এক সপ্তাহের মধ্যেই ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের’ জন্য নৈতিক অনুমোদন পাচ্ছে দেশে উৎপাদিত গ্লোব বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিন (টিকা)।
গতকাল সকালে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক অনুমোদনের জন্য গত জানুয়ারিতে বিএমআরসিতে আবেদন করেন গ্লোব বায়োটেক কর্তৃপক্ষ। এরপর সম্প্রতি তাদের নৈতিক অনুমোদন ‘না’ দেয়ার কথা জানানো হয়। এর এক সপ্তাহ পর গতকাল তাদের নৈতিক অনুমোদন দেয়ার কথা জানায় বিএমআরসি।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের একমাত্র টিকা তৈরির উদ্যোগ ‘ব্যানকোভিড’ পরবর্তীতে যার নাম করা হয় ‘বঙ্গভ্যাক্স’, প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের (পরীক্ষার) জন্য বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে আবেদন করা হয়েছে।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাকন নাগ সম্প্রতি একাধিক গণমাধ্যমকে বলেন, নৈতিক ছাড়পত্রের অনুমোদন পেলে শতাধিক মানুষের ওপর এ পরীক্ষা করা হবে। এ পরীক্ষা পরিচালনা করবে সিআরও প্রতিষ্ঠান ‘সিআরও লিমিটেড’। এজন্য কিছু বেসরকারি হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’ দিয়ে করোনার টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত বছরের ৫ নভেম্বর যে চুক্তি হয়েছিল তাতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তিন কোটি ডোজ টিকা রপ্তানি করবে এবং সে অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা পাচ্ছে না। অথচ টিকা দেবে বলে অগ্রিম দেড় কোটি ডোজ টিকার মূল্য বাবদ ৫১০ কোটি টাকা আগেই নিয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট।
একদিকে টিকার ঘাটতি, অন্যদিকে করোনার সংক্রমণের বিস্তার, সব মিলিয়ে বিকল্প পথগুলোর কথাই চিন্তা করছে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় দেশের করোনার টিকা উদ্ভাবনের একমাত্র দাবিদার গ্লোব বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিনের নৈতিক অনুমোদন দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বে করোনাভাইরাসের যে ধরনটি সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটাচ্ছে, সেই ‘ডি-৬১৪জি’ ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে তাদের টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ কাজ করবে বলে গ্লোব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গ্লোব বায়োটেকের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি অপারেশন্সের ম্যানেজার ও ইনচার্জ এবং টিকা আবিষ্কার গবেষক দলের সদস্য মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, যে প্রযুক্তিতে তারা টিকা তৈরি করেছেন, মডার্না ও ফাইজারের টিকার প্রযুক্তি প্রায় একই। এই দুইটি ভ্যাকসিন জরুরি অনুমোদন নিয়ে তাদের দেশের করোনা সংক্রমণ তারা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। তারা যে নকশা করেছিল, সেটা করোনার প্রথম দিকে। এগুলোকে বলা যায় প্রথম জেনারেশনের ভ্যাকসিন। গ্লোব বায়োটেকের যে নকশাটা সেটা সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যাকসিন। কারণ তারা এটা গত বছর মার্চ থেকে শুরু করেছেন বলে দাবি করেন মহিউদ্দিন।
তিনি আরও জানান, গত বছর ভাইরাসের যে মিউটেশনের কারণে মানুষ বেশি সংক্রমিত হতো, সেটা হচ্ছে ডি৬১৪জি। গ্লোবের টিকা তৈরিতে এটাকেও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের ইঞ্জিনিয়ারিংটা এমনভাবে করা হয়েছে যে, যেকোন ধরনের মিউটেশন যদি হয় সেক্ষেত্রেও ভ্যাকসিন কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কিন্তু তারা তো এখন পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটাই শুরু করতে পারেননি। এ কারণে তারা এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছে না এটি বর্তমান করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে কি, করবে না।
ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। তাদের দাবি, ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে তাদের ওই টিকা ‘কার্যকর ও সস্পূর্ণ নিরাপদ’ প্রমাণিত হয়েছে।
গত বছরের ৩ জুলাই তেজগাঁওয়ে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে করোনা টিকা তৈরির চেষ্টার ঘোষণা দেয়া হয়। টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য আইসিডিডিআরবির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করলেও পরে তা বাতিল করে গ্লোব বায়োটেক কর্তৃপক্ষ।
সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
এক সপ্তাহের মধ্যেই ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের’ জন্য নৈতিক অনুমোদন পাচ্ছে দেশে উৎপাদিত গ্লোব বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিন (টিকা)।
গতকাল সকালে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক অনুমোদনের জন্য গত জানুয়ারিতে বিএমআরসিতে আবেদন করেন গ্লোব বায়োটেক কর্তৃপক্ষ। এরপর সম্প্রতি তাদের নৈতিক অনুমোদন ‘না’ দেয়ার কথা জানানো হয়। এর এক সপ্তাহ পর গতকাল তাদের নৈতিক অনুমোদন দেয়ার কথা জানায় বিএমআরসি।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের একমাত্র টিকা তৈরির উদ্যোগ ‘ব্যানকোভিড’ পরবর্তীতে যার নাম করা হয় ‘বঙ্গভ্যাক্স’, প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের (পরীক্ষার) জন্য বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে আবেদন করা হয়েছে।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাকন নাগ সম্প্রতি একাধিক গণমাধ্যমকে বলেন, নৈতিক ছাড়পত্রের অনুমোদন পেলে শতাধিক মানুষের ওপর এ পরীক্ষা করা হবে। এ পরীক্ষা পরিচালনা করবে সিআরও প্রতিষ্ঠান ‘সিআরও লিমিটেড’। এজন্য কিছু বেসরকারি হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’ দিয়ে করোনার টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত বছরের ৫ নভেম্বর যে চুক্তি হয়েছিল তাতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তিন কোটি ডোজ টিকা রপ্তানি করবে এবং সে অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা পাচ্ছে না। অথচ টিকা দেবে বলে অগ্রিম দেড় কোটি ডোজ টিকার মূল্য বাবদ ৫১০ কোটি টাকা আগেই নিয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট।
একদিকে টিকার ঘাটতি, অন্যদিকে করোনার সংক্রমণের বিস্তার, সব মিলিয়ে বিকল্প পথগুলোর কথাই চিন্তা করছে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় দেশের করোনার টিকা উদ্ভাবনের একমাত্র দাবিদার গ্লোব বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিনের নৈতিক অনুমোদন দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বে করোনাভাইরাসের যে ধরনটি সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটাচ্ছে, সেই ‘ডি-৬১৪জি’ ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে তাদের টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ কাজ করবে বলে গ্লোব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গ্লোব বায়োটেকের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি অপারেশন্সের ম্যানেজার ও ইনচার্জ এবং টিকা আবিষ্কার গবেষক দলের সদস্য মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, যে প্রযুক্তিতে তারা টিকা তৈরি করেছেন, মডার্না ও ফাইজারের টিকার প্রযুক্তি প্রায় একই। এই দুইটি ভ্যাকসিন জরুরি অনুমোদন নিয়ে তাদের দেশের করোনা সংক্রমণ তারা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। তারা যে নকশা করেছিল, সেটা করোনার প্রথম দিকে। এগুলোকে বলা যায় প্রথম জেনারেশনের ভ্যাকসিন। গ্লোব বায়োটেকের যে নকশাটা সেটা সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যাকসিন। কারণ তারা এটা গত বছর মার্চ থেকে শুরু করেছেন বলে দাবি করেন মহিউদ্দিন।
তিনি আরও জানান, গত বছর ভাইরাসের যে মিউটেশনের কারণে মানুষ বেশি সংক্রমিত হতো, সেটা হচ্ছে ডি৬১৪জি। গ্লোবের টিকা তৈরিতে এটাকেও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের ইঞ্জিনিয়ারিংটা এমনভাবে করা হয়েছে যে, যেকোন ধরনের মিউটেশন যদি হয় সেক্ষেত্রেও ভ্যাকসিন কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কিন্তু তারা তো এখন পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটাই শুরু করতে পারেননি। এ কারণে তারা এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছে না এটি বর্তমান করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে কি, করবে না।
ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। তাদের দাবি, ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে তাদের ওই টিকা ‘কার্যকর ও সস্পূর্ণ নিরাপদ’ প্রমাণিত হয়েছে।
গত বছরের ৩ জুলাই তেজগাঁওয়ে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে করোনা টিকা তৈরির চেষ্টার ঘোষণা দেয়া হয়। টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য আইসিডিডিআরবির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করলেও পরে তা বাতিল করে গ্লোব বায়োটেক কর্তৃপক্ষ।