রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জবাবদিহিতার অভাবে পুরান ঢাকায় মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে : টিআইবি

রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, সমন্বয়হীনতা, জবাবদিহি না থকার কারণে বার বার পুরান ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেখা গেছে। নিমতলী ও চুড়িহাট্টার ট্র্যাজেডির পরও কারও বোধোদয় হয়নি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে আরমানিটোলার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভও প্রকাশ করেছে টিআইবি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানিয়েছে, নিমতলী ও চুড়িহাট্টার মতো মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের পরেও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি কতিপয় মহলের যোগসাজশ ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিক ও দাহ্যপদার্থের গুদাম, কারখানা ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয়হীনতা ও কর্মকর্তাদের জবাবদিহির অভাবে নিমতলী ট্র্যাজেডির ১১ বছর অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও গঠিত তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্সের সুপারিশের বেশির ভাগ বাস্তবায়িত না হওয়া এবং নিমতলী ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব না হওয়ায় আরমানিটোলার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে টিআইবি।

সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের কী কোন মূল্য নেই! মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেছেন, ‘একটি ঘটনা ঘটলেই এর কারণ অনুসন্ধানে অনেকগুলো তদন্ত কমিটি হয়, আরমানিটোলার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ হবে কতোটা? পুরানো ঢাকার নিমতলী ট্র্যাজেডির ১১ বছরেও কেন রাসায়নিকের গুদামগুলো সরানো গেল না? স্থায়ী রাসায়নিক পল্লী কেন প্রস্তুত হলো না? লাইসেন্স দেয়া বন্ধ থাকার পরেও কীভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ব্যবসা চলছে? এমন সব প্রশ্ন আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু উত্তর পাওয়া যাবে এমন আশাবাদ করতেও ভয় হচ্ছে। কেননা নিমতলী, চুড়িহাট্টার মতো ভয়াবহ ঘটনার পরও রাসয়নিকের গুদাম স্থানান্তরের জায়গাই পরিবর্তন হয়েছে চারবার। যা দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর শুধু পরিকল্পনাহীনতা ও দায়িত্বহীনতার চূড়ান্ত উদহারণই নয় বরং দিন দিন প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। তাই নিমতলীর তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।’

নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর উচ্চ আদালত পুরানো ঢাকার রাসায়নিক গুদামগুলো কেন সরিয়ে ফেলা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করলেও দীর্ঘ ১১ বছরে আদালতে কোন জবাব দাখিল করা হয়নি উল্লেখ করে ড. জামান বলেছেন, ‘সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা প্রতিপালন না করার পাশাপাশি আদালত অবমাননাও করেছে। আবার এসব ঘটনায় করা মামলাগুলোও ঝুলে আছে পুলিশ প্রতিবেদনের অপেক্ষায়। সবমিলিয়ে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেয়ার ব্যর্থতার পাশাপাশি দীর্ঘ এই সময়ে পুরো এলাকা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিমুক্ত করায় সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা যে পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিল তা বললেও অত্যুক্তি হবে না। একই সঙ্গে দ্রুত অগ্নি নির্বাপণের জন্য পুরান ঢাকায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি সাধিত হয়নি। বরং বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার সুযোগে কতিপয় মহল অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের গুদাম, কারখানা ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার একটি অসাধু ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।’

আরমানিটোলার ঘটনাসহ নিমতলী ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ কারখানা চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করে অন্তবর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে স্বল্পমেয়াদি অবকাশ দিয়ে স্থানান্তর, আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক ব্যবসা নিষিদ্ধ, সরকারিভাবে নির্মাণাধীন অস্থায়ী গুদাম প্রকল্প ও স্থায়ী রাসায়নিক পল্লী প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সব রাসায়নিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক স্থানাস্তর করার জোর দাবি জানাচ্ছে টিআইবি।

আরও খবর
ঢাকামুখী মানুষের ঢল
স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ফের কঠোর লকডাউন কাদের
কারাগারে হেফাজত নেতাদের বিধিবহির্ভূত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার অভিযোগ
হাওরের সোনালী ফসলের হাসি থাকতে হবে কৃষকের মুখেও কৃষিমন্ত্রী
জঙ্গির সঙ্গে পাকিস্তানে ছিলেন মামুনুল পুলিশ
সপ্তম দফা ভোট আজ সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর ইসি
গোয়ালন্দে স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণ তিনজন গ্রেপ্তার
করোনা মোকাবিলায় ৫৭৪ কোটি ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
একমাত্র শিশুপুত্রকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে রীমা রানী দাশ
চট্টগ্রামে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র গ্রেপ্তার
মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া দুই ইমাম গ্রেপ্তার
নির্মাণকাজে বিল জালিয়াতি

সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২

রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জবাবদিহিতার অভাবে পুরান ঢাকায় মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে : টিআইবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, সমন্বয়হীনতা, জবাবদিহি না থকার কারণে বার বার পুরান ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেখা গেছে। নিমতলী ও চুড়িহাট্টার ট্র্যাজেডির পরও কারও বোধোদয় হয়নি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে আরমানিটোলার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভও প্রকাশ করেছে টিআইবি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানিয়েছে, নিমতলী ও চুড়িহাট্টার মতো মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের পরেও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি কতিপয় মহলের যোগসাজশ ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিক ও দাহ্যপদার্থের গুদাম, কারখানা ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয়হীনতা ও কর্মকর্তাদের জবাবদিহির অভাবে নিমতলী ট্র্যাজেডির ১১ বছর অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও গঠিত তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্সের সুপারিশের বেশির ভাগ বাস্তবায়িত না হওয়া এবং নিমতলী ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব না হওয়ায় আরমানিটোলার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে টিআইবি।

সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের কী কোন মূল্য নেই! মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেছেন, ‘একটি ঘটনা ঘটলেই এর কারণ অনুসন্ধানে অনেকগুলো তদন্ত কমিটি হয়, আরমানিটোলার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ হবে কতোটা? পুরানো ঢাকার নিমতলী ট্র্যাজেডির ১১ বছরেও কেন রাসায়নিকের গুদামগুলো সরানো গেল না? স্থায়ী রাসায়নিক পল্লী কেন প্রস্তুত হলো না? লাইসেন্স দেয়া বন্ধ থাকার পরেও কীভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ব্যবসা চলছে? এমন সব প্রশ্ন আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু উত্তর পাওয়া যাবে এমন আশাবাদ করতেও ভয় হচ্ছে। কেননা নিমতলী, চুড়িহাট্টার মতো ভয়াবহ ঘটনার পরও রাসয়নিকের গুদাম স্থানান্তরের জায়গাই পরিবর্তন হয়েছে চারবার। যা দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর শুধু পরিকল্পনাহীনতা ও দায়িত্বহীনতার চূড়ান্ত উদহারণই নয় বরং দিন দিন প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। তাই নিমতলীর তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।’

নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর উচ্চ আদালত পুরানো ঢাকার রাসায়নিক গুদামগুলো কেন সরিয়ে ফেলা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করলেও দীর্ঘ ১১ বছরে আদালতে কোন জবাব দাখিল করা হয়নি উল্লেখ করে ড. জামান বলেছেন, ‘সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা প্রতিপালন না করার পাশাপাশি আদালত অবমাননাও করেছে। আবার এসব ঘটনায় করা মামলাগুলোও ঝুলে আছে পুলিশ প্রতিবেদনের অপেক্ষায়। সবমিলিয়ে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেয়ার ব্যর্থতার পাশাপাশি দীর্ঘ এই সময়ে পুরো এলাকা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিমুক্ত করায় সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা যে পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিল তা বললেও অত্যুক্তি হবে না। একই সঙ্গে দ্রুত অগ্নি নির্বাপণের জন্য পুরান ঢাকায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি সাধিত হয়নি। বরং বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার সুযোগে কতিপয় মহল অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের গুদাম, কারখানা ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার একটি অসাধু ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।’

আরমানিটোলার ঘটনাসহ নিমতলী ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ কারখানা চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করে অন্তবর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে স্বল্পমেয়াদি অবকাশ দিয়ে স্থানান্তর, আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক ব্যবসা নিষিদ্ধ, সরকারিভাবে নির্মাণাধীন অস্থায়ী গুদাম প্রকল্প ও স্থায়ী রাসায়নিক পল্লী প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সব রাসায়নিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক স্থানাস্তর করার জোর দাবি জানাচ্ছে টিআইবি।