কারারক্ষীর ফোনালাপ ফাঁস
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিধিবহির্ভূতভাবে বিশেষ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে অসাধু কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত এক কারারক্ষী ও এক হেফাজত নেতার মধ্যে ফোনে কথোপকথন ফাঁস হলে বিষয়টি জানা যায়। ওই কথোপকথনে হেফাজত নেতাদের দেখভালে বিশেষ গুরুত্বসহ বিশেষ খাবার দেয়ার বিষয়টি ওঠে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভাষ্য, কারাগারে থাকা হেফাজতের নেতাকর্মীরা বাইরে যোগাযোগ রাখলে তারা আবারও সংগঠিত হয়ে বড় ধরনের কোন অঘটন ঘটাতে পারে। এ কারণে তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা উচিত। তবে কারাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারাগারে হেফাজত নেতাকর্মীদের অন্য বন্দীদের থেকে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে। তাদের আলাদা করে বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি মোবাইল ফোনে স্বজনদের সঙ্গে বাইরে কথা বলারও সুযোগ নেই। তবুও বিষয়টি তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কথাপোকথন ঘেটে দেখা গেছে, ফাঁস হওয়া ফোনালাপের এক প্রান্তে হেফাজত নেতা ও মামুনুল হকের ঘনিষ্ঠ মাওলানা শরীফ এবং অপরপ্রান্তে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী পরিচয় দেয়া রেজাউল নামে একজন কথা বলছিলেন। ওই ফোনালাপে কারারক্ষী রেজাউল আরও এক কারারক্ষী মনিরুজ্জামানসহ কারাগারে থাকা হেফাজত নেতাদের দেখভাল, পোশাক ও খাবারের বিষয়ে বিশেষ সুবিধা দিয়ে আসছেন বলে জানায়। ভবিষ্যতেও যারা কারাগারে যাবেন তাদেরও একইভাবে বিশেষ সুবিধা দেবেন বলেও হেফাজত নেতাকে আশ^স্ত করা হয়। ফোন ট্র্যাক করা হচ্ছে জানিয়ে ভিন্ন নাম্বারে কথা বলবে বলেও জানায় সে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারাগারের ভেতরে যে মোবাইল নাম্বার থেকে হেফাজত নেতার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, সেটি সরকারি নাম্বার। ওই নাম্বার থেকে সাধারণত কারাগারের ভেতরে থাকা বন্দীরা তাদের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। কারাসূত্র জানায়, অন্য সাধারণ বন্দীরা কারাগারের ভেতর থেকে মোবাইল ফোনে তাদের পরিবার বা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারলেও হেফাজতের নেতাকর্মীদের সুযোগটি দেয়া হচ্ছে না। এ কারণে কারা, কিভাবে তাদের সুযোগ দিচ্ছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, অতীতে এক শ্রেণীর কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে বন্দীদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার প্রমাণ মিলেছে। এর ফলে কারাগারে থাকা বড় অপরাধীরা বাইরে যোগাযোগ রেখে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালু রাখার সুযোগ পেত। তারা বলেন, হেফজতের ইস্যুটি বর্তমানে সবচেয়ে স্পর্শকাতর। তাদের অনেকের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে হেফাজতের নেতাকর্মীরা এমন সুযোগ পেলে তারাও বাইরে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নাশকতা ছক আঁকতে পারবে।
এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, যে নাম্বারটি থেকে কথা বলার অভিযোগ ওঠেছে সেটি কারাগারে ব্যবহৃত সরকারি নাম্বার। এ নাম্বার থেকে বন্দীরা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, কারাগারে থাকা অন্য বন্দীদের থেকে গ্রেপ্তার হেফাজত নেতাকর্মীদের আলাদা রাখা হয়েছে। তাদের এ সুযোগ পাওয়ার কথা না। এরপরেও বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে যার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২
কারারক্ষীর ফোনালাপ ফাঁস
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিধিবহির্ভূতভাবে বিশেষ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে অসাধু কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত এক কারারক্ষী ও এক হেফাজত নেতার মধ্যে ফোনে কথোপকথন ফাঁস হলে বিষয়টি জানা যায়। ওই কথোপকথনে হেফাজত নেতাদের দেখভালে বিশেষ গুরুত্বসহ বিশেষ খাবার দেয়ার বিষয়টি ওঠে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভাষ্য, কারাগারে থাকা হেফাজতের নেতাকর্মীরা বাইরে যোগাযোগ রাখলে তারা আবারও সংগঠিত হয়ে বড় ধরনের কোন অঘটন ঘটাতে পারে। এ কারণে তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা উচিত। তবে কারাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারাগারে হেফাজত নেতাকর্মীদের অন্য বন্দীদের থেকে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে। তাদের আলাদা করে বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি মোবাইল ফোনে স্বজনদের সঙ্গে বাইরে কথা বলারও সুযোগ নেই। তবুও বিষয়টি তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কথাপোকথন ঘেটে দেখা গেছে, ফাঁস হওয়া ফোনালাপের এক প্রান্তে হেফাজত নেতা ও মামুনুল হকের ঘনিষ্ঠ মাওলানা শরীফ এবং অপরপ্রান্তে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী পরিচয় দেয়া রেজাউল নামে একজন কথা বলছিলেন। ওই ফোনালাপে কারারক্ষী রেজাউল আরও এক কারারক্ষী মনিরুজ্জামানসহ কারাগারে থাকা হেফাজত নেতাদের দেখভাল, পোশাক ও খাবারের বিষয়ে বিশেষ সুবিধা দিয়ে আসছেন বলে জানায়। ভবিষ্যতেও যারা কারাগারে যাবেন তাদেরও একইভাবে বিশেষ সুবিধা দেবেন বলেও হেফাজত নেতাকে আশ^স্ত করা হয়। ফোন ট্র্যাক করা হচ্ছে জানিয়ে ভিন্ন নাম্বারে কথা বলবে বলেও জানায় সে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারাগারের ভেতরে যে মোবাইল নাম্বার থেকে হেফাজত নেতার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, সেটি সরকারি নাম্বার। ওই নাম্বার থেকে সাধারণত কারাগারের ভেতরে থাকা বন্দীরা তাদের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। কারাসূত্র জানায়, অন্য সাধারণ বন্দীরা কারাগারের ভেতর থেকে মোবাইল ফোনে তাদের পরিবার বা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারলেও হেফাজতের নেতাকর্মীদের সুযোগটি দেয়া হচ্ছে না। এ কারণে কারা, কিভাবে তাদের সুযোগ দিচ্ছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, অতীতে এক শ্রেণীর কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে বন্দীদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার প্রমাণ মিলেছে। এর ফলে কারাগারে থাকা বড় অপরাধীরা বাইরে যোগাযোগ রেখে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালু রাখার সুযোগ পেত। তারা বলেন, হেফজতের ইস্যুটি বর্তমানে সবচেয়ে স্পর্শকাতর। তাদের অনেকের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে হেফাজতের নেতাকর্মীরা এমন সুযোগ পেলে তারাও বাইরে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নাশকতা ছক আঁকতে পারবে।
এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, যে নাম্বারটি থেকে কথা বলার অভিযোগ ওঠেছে সেটি কারাগারে ব্যবহৃত সরকারি নাম্বার। এ নাম্বার থেকে বন্দীরা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, কারাগারে থাকা অন্য বন্দীদের থেকে গ্রেপ্তার হেফাজত নেতাকর্মীদের আলাদা রাখা হয়েছে। তাদের এ সুযোগ পাওয়ার কথা না। এরপরেও বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে যার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।