উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি সংক্রমণের চরম ঝুঁকি, দায় নিতে রাজি নয় কেউ
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বন্দর সংশ্লিষ্টরা। প্রতিদিন ভারত থেকে আসা শত শত ট্রাকচালক ও হেলপার বন্দরের অভ্যন্তরে ঢুকে যথেচ্ছ ঘোরাঘুরি করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকসহ বন্দরে নিয়োজিতরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের অন্যান্য বন্দরের ন্যায় সোমবার থেকে ১৪ দিনের জন্য ভোমরা স্থলবন্দরে যাত্রী চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলেও চরম উদাসীনতায় চলছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ভারত থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য নিয়ে তিন শতাধিক ট্রাক ঢুকছে বাংলাদেশে। ভারত থেকে আসা এসব ট্রাকের কোন স্যানিটাইজ করা হচ্ছে না। এমনকি ট্রাকের চালক ও হেলপারের জন্যও কোন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।
এ সমস্ত ট্রাক চালক বন্দরের মধ্যে ট্রাক রেখে অবাধে ঘুরছে যত্রতত্র। খাওয়া-দাওয়া করছে স্থানীয় হোটেলগুলোতে আর এসব ট্রাক থেকে কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করেই মালামাল নামাচ্ছে স্থানীয় শ্রমিকরা। ফলে করোনা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে শ্রমিকসহ ব্যবসায়ীরা। তবে এসবের দায় নিতে রাজি হচ্ছে না কোন বিভাগই। কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করেই কার্যক্রম পরিচালনা করায় চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বন্দর ব্যবহারকারী ও স্থানীয়রা। শীঘ্রই দেশের সর্বদক্ষিণের জনপদ ভোমরা স্থলবন্দরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা না করলে করোনা সংক্রমণ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে সাতক্ষীরাবাসী।
ভোমরা স্থলবন্দরের মেডিকেল ইনচার্জ আব্দুস শহিদ জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ভোমরা স্থলবন্দরে একটি মেডিকেল টিম নিয়োজিত রাখলেও তাদের পক্ষ থেকে পণ্যবাহী ভারত থেকে আসা ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যাপারে তারা সেখানকার ব্যবস্থাপনা ঘাটতি থাকার কারণ উল্লেখ করেন।
ভোমরা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ বিশ্বজিত সরকার জানান, ইমিগ্রেশনের মধ্যে একটি থার্মাল স্ক্যনার রয়েছে। যার মধ্য দিয়ে কেউ গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার শরীরের তাপমাত্রা দেখা যায়। সেটি মূলত : পাসপোর্ট যাত্রীদের জন্য ব্যবহার করা হয় কিন্তু বর্তমানে পাসপোর্ট যাত্রী আসা-যাওয়া বন্ধ থাকায় থার্মাল স্ক্যানারটি এখন ব্যবহার হচ্ছে না।
ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, অচিরেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
কাস্টমস সুপার আকবর আলী জানান, রোববারও ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ৩৪১টি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এসব ট্রাকের মালামাল নামিয়ে দিয়ে তাদের অধিকাংশ আবার ফিরেও যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার বিষয়টি আমাদের দেখভাল করার দায়িত্ব নয় বলে জানান তিনি।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন জানান, জিরো পয়েন্টে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে আমাদের কর্মীদের হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। ভারতীয় চালক ও হেলপারের বিষয়টি সব সময় দেখা সম্ভব হয় না।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত জানান, ভারতীয় চালক বা হেলপারদের এখন থেকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট একটি হোটেল বা স্থান ঠিক করা উচিত। একই সঙ্গে তারা যেন বাইরে যেতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি করা প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, বিষয়টি নিয়ে সোমবার জরুরিভাবে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি জুম মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে ভারত থেকে আসা ট্রাকচালক ও হেলপারদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা : ভোমরা স্থলবন্দরে প্রতিদিন আসছে শত শত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। এর চালক ও হেলপাররা ঘুরছে অবাধে, মানছে না স্বাস্থ্যবিধি, দেখার কেউ নেই -সংবাদ
আরও খবরমঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল ২০২১ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমজান ১৪৪২
উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি সংক্রমণের চরম ঝুঁকি, দায় নিতে রাজি নয় কেউ
প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরা : ভোমরা স্থলবন্দরে প্রতিদিন আসছে শত শত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। এর চালক ও হেলপাররা ঘুরছে অবাধে, মানছে না স্বাস্থ্যবিধি, দেখার কেউ নেই -সংবাদ
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বন্দর সংশ্লিষ্টরা। প্রতিদিন ভারত থেকে আসা শত শত ট্রাকচালক ও হেলপার বন্দরের অভ্যন্তরে ঢুকে যথেচ্ছ ঘোরাঘুরি করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকসহ বন্দরে নিয়োজিতরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের অন্যান্য বন্দরের ন্যায় সোমবার থেকে ১৪ দিনের জন্য ভোমরা স্থলবন্দরে যাত্রী চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলেও চরম উদাসীনতায় চলছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ভারত থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য নিয়ে তিন শতাধিক ট্রাক ঢুকছে বাংলাদেশে। ভারত থেকে আসা এসব ট্রাকের কোন স্যানিটাইজ করা হচ্ছে না। এমনকি ট্রাকের চালক ও হেলপারের জন্যও কোন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।
এ সমস্ত ট্রাক চালক বন্দরের মধ্যে ট্রাক রেখে অবাধে ঘুরছে যত্রতত্র। খাওয়া-দাওয়া করছে স্থানীয় হোটেলগুলোতে আর এসব ট্রাক থেকে কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করেই মালামাল নামাচ্ছে স্থানীয় শ্রমিকরা। ফলে করোনা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে শ্রমিকসহ ব্যবসায়ীরা। তবে এসবের দায় নিতে রাজি হচ্ছে না কোন বিভাগই। কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করেই কার্যক্রম পরিচালনা করায় চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বন্দর ব্যবহারকারী ও স্থানীয়রা। শীঘ্রই দেশের সর্বদক্ষিণের জনপদ ভোমরা স্থলবন্দরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা না করলে করোনা সংক্রমণ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে সাতক্ষীরাবাসী।
ভোমরা স্থলবন্দরের মেডিকেল ইনচার্জ আব্দুস শহিদ জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ভোমরা স্থলবন্দরে একটি মেডিকেল টিম নিয়োজিত রাখলেও তাদের পক্ষ থেকে পণ্যবাহী ভারত থেকে আসা ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যাপারে তারা সেখানকার ব্যবস্থাপনা ঘাটতি থাকার কারণ উল্লেখ করেন।
ভোমরা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ বিশ্বজিত সরকার জানান, ইমিগ্রেশনের মধ্যে একটি থার্মাল স্ক্যনার রয়েছে। যার মধ্য দিয়ে কেউ গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার শরীরের তাপমাত্রা দেখা যায়। সেটি মূলত : পাসপোর্ট যাত্রীদের জন্য ব্যবহার করা হয় কিন্তু বর্তমানে পাসপোর্ট যাত্রী আসা-যাওয়া বন্ধ থাকায় থার্মাল স্ক্যানারটি এখন ব্যবহার হচ্ছে না।
ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, অচিরেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
কাস্টমস সুপার আকবর আলী জানান, রোববারও ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ৩৪১টি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এসব ট্রাকের মালামাল নামিয়ে দিয়ে তাদের অধিকাংশ আবার ফিরেও যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার বিষয়টি আমাদের দেখভাল করার দায়িত্ব নয় বলে জানান তিনি।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন জানান, জিরো পয়েন্টে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে আমাদের কর্মীদের হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। ভারতীয় চালক ও হেলপারের বিষয়টি সব সময় দেখা সম্ভব হয় না।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত জানান, ভারতীয় চালক বা হেলপারদের এখন থেকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট একটি হোটেল বা স্থান ঠিক করা উচিত। একই সঙ্গে তারা যেন বাইরে যেতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি করা প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, বিষয়টি নিয়ে সোমবার জরুরিভাবে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি জুম মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে ভারত থেকে আসা ট্রাকচালক ও হেলপারদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।