তরুণীর লাশ উদ্ধার, ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ : বসুন্ধরার এমডির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। রাজধানীর গুলশানে তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হওয়া ‘আত্মহত্যায় প্ররোচণার’ মামলার পর আদালত থেকে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

পুলিশ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত গতকাল এই নিষেধাজ্ঞা দেন। সায়েম সোবহান যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গত সোমবার সন্ধ্যার পর গুলশান-২ এর ১২০ নম্বর রোডের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান (মুনিয়া) নামের এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান সোমবার রাতে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলায় আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সংবাদকে জানান, ‘আমরা বেশকিছু সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করেছি। এগুলো পর্যালোচনা চলছে।’ সময় অনুযায়ী পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া পুলিশ শুরু করবে বলে জানান তিনি।

গুলশান পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ফ্ল্যাট মালিক খবর দিলে পুলিশ গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। সেখান থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সুদীপ্ত কুমার জানান, তারা অভিযোগ থেকে জানতে পেরেছেন বসুন্ধরার এমডি আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার ‘দুই বছর ধরে সম্পর্ক’। গুলশানের যেই ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তার প্রতিমাসে ১ লাখ টাকা ভাড়া এবং ২৫ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ আনভীরই পরিশোধ করতেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুনিয়ার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় তার বড় বোনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নগরীর টমসম ব্রিজ কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মামলায় তরুণীর বোনের যা অভিযোগ

মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান মামলার এজাহারে বলেন, মোসারাত জাহান মুনিয়া (২১) এইচএসসি পরীক্ষার্র্থী। মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’ গড়ে ওঠে।

এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালে মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আনভীর রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে আনভীরের পরিবার এই সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে। এরপর আসামির মা মুনিয়াকে ‘ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখান’ এবং ‘ঢাকা থেকে চলে যেতে’ বলেন। আনভীর ‘পরে বিয়ে করবেন’ এই ‘আশ্বাস’ দিয়ে ‘কৌশলে’ মুনিয়াকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, এরপর গত ১ মার্চ মুনিয়াকে ‘ফুঁসলিয়ে’ ঢাকায় আনেন আনভীর এবং গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে একটি বাসায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। অভিযোগ বাসা ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত ও তার স্বামীর পরিচয়পত্র নেয়া হয়। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আনভির ও মুনিয়ার স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে বাঁধিয়ে রাখা হয়।

বাদী এজাহারে বলেন, তার বোনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তাকে বিয়ে করে বিদেশে স্থায়ী হবেন। আনভীর মাঝেমধ্যে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন।

বাদী নুসরাত এজাহারে বলেন, ২৩ এপ্রিল তার বোন মুনিয়া তাকে ফোন করে বলেছেন, ‘আনভীর তাকে বকা দিয়ে বলেছেন, কেন তিনি (মোসারাত) ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছেন, ছবি তুলেছেন। ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফেইসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এ ছবি মালিকের স্ত্রীর ফেইসবুক বন্ধু দেখেছেন। এখন সে তার (আনভীরের) মাকে সবকিছু জানিয়ে দেবেন। তিনি (আনভীর) দুবাই যাচ্ছেন, মুনিয়া যেন কুমিল্লায় চলে যান। আসামির মা জানতে পারলে তাকে (মোসারাত) ‘মেরে ফেলবেন’।

এজাহারে নুসরাত বলেন, দু’দিন পর ২৫ এপ্রিল মুনিয়া তাকে ফোন করেন। ‘ওই সময় তিনি (মুনিয়া) কান্নাকাটি করে বলেন, আনভীর তাকে বিয়ে করবেন না। আনভীর তাকে বলেছেন, তিনি (মুনিয়া) তার শত্রুর সঙ্গে দেখা করেছেন। মুনিয়াকে তিনি ছাড়বেন না। আর মুনিয়া চিৎকার করে বলেন, ‘আনভীর তাকে ধোঁকা’ দিয়েছেন। যেকোন সময় তার বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে’। তাদের (নুসরাতের পরিবার) ‘দ্রুত ঢাকায় আসার’ জন্য বলেন মুনিয়া।

বাদী বলেন, তারা ২৫ এপ্রিল ঢাকায় রওনা হন। পথ থেকে তারা মুনিয়াকে বহুবার ফোন করেন কিন্তু তিনি ধরেন নাই। মুনিয়ার গুলশানের বাসায় গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লেও কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। পরে মিস্ত্রী এনে তালা ভেঙে দেখা যায় শোয়ার ঘরে সিলিং ফ্যানে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া মুনিয়ার দেহ ঝুলছে, পরে পুলিশে খবর দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমজান ১৪৪২

তরুণীর লাশ উদ্ধার, ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ : বসুন্ধরার এমডির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। রাজধানীর গুলশানে তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হওয়া ‘আত্মহত্যায় প্ররোচণার’ মামলার পর আদালত থেকে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

পুলিশ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত গতকাল এই নিষেধাজ্ঞা দেন। সায়েম সোবহান যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গত সোমবার সন্ধ্যার পর গুলশান-২ এর ১২০ নম্বর রোডের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান (মুনিয়া) নামের এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান সোমবার রাতে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলায় আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সংবাদকে জানান, ‘আমরা বেশকিছু সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করেছি। এগুলো পর্যালোচনা চলছে।’ সময় অনুযায়ী পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া পুলিশ শুরু করবে বলে জানান তিনি।

গুলশান পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ফ্ল্যাট মালিক খবর দিলে পুলিশ গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। সেখান থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সুদীপ্ত কুমার জানান, তারা অভিযোগ থেকে জানতে পেরেছেন বসুন্ধরার এমডি আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার ‘দুই বছর ধরে সম্পর্ক’। গুলশানের যেই ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তার প্রতিমাসে ১ লাখ টাকা ভাড়া এবং ২৫ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ আনভীরই পরিশোধ করতেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুনিয়ার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় তার বড় বোনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নগরীর টমসম ব্রিজ কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মামলায় তরুণীর বোনের যা অভিযোগ

মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান মামলার এজাহারে বলেন, মোসারাত জাহান মুনিয়া (২১) এইচএসসি পরীক্ষার্র্থী। মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’ গড়ে ওঠে।

এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালে মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আনভীর রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে আনভীরের পরিবার এই সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে। এরপর আসামির মা মুনিয়াকে ‘ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখান’ এবং ‘ঢাকা থেকে চলে যেতে’ বলেন। আনভীর ‘পরে বিয়ে করবেন’ এই ‘আশ্বাস’ দিয়ে ‘কৌশলে’ মুনিয়াকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, এরপর গত ১ মার্চ মুনিয়াকে ‘ফুঁসলিয়ে’ ঢাকায় আনেন আনভীর এবং গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে একটি বাসায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। অভিযোগ বাসা ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত ও তার স্বামীর পরিচয়পত্র নেয়া হয়। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আনভির ও মুনিয়ার স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে বাঁধিয়ে রাখা হয়।

বাদী এজাহারে বলেন, তার বোনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তাকে বিয়ে করে বিদেশে স্থায়ী হবেন। আনভীর মাঝেমধ্যে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন।

বাদী নুসরাত এজাহারে বলেন, ২৩ এপ্রিল তার বোন মুনিয়া তাকে ফোন করে বলেছেন, ‘আনভীর তাকে বকা দিয়ে বলেছেন, কেন তিনি (মোসারাত) ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছেন, ছবি তুলেছেন। ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফেইসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এ ছবি মালিকের স্ত্রীর ফেইসবুক বন্ধু দেখেছেন। এখন সে তার (আনভীরের) মাকে সবকিছু জানিয়ে দেবেন। তিনি (আনভীর) দুবাই যাচ্ছেন, মুনিয়া যেন কুমিল্লায় চলে যান। আসামির মা জানতে পারলে তাকে (মোসারাত) ‘মেরে ফেলবেন’।

এজাহারে নুসরাত বলেন, দু’দিন পর ২৫ এপ্রিল মুনিয়া তাকে ফোন করেন। ‘ওই সময় তিনি (মুনিয়া) কান্নাকাটি করে বলেন, আনভীর তাকে বিয়ে করবেন না। আনভীর তাকে বলেছেন, তিনি (মুনিয়া) তার শত্রুর সঙ্গে দেখা করেছেন। মুনিয়াকে তিনি ছাড়বেন না। আর মুনিয়া চিৎকার করে বলেন, ‘আনভীর তাকে ধোঁকা’ দিয়েছেন। যেকোন সময় তার বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে’। তাদের (নুসরাতের পরিবার) ‘দ্রুত ঢাকায় আসার’ জন্য বলেন মুনিয়া।

বাদী বলেন, তারা ২৫ এপ্রিল ঢাকায় রওনা হন। পথ থেকে তারা মুনিয়াকে বহুবার ফোন করেন কিন্তু তিনি ধরেন নাই। মুনিয়ার গুলশানের বাসায় গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লেও কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। পরে মিস্ত্রী এনে তালা ভেঙে দেখা যায় শোয়ার ঘরে সিলিং ফ্যানে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া মুনিয়ার দেহ ঝুলছে, পরে পুলিশে খবর দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।