২৭ টাকায় ধান, ৪০ টাকায় চাল কিনবে সরকার

৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল ও ২৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হবে বলে জানিয়েছে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। পাশাপাশি আগামী ৩০ এপ্রিলের পর বেসরকারিভাবে চাল আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রী। গতকাল আসন্ন বোরো সংগ্রহ কর্মসূচি উপলক্ষে ভার্চুয়ালি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান তিনি।

বোরো মৌসুমে চাল আমদানি অব্যাহত রাখা হবে কিনা এবং রাখলে কৃষকরা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমাদের যে বেসরকারি আমদানি সেটা বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হয়েছে বলতে যতটুকু এলসি করেছে সেটা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আমদানি বা আনাতে হবে। যদি না আনতে পারে তাহলে ৩০ এপ্রিলের পর বেসরকারিভাবে দেশে কোন চাল ঢুকবে না। কৃষকের যাতে ক্ষতি না হয় সে কথা বিবেচনায় নিয়েই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছি।

কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেয়ার জন্য ধান ও চালের দাম বাড়িয়েছেন। এতে চালের দাম ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিনা জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন বলেন, আমরা সবাই সিন্ডিকেটের কথা বলি, কিন্তু সিন্ডিকেট কেউ ধরিয়ে দিতে পারে না। আমরাতো সিন্ডিকেট পাইনি। যদি চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ভালো থাকে তাহলে কোন সিন্ডিকেট কাজ করে না। যেখানে ২০ হাজার মিল রয়েছে। সেখানে সিন্ডিকেট করতে পারে না এটা মনে রাখতে হবে। আগে অটোরাইস মিলে ক্রাসিংয়ের পাঁচ গুণের বেশি মজুদ রাখতে পারত কিন্তু আমরা এসআরও জারি করে কমিয়ে দিয়েছি। ফলে এখন সেটা তিনগুণের বেশি পারে না। এ তিনগুণের মধ্যে একটা বাজারে থাকবে, ক্রাসিংয়ে থাকবে ও গুদামে থাকবে। এ অবস্থায় সিন্ডিকেট করে পার পাওয়ার কথা না। আমি আপনাদের অনুরোধ করব যদি এমন কোন কিছুর খবর পান তাহলে দয়া করে আমাদের জানাবেন। আমরাও খোঁজে আছি, গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করছে। এর পাশাপাশি কোন ফরিয়া ধান কিনতে গেলে তাকে লাইসেন্স নিতে হবে। একই সঙ্গে কি পরিমাণ ধান কিনল তার রির্টানসহ হিসাব দিতে হবে সাত দিন পর পর।

১৫ লাখ টন ধান কিনবেন বলে ২৫ এপ্রিল কৃষিমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন কিন্তু আজ আপনি বলছেন সাড়ে ১১ লাখ টন চাল ও সাড়ে ছয় লাখ টন ধান এতে কৃষকের মনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ধান ও চাল মিলিয়ে আমাদের ১৫ লাখ টন চালের লক্ষ্যমাত্রা। এর মধ্যে সাড়ে ১১ লাখ টন চাল ও সাড়ে ছয় লাখ টন ধান। এ সাড়ে ছয় লাখ টন ধানকে চালে রূপান্তরিত করলে সাড়ে তিন বা চার লাখ টন চাল পাওয়া যাবে। সে হিসাবে ১৫ লাখ টন বা তার বেশি চাল সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে।

২০০ পেডি সাইলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন আরও বলেন, ৫ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ২০০টি পেডি সাইলো করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্ল্যান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারপর পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৩০টি জিওবি ফান্ডের মাধ্যমে অনুমোদন করা হয়। সেখানে ৫ হাজারের স্থানে ভলিউম বাড়িয়ে ১০ হাজার করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশি ফান্ডে আরও ১৭০টি পেডি সাইলোর জন্য ইআরডিতে আবেদন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে খাদ্য সচিব বলেন, আমাদের সাড়ে ছয় লাখ টন ধান, সাড়ে ১০ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও এক লাখ টন আতপ চাল কনভার্ট করলে আমাদের ১৫ লাখ ২০ হাজার টন চাল হবে। প্রয়োজন হলে আমরা আরও বেশি কিনতে পারব কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ধান ক্রাসিং নিয়ে। বরিশাল এলাকায় আমাদের প্রায় ৬০০ টন ধান রয়েছে যা কোন মিল ক্রাস করে দিচ্ছে না। কারণ বরিশালে কোন মিলার নেই। তাই ধান কিনে সারা বছর আমাদের ধান রেখে দিতে হচ্ছে। এসব জটিলতা আছে আমাদের। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ছয় লাখ টন ধান কিনব, প্রয়োজন হলে আরও কেনা হবে।

একই সঙ্গে ধান দিতে লটারিতে কৃষকের নাম উঠলে সে যাতে অন্য কারও কাছে স্লিপটা বিক্রি না করে সংবাদ সম্মেলনে সেই অনুরোধ জানান খাদ্য সচিব নাজমানারা খানুম।

সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, ২৮ এপ্রিল থেকে ধান ও আগামী ৭ মে থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হবে। সংগ্রহ শেষ হবে আগামী ৩১ আগস্ট। চলতি বোরো মৌসুমে ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ১১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল (আতপ ও সেদ্ধ) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গতবছর বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। গত বোরো মৌসুমে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান ও ১১ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার।

মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল ২০২১ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমজান ১৪৪২

৩০ এপ্রিলের পর বেসরকারি চাল আমদানি বন্ধ

২৭ টাকায় ধান, ৪০ টাকায় চাল কিনবে সরকার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল ও ২৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হবে বলে জানিয়েছে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। পাশাপাশি আগামী ৩০ এপ্রিলের পর বেসরকারিভাবে চাল আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রী। গতকাল আসন্ন বোরো সংগ্রহ কর্মসূচি উপলক্ষে ভার্চুয়ালি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান তিনি।

বোরো মৌসুমে চাল আমদানি অব্যাহত রাখা হবে কিনা এবং রাখলে কৃষকরা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমাদের যে বেসরকারি আমদানি সেটা বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হয়েছে বলতে যতটুকু এলসি করেছে সেটা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আমদানি বা আনাতে হবে। যদি না আনতে পারে তাহলে ৩০ এপ্রিলের পর বেসরকারিভাবে দেশে কোন চাল ঢুকবে না। কৃষকের যাতে ক্ষতি না হয় সে কথা বিবেচনায় নিয়েই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছি।

কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেয়ার জন্য ধান ও চালের দাম বাড়িয়েছেন। এতে চালের দাম ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিনা জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন বলেন, আমরা সবাই সিন্ডিকেটের কথা বলি, কিন্তু সিন্ডিকেট কেউ ধরিয়ে দিতে পারে না। আমরাতো সিন্ডিকেট পাইনি। যদি চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ভালো থাকে তাহলে কোন সিন্ডিকেট কাজ করে না। যেখানে ২০ হাজার মিল রয়েছে। সেখানে সিন্ডিকেট করতে পারে না এটা মনে রাখতে হবে। আগে অটোরাইস মিলে ক্রাসিংয়ের পাঁচ গুণের বেশি মজুদ রাখতে পারত কিন্তু আমরা এসআরও জারি করে কমিয়ে দিয়েছি। ফলে এখন সেটা তিনগুণের বেশি পারে না। এ তিনগুণের মধ্যে একটা বাজারে থাকবে, ক্রাসিংয়ে থাকবে ও গুদামে থাকবে। এ অবস্থায় সিন্ডিকেট করে পার পাওয়ার কথা না। আমি আপনাদের অনুরোধ করব যদি এমন কোন কিছুর খবর পান তাহলে দয়া করে আমাদের জানাবেন। আমরাও খোঁজে আছি, গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করছে। এর পাশাপাশি কোন ফরিয়া ধান কিনতে গেলে তাকে লাইসেন্স নিতে হবে। একই সঙ্গে কি পরিমাণ ধান কিনল তার রির্টানসহ হিসাব দিতে হবে সাত দিন পর পর।

১৫ লাখ টন ধান কিনবেন বলে ২৫ এপ্রিল কৃষিমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন কিন্তু আজ আপনি বলছেন সাড়ে ১১ লাখ টন চাল ও সাড়ে ছয় লাখ টন ধান এতে কৃষকের মনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ধান ও চাল মিলিয়ে আমাদের ১৫ লাখ টন চালের লক্ষ্যমাত্রা। এর মধ্যে সাড়ে ১১ লাখ টন চাল ও সাড়ে ছয় লাখ টন ধান। এ সাড়ে ছয় লাখ টন ধানকে চালে রূপান্তরিত করলে সাড়ে তিন বা চার লাখ টন চাল পাওয়া যাবে। সে হিসাবে ১৫ লাখ টন বা তার বেশি চাল সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে।

২০০ পেডি সাইলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন আরও বলেন, ৫ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ২০০টি পেডি সাইলো করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্ল্যান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারপর পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৩০টি জিওবি ফান্ডের মাধ্যমে অনুমোদন করা হয়। সেখানে ৫ হাজারের স্থানে ভলিউম বাড়িয়ে ১০ হাজার করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশি ফান্ডে আরও ১৭০টি পেডি সাইলোর জন্য ইআরডিতে আবেদন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে খাদ্য সচিব বলেন, আমাদের সাড়ে ছয় লাখ টন ধান, সাড়ে ১০ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও এক লাখ টন আতপ চাল কনভার্ট করলে আমাদের ১৫ লাখ ২০ হাজার টন চাল হবে। প্রয়োজন হলে আমরা আরও বেশি কিনতে পারব কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ধান ক্রাসিং নিয়ে। বরিশাল এলাকায় আমাদের প্রায় ৬০০ টন ধান রয়েছে যা কোন মিল ক্রাস করে দিচ্ছে না। কারণ বরিশালে কোন মিলার নেই। তাই ধান কিনে সারা বছর আমাদের ধান রেখে দিতে হচ্ছে। এসব জটিলতা আছে আমাদের। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ছয় লাখ টন ধান কিনব, প্রয়োজন হলে আরও কেনা হবে।

একই সঙ্গে ধান দিতে লটারিতে কৃষকের নাম উঠলে সে যাতে অন্য কারও কাছে স্লিপটা বিক্রি না করে সংবাদ সম্মেলনে সেই অনুরোধ জানান খাদ্য সচিব নাজমানারা খানুম।

সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, ২৮ এপ্রিল থেকে ধান ও আগামী ৭ মে থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হবে। সংগ্রহ শেষ হবে আগামী ৩১ আগস্ট। চলতি বোরো মৌসুমে ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ১১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল (আতপ ও সেদ্ধ) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গতবছর বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। গত বোরো মৌসুমে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান ও ১১ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার।