রীমা রানী দাশ (৩৫) একজন শিক্ষিতা মহিলা। বিয়ের ছয় মাস পরই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীর বাড়ির লোকজন তাকে যৌতুকের জন্য তাড়িয়ে দেয়। আশ্রয় নেন বাবার বাড়িতে। তাদেরও অভাবের সংসার। গ্রামের বাজারে ছোট ভাইয়ের ছোট্ট একটি মোবাইল ফোন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দোকান। তাও আবার মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ। পরিস্থিতি এমন যে লোকলজ্জায় কাউকে বলাও যায় না। রীমা রানী দাস ভাইয়ের সংসারে আশ্রয় নিয়ে দু’একটি টিউশনি করতেন। করোনায় তাও বন্ধ রয়েছে। আর এভাবেই ছয় বছরের একটি শিশু সন্তান নিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রীমা রানী দাশ সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকরের মিত্রীমহল গ্রামের মৃত লবণী মোহন দাশের কন্যা। এমসি কলেজ থেকে ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর ২০১৪ সালে তার বিয়ে হয় ওসমানীনগর উপজেলার লালকৈলাশ গ্রামের বসন্ত কুমার দেব’র সঙ্গে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে স্বামীর বাড়ির লোকজন তাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতেন।
একপর্যায়ে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাকে বাবার বাড়িতে ফিরে আসতে হয়। রীমা রানী দাশ বলেন, ২০১৪ সালে হিন্দু রীতিতে তার বিয়ে হয়। স্বামী ছিলেন বালাগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী। বিয়ের পর কিছুদিন ভালো গেলেও বসন্ত কুমার দেবের ভাই চিত্তরঞ্জন দেব ও তার স্ত্রী শিল্পি রানী দেব কৌশলে তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এ বিষয়ে অসহায় রিমা রানী দাশ পরিবার পুনরুদ্ধার আইনে মামলা করেন। কিন্তু বসন্ত কুমার দেব মানসিক ভারসাম্যহীন ও বুদ্ধিমত্তাহীন হওয়ায় এখনও সাফাই সাক্ষ্য দিতে পারেননি। এর আগে বাবার বাড়িতেই তিনি জন্ম দেন এক পুত্র সন্তানের। বর্তমানে তার বয়স ছয় বছর। বাড়িতে ভাইয়ের অভাবের সংসারে থেকে তিনি নিজেও কিছুটা রোজগারের চেষ্টা করেন টিউশনির মাধ্যমে। তিনি বলেন, তার ভাই প্রতাপ দাশের সালুটিকর বাজারে একটি ছোট্ট মোবাইল ফোন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দোকান রয়েছে। করোনায় দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ।
ফলে একমাত্র উপার্জনশীল ভাই নিজেই পরিবারের নয় সদস্য নিয়ে বিপাকে। রীমা রানী দাশ যে দুই জায়গায় টিউশনি করতেন করোনার কারণে তাও বন্ধ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এই বিষয়গুলো কাউকে বলতেও পারছেন না। এই কঠিন মুহূর্তের মধ্যেই খবর পান তার স্বামীর অসুস্থতার সুযোগে জালিয়াতির মাধ্যমে ভাইয়ের পেনশন স্কিমের আবেদন করিয়েছেন তার ভাসুর। কিন্তু নমিনিতে স্ত্রীর নাম থাকায় এবং তাদের ছেলের নাম ভুল থাকায় আবেদনটি ফেরত আসে। পরবর্তীতে রিমা রানী দাশকে না জানিয়েই তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নকল কপি জমা দিয়ে আবেদন করেন তার ভাসুর। বিষয়টি তার স্বামীও জানেন না বলে দাবি করে রিমা রানী দাশ, তার স্বামীর ব্যাংক একাউন্টেও কৌশলে তার ভাই নমিনি হয়েছেন। অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তার সব কিছু হাতিয়ে নিতে চাইছেন। নিজের ও ছেলের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে তিনি এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, এই মহামারী করোনার মধ্যে যেভাবে জীবনযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাও যদি স্বামীর পেনশনের টাকাটি নিয়ম ও আইন অনুযায়ী তিনি পেতেন তাহলে কোনভাবে তার অবুঝ শিশুটিকে মানুষ করতে পারতেন।
সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২
আকাশ চৌধুরী
রীমা রানী দাশ (৩৫) একজন শিক্ষিতা মহিলা। বিয়ের ছয় মাস পরই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীর বাড়ির লোকজন তাকে যৌতুকের জন্য তাড়িয়ে দেয়। আশ্রয় নেন বাবার বাড়িতে। তাদেরও অভাবের সংসার। গ্রামের বাজারে ছোট ভাইয়ের ছোট্ট একটি মোবাইল ফোন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দোকান। তাও আবার মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ। পরিস্থিতি এমন যে লোকলজ্জায় কাউকে বলাও যায় না। রীমা রানী দাস ভাইয়ের সংসারে আশ্রয় নিয়ে দু’একটি টিউশনি করতেন। করোনায় তাও বন্ধ রয়েছে। আর এভাবেই ছয় বছরের একটি শিশু সন্তান নিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রীমা রানী দাশ সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকরের মিত্রীমহল গ্রামের মৃত লবণী মোহন দাশের কন্যা। এমসি কলেজ থেকে ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর ২০১৪ সালে তার বিয়ে হয় ওসমানীনগর উপজেলার লালকৈলাশ গ্রামের বসন্ত কুমার দেব’র সঙ্গে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে স্বামীর বাড়ির লোকজন তাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতেন।
একপর্যায়ে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাকে বাবার বাড়িতে ফিরে আসতে হয়। রীমা রানী দাশ বলেন, ২০১৪ সালে হিন্দু রীতিতে তার বিয়ে হয়। স্বামী ছিলেন বালাগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী। বিয়ের পর কিছুদিন ভালো গেলেও বসন্ত কুমার দেবের ভাই চিত্তরঞ্জন দেব ও তার স্ত্রী শিল্পি রানী দেব কৌশলে তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এ বিষয়ে অসহায় রিমা রানী দাশ পরিবার পুনরুদ্ধার আইনে মামলা করেন। কিন্তু বসন্ত কুমার দেব মানসিক ভারসাম্যহীন ও বুদ্ধিমত্তাহীন হওয়ায় এখনও সাফাই সাক্ষ্য দিতে পারেননি। এর আগে বাবার বাড়িতেই তিনি জন্ম দেন এক পুত্র সন্তানের। বর্তমানে তার বয়স ছয় বছর। বাড়িতে ভাইয়ের অভাবের সংসারে থেকে তিনি নিজেও কিছুটা রোজগারের চেষ্টা করেন টিউশনির মাধ্যমে। তিনি বলেন, তার ভাই প্রতাপ দাশের সালুটিকর বাজারে একটি ছোট্ট মোবাইল ফোন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দোকান রয়েছে। করোনায় দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ।
ফলে একমাত্র উপার্জনশীল ভাই নিজেই পরিবারের নয় সদস্য নিয়ে বিপাকে। রীমা রানী দাশ যে দুই জায়গায় টিউশনি করতেন করোনার কারণে তাও বন্ধ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এই বিষয়গুলো কাউকে বলতেও পারছেন না। এই কঠিন মুহূর্তের মধ্যেই খবর পান তার স্বামীর অসুস্থতার সুযোগে জালিয়াতির মাধ্যমে ভাইয়ের পেনশন স্কিমের আবেদন করিয়েছেন তার ভাসুর। কিন্তু নমিনিতে স্ত্রীর নাম থাকায় এবং তাদের ছেলের নাম ভুল থাকায় আবেদনটি ফেরত আসে। পরবর্তীতে রিমা রানী দাশকে না জানিয়েই তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নকল কপি জমা দিয়ে আবেদন করেন তার ভাসুর। বিষয়টি তার স্বামীও জানেন না বলে দাবি করে রিমা রানী দাশ, তার স্বামীর ব্যাংক একাউন্টেও কৌশলে তার ভাই নমিনি হয়েছেন। অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তার সব কিছু হাতিয়ে নিতে চাইছেন। নিজের ও ছেলের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে তিনি এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, এই মহামারী করোনার মধ্যে যেভাবে জীবনযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাও যদি স্বামীর পেনশনের টাকাটি নিয়ম ও আইন অনুযায়ী তিনি পেতেন তাহলে কোনভাবে তার অবুঝ শিশুটিকে মানুষ করতে পারতেন।