শনাক্তের কাজ চলছে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
দেশে গত ১৭ এপ্রিল থেকে নিয়মিত কমেছে করোনা সংক্রমণ। তবে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণ ও শনাক্তের হার কমলেও এখনই চিন্তামুক্ত হওয়ার কারণ নেই। দেশে করোনা আক্রান্তদের অনেকের স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটে মারা যাচ্ছেন; এতে করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণ ঘটছে, নাকি ভারতীয় ধরনের সংক্রমণ ঘটছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছেন না সরকারের রোগত্ত্ববিদরা। সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়- এমন জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মানুষের দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা এন্টিবডি থাকলেও সেটিকে উপেক্ষা করেই সংক্রমিত করতে পারে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি। এ কারণে আক্রান্তরা দ্রুত মারা যাচ্ছেন বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
দেশে করোনার ভারতীয় ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা সংবাদকে গতকাল বলেন, এখন পর্যন্ত ‘শনাক্ত হয়নি’। এটি শনাক্তের কাজ চলছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গবেষণা ও শনাক্তের কাজ চলমান। ভারতেও গবেষণা চলছে।’
বাংলাদেশের পাশর্^বর্তী দেশ ভারত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত প্রায় ১৩৬ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারত। দেশটিতে গত এক সপ্তাহ ধরেই দৈনিক সোয়া তিন লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন আড়াই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে ভারতে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশাল সীমান্ত রয়েছে ভারতের। দু’দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ভৌগোলিক অবস্থান, মানুষের জীবনযাপন, সংস্কৃতিÑ সবকিছুতেই মিল রয়েছে। এ কারণে ভারতের করোনা বিপর্যয়ের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে। সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া দেশের সবচেয়ে বেশি লোক যাতায়াত করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে। সেখানেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ।
জানতে চাইলে খ্যাতিমান রোগতত্ত্ববিদ ও ‘বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে তা হলো, এটি এন্টিবডিকে উপেক্ষা করেই সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এ কারণে এটিকে বেশি মাত্রায় প্রাণঘাতী বলা হচ্ছে। তবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের প্রাণঘাতী রূপ সম্পর্কে দেশটির সরকার তথ্য গোপন রাখছে। এ কারণে ভ্যারিয়েন্টটির অনেককিছুই এখনও অজানা।’
সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে এসে যশোর হাসপাতালে ভর্তির পর পালিয়ে যাওয়া (ওইদিনই আটক) সাত করোনা রোগীর মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়েছে কিনা, সেটা এখনও নিশ্চিত নয়।
১৮ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে করোনা সংক্রমিত সাতজন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন। তারা যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে তারা ২৬ এপ্রিল পালিয়ে যান।
ভারতে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেয়ায় বাংলাদেশে এর সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে কিনাÑ জানতে চাইলে প্রফেসর নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘অবশ্যই এখানে ঝুঁকি আছে। এ জন্যই সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপর সবাইকে সচেতন থাকতে হবে; স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও করোনার ভারতীয় ধরন নিয়ে কাজ করছে।’
সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় ২৬ এপ্রিল থেকে আগামী ৯ মে পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে সব সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে জরুরি পণ্যবাহী বাহন চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সরকার।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কী?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হয়েছে ‘বি.১.৬১৭’। এটিকে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ও বলা হয়। এটির উল্লেখযোগ্য দুই পরিবর্তনের পর তৈরি হওয়ায় এটিকে ‘ডাবল মিউট্যান্ট’, ‘থ্রিফল মিউট্যান্ট’ বলছেন গবেষকরা।
ভারতের জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, গত অক্টোবরে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ শনাক্ত হলেও প্রথমদিকে এটি তেমন প্রাণঘাতী ছিল না। গত মার্চের প্রথম দিকে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে খুব দ্রুতগতিতে দেশটিতে বিপর্যয় নেমে আসে। এ জন্য দেশটির জনস্বাস্থ্যবিদদের আশঙ্কা ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ই দাপট দেখাচ্ছে, সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
টানা ১১ দিন শনাক্তের হার কমেছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১১ দিনই নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে করোনা শনাক্ত কমেছে। একইসঙ্গে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও কমছে।
গত ১৬ এপ্রিল চার হাজার ৪১৭ জনের করোনা শনাক্ত; ১০১ জনের মৃত্যু এবং নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় ২৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ ‘কোভিড-১৯’ রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওইদিন পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এরপর ১৭ এপ্রিলের তথ্যানুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ; ১৮ এপ্রিল ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ; ২০ এপ্রিল শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ; ২১ এপ্রিল শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ; ২২ এপ্রিল শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ২৩ এপ্রিল শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ০০ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ২৪ এপ্রিল শনাক্তের ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ২৫ এপ্রিল শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ; ২৬ এপ্রিল শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ; সর্বশেষ গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ
গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে তিন হাজার ৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল সাত লাখ ৫১ হাজার ৬৫৯ জনে। গত একদিনে করোনা মারা গেছেন ৭৮ জন। এ নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমণে দেশে মোট ১১ হাজার ২২৮ জনের মৃত্যু হলো।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত একদিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচ হাজার ২৩৪ রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াল ছয় লাখ ৬৬ হাজার ৯২৭ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে করোনা শনাক্তে ৩৩তম স্থানে এবং মৃত্যুর সংখ্যায় ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত একদিনে সারাদেশে ৩৫৮টি ল্যাবে ২৪ হাজার ২৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৪টি। এ পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
গত এক দিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ৪৫ জন এবং নারী ৩৩ জন। তাদের ৪৯ জন সরকারি হাসপাতালে, ২৭ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং দুইজন বাসায় মারা গেছেন।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত একদিনে মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে ৫৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, সাতজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, তিনজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।
দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ১১ হাজার ২২৮ জনের মধ্যে পুরুষ আট হাজার ২২৬ জন এবং নারী তিন হাজার ২ জন।
রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে -সংবাদ
আরও খবরবুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমজান ১৪৪২
শনাক্তের কাজ চলছে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
রাকিব উদ্দিন
রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে -সংবাদ
দেশে গত ১৭ এপ্রিল থেকে নিয়মিত কমেছে করোনা সংক্রমণ। তবে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণ ও শনাক্তের হার কমলেও এখনই চিন্তামুক্ত হওয়ার কারণ নেই। দেশে করোনা আক্রান্তদের অনেকের স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটে মারা যাচ্ছেন; এতে করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণ ঘটছে, নাকি ভারতীয় ধরনের সংক্রমণ ঘটছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছেন না সরকারের রোগত্ত্ববিদরা। সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়- এমন জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মানুষের দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা এন্টিবডি থাকলেও সেটিকে উপেক্ষা করেই সংক্রমিত করতে পারে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি। এ কারণে আক্রান্তরা দ্রুত মারা যাচ্ছেন বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
দেশে করোনার ভারতীয় ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা সংবাদকে গতকাল বলেন, এখন পর্যন্ত ‘শনাক্ত হয়নি’। এটি শনাক্তের কাজ চলছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গবেষণা ও শনাক্তের কাজ চলমান। ভারতেও গবেষণা চলছে।’
বাংলাদেশের পাশর্^বর্তী দেশ ভারত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত প্রায় ১৩৬ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারত। দেশটিতে গত এক সপ্তাহ ধরেই দৈনিক সোয়া তিন লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন আড়াই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে ভারতে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশাল সীমান্ত রয়েছে ভারতের। দু’দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ভৌগোলিক অবস্থান, মানুষের জীবনযাপন, সংস্কৃতিÑ সবকিছুতেই মিল রয়েছে। এ কারণে ভারতের করোনা বিপর্যয়ের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে। সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া দেশের সবচেয়ে বেশি লোক যাতায়াত করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে। সেখানেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ।
জানতে চাইলে খ্যাতিমান রোগতত্ত্ববিদ ও ‘বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে তা হলো, এটি এন্টিবডিকে উপেক্ষা করেই সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এ কারণে এটিকে বেশি মাত্রায় প্রাণঘাতী বলা হচ্ছে। তবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের প্রাণঘাতী রূপ সম্পর্কে দেশটির সরকার তথ্য গোপন রাখছে। এ কারণে ভ্যারিয়েন্টটির অনেককিছুই এখনও অজানা।’
সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে এসে যশোর হাসপাতালে ভর্তির পর পালিয়ে যাওয়া (ওইদিনই আটক) সাত করোনা রোগীর মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়েছে কিনা, সেটা এখনও নিশ্চিত নয়।
১৮ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে করোনা সংক্রমিত সাতজন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন। তারা যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে তারা ২৬ এপ্রিল পালিয়ে যান।
ভারতে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেয়ায় বাংলাদেশে এর সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে কিনাÑ জানতে চাইলে প্রফেসর নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘অবশ্যই এখানে ঝুঁকি আছে। এ জন্যই সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপর সবাইকে সচেতন থাকতে হবে; স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও করোনার ভারতীয় ধরন নিয়ে কাজ করছে।’
সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় ২৬ এপ্রিল থেকে আগামী ৯ মে পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে সব সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে জরুরি পণ্যবাহী বাহন চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সরকার।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কী?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হয়েছে ‘বি.১.৬১৭’। এটিকে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ও বলা হয়। এটির উল্লেখযোগ্য দুই পরিবর্তনের পর তৈরি হওয়ায় এটিকে ‘ডাবল মিউট্যান্ট’, ‘থ্রিফল মিউট্যান্ট’ বলছেন গবেষকরা।
ভারতের জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, গত অক্টোবরে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ শনাক্ত হলেও প্রথমদিকে এটি তেমন প্রাণঘাতী ছিল না। গত মার্চের প্রথম দিকে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে খুব দ্রুতগতিতে দেশটিতে বিপর্যয় নেমে আসে। এ জন্য দেশটির জনস্বাস্থ্যবিদদের আশঙ্কা ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ই দাপট দেখাচ্ছে, সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
টানা ১১ দিন শনাক্তের হার কমেছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১১ দিনই নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে করোনা শনাক্ত কমেছে। একইসঙ্গে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও কমছে।
গত ১৬ এপ্রিল চার হাজার ৪১৭ জনের করোনা শনাক্ত; ১০১ জনের মৃত্যু এবং নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় ২৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ ‘কোভিড-১৯’ রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওইদিন পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এরপর ১৭ এপ্রিলের তথ্যানুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ; ১৮ এপ্রিল ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ; ২০ এপ্রিল শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ; ২১ এপ্রিল শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ; ২২ এপ্রিল শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ২৩ এপ্রিল শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ০০ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ২৪ এপ্রিল শনাক্তের ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ২৫ এপ্রিল শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ; ২৬ এপ্রিল শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ; সর্বশেষ গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ
গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে তিন হাজার ৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল সাত লাখ ৫১ হাজার ৬৫৯ জনে। গত একদিনে করোনা মারা গেছেন ৭৮ জন। এ নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমণে দেশে মোট ১১ হাজার ২২৮ জনের মৃত্যু হলো।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত একদিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচ হাজার ২৩৪ রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াল ছয় লাখ ৬৬ হাজার ৯২৭ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে করোনা শনাক্তে ৩৩তম স্থানে এবং মৃত্যুর সংখ্যায় ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত একদিনে সারাদেশে ৩৫৮টি ল্যাবে ২৪ হাজার ২৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৪টি। এ পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
গত এক দিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ৪৫ জন এবং নারী ৩৩ জন। তাদের ৪৯ জন সরকারি হাসপাতালে, ২৭ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং দুইজন বাসায় মারা গেছেন।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত একদিনে মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে ৫৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, সাতজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, তিনজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।
দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ১১ হাজার ২২৮ জনের মধ্যে পুরুষ আট হাজার ২২৬ জন এবং নারী তিন হাজার ২ জন।