে হবে। এটা করা সম্ভব হলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে সীমান্ত বন্ধ করা হচ্ছে তার সুফল আমরা পাবো। তা না হলে পুরো কার্যক্রমটিই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।

এদিকে ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ভারতকে বেসামাল অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে অক্সিজেনের চরম সংকট। দেশটিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৭৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩১১ জনে।

সর্বশেষ হিসাবে ভারতে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার মানুষ। গত ১০ দিনে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে দুই হাজারের বেশি।

এমন পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত আপাতত বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

মার্চের শেষে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশে বিধিনিষেধ অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকলেও কয়েক দিন ধরে সংক্রমণের হার কিছুটা কমছে। মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে, যদিও তা এখনও উদ্বেগজনক।