আরমানিটোলায় আগুন

গ্রিল কেটে পালায় কেমিক্যাল ব্যবসায়ী মোস্তফা ছিল না অনুমোদন

পুরান ঢাকার আরমানিটোলার মুসা ম্যানশনের নিচতলায় কেমিক্যালের গোডাউন ও দোকান ছিল মোহাম্মদ মোস্তফার। নিজে থাকতেন ভবনের দোতলায়। গত ২৩ এপ্রিল ভোরে অগ্নিকাণ্ডের সময় জানালার গ্রিল কেটে পরিবার নিয়ে পালান তিনি। অবৈধ কেমিক্যাল ব্যবসার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরতে পারে এমন আশঙ্কায় ঘটনার পরপরই পরিবারসহ গা-ঢাকা দেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। র‌্যাব তাকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আরমানিটোলা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, মোস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ মোস্তফা। এদের মধ্যে মোস্তাফিজুরকে বগুড়া এবং মোস্তফাকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুইজনেরই মুসা ম্যানশনের নিচতলায় অবৈধ কেমিক্যালের দোকান ও গোডাউন ছিল। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থ গুদামজাত করে আসছিল এই দুই ব্যবসায়ী। যার কোন অনুমোদন ছিল না। মোস্তাফিজুর রহমান মঈন অ্যান্ড বাদার্স এন্টারপ্রাইজের মালিক। মোহাম্মদ মোস্তফা মেসার্স আরএস এন্টারপ্রাইজের মালিক। মুসা ম্যানশনের নিচতলায়ই ছিল তাদের দুটি গোডাউন। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মোস্তফা ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। অগ্নিকাণ্ডের পর জানালার গ্রিল কেটে তিনি পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান। তিনি নিজেও আহত হয়েছেন। মোস্তাফিজুর রহমানের বাসা কেরানীগঞ্জে। ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে বগুড়া চলে যান। মালিক মোস্তাক আহমেদ চিশতীকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

গত শুক্রবার পুরান ঢাকার আরমানিটোলার মুসা ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বংশাল থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেন। বংশাল থানায় মুসা ম্যানশনের মালিক মোস্তফাসহ ৮ জনের নামে একটি মামলা করে পুলিশ। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি করেন বংশাল থানার এসআই মোহাম্মদ আলী শিকদার। মামলার আসামিরা হলো, মোস্তাক আহমেদ চিশতি, মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ মোস্তফা, গাফফার, সাইদ, ফিরোজ, তারেক ও বাপ্পী। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মুসা ম্যানশনের মালিক মোস্তফা আহম্মেদসহ অন্য কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা মুসা ম্যানশনের নিচতলায় দাহ্য পদার্থ এবং কেমিক্যাল সংরক্ষণের জন্য দোকান/গোডাউন হিসেবে তাচ্ছিল্যভাবে ব্যবহার করে। কেমিক্যালের দোকান/গোডাউনে আগুন লাগার ফলে কেমিক্যালের বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এবং আগুনে দগ্ধ হয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই বাড়িতে বসবাসরত আবাসিক ভাড়াটিয়াদের বিভিন্ন আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে ও ভাঙচুর হয়ে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আসামিরা তাচ্ছিল্যভাবে মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও লাভবান হওয়ার জন্য আবাসিক স্থলে অবৈধভাবে দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যাল সংরক্ষণের জন্য দোকান/ গোডাউন পরিচালনা করছে। এভাবে মৃত্যু ঘটিয়ে ও ক্ষতিসাধন করে তারা পেনাল কোডের ৩০৪-ক/৩৩৭/৪২৭ ধারায় অপরাধ করেছে।

মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল ২০২১ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমজান ১৪৪২

আরমানিটোলায় আগুন

গ্রিল কেটে পালায় কেমিক্যাল ব্যবসায়ী মোস্তফা ছিল না অনুমোদন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

পুরান ঢাকার আরমানিটোলার মুসা ম্যানশনের নিচতলায় কেমিক্যালের গোডাউন ও দোকান ছিল মোহাম্মদ মোস্তফার। নিজে থাকতেন ভবনের দোতলায়। গত ২৩ এপ্রিল ভোরে অগ্নিকাণ্ডের সময় জানালার গ্রিল কেটে পরিবার নিয়ে পালান তিনি। অবৈধ কেমিক্যাল ব্যবসার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরতে পারে এমন আশঙ্কায় ঘটনার পরপরই পরিবারসহ গা-ঢাকা দেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। র‌্যাব তাকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আরমানিটোলা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, মোস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ মোস্তফা। এদের মধ্যে মোস্তাফিজুরকে বগুড়া এবং মোস্তফাকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুইজনেরই মুসা ম্যানশনের নিচতলায় অবৈধ কেমিক্যালের দোকান ও গোডাউন ছিল। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থ গুদামজাত করে আসছিল এই দুই ব্যবসায়ী। যার কোন অনুমোদন ছিল না। মোস্তাফিজুর রহমান মঈন অ্যান্ড বাদার্স এন্টারপ্রাইজের মালিক। মোহাম্মদ মোস্তফা মেসার্স আরএস এন্টারপ্রাইজের মালিক। মুসা ম্যানশনের নিচতলায়ই ছিল তাদের দুটি গোডাউন। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মোস্তফা ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। অগ্নিকাণ্ডের পর জানালার গ্রিল কেটে তিনি পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান। তিনি নিজেও আহত হয়েছেন। মোস্তাফিজুর রহমানের বাসা কেরানীগঞ্জে। ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে বগুড়া চলে যান। মালিক মোস্তাক আহমেদ চিশতীকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

গত শুক্রবার পুরান ঢাকার আরমানিটোলার মুসা ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বংশাল থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেন। বংশাল থানায় মুসা ম্যানশনের মালিক মোস্তফাসহ ৮ জনের নামে একটি মামলা করে পুলিশ। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি করেন বংশাল থানার এসআই মোহাম্মদ আলী শিকদার। মামলার আসামিরা হলো, মোস্তাক আহমেদ চিশতি, মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ মোস্তফা, গাফফার, সাইদ, ফিরোজ, তারেক ও বাপ্পী। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মুসা ম্যানশনের মালিক মোস্তফা আহম্মেদসহ অন্য কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা মুসা ম্যানশনের নিচতলায় দাহ্য পদার্থ এবং কেমিক্যাল সংরক্ষণের জন্য দোকান/গোডাউন হিসেবে তাচ্ছিল্যভাবে ব্যবহার করে। কেমিক্যালের দোকান/গোডাউনে আগুন লাগার ফলে কেমিক্যালের বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এবং আগুনে দগ্ধ হয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই বাড়িতে বসবাসরত আবাসিক ভাড়াটিয়াদের বিভিন্ন আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে ও ভাঙচুর হয়ে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আসামিরা তাচ্ছিল্যভাবে মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও লাভবান হওয়ার জন্য আবাসিক স্থলে অবৈধভাবে দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যাল সংরক্ষণের জন্য দোকান/ গোডাউন পরিচালনা করছে। এভাবে মৃত্যু ঘটিয়ে ও ক্ষতিসাধন করে তারা পেনাল কোডের ৩০৪-ক/৩৩৭/৪২৭ ধারায় অপরাধ করেছে।