করোনা সংক্রমণে বেহাল ভারত হাসপাতালে মৃতের সারি

গতকাল ভারতে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৯১ জনের। প্রতিদিনের সংক্রমণের হিসাবে টানা চতুর্থদিন বিশ্বরেকর্ড। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে টানা নবম দিনেও বিশ্বে সর্বোচ্চ তারা। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৭৬৭ জনের। ১৩০ কোটির ওপর মানুষের দেশ ভারতে গত তিন দিনে করোনোয় আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। এ পর্যন্ত ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৬৯ লাখ। যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩১১ জনের।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে ভারতের জনজীবন বিপর্যস্ত ও হাসপাতালগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের শয্যা, ওষুধ, অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেটর সবকিছুতে টান পড়েছে।

মর্গে, শ্মশানে, সমাধির সামনে মৃতদেহের সারি।

সরকারিভাবে গণহারে শেষকৃত্যের আয়োজন করতে হচ্ছে অস্থায়ী ব্যবস্থার অধীনে। মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন দেশটি কোভিড-১৯ মহামারীর শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

তবে গতকাল সংক্রমণের যে চিত্র তা একদম ভিন্ন কথা বলছে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হিসাবে ভারতে একদিনের সংক্রমণ এখন বিশ্বের যেকোন দেশের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি।

এদিকে জার্মানি এবং দক্ষিণ কোরিয়া গতকাল থেকে ভারতের জন্য নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দিয়েছে। ভারতে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বি.১.৬১৭-এর বিস্তারে বিশ্বব্যাপী মহামারী নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, করোনার এই নতুন ধরনের বেলায় শরীরের রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজে আসে না বা তা এড়িয়ে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম।

জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পাহন টুইট করেছেন, ‘আমাদের টিকা কার্যক্রম যাতে হুমকিতে না পড়ে, সেজন্য ভারতে ভ্রমণ অবশ্যই উল্লেখযোগ্যভাবে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।’ গতকাল রাত থেকে কেবলমাত্র যেসব জার্মান নাগরিকের শরীরের কোভিড-১৯ থাকবে না তাদেরই প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে এবং তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের জন্য আলাদা থাকতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সন ইয়ং-রে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, শুধু সীমিত সংখ্যক দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক বহনকারী বিমান চলাচলে অনুমতি দেয়া হবে তাদের দেশে।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় দফা বিস্তার শুরু হয় মার্চ মাসের মাঝামাঝি, যখন দেশটির টিকা কর্মসূচি সবে চলতে শুরু করেছে।

গত শনিবার তাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তারা এ পর্যন্ত ১৪ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দিয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেয় ২৪ লাখ।

সিএনএন তথ্য অনুসারে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পরে বিশ্বে সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি করোনার টিকা দিলেও মাথাপিছু টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে ভারত অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে।

সোমবার সরকারিভাবে ঘোষণা দেয়া হয় ১ মে থেকে ১৮ বছর থেকে ওপরে সবাইকে টিকা দেয়া শুরু হবে। এছাড়া বেসরকারিভাবেও টিকাদান করা যাবে। রোববার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রেডিওতে দেয়া তার মাসিক বক্তৃতায় টিকা দেয়ার ওপর জোর দেন।

দ্বিতীয় দফায় কোভিড-১৯ বিস্তারকে ‘ঝড়’ বলে উল্লেখ করে বলেন, এটি গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি এমন সময়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি যখন কোভিড-১৯ আমাদের ধৈর্য এবং বেদনা সহ্য করার ক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখছে। আমাদের অনেক প্রিয়জন আমাদের অসময়ে ফেলে চলে গেছেন। প্রথম দফায় করোনা মহামারী সফলভাবে মোকাবিলা করার পর, জাতির মনোবল উঁচুতে ছিল। আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম তবে এই ঝড় জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

সিএনএন-এর খবরের বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকারের মন্ত্রী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারির পর থেকে দ্বিতীয় দফা বিস্তার বিষয়ে সতর্ক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা বলে আসছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়ে তেমন গা করেনি। পরিস্থিতি এই পর্যায়ে নেমে আসার আগ পর্যন্ত গত কয়েক সপ্তাহ মোদিও পরিস্থিতি নিয়ে নীরব ছিলেন।

সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২

করোনা সংক্রমণে বেহাল ভারত হাসপাতালে মৃতের সারি

সংবাদ ডেস্ক

image

ভারতে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি, অক্সিজেন সংকট, মৃত্যুর মিছিল থামানো যাচ্ছে না। হাসপাতালগুলোর বেহাল অবস্থা -ছবি সংগৃহীত

গতকাল ভারতে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৯১ জনের। প্রতিদিনের সংক্রমণের হিসাবে টানা চতুর্থদিন বিশ্বরেকর্ড। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে টানা নবম দিনেও বিশ্বে সর্বোচ্চ তারা। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৭৬৭ জনের। ১৩০ কোটির ওপর মানুষের দেশ ভারতে গত তিন দিনে করোনোয় আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। এ পর্যন্ত ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৬৯ লাখ। যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩১১ জনের।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে ভারতের জনজীবন বিপর্যস্ত ও হাসপাতালগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের শয্যা, ওষুধ, অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেটর সবকিছুতে টান পড়েছে।

মর্গে, শ্মশানে, সমাধির সামনে মৃতদেহের সারি।

সরকারিভাবে গণহারে শেষকৃত্যের আয়োজন করতে হচ্ছে অস্থায়ী ব্যবস্থার অধীনে। মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন দেশটি কোভিড-১৯ মহামারীর শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

তবে গতকাল সংক্রমণের যে চিত্র তা একদম ভিন্ন কথা বলছে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হিসাবে ভারতে একদিনের সংক্রমণ এখন বিশ্বের যেকোন দেশের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি।

এদিকে জার্মানি এবং দক্ষিণ কোরিয়া গতকাল থেকে ভারতের জন্য নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দিয়েছে। ভারতে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বি.১.৬১৭-এর বিস্তারে বিশ্বব্যাপী মহামারী নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, করোনার এই নতুন ধরনের বেলায় শরীরের রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজে আসে না বা তা এড়িয়ে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম।

জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পাহন টুইট করেছেন, ‘আমাদের টিকা কার্যক্রম যাতে হুমকিতে না পড়ে, সেজন্য ভারতে ভ্রমণ অবশ্যই উল্লেখযোগ্যভাবে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।’ গতকাল রাত থেকে কেবলমাত্র যেসব জার্মান নাগরিকের শরীরের কোভিড-১৯ থাকবে না তাদেরই প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে এবং তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের জন্য আলাদা থাকতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সন ইয়ং-রে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, শুধু সীমিত সংখ্যক দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক বহনকারী বিমান চলাচলে অনুমতি দেয়া হবে তাদের দেশে।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় দফা বিস্তার শুরু হয় মার্চ মাসের মাঝামাঝি, যখন দেশটির টিকা কর্মসূচি সবে চলতে শুরু করেছে।

গত শনিবার তাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তারা এ পর্যন্ত ১৪ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দিয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেয় ২৪ লাখ।

সিএনএন তথ্য অনুসারে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পরে বিশ্বে সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি করোনার টিকা দিলেও মাথাপিছু টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে ভারত অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে।

সোমবার সরকারিভাবে ঘোষণা দেয়া হয় ১ মে থেকে ১৮ বছর থেকে ওপরে সবাইকে টিকা দেয়া শুরু হবে। এছাড়া বেসরকারিভাবেও টিকাদান করা যাবে। রোববার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রেডিওতে দেয়া তার মাসিক বক্তৃতায় টিকা দেয়ার ওপর জোর দেন।

দ্বিতীয় দফায় কোভিড-১৯ বিস্তারকে ‘ঝড়’ বলে উল্লেখ করে বলেন, এটি গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি এমন সময়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি যখন কোভিড-১৯ আমাদের ধৈর্য এবং বেদনা সহ্য করার ক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখছে। আমাদের অনেক প্রিয়জন আমাদের অসময়ে ফেলে চলে গেছেন। প্রথম দফায় করোনা মহামারী সফলভাবে মোকাবিলা করার পর, জাতির মনোবল উঁচুতে ছিল। আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম তবে এই ঝড় জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

সিএনএন-এর খবরের বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকারের মন্ত্রী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারির পর থেকে দ্বিতীয় দফা বিস্তার বিষয়ে সতর্ক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা বলে আসছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়ে তেমন গা করেনি। পরিস্থিতি এই পর্যায়ে নেমে আসার আগ পর্যন্ত গত কয়েক সপ্তাহ মোদিও পরিস্থিতি নিয়ে নীরব ছিলেন।