ড্র হওয়া ক্যান্ডি টেস্টেও আছে অনেক স্বস্তি

স্কোর : বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫৪১/৭ ডি.

ও ১০০/২, শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ৬৪৮/৮ ডি.

শ্রীলঙ্কা সফরে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ ড্র করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচের চতুর্থ দিনের খেলাই টেস্ট ড্রয়ের ইংগিত দিয়েছিল। বৃষ্টির কারণে ৩৫ ওভার খেলা বাকি থাকতেই ড্র মেনে নেয় দুই দল। বৃষ্টির আগে বাংলাদেশের দুটো উইকেট পতনের পর আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট চালিয়ে তামিম ইকবাল হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অপরাজিত থাকার আগে ভেঙেছেন ১৩১ বছরের পুরানো একটি রেকর্ড। প্রথম দুইদিনে শান্ত- মোমিনুলের দুটো সেঞ্চুরির ইনিংস অনেকদিন ধরে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে ছড়িয়ে দিয়েছিল স্বস্তির সুবাতাস। আবার বিদেশের মাটিতে ৯টি টেস্টে পরাজয়ের পর এই ড্র’টা নিঃসন্দেহে অনেক তৃপ্তির। এর মধ্য দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে প্রথম পয়েন্টও পাওয়া হয়ে গেছে টাইগারদের।

পাল্লেকেলের ব্যাটিং স্বর্গে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সাত উইকেটে তোলা ৫৪১ রানের জবাবে অধিনায়ক দ্বিমুথ করুণারতেœর ডাবল সেঞ্চুরি ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সেঞ্চুরিতে আট উইকেটে ৬৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংসের ইতি টানে শ্রীলঙ্কা। ১০৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দল শুরুতেই হারায় সাইফ হাসান (১) ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্তকে। পরের সময়টা একান্তই নিজের করে নিয়েছেন প্রথম ইনিংসে ৯০ রানে করে বাজে শটে আউট হওয়া বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। বৃষ্টির কারণে কয়েক দফা বন্ধ থাকার পর ৩৫ ওভার বাকি থাকতেই দুই দল ড্র মেনে নেয়ার সময়টাতে তামিম ১০ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে মাত্র ৫৬ বলে ব্যক্তিগত হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ১৩১ বছরের একটা রেকর্ড ভেঙে দেন তামিম। তিনি টেস্ট ক্যারিয়ারের ত্রিশতম অর্ধশত রানে পৌঁছার সময়ে বাংলাদেশের স্কোর দুই উইকেটে ৫২ রান। অর্থাৎ তার পার্টনারের অবদান মাত্র দুই। ১৩১ বছর আগে ১৮৯০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলীয় ৫৫ রানের সময় হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এই রেকর্ড গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান জন জেমস লয়েন্স। অর্থাৎ লয়েন্সের হাফ সেঞ্চুরির সময়ে পার্টনারের (বা পার্টনারদের সমিম্মিলিত) অবদান ৫ রান। ২০১৪ সালে লয়েন্সের রেকর্ডটি স্পর্শ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৫ বলে গেইল হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার সময়ে ক্যারিবিয়ানদের স্কোর ছিল ৫৫ রান। রোববার ওই দু’জনকে টপকে এই রেকর্ড নিজের করে নিলেন তামিম ইকবাল।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর আগে ১৫৪ রানে পঞ্চম দিন শুরু করা ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে ১৬৬ রানে বিদায় করেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিমুথ করুনারতেœর সঙ্গে তার বিশাল জুটি থামে ৩৪৫ রানে। তাসকিন নিজের পরের ওভারেই করুনারতেœকে ফেরান ২৪৪ রানে। মধ্যাহ্ন ভোজনের বিরতির সময়ে ১০৭ রানে এগিয়ে থেকে ৮ উইকেটে ৬৪৮ রানে প্রথম ইনিংসের ইতি টানে শ্রীলঙ্কা।

এরপর তামিমের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই হয়েছিল। সুরঙ্গা লাকমলের প্রথম দুই ওভারে দুটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। চতুর্থ ওভারেই অফ স্পিনার ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে বল তুলে দেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক করুণারতেœ। ধনঞ্জয়ার প্রথম বলটাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কা হাঁকানোর পর তৃতীয় বলটাকে মাটি কামড়ে সীমানা ছাড়া করেন তামিম।

কিন্তু অপরপ্রান্তে দুই ব্যাটসম্যান ক্রিজছাড়া হয়ে যান লাকমলের বলে। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানের সাইফ হাসান ফেরেন এক রানে। লাকমলের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি।

লাকমলের পরের ওভারেই অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রানের পর এবার তার প্রাপ্তি শূন্য।

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসাবে এক ইনিংসে সেঞ্চুরি ও আরেক ইনিংসে ‘ডাক’ মারার তালিকায় নিজের নামটা লেখালেন শান্ত। তার আগে সর্বশেষ সাকিব আল হাসান নিউজিল্যান্ড সফরে ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলার পরের ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হয়ে যান।

২৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর তামিম-মোমিনুল জুটি সতর্কতার সঙ্গে এগোনোর কৌশল নিলেও তা তামিমের রেকর্ড গড়ার পথে বাধা হয়ে দাড়ায়নি।

হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ধনঞ্জয়াকে টানা দুটি বাউন্ডারির পরের ওভারে ছক্কা মারেন হাঁকান তামিম। চা বিরতির আগে আবার সাবধানী ব্যাটিংয়ে পার করেন সময়। চা বিরতির পর বৃষ্টিতে আর খেলা হয়নি। মোমিনুলের সঙ্গে তামিমের জুটি তখন অবিচ্ছিন্ন ৭৩ রানের। বাংলাদেশ অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ৮৬ বলে ২৩ রান করে।

সবুজ উইকেটে পেসারদের চোখ রাঙানি’র ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে থাকল ব্যাটসম্যানদের একপেশে দাপটের। পাঁচদিনে সব মিলিয়ে মাত্র ১৭টি উইকেটের পতন ঘটেছে, রান উঠেছে ১ হাজার ২৮৯। উইকেট প্রতি উঠেছে ৭৫ রানের বেশি।

সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২

ড্র হওয়া ক্যান্ডি টেস্টেও আছে অনেক স্বস্তি

বিশেষ প্রতিনিধি

image

প্রথম ইনিংসে ৯০ করার পর তামিম ইকবাল দ্বিতীয় ইনিংসে ঝড়ো ৭৪* রান করেন -ক্রিকইনফো

স্কোর : বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫৪১/৭ ডি.

ও ১০০/২, শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ৬৪৮/৮ ডি.

শ্রীলঙ্কা সফরে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ ড্র করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচের চতুর্থ দিনের খেলাই টেস্ট ড্রয়ের ইংগিত দিয়েছিল। বৃষ্টির কারণে ৩৫ ওভার খেলা বাকি থাকতেই ড্র মেনে নেয় দুই দল। বৃষ্টির আগে বাংলাদেশের দুটো উইকেট পতনের পর আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট চালিয়ে তামিম ইকবাল হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অপরাজিত থাকার আগে ভেঙেছেন ১৩১ বছরের পুরানো একটি রেকর্ড। প্রথম দুইদিনে শান্ত- মোমিনুলের দুটো সেঞ্চুরির ইনিংস অনেকদিন ধরে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে ছড়িয়ে দিয়েছিল স্বস্তির সুবাতাস। আবার বিদেশের মাটিতে ৯টি টেস্টে পরাজয়ের পর এই ড্র’টা নিঃসন্দেহে অনেক তৃপ্তির। এর মধ্য দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে প্রথম পয়েন্টও পাওয়া হয়ে গেছে টাইগারদের।

পাল্লেকেলের ব্যাটিং স্বর্গে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সাত উইকেটে তোলা ৫৪১ রানের জবাবে অধিনায়ক দ্বিমুথ করুণারতেœর ডাবল সেঞ্চুরি ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সেঞ্চুরিতে আট উইকেটে ৬৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংসের ইতি টানে শ্রীলঙ্কা। ১০৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দল শুরুতেই হারায় সাইফ হাসান (১) ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্তকে। পরের সময়টা একান্তই নিজের করে নিয়েছেন প্রথম ইনিংসে ৯০ রানে করে বাজে শটে আউট হওয়া বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। বৃষ্টির কারণে কয়েক দফা বন্ধ থাকার পর ৩৫ ওভার বাকি থাকতেই দুই দল ড্র মেনে নেয়ার সময়টাতে তামিম ১০ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে মাত্র ৫৬ বলে ব্যক্তিগত হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ১৩১ বছরের একটা রেকর্ড ভেঙে দেন তামিম। তিনি টেস্ট ক্যারিয়ারের ত্রিশতম অর্ধশত রানে পৌঁছার সময়ে বাংলাদেশের স্কোর দুই উইকেটে ৫২ রান। অর্থাৎ তার পার্টনারের অবদান মাত্র দুই। ১৩১ বছর আগে ১৮৯০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলীয় ৫৫ রানের সময় হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এই রেকর্ড গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান জন জেমস লয়েন্স। অর্থাৎ লয়েন্সের হাফ সেঞ্চুরির সময়ে পার্টনারের (বা পার্টনারদের সমিম্মিলিত) অবদান ৫ রান। ২০১৪ সালে লয়েন্সের রেকর্ডটি স্পর্শ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৫ বলে গেইল হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার সময়ে ক্যারিবিয়ানদের স্কোর ছিল ৫৫ রান। রোববার ওই দু’জনকে টপকে এই রেকর্ড নিজের করে নিলেন তামিম ইকবাল।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর আগে ১৫৪ রানে পঞ্চম দিন শুরু করা ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে ১৬৬ রানে বিদায় করেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিমুথ করুনারতেœর সঙ্গে তার বিশাল জুটি থামে ৩৪৫ রানে। তাসকিন নিজের পরের ওভারেই করুনারতেœকে ফেরান ২৪৪ রানে। মধ্যাহ্ন ভোজনের বিরতির সময়ে ১০৭ রানে এগিয়ে থেকে ৮ উইকেটে ৬৪৮ রানে প্রথম ইনিংসের ইতি টানে শ্রীলঙ্কা।

এরপর তামিমের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই হয়েছিল। সুরঙ্গা লাকমলের প্রথম দুই ওভারে দুটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। চতুর্থ ওভারেই অফ স্পিনার ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে বল তুলে দেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক করুণারতেœ। ধনঞ্জয়ার প্রথম বলটাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কা হাঁকানোর পর তৃতীয় বলটাকে মাটি কামড়ে সীমানা ছাড়া করেন তামিম।

কিন্তু অপরপ্রান্তে দুই ব্যাটসম্যান ক্রিজছাড়া হয়ে যান লাকমলের বলে। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানের সাইফ হাসান ফেরেন এক রানে। লাকমলের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি।

লাকমলের পরের ওভারেই অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রানের পর এবার তার প্রাপ্তি শূন্য।

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসাবে এক ইনিংসে সেঞ্চুরি ও আরেক ইনিংসে ‘ডাক’ মারার তালিকায় নিজের নামটা লেখালেন শান্ত। তার আগে সর্বশেষ সাকিব আল হাসান নিউজিল্যান্ড সফরে ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলার পরের ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হয়ে যান।

২৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর তামিম-মোমিনুল জুটি সতর্কতার সঙ্গে এগোনোর কৌশল নিলেও তা তামিমের রেকর্ড গড়ার পথে বাধা হয়ে দাড়ায়নি।

হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ধনঞ্জয়াকে টানা দুটি বাউন্ডারির পরের ওভারে ছক্কা মারেন হাঁকান তামিম। চা বিরতির আগে আবার সাবধানী ব্যাটিংয়ে পার করেন সময়। চা বিরতির পর বৃষ্টিতে আর খেলা হয়নি। মোমিনুলের সঙ্গে তামিমের জুটি তখন অবিচ্ছিন্ন ৭৩ রানের। বাংলাদেশ অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ৮৬ বলে ২৩ রান করে।

সবুজ উইকেটে পেসারদের চোখ রাঙানি’র ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে থাকল ব্যাটসম্যানদের একপেশে দাপটের। পাঁচদিনে সব মিলিয়ে মাত্র ১৭টি উইকেটের পতন ঘটেছে, রান উঠেছে ১ হাজার ২৮৯। উইকেট প্রতি উঠেছে ৭৫ রানের বেশি।