একাধিক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি যেখান থেকেই পাব ভ্যাকসিন নেব পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, করোনার তীব্রতা মোকাবিলায় ভারত, চীন, রাশিয়া ও আমেরিকাসহ একাধিক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, যেখান থেকেই পাব ভ্যাকসিন নেব। এছাড়া মেডিকেল অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্যও সরকারের পক্ষ থেকে বৈশ্বিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে আগামী দু’সপ্তাহের আগে কোন দেশ থেকেই করোনা ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না বলে পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে গতকাল ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে ঢাকায় তার বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এসব তথ্য জানান। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

দক্ষিণ এশিয়াতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াতে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে করোনা প্রতিরোধে সহযোগিতামূলক একটি জোট কার্যকর করতে চায় চীন। যা করোনা-পরবর্তী সময়েও সহযোগিতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে এই বৈঠক করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি এ বৈঠকে অংশ নেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, করোনা রোধে চীনের সঙ্গে জোটে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়া ও চীনকে নিয়ে কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি মেডিকেল সামগ্রী সুবিধা পেতে একটি সংরক্ষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে। সদস্য দেশগুলোর যখনই প্রয়োজন হবে তখনই সেখান থেকে সাহায্য নিতে পারবে। আবদুল মোমেন বলেন, মানুষের মঙ্গলের জন্য যা যা দরকার আমরা তার সবই করব। তাই চীনের উদ্যোগে আজকে যে বৈঠক হয়েছে তাতে যোগ দিয়েছি। গতবছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে সার্ক কোভিড-১৯ তহবিলেও আমরা যোগ দিয়েছি। মানুষের মঙ্গলের জন্য আমরা এসব ফোরামে অ্যাকটিভ থাকতে চাই। তাই এসববিষয়ক সকল বহুপক্ষীয় ফোরামে আমরা থাকব। চীনের এই উদ্যোগে যোগ দেয়ার জন্য ভারতকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, চীনের উদ্যোগে আজকের বৈঠকে বলেছি, আমাদের এখন ভ্যাকসিনের জরুরি প্রয়োজন। তাই যেখান থেকেই পাই ভ্যাকসিন নেব। এর আগে ভারত থেকে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য চুক্তি করেছিলাম। করোনা মোকাবিলার যে পরিকল্পনা করেছিলাম তাতে আমাদের সংক্রমণের তীব্রতা অনেক নিয়ন্ত্রণে ছিল কিন্তু নতুন একটি ওয়েভ এসে তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই মুহূর্তে ভারত ভ্যাকসিন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা তাড়াতাড়ি দেয়ার জন্য ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে সাড়া পাইনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, আমরা এখন চীন, রাশিয়া, ভারত এবং আমেরিকা থেকে ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা করছি।

এর আগে চীন ও রাশিয়া ভ্যাকসিন বিষয়ে আগ্রহ দেখালেও বাংলাদেশ কেন আগ্রহ দেখায়নি এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়ে আমাদের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তখন ওই ভ্যাকসিনগুলোর অনুমোদন দেয়নি। তাই আমরা জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে আগ্রহ দেখাইনি। এরপর জরুরি প্রয়োজন মেটাতে আমরা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বড় বড় দেশ কী করছে তা পর্যবেক্ষণ করে এখন আমরা সেই ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে এই বিষয়ে অনুমোদন দিয়ে রেখেছেন। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এসব দেশের যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছি। এখন বাকি কাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করবে।

চীনের উদ্যোগ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন করোনা মোকাবিলায় তিনটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চায়। করোনার সময় জরুরি মেডিকেল ফ্যাসিলিটি সেবা, করোনার পরবর্তীতে অর্থনৈতিক দারিদ্র্য দূরীকরণ কেন্দ্র এবং দারিদ্র্য কমাতে ইকমার্স করতে চায় চীন।

বৈঠকে ঢাকার পক্ষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তোলা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে আমরা রোহিঙ্গাদের কথা বলেছি। আমরা বলেছি, চীনের উদ্যোগে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি ভালো ছিল কিন্তু হঠাৎ করে মায়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়ার জন্য এটা ব্যাহত হয়। এটা যেন আবার তাড়াতাড়ি চালু করা যায়।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে কোন টিকা আসার সম্ভাবনা নেই। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সবার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। আমরা কয়েকটি ডকুমেন্ট চেয়েছি। দুই সপ্তাহের আগে কিছু পাওয়া যাবে না। চীন, রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র সব জায়গায় একই অবস্থা। এখানে কিছু কাগজপত্র ঠিক করতে হবে এবং জাহাজীকরণের ফলে দুই সপ্তাহের আগে কিছু হবে না।

বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমজান ১৪৪২

একাধিক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি যেখান থেকেই পাব ভ্যাকসিন নেব পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, করোনার তীব্রতা মোকাবিলায় ভারত, চীন, রাশিয়া ও আমেরিকাসহ একাধিক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, যেখান থেকেই পাব ভ্যাকসিন নেব। এছাড়া মেডিকেল অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্যও সরকারের পক্ষ থেকে বৈশ্বিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে আগামী দু’সপ্তাহের আগে কোন দেশ থেকেই করোনা ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না বলে পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে গতকাল ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে ঢাকায় তার বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এসব তথ্য জানান। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

দক্ষিণ এশিয়াতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াতে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে করোনা প্রতিরোধে সহযোগিতামূলক একটি জোট কার্যকর করতে চায় চীন। যা করোনা-পরবর্তী সময়েও সহযোগিতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে এই বৈঠক করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি এ বৈঠকে অংশ নেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, করোনা রোধে চীনের সঙ্গে জোটে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়া ও চীনকে নিয়ে কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি মেডিকেল সামগ্রী সুবিধা পেতে একটি সংরক্ষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে। সদস্য দেশগুলোর যখনই প্রয়োজন হবে তখনই সেখান থেকে সাহায্য নিতে পারবে। আবদুল মোমেন বলেন, মানুষের মঙ্গলের জন্য যা যা দরকার আমরা তার সবই করব। তাই চীনের উদ্যোগে আজকে যে বৈঠক হয়েছে তাতে যোগ দিয়েছি। গতবছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে সার্ক কোভিড-১৯ তহবিলেও আমরা যোগ দিয়েছি। মানুষের মঙ্গলের জন্য আমরা এসব ফোরামে অ্যাকটিভ থাকতে চাই। তাই এসববিষয়ক সকল বহুপক্ষীয় ফোরামে আমরা থাকব। চীনের এই উদ্যোগে যোগ দেয়ার জন্য ভারতকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, চীনের উদ্যোগে আজকের বৈঠকে বলেছি, আমাদের এখন ভ্যাকসিনের জরুরি প্রয়োজন। তাই যেখান থেকেই পাই ভ্যাকসিন নেব। এর আগে ভারত থেকে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য চুক্তি করেছিলাম। করোনা মোকাবিলার যে পরিকল্পনা করেছিলাম তাতে আমাদের সংক্রমণের তীব্রতা অনেক নিয়ন্ত্রণে ছিল কিন্তু নতুন একটি ওয়েভ এসে তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই মুহূর্তে ভারত ভ্যাকসিন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা তাড়াতাড়ি দেয়ার জন্য ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে সাড়া পাইনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, আমরা এখন চীন, রাশিয়া, ভারত এবং আমেরিকা থেকে ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা করছি।

এর আগে চীন ও রাশিয়া ভ্যাকসিন বিষয়ে আগ্রহ দেখালেও বাংলাদেশ কেন আগ্রহ দেখায়নি এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়ে আমাদের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তখন ওই ভ্যাকসিনগুলোর অনুমোদন দেয়নি। তাই আমরা জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে আগ্রহ দেখাইনি। এরপর জরুরি প্রয়োজন মেটাতে আমরা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বড় বড় দেশ কী করছে তা পর্যবেক্ষণ করে এখন আমরা সেই ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে এই বিষয়ে অনুমোদন দিয়ে রেখেছেন। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এসব দেশের যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছি। এখন বাকি কাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করবে।

চীনের উদ্যোগ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন করোনা মোকাবিলায় তিনটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চায়। করোনার সময় জরুরি মেডিকেল ফ্যাসিলিটি সেবা, করোনার পরবর্তীতে অর্থনৈতিক দারিদ্র্য দূরীকরণ কেন্দ্র এবং দারিদ্র্য কমাতে ইকমার্স করতে চায় চীন।

বৈঠকে ঢাকার পক্ষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তোলা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে আমরা রোহিঙ্গাদের কথা বলেছি। আমরা বলেছি, চীনের উদ্যোগে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি ভালো ছিল কিন্তু হঠাৎ করে মায়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়ার জন্য এটা ব্যাহত হয়। এটা যেন আবার তাড়াতাড়ি চালু করা যায়।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে কোন টিকা আসার সম্ভাবনা নেই। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সবার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। আমরা কয়েকটি ডকুমেন্ট চেয়েছি। দুই সপ্তাহের আগে কিছু পাওয়া যাবে না। চীন, রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র সব জায়গায় একই অবস্থা। এখানে কিছু কাগজপত্র ঠিক করতে হবে এবং জাহাজীকরণের ফলে দুই সপ্তাহের আগে কিছু হবে না।