চট্টগ্রামে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে বিচারক সেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থী কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু আইনের ৯(১) ধারায় মামলাটি দায়েরের পর ওই প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়।

কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তারের পর অভিজিৎ নিজকে ভুয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণাপূর্বক ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছে। সে এখনো পোর্ট সিটি ইউনিভার্সটির স্টুডেন্ট।

পুলিশ জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফেইসবুকে অভিজিৎ ঘোষ নামে ওই প্রতারকের পরিচয় হয়। সেই থেকে ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ আদান প্রদানের মাধ্যমে দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্বের সুবাধে অভিজিৎ সুমনা রায়কে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তখন সে সুমনাকে জানায়, একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছে এবং বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশ ক্যাডারে চান্স পেয়েছে। শুধু তাই নয়, তাকে বাংলাদেশের নামি-দামি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইনবিষয়ক প্রভাষক পদে যোগদান করার জন্য ই-মেইলে বার্তা পাঠাচ্ছে।

এখানেই থেমে থাকেনি তার চাপাবাজি! সর্বশেষ সে জানায়, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১২তম ব্যাচের ক্যাডার হিসেবে সে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে। তাদের এই কাজে সুমনা রায়কে প্রভাবিত করে অভিজিতের বন্ধু সত্যজিৎ দাশ শুভ। সেও সুমনাকে অভিজিৎ জুডিয়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট বলে জোর দিয়ে বলে। নিজের ভুয়া পরিচয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি অভিজিৎ। সুমনার কাছে তার পিতাকে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ও মাকে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে পরিচয় দেয়।

সে কারণে অভিজিৎকে ঢাকা চট্টগ্রামে আসা-যাওয়ার মধ্যে ব্যস্ত থাকতে হয়। এমনভাবে প্রতারণার মাধ্যমে প্রভাবিত করে সুমনাকে অভিজিতের মাসির ফিরিঙ্গি বাজারের বাসায় নিয়ে আসে। এরপর বিয়ের প্রলোভনে বেশ কয়েকবার জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে। এতে ভিকটিম সুমনা আপত্তি জানালে অভিজিৎ ও সত্যজিৎ দু’জনেই তার মাসির বাসায় পঞ্চাশ টাকা মূল্যমানের দুইটি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে জাল স্বাক্ষর করে ও ভুয়া বিবাহের হলফনামা তৈরি করে সুমনা রায়কে একটি ফটোকপি দেয় এবং তাকে বিয়ে করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

এরপর থেকে ভিকটিমকে নিজের বিবাহিত বউ দাবি করে বিভিন্ন সময়ে অভিজিতের মাসির ফিরিঙ্গিবাজারে বাসায় নিয়ে যেত ও শারীরিক সম্পর্ক করত।

বিষয়টি নিয়ে আবারও খটকা লাগে ভিকটিম সুমনার। তিনি তার বাবা-মাকে জানালে অভিজিৎকে তাদের বাসায় ডেকে পাঠায়। গত ২১ মার্চ অভিজিৎ ও সত্যজিৎ দুজনেই সুমনার বাসায় গিয়ে তার বাবার সঙ্গে দেখা করে। সেখানে অভিজিৎ নিজকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে সুমনার বাবাকে নানাভাবে শাসিয়ে চলে আসে। এমনকি আসার সময় বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়। এরপর সুমনা কোতোয়ালি থানায় নারী শিশু আইনের ৯(১) ধারায় একটি মামলা করেন অভিজিৎ ও সত্যজিৎতের বিরুদ্ধে।

মামলা দায়েরের পর কোতোয়ালি থানা পুলিশ গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফিরিঙ্গিবাজারস্থ তার মাসির বাসা তথা শামিমা কালাম মাতৃ নিবাসের নিচতলা থেকে অভিজিৎকে গ্রেপ্তার করে। তবে অন্য আসামি সত্যজিৎ এখনও পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তার অভিজিৎ ঘোষের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদন্ডি গ্রামে। তবে সে বর্তমানে ফিরিঙ্গিবাজারস্থ শামীমা কালাম মাতৃ নিবাসের নিচতলায় থাকে। সে নগরের পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

আরও খবর
রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জবাবদিহিতার অভাবে পুরান ঢাকায় মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে : টিআইবি
ঢাকামুখী মানুষের ঢল
স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ফের কঠোর লকডাউন কাদের
কারাগারে হেফাজত নেতাদের বিধিবহির্ভূত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার অভিযোগ
হাওরের সোনালী ফসলের হাসি থাকতে হবে কৃষকের মুখেও কৃষিমন্ত্রী
জঙ্গির সঙ্গে পাকিস্তানে ছিলেন মামুনুল পুলিশ
সপ্তম দফা ভোট আজ সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর ইসি
গোয়ালন্দে স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণ তিনজন গ্রেপ্তার
করোনা মোকাবিলায় ৫৭৪ কোটি ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
একমাত্র শিশুপুত্রকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে রীমা রানী দাশ
মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া দুই ইমাম গ্রেপ্তার
নির্মাণকাজে বিল জালিয়াতি

সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২

চট্টগ্রামে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামে বিচারক সেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থী কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু আইনের ৯(১) ধারায় মামলাটি দায়েরের পর ওই প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়।

কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তারের পর অভিজিৎ নিজকে ভুয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণাপূর্বক ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছে। সে এখনো পোর্ট সিটি ইউনিভার্সটির স্টুডেন্ট।

পুলিশ জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফেইসবুকে অভিজিৎ ঘোষ নামে ওই প্রতারকের পরিচয় হয়। সেই থেকে ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ আদান প্রদানের মাধ্যমে দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্বের সুবাধে অভিজিৎ সুমনা রায়কে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তখন সে সুমনাকে জানায়, একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছে এবং বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশ ক্যাডারে চান্স পেয়েছে। শুধু তাই নয়, তাকে বাংলাদেশের নামি-দামি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইনবিষয়ক প্রভাষক পদে যোগদান করার জন্য ই-মেইলে বার্তা পাঠাচ্ছে।

এখানেই থেমে থাকেনি তার চাপাবাজি! সর্বশেষ সে জানায়, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১২তম ব্যাচের ক্যাডার হিসেবে সে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে। তাদের এই কাজে সুমনা রায়কে প্রভাবিত করে অভিজিতের বন্ধু সত্যজিৎ দাশ শুভ। সেও সুমনাকে অভিজিৎ জুডিয়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট বলে জোর দিয়ে বলে। নিজের ভুয়া পরিচয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি অভিজিৎ। সুমনার কাছে তার পিতাকে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ও মাকে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে পরিচয় দেয়।

সে কারণে অভিজিৎকে ঢাকা চট্টগ্রামে আসা-যাওয়ার মধ্যে ব্যস্ত থাকতে হয়। এমনভাবে প্রতারণার মাধ্যমে প্রভাবিত করে সুমনাকে অভিজিতের মাসির ফিরিঙ্গি বাজারের বাসায় নিয়ে আসে। এরপর বিয়ের প্রলোভনে বেশ কয়েকবার জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে। এতে ভিকটিম সুমনা আপত্তি জানালে অভিজিৎ ও সত্যজিৎ দু’জনেই তার মাসির বাসায় পঞ্চাশ টাকা মূল্যমানের দুইটি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে জাল স্বাক্ষর করে ও ভুয়া বিবাহের হলফনামা তৈরি করে সুমনা রায়কে একটি ফটোকপি দেয় এবং তাকে বিয়ে করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

এরপর থেকে ভিকটিমকে নিজের বিবাহিত বউ দাবি করে বিভিন্ন সময়ে অভিজিতের মাসির ফিরিঙ্গিবাজারে বাসায় নিয়ে যেত ও শারীরিক সম্পর্ক করত।

বিষয়টি নিয়ে আবারও খটকা লাগে ভিকটিম সুমনার। তিনি তার বাবা-মাকে জানালে অভিজিৎকে তাদের বাসায় ডেকে পাঠায়। গত ২১ মার্চ অভিজিৎ ও সত্যজিৎ দুজনেই সুমনার বাসায় গিয়ে তার বাবার সঙ্গে দেখা করে। সেখানে অভিজিৎ নিজকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে সুমনার বাবাকে নানাভাবে শাসিয়ে চলে আসে। এমনকি আসার সময় বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়। এরপর সুমনা কোতোয়ালি থানায় নারী শিশু আইনের ৯(১) ধারায় একটি মামলা করেন অভিজিৎ ও সত্যজিৎতের বিরুদ্ধে।

মামলা দায়েরের পর কোতোয়ালি থানা পুলিশ গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফিরিঙ্গিবাজারস্থ তার মাসির বাসা তথা শামিমা কালাম মাতৃ নিবাসের নিচতলা থেকে অভিজিৎকে গ্রেপ্তার করে। তবে অন্য আসামি সত্যজিৎ এখনও পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তার অভিজিৎ ঘোষের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদন্ডি গ্রামে। তবে সে বর্তমানে ফিরিঙ্গিবাজারস্থ শামীমা কালাম মাতৃ নিবাসের নিচতলায় থাকে। সে নগরের পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।