হঠাৎ করেই বন্ধ অক্সিজেন আমদানি

কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সংকটের আশঙ্কা

করোনা মহামারীর এই সময়ে হঠাৎ করেই বেনাপোল বন্দর দিয়ে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে অক্সিজেন আমদানি হয়েছে কিন্তু হঠাৎ করেই ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় গত চারদিনে কোন অক্সিজেন দেশে আসেনি। অন্যদিকে, ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় সিলেট বিভাগের একমাত্র ডেডিকেটেড চিকিৎসাকেন্দ্র শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের চিকিৎসা খাতে অক্সিজেনের চাহিদার বড় একটি অংশ আমদানি হয় ভারত থেকে। প্রতিমাসে শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়েই প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন অক্সিজেন আমদানি হয়ে থাকে। করোনাকালে আক্রান্তদের জীবন বাঁচাতে সম্প্রতি এ অক্সিজেনের চাহিদা আরও বাড়ে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি।

বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্কের কারণে করোনা মহামারীর এই সময়েও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে জীবন রক্ষাকারী গ্যাস অক্সিজেন আমদানি অব্যাহত ছিল। গত ১৩ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিনে এই বন্দর দিয়ে ৬৯০ মে. টন অক্সিজেন রপ্তানি করে ভারত। এদিকে ভারতেও অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়ায় কোন ঘোষণা ছাড়াই তারা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীসহ স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।

ওপারের রপ্তানিকারকরা দেশের আমদানিকারকদের জানিয়েছেন, অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধে তাদের ওপর চাপ রয়েছে। ভারতের চাহিদার কথা ভেবে বাংলাদেশে অক্সিজেন রপ্তানি সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপ চলছে। এতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ভারতে অক্সিজেন স্বল্পতা রয়েছে। তারপরও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন এবং বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী হওয়ায় বাংলাদেশকে তারা তরল অক্সিজেন প্রদান অব্যাহত রাখবে বলে আশা করি।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সব সময়ই সুসম্পর্ক বিদ্যমান। তাই করোনার এ সময়ে ভারতের উচিত কম করে হলেও অক্সিজেন রপ্তানি সচল রাখা। বেনাপোল স্থলবন্দর বেনাপোল উপপরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, গত ৪ দিনে বন্দর দিয়ে কোন অক্সিজেনের চালান আসেনি। তবে এ নিয়ে সরকারি কোন নির্দেশনাও পাননি তারা।

সিলেট প্রতিনিধি জানান, ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় সিলেট বিভাগের একমাত্র ডেডিকেটেড চিকিৎসাকেন্দ্র শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে তরল অক্সিজেন সরবরাহ করে স্পেকট্রা অক্সিজেন নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করে সরবরাহ করে। তবে সম্প্রতি ভারতে অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে প্রতিবেশী এই দেশে মারা যাচ্ছেন শত শত লোক। চারদিন ধরে ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানিও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় স্পেকট্রার পক্ষ থেকে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে আগের মতো অক্সিজেন সরবরাহ সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে সিলেটে চাহিদা পরিমাণ অক্সিজেন মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত রোগীর চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করছে স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ভবিষ্যতেও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সর্বোচ্চ সরবরাহ নিশ্চিত করবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল ২০২১ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমজান ১৪৪২

হঠাৎ করেই বন্ধ অক্সিজেন আমদানি

কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সংকটের আশঙ্কা

প্রতিনিধি, যশোর ও সিলেট

করোনা মহামারীর এই সময়ে হঠাৎ করেই বেনাপোল বন্দর দিয়ে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে অক্সিজেন আমদানি হয়েছে কিন্তু হঠাৎ করেই ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় গত চারদিনে কোন অক্সিজেন দেশে আসেনি। অন্যদিকে, ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় সিলেট বিভাগের একমাত্র ডেডিকেটেড চিকিৎসাকেন্দ্র শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের চিকিৎসা খাতে অক্সিজেনের চাহিদার বড় একটি অংশ আমদানি হয় ভারত থেকে। প্রতিমাসে শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়েই প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন অক্সিজেন আমদানি হয়ে থাকে। করোনাকালে আক্রান্তদের জীবন বাঁচাতে সম্প্রতি এ অক্সিজেনের চাহিদা আরও বাড়ে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি।

বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্কের কারণে করোনা মহামারীর এই সময়েও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে জীবন রক্ষাকারী গ্যাস অক্সিজেন আমদানি অব্যাহত ছিল। গত ১৩ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিনে এই বন্দর দিয়ে ৬৯০ মে. টন অক্সিজেন রপ্তানি করে ভারত। এদিকে ভারতেও অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়ায় কোন ঘোষণা ছাড়াই তারা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীসহ স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।

ওপারের রপ্তানিকারকরা দেশের আমদানিকারকদের জানিয়েছেন, অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধে তাদের ওপর চাপ রয়েছে। ভারতের চাহিদার কথা ভেবে বাংলাদেশে অক্সিজেন রপ্তানি সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপ চলছে। এতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ভারতে অক্সিজেন স্বল্পতা রয়েছে। তারপরও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন এবং বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী হওয়ায় বাংলাদেশকে তারা তরল অক্সিজেন প্রদান অব্যাহত রাখবে বলে আশা করি।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সব সময়ই সুসম্পর্ক বিদ্যমান। তাই করোনার এ সময়ে ভারতের উচিত কম করে হলেও অক্সিজেন রপ্তানি সচল রাখা। বেনাপোল স্থলবন্দর বেনাপোল উপপরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, গত ৪ দিনে বন্দর দিয়ে কোন অক্সিজেনের চালান আসেনি। তবে এ নিয়ে সরকারি কোন নির্দেশনাও পাননি তারা।

সিলেট প্রতিনিধি জানান, ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় সিলেট বিভাগের একমাত্র ডেডিকেটেড চিকিৎসাকেন্দ্র শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে তরল অক্সিজেন সরবরাহ করে স্পেকট্রা অক্সিজেন নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করে সরবরাহ করে। তবে সম্প্রতি ভারতে অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে প্রতিবেশী এই দেশে মারা যাচ্ছেন শত শত লোক। চারদিন ধরে ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানিও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় স্পেকট্রার পক্ষ থেকে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে আগের মতো অক্সিজেন সরবরাহ সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে সিলেটে চাহিদা পরিমাণ অক্সিজেন মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত রোগীর চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করছে স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ভবিষ্যতেও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সর্বোচ্চ সরবরাহ নিশ্চিত করবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।