রমজানে অবাধে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর মাঠা

চাঁদপুর শহরে রমজানে রোজাদারদের তৃষ্ণার চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর মাঠা। প্রশ্ন উঠেছে এসব মাঠার বোতলে ল্যাভেল চিহ্ন না থাকায়। আবার যাদের রয়েছে বোতলে ল্যাভেল চিহ্ন তাদের নেই বিএসটিআই লাইসেন্স বা সনদ। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নজরদারির প্রয়োজন বলে দাবী সুধীমহলের।

গত সোমবার শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের কালিবাড়ি, মিশনরোড, শপথ চত্বর মোড়ে ১ লিটার ৭০ টাকা, আধা লিটার ৪০ টাকা ও ২৫০ মি. লি. বোতলের মাঠা ২৫ টাকা করে বিক্রয় করা হচ্ছে। প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণভাবে এই সব মাঠা বিক্রেতারা ২ থেকে ৩ মণ দুধ দিয়ে মাঠা তৈরি করে বিক্রি করেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদপুরের পুরাণবাজারের ঘোষপাড়া, মৈশালবাড়ি, দোকানঘর এলাকাসহ বেশ কিছু স্থানেই প্রশাসনের নাকের ডগায় নানা অসাধু উপায় অবলম্বন করে বাসা বাড়িতে তৈরি করা হচ্ছে এসব মাঠা। পরে অস্বাস্থ্যকর এসব মাঠা বিভিন্ন দোকান, পাড়া-মহল্লা ও রাস্তার মোড়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি চাঁদপুরের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা জানান, হাতে বানানো এসব মাঠার উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ পর্যন্ত নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নষ্ট দুধ, চিনি, লবণসহ আরও নানা উপাদান মিশিয়ে বানানো হচ্ছে এই মাঠা। শুধু তাই নয় মাঠা তৈরিতে শুনেছি টিস্যুও ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে প্রশাসনের দেখা প্রয়োজন।

এক সূত্রে দেখা যায়, এর আগেও বিএসটিআইএর সিল ও অনুমোদন না থাকায় অজয় মাঠা, বৃষ্টি পিউর মাঠা, শ্যামল মাঠা, স্বজন মাঠাসহ শহরের কয়েকটি কারখানাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাঠা তৈরির কারখানাগুলোতে ব্রান্ডিং কোম্পানির পণ্যের মতো বোতলে স্টিকার লাগিয়ে রমরমা মাঠা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু চক্র। শহরের মাঠা বিক্রেতা অমল ঘোষ, বিমল, অজয়সহ কয়েকজন জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে মাঠা বিক্রি করছি। রমজান এলেই বেচা-বিক্রি ভালো হয়। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু বিএসটিআইয়ের লোকজন লাইসেন্স না দিলে আমরা কি করতে পারি বলুন? চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মাঠাসহ সব ধরনের খাবারই বর্জন করা এখন সময়ের দাবি। কারণ এগুলো খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। চাঁদপুরের মার্কেটিং কর্মকর্তা এনএম রেজাউল ইসলাম বলেন, মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে আমরা জেলার বিভিন্ন স্থানে নজরদারি রেখেছি। আমাদের কাছে ৪টি মাঠা তৈরি কেন্দ্রের লাইসেন্সের অনুমোদন ছিল। যার মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাঠা তৈরির অভিযোগে কৃষ্ণ নামের একজনের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আর ল্যাবেল ছাড়া মাঠা বিক্রয়ের কোন সুযোগ নেই। আমরা আবারও দ্রুতই এ বিষয়ে অভিযান চালাবো।

এ ব্যপারে চাঁদপুর জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনতাসির মাহমুদ বলেন, আমরা খুব দ্রুতই নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ মোতাবেক বাজার মনিটরিং শুরু করব এবং খাদ্য নিরাপদতা নিশ্চিতে এ ব্যপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেব। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক নুর হোসেন রুবেল বলেন, আমরা অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেব।

অসাধু ও ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনকারীদের কোন ছাড় নেই। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাঠা তৈরি হচ্ছে এমন তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে পাওয়া মাত্রই আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমজান ১৪৪২

রমজানে অবাধে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর মাঠা

সংবাদদাতা, চাঁদপুর

চাঁদপুর শহরে রমজানে রোজাদারদের তৃষ্ণার চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর মাঠা। প্রশ্ন উঠেছে এসব মাঠার বোতলে ল্যাভেল চিহ্ন না থাকায়। আবার যাদের রয়েছে বোতলে ল্যাভেল চিহ্ন তাদের নেই বিএসটিআই লাইসেন্স বা সনদ। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নজরদারির প্রয়োজন বলে দাবী সুধীমহলের।

গত সোমবার শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের কালিবাড়ি, মিশনরোড, শপথ চত্বর মোড়ে ১ লিটার ৭০ টাকা, আধা লিটার ৪০ টাকা ও ২৫০ মি. লি. বোতলের মাঠা ২৫ টাকা করে বিক্রয় করা হচ্ছে। প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণভাবে এই সব মাঠা বিক্রেতারা ২ থেকে ৩ মণ দুধ দিয়ে মাঠা তৈরি করে বিক্রি করেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদপুরের পুরাণবাজারের ঘোষপাড়া, মৈশালবাড়ি, দোকানঘর এলাকাসহ বেশ কিছু স্থানেই প্রশাসনের নাকের ডগায় নানা অসাধু উপায় অবলম্বন করে বাসা বাড়িতে তৈরি করা হচ্ছে এসব মাঠা। পরে অস্বাস্থ্যকর এসব মাঠা বিভিন্ন দোকান, পাড়া-মহল্লা ও রাস্তার মোড়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি চাঁদপুরের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা জানান, হাতে বানানো এসব মাঠার উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ পর্যন্ত নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নষ্ট দুধ, চিনি, লবণসহ আরও নানা উপাদান মিশিয়ে বানানো হচ্ছে এই মাঠা। শুধু তাই নয় মাঠা তৈরিতে শুনেছি টিস্যুও ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে প্রশাসনের দেখা প্রয়োজন।

এক সূত্রে দেখা যায়, এর আগেও বিএসটিআইএর সিল ও অনুমোদন না থাকায় অজয় মাঠা, বৃষ্টি পিউর মাঠা, শ্যামল মাঠা, স্বজন মাঠাসহ শহরের কয়েকটি কারখানাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাঠা তৈরির কারখানাগুলোতে ব্রান্ডিং কোম্পানির পণ্যের মতো বোতলে স্টিকার লাগিয়ে রমরমা মাঠা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু চক্র। শহরের মাঠা বিক্রেতা অমল ঘোষ, বিমল, অজয়সহ কয়েকজন জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে মাঠা বিক্রি করছি। রমজান এলেই বেচা-বিক্রি ভালো হয়। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু বিএসটিআইয়ের লোকজন লাইসেন্স না দিলে আমরা কি করতে পারি বলুন? চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মাঠাসহ সব ধরনের খাবারই বর্জন করা এখন সময়ের দাবি। কারণ এগুলো খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। চাঁদপুরের মার্কেটিং কর্মকর্তা এনএম রেজাউল ইসলাম বলেন, মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে আমরা জেলার বিভিন্ন স্থানে নজরদারি রেখেছি। আমাদের কাছে ৪টি মাঠা তৈরি কেন্দ্রের লাইসেন্সের অনুমোদন ছিল। যার মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাঠা তৈরির অভিযোগে কৃষ্ণ নামের একজনের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আর ল্যাবেল ছাড়া মাঠা বিক্রয়ের কোন সুযোগ নেই। আমরা আবারও দ্রুতই এ বিষয়ে অভিযান চালাবো।

এ ব্যপারে চাঁদপুর জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনতাসির মাহমুদ বলেন, আমরা খুব দ্রুতই নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ মোতাবেক বাজার মনিটরিং শুরু করব এবং খাদ্য নিরাপদতা নিশ্চিতে এ ব্যপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেব। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক নুর হোসেন রুবেল বলেন, আমরা অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেব।

অসাধু ও ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনকারীদের কোন ছাড় নেই। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাঠা তৈরি হচ্ছে এমন তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে পাওয়া মাত্রই আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।