অপরিকল্পিত খনন ও লুটপাটে সাদাসোনা চিনামাটির পাহাড় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে!

ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের পুটিমারি বাজারের পাশেই অবস্থিত সাদাসোনা নামে খ্যাত চিনামাটির পাহাড়। এর পাশেই রয়েছে আদিবাসীদের একটি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনসাপাড়া সেভেন্থ অ্যাডভেন্টেস মিশনারিজ স্কুল। উত্তরে রয়েছে মেঘালয় ঘেষা গারো পাহাড়। সব মিলিয়ে অপার সৌন্দর্যের এক লীলা ভূমি এই চিনামাটির পাহাড়। এ পাহাড়কে ঘিরেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে শতাধিক সিরামিক শিল্প কারখানা। কিন্তু অপরিকল্পিত খনন ও লুটপাটে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সিরামিক শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল রাষ্ট্রীয় সম্পদ এই চিনা মাটির পাহাড়। বাংলাদেশ এগ্রো সিরামিক নামে একটি কোম্পানি দীর্ঘদিন যাবত ভেদীকুড়া মৌজায় অবস্থিত চিনমিাটির পাহাড় থেকে মাটি উত্তোলন করে আসছে। একটি স্থান থেকে মাটি উত্তোলনের পর সৃষ্ট গর্ত সাধারণ মাটি দিয়ে ভরাট করে অন্যস্থান থেকে মাটি উত্তোলন করার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে তা মানা হয় না।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বছরের পর বছর গর্ত করে মাটি উত্তোলনের পরও সৃষ্ট গর্ত ভরাট করা হয়নি। ফলে প্রাণহানির মত ঘটনাও ঘটে প্রায়ই। ২০১৪ সালে সৃষ্ট গর্তের মাটি ধ্বসে ১ শ্রমিকের মৃত্যু হলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আনিসুজ্জমান খান সরেজমিনে পরিদর্শন করে মাটি কাটা সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি একটি কমিটি গঠনও করে দেন। কিন্তু কিছুদিন বন্ধ থাকার পর সরকারী রাজস্ব ফাকি দিতে একটি প্রভাবশালী চক্র সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়েই এবড়োতেবড়োভাবে কেটে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করছে বাংলাদেশের মূল্যবান এই খনিজ সম্পদ। স্থানীয়দের অভিযোগ খনিজ সম্পদ ব্যুরো থেকে ৫০ হাজার বস্তা মাটি নেওয়ার অনুমোদন এনে প্রভাবশালীদের সহায়তায় লক্ষাধিক বস্তা মাটি নিয়ে যায়। এতে বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার । এ বিষয়ে দেখবাল করার কেউ নাই। ফলে একদিকে যেমন অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি হারাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়ের। এখনও চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। সব মিলিয়ে ধ্বংসের দ্বারপান্তে এসে দাড়িয়েছে মূল্যবান এই চিনামাটির পাহাড়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব জানান,ভেদীকুড়া পাহাড় থেকে চিনামাটি একপ্রকার হরিলুট করে নিয়ে যাচ্ছে,কখন কত বস্তা অনুমোদন দেয় তা কেউ জানে না,কিন্তু লক্ষ লক্ষ বস্তা মাটি নিয়ে যাচ্ছে, এতে পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক জানান, এগ্রো বাংলাদেশ নিজেরা মাটি উত্তোলণ না করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ত করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মেনেজ করে অতিরিক্ত বস্তা মাটি নিয়ে যায়। ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন বলেন চিনামাটির আমাদের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা,প্রতিবছর দূরদুরান্ত থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসে,কিন্তু চিনামাটি হরিলুটের কারনে বিলিন হয়ে যাচ্ছে পর্যটনের সম্ভাবনা। এ বিষয়ে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।

এ ব্যাপারে মেসার্স বাংলাদেশ এগ্রো সিরামিকস কোম্পানির মালিক গোলাম কিবরিয়া তপন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি কিন্তু মাটি উত্তোলনের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন আগে মাটি কাটার ছাড়পত্র পেলে আমাকে জানানো হতো কিন্তু এখন তারা কিভাবে মাটি উত্তোলন করছে তা জানিনা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিকুজ্জামান জানান,মাটি উত্তোলন বিষয়টি দেখাশোনা করার জন্য খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। মাটি উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা খনিজ সম্পদ মন্ত্র¿ণালয়ের উপ-পরিচালক মামুন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মাটি কাটার সময় আমাদের কোন লোক থাকে না তবে ছাড়পত্র দেওয়ার পর মাটি পরিবহনের সময় আমাদের লোক বিষয়টি দেখবাল করে। তবে অতিরিক্ত মাটি নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল ২০২১ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমজান ১৪৪২

অপরিকল্পিত খনন ও লুটপাটে সাদাসোনা চিনামাটির পাহাড় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে!

শামসুল হক মৃধা, ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ)

image

ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের পুটিমারি বাজারের পাশেই অবস্থিত সাদাসোনা নামে খ্যাত চিনামাটির পাহাড়। এর পাশেই রয়েছে আদিবাসীদের একটি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনসাপাড়া সেভেন্থ অ্যাডভেন্টেস মিশনারিজ স্কুল। উত্তরে রয়েছে মেঘালয় ঘেষা গারো পাহাড়। সব মিলিয়ে অপার সৌন্দর্যের এক লীলা ভূমি এই চিনামাটির পাহাড়। এ পাহাড়কে ঘিরেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে শতাধিক সিরামিক শিল্প কারখানা। কিন্তু অপরিকল্পিত খনন ও লুটপাটে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সিরামিক শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল রাষ্ট্রীয় সম্পদ এই চিনা মাটির পাহাড়। বাংলাদেশ এগ্রো সিরামিক নামে একটি কোম্পানি দীর্ঘদিন যাবত ভেদীকুড়া মৌজায় অবস্থিত চিনমিাটির পাহাড় থেকে মাটি উত্তোলন করে আসছে। একটি স্থান থেকে মাটি উত্তোলনের পর সৃষ্ট গর্ত সাধারণ মাটি দিয়ে ভরাট করে অন্যস্থান থেকে মাটি উত্তোলন করার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে তা মানা হয় না।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বছরের পর বছর গর্ত করে মাটি উত্তোলনের পরও সৃষ্ট গর্ত ভরাট করা হয়নি। ফলে প্রাণহানির মত ঘটনাও ঘটে প্রায়ই। ২০১৪ সালে সৃষ্ট গর্তের মাটি ধ্বসে ১ শ্রমিকের মৃত্যু হলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আনিসুজ্জমান খান সরেজমিনে পরিদর্শন করে মাটি কাটা সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি একটি কমিটি গঠনও করে দেন। কিন্তু কিছুদিন বন্ধ থাকার পর সরকারী রাজস্ব ফাকি দিতে একটি প্রভাবশালী চক্র সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়েই এবড়োতেবড়োভাবে কেটে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করছে বাংলাদেশের মূল্যবান এই খনিজ সম্পদ। স্থানীয়দের অভিযোগ খনিজ সম্পদ ব্যুরো থেকে ৫০ হাজার বস্তা মাটি নেওয়ার অনুমোদন এনে প্রভাবশালীদের সহায়তায় লক্ষাধিক বস্তা মাটি নিয়ে যায়। এতে বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার । এ বিষয়ে দেখবাল করার কেউ নাই। ফলে একদিকে যেমন অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি হারাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়ের। এখনও চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। সব মিলিয়ে ধ্বংসের দ্বারপান্তে এসে দাড়িয়েছে মূল্যবান এই চিনামাটির পাহাড়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব জানান,ভেদীকুড়া পাহাড় থেকে চিনামাটি একপ্রকার হরিলুট করে নিয়ে যাচ্ছে,কখন কত বস্তা অনুমোদন দেয় তা কেউ জানে না,কিন্তু লক্ষ লক্ষ বস্তা মাটি নিয়ে যাচ্ছে, এতে পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক জানান, এগ্রো বাংলাদেশ নিজেরা মাটি উত্তোলণ না করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ত করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মেনেজ করে অতিরিক্ত বস্তা মাটি নিয়ে যায়। ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন বলেন চিনামাটির আমাদের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা,প্রতিবছর দূরদুরান্ত থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসে,কিন্তু চিনামাটি হরিলুটের কারনে বিলিন হয়ে যাচ্ছে পর্যটনের সম্ভাবনা। এ বিষয়ে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।

এ ব্যাপারে মেসার্স বাংলাদেশ এগ্রো সিরামিকস কোম্পানির মালিক গোলাম কিবরিয়া তপন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি কিন্তু মাটি উত্তোলনের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন আগে মাটি কাটার ছাড়পত্র পেলে আমাকে জানানো হতো কিন্তু এখন তারা কিভাবে মাটি উত্তোলন করছে তা জানিনা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিকুজ্জামান জানান,মাটি উত্তোলন বিষয়টি দেখাশোনা করার জন্য খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। মাটি উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা খনিজ সম্পদ মন্ত্র¿ণালয়ের উপ-পরিচালক মামুন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মাটি কাটার সময় আমাদের কোন লোক থাকে না তবে ছাড়পত্র দেওয়ার পর মাটি পরিবহনের সময় আমাদের লোক বিষয়টি দেখবাল করে। তবে অতিরিক্ত মাটি নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।