করোনার ভারতীয় ধরন নিয়ে শঙ্কা

সতর্ক করলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

ভারতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ভারতীয় ‘ডাবল ও ট্রিপল’ ভ্যারিয়েন্ট। বাংলাদেশের তিনদিকেই ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ দুই দেশে যাতায়াত করে। এ কারণে বাংলাদেশেও করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি দেখছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন বাংলাদেশে প্রবেশ করলে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের হাসপাতালগুলোতে শয্যা, অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটর সংকট প্রকট রূপ নিয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছেন রোগী। মারা যাওয়া লোকজনের ধর্মীয় অন্তষ্টিক্রিয়ায় হিমশিম খাচ্ছে শ্মশান কর্তৃপক্ষ। শ্মশানগুলোতে দিন-রাত জ্বলছে চিতা। থামছে না স্বজনহারা লোকজনের আহাজারি। এছাড়া টেস্টিং কিট স্বল্পতা, ওষুধ, পিপিই ও বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দেশটির পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পরেছে বলে ভারতের গণমাধ্যমের খবর প্রকাশ হচ্ছে।

যদিও সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় ২৬ এপ্রিল থেকে আগামী ৯ মে পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে সবকটি সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সীমান্ত বন্ধ থাকলেও জরুরি পণ্যবাহী বাহন চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সরকার।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, পণ্যবাহী বাহন চলাচল করলেও এগুলোর চালক ও সহকারীদের দেশে প্রবেশের পর কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যায়।

তবে বাংলাদেশে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে কীনা তা বলতে পারছেন না সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানান, ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ দেশে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কীনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

করোনার প্রথম ঢেউয়ে ভারতে দৈনিক সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল এক লাখেরও কম। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় গত ৪ এপ্রিল দৈনিক শনাক্ত এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর ১১ দিনের মাথায় গত ১৫ এপ্রিল দৈনিক শনাক্ত সোয়া দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়। আর ২১ এপ্রিল দৈনিক শনাক্ত সোয়া তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়। গত দু’দিন ধরে সাড়ে তিন লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ যাতায়াত করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেই গত একদিনে রেকর্ড ১৫ হাজার ৮৮৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর এদিন মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের।

ভারতে ছড়িয়েপড়া করোনার নতুন স্ট্রেইন (ধরন) বাংলাদেশে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘সব দেশের ভাইরাসই সব দেশের জন্য হুমকি। এটি জনস্বাস্থের জন্য হুমকি। আমরা সচেতন না থাকলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ভারতীয় ভাইরাসের হুমকি মোকাবিলা করা কঠিন।’

নতুন ধরনটি সংক্রমণ ছড়াতে

কতটা দায়ী?

ভারতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি সংক্রমণ ছড়াতে কতটা দায়ী, তা এখন পর্যন্ত নিরূপণ করতে পারেনি গবেষকরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোন ভাইরাসই প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়, নিজেদের নতুন নতুন সংস্করণ বা ধরন (স্ট্রেইন) তৈরি করে। কোন কোন পরিবর্তনে ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার কোন কোন পরিবর্তনের কারণে ভাইরাস আরও বিপজ্জনক বা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে, এতে প্রচলিত টিকায় সুরক্ষা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হয়েছে ‘বি.১.৬১৭’। এটি প্রথম শনাক্ত হয় গত অক্টোবরে। করোনাভাইরাসের এই ধরনটিকে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ও বলা হয়।

ভারতে নতুন ওই ধরনটি উল্লেখযোগ্য দুই পরিবর্তনের পর তৈরি হওয়ায় এটিকে ‘ডাবল মিউট্যান্ট’, ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’ বলছেন গবেষকরা। অক্টোবরে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের সময় দেশটিতে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। গত মার্চে দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়।

দেশটিতে করোনার নতুন ধরনটি কতটা সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তা নির্ণয়ে ভারতে বড় পরিসরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও হয়নি। তবে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সংগৃহীত ৩৬১টি নমুনার মধ্যে ২২০টিতে নতুন এই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

বৈশ্বিক তথ্যভা-ার ‘জিআইএসএআইডি’র তথ্য অনুযায়ী, করোনার নতুন ওই ধরনটি এরই মধ্যে ন্যূনতম ২১টি দেশে ছড়িয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি নাগাদ যুক্তরাজ্যে ১০৩ জনের শরীরে নতুন ওই ধরনটি শনাক্ত হয়। গত সপ্তাহে ইসরায়েলও সাতজনের শরীরে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ শনাক্ত হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য, ইরান, ইসরায়েল বেশ কয়েকটি দেশ ভারতে যাতায়াতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

ভারতের সর্বশেষ অবস্থা

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ভারতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে যাবতীয় রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃত্যুও।

দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন রূপ। ক্রমাগত জিনের বিবর্তনের মাধ্যমে ভাইরাসের নতুন রূপগুলো অনেক বেশি সংক্রামক হয়ে উঠছে। কিন্তু নতুন রূপগুলো আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।

দেশটির স্বাস্থ্য বিষেজ্ঞরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় সংক্রমণের প্রথম পর্বের তুলনায় মৃত্যুর মোট সংখ্যাও বেশি হচ্ছে। তবে এপ্রিলের শেষ দিকে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়লেও ৩টি অতি-সংক্রমিত অঞ্চলে (হটস্পট) কিছুটা হলেও স্থিতাবস্থা দেখা দিয়েছে। এই তিন অঞ্চল হলো মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ় এবং দিল্লি। সাধারণত সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছানোর পরই এই ‘স্থিতাবস্থা’।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গতকালের হিসাবে, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে বিশে^ একদিনে রেকর্ড তিন লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় দুই হাজার ৮১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত একদিনে দেশটিতে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২৫ শতাংশেরও বেশি।

দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের সংখ্যা এক কোটি ৭৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ৯৫ হাজারের কিছু বেশি। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১.১২ শতাংশ।

পালিয়ে যাওয়া ৭ করোনা রোগী আটক

ভারত থেকে এসে যশোর হাসপাতালে ভর্তির পর পালিয়ে যায় সাত করোনা রোগী। গতকাল এ খবর প্রকাশের পরপরই তাদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হয়, তবে খুব দ্রুতসময়ের মধ্যেই সাতজনকে ধরতে সক্ষম হয় পুলিশ।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানার পর পুলিশ বেনাপোল ইমিগ্রেশন থেকে সাতজনের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়। এরপর স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তাদের ধরা হয়। তাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

১৮ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে করোনা সংক্রমিত সাতজন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন। তারা যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে তারা পালিয়ে যান।

মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল ২০২১ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমজান ১৪৪২

করোনার ভারতীয় ধরন নিয়ে শঙ্কা

সতর্ক করলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ভারতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ভারতীয় ‘ডাবল ও ট্রিপল’ ভ্যারিয়েন্ট। বাংলাদেশের তিনদিকেই ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ দুই দেশে যাতায়াত করে। এ কারণে বাংলাদেশেও করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি দেখছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন বাংলাদেশে প্রবেশ করলে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের হাসপাতালগুলোতে শয্যা, অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটর সংকট প্রকট রূপ নিয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছেন রোগী। মারা যাওয়া লোকজনের ধর্মীয় অন্তষ্টিক্রিয়ায় হিমশিম খাচ্ছে শ্মশান কর্তৃপক্ষ। শ্মশানগুলোতে দিন-রাত জ্বলছে চিতা। থামছে না স্বজনহারা লোকজনের আহাজারি। এছাড়া টেস্টিং কিট স্বল্পতা, ওষুধ, পিপিই ও বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দেশটির পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পরেছে বলে ভারতের গণমাধ্যমের খবর প্রকাশ হচ্ছে।

যদিও সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় ২৬ এপ্রিল থেকে আগামী ৯ মে পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে সবকটি সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সীমান্ত বন্ধ থাকলেও জরুরি পণ্যবাহী বাহন চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সরকার।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, পণ্যবাহী বাহন চলাচল করলেও এগুলোর চালক ও সহকারীদের দেশে প্রবেশের পর কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যায়।

তবে বাংলাদেশে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে কীনা তা বলতে পারছেন না সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানান, ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ দেশে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কীনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

করোনার প্রথম ঢেউয়ে ভারতে দৈনিক সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল এক লাখেরও কম। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় গত ৪ এপ্রিল দৈনিক শনাক্ত এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর ১১ দিনের মাথায় গত ১৫ এপ্রিল দৈনিক শনাক্ত সোয়া দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়। আর ২১ এপ্রিল দৈনিক শনাক্ত সোয়া তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়। গত দু’দিন ধরে সাড়ে তিন লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ যাতায়াত করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেই গত একদিনে রেকর্ড ১৫ হাজার ৮৮৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর এদিন মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের।

ভারতে ছড়িয়েপড়া করোনার নতুন স্ট্রেইন (ধরন) বাংলাদেশে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘সব দেশের ভাইরাসই সব দেশের জন্য হুমকি। এটি জনস্বাস্থের জন্য হুমকি। আমরা সচেতন না থাকলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ভারতীয় ভাইরাসের হুমকি মোকাবিলা করা কঠিন।’

নতুন ধরনটি সংক্রমণ ছড়াতে

কতটা দায়ী?

ভারতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি সংক্রমণ ছড়াতে কতটা দায়ী, তা এখন পর্যন্ত নিরূপণ করতে পারেনি গবেষকরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোন ভাইরাসই প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়, নিজেদের নতুন নতুন সংস্করণ বা ধরন (স্ট্রেইন) তৈরি করে। কোন কোন পরিবর্তনে ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার কোন কোন পরিবর্তনের কারণে ভাইরাস আরও বিপজ্জনক বা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে, এতে প্রচলিত টিকায় সুরক্ষা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হয়েছে ‘বি.১.৬১৭’। এটি প্রথম শনাক্ত হয় গত অক্টোবরে। করোনাভাইরাসের এই ধরনটিকে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ও বলা হয়।

ভারতে নতুন ওই ধরনটি উল্লেখযোগ্য দুই পরিবর্তনের পর তৈরি হওয়ায় এটিকে ‘ডাবল মিউট্যান্ট’, ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’ বলছেন গবেষকরা। অক্টোবরে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের সময় দেশটিতে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। গত মার্চে দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়।

দেশটিতে করোনার নতুন ধরনটি কতটা সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তা নির্ণয়ে ভারতে বড় পরিসরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও হয়নি। তবে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সংগৃহীত ৩৬১টি নমুনার মধ্যে ২২০টিতে নতুন এই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

বৈশ্বিক তথ্যভা-ার ‘জিআইএসএআইডি’র তথ্য অনুযায়ী, করোনার নতুন ওই ধরনটি এরই মধ্যে ন্যূনতম ২১টি দেশে ছড়িয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি নাগাদ যুক্তরাজ্যে ১০৩ জনের শরীরে নতুন ওই ধরনটি শনাক্ত হয়। গত সপ্তাহে ইসরায়েলও সাতজনের শরীরে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ শনাক্ত হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য, ইরান, ইসরায়েল বেশ কয়েকটি দেশ ভারতে যাতায়াতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

ভারতের সর্বশেষ অবস্থা

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ভারতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে যাবতীয় রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃত্যুও।

দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন রূপ। ক্রমাগত জিনের বিবর্তনের মাধ্যমে ভাইরাসের নতুন রূপগুলো অনেক বেশি সংক্রামক হয়ে উঠছে। কিন্তু নতুন রূপগুলো আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।

দেশটির স্বাস্থ্য বিষেজ্ঞরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় সংক্রমণের প্রথম পর্বের তুলনায় মৃত্যুর মোট সংখ্যাও বেশি হচ্ছে। তবে এপ্রিলের শেষ দিকে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়লেও ৩টি অতি-সংক্রমিত অঞ্চলে (হটস্পট) কিছুটা হলেও স্থিতাবস্থা দেখা দিয়েছে। এই তিন অঞ্চল হলো মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ় এবং দিল্লি। সাধারণত সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছানোর পরই এই ‘স্থিতাবস্থা’।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গতকালের হিসাবে, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে বিশে^ একদিনে রেকর্ড তিন লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় দুই হাজার ৮১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত একদিনে দেশটিতে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২৫ শতাংশেরও বেশি।

দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের সংখ্যা এক কোটি ৭৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ৯৫ হাজারের কিছু বেশি। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১.১২ শতাংশ।

পালিয়ে যাওয়া ৭ করোনা রোগী আটক

ভারত থেকে এসে যশোর হাসপাতালে ভর্তির পর পালিয়ে যায় সাত করোনা রোগী। গতকাল এ খবর প্রকাশের পরপরই তাদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হয়, তবে খুব দ্রুতসময়ের মধ্যেই সাতজনকে ধরতে সক্ষম হয় পুলিশ।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানার পর পুলিশ বেনাপোল ইমিগ্রেশন থেকে সাতজনের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়। এরপর স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তাদের ধরা হয়। তাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

১৮ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে করোনা সংক্রমিত সাতজন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন। তারা যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে তারা পালিয়ে যান।