বিধিনিষেধ বাড়ছে আরও এক সপ্তাহ

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান কঠোর লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ছে। গতকাল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। আগামী ২৮ এপ্রিল রাত ১২টার পর থেকে এ লকডাউন কার্যকর হবে। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে দোকানপাট-শপিংমল খোলা রেখে লকডাউন সময় বৃদ্ধি করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। তাদের মতে, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির একটি ভালো উৎস হচ্ছে মার্কেট-শপিংমল। এসব খোলা রেখে লকডাউন দিলে তাতে ফল পাওয়া যাবে না।

গতকাল লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর কথা বলতে গিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে চলমান বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর আগে যে বিধিনিষেধগুলো ছিল, সেগুলো এখনও কার্যকর হবে। তবে এ সময় দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চালু থাকবে।

দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথম দফায় গত ৫ এপ্রিল এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়। ওই বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতা চলে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়, যা চলে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে লকডাউনের মেয়াদ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন নামে পরিচিতি পায়। পরে এর মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়। শুরুতে লকডাউনে শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও ‘জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে’ গত রোববার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গত শুক্রবারের প্রজ্ঞাপনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও ঢাকা মহানগর পুলিশ রোববার বলেছে, ঈদের আগে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকান-শপিংমল খোলা রাখা যাবে বলে তাদের জানানো হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে সব ধরনের অফিস ও পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন করা যাচ্ছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সতর্কতার অংশ হিসেবে সীমিত জনবল দিয়ে বিভিন্ন শাখা চালু রেখেছে ব্যাংকগুলো।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, লকডাউন আরোপ এবং তা কখন, কীভাবে তুলে নিতে হবে সে সম্পর্কে আমাদের পরিকল্পনা যথার্থভাবে হচ্ছে না। লকডাউন দেয়ার পর পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হলো তা বিবেচনা করে লকডাউন তুলতে হবে। কোন স্থানে করোনা বেশি ছড়ানোর ঝুঁকি আছে- তা নির্ধারণ করে সে স্থানে লকডাউন তোলা যাবে না। যেখানে করোনা কম ছড়াচ্ছে সেখানেও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে লকডাউন তুলতে হবে। এখন মার্কেটগুলো হচ্ছে করোনা ছড়ানোর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। সেই মার্কেট খোলা রেখে লকডাউন মেয়াদ যতই বাড়ানো হোক সুফল পাওয়া যাবে না।

মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল ২০২১ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমজান ১৪৪২

বিধিনিষেধ বাড়ছে আরও এক সপ্তাহ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান কঠোর লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ছে। গতকাল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। আগামী ২৮ এপ্রিল রাত ১২টার পর থেকে এ লকডাউন কার্যকর হবে। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে দোকানপাট-শপিংমল খোলা রেখে লকডাউন সময় বৃদ্ধি করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। তাদের মতে, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির একটি ভালো উৎস হচ্ছে মার্কেট-শপিংমল। এসব খোলা রেখে লকডাউন দিলে তাতে ফল পাওয়া যাবে না।

গতকাল লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর কথা বলতে গিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে চলমান বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর আগে যে বিধিনিষেধগুলো ছিল, সেগুলো এখনও কার্যকর হবে। তবে এ সময় দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চালু থাকবে।

দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথম দফায় গত ৫ এপ্রিল এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়। ওই বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতা চলে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়, যা চলে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে লকডাউনের মেয়াদ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন নামে পরিচিতি পায়। পরে এর মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়। শুরুতে লকডাউনে শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও ‘জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে’ গত রোববার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গত শুক্রবারের প্রজ্ঞাপনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও ঢাকা মহানগর পুলিশ রোববার বলেছে, ঈদের আগে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকান-শপিংমল খোলা রাখা যাবে বলে তাদের জানানো হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে সব ধরনের অফিস ও পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন করা যাচ্ছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সতর্কতার অংশ হিসেবে সীমিত জনবল দিয়ে বিভিন্ন শাখা চালু রেখেছে ব্যাংকগুলো।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, লকডাউন আরোপ এবং তা কখন, কীভাবে তুলে নিতে হবে সে সম্পর্কে আমাদের পরিকল্পনা যথার্থভাবে হচ্ছে না। লকডাউন দেয়ার পর পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হলো তা বিবেচনা করে লকডাউন তুলতে হবে। কোন স্থানে করোনা বেশি ছড়ানোর ঝুঁকি আছে- তা নির্ধারণ করে সে স্থানে লকডাউন তোলা যাবে না। যেখানে করোনা কম ছড়াচ্ছে সেখানেও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে লকডাউন তুলতে হবে। এখন মার্কেটগুলো হচ্ছে করোনা ছড়ানোর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। সেই মার্কেট খোলা রেখে লকডাউন মেয়াদ যতই বাড়ানো হোক সুফল পাওয়া যাবে না।