একজন আক্রান্তের কাছ থেকে এক মাসে ৪০৬ জন আক্রান্ত হতে পারে আইসিএমআর

সঠিকভাবে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চললে, একজন করোনা আক্রান্ত রোগী থেকে এক মাসের মধ্যে ৪০৬ জন সংক্রমিত হতে পারে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর গবেষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে, তাই এর জন্য লকডাউনের কোন বিকল্প নেই। গবেষণা জানাচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে না চলাই সংক্রমণের ব্যাপক বৃদ্ধির মূল কারণ।

এ নিয়ে এক সংবাদ বৈঠক করেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব লব অগরওয়াল। সেখানেই সবার উদ্দেশে ঐ গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনা ৬ ফুটের বেশি দূরত্বেও ছড়াতে পারে। তাই সব সময় মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা। এমনকি নির্জনে থাকলেও মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক না পরলে সংক্রমণের হার হবে ৯০ শতাংশে। মাস্ক পরলে সংক্রমণের হার কমে দাঁড়াবে ৩০ শতাংশে। সবসময় মাস্ক পরে থাকলে সংক্রমণ কমে হবে ১.৫ শতাংশে।

ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকেই ভাবছেন আর ভয় নেই। কিন্তু ভুল ধারণা। ভ্যাকসিন নিলেও যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে তা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যাবে না। আপনার শরীরের ভেতরে থাকা অ্যান্টিবডি সহজেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে। বড়সড় কিছু না হলেও আপনি অন্যের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। অর্থাৎ আপনার আক্রান্ত হওয়া সংক্রমণ অন্যের দেহে আক্রান্ত করতে পারে সহজেই। তাই এখনই ভাবনা-চিন্তা বদলে ফেলুন। করোনাবিধি পা থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত মেনে চলুন। কারণ, গবেষণার যে তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে তা অতীব ভয়ঙ্কর।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিকভাবে সামাজিক দূরত্ব বিধি না মেনে চললে, একজন করোনা রোগীর থেকে এক মাসের মধ্যে ৪০৬ জন সংক্রমিত হতে পারেন। তার জন্য লকডাউনের বিকল্প নেই।

কেন্দ্রীয় নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য বিভাগের সদস্য ভিকে পাল জানাচ্ছেন, সামাজিক দূরত্ববিধি যদি অর্ধেকও মেনে চলেন, তাহলে একজন করোনা রোগীর থেকে আক্রান্ত হবেন মাত্র ১৫ জন। ৭৫ শতাংশ মানলে ১ জনের থেকে আক্রান্ত হবেন মাত্র ২.৫ জন। তাই ভিকে পাল বাড়িতেও মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন সবাইকে। যদি করোনাবিধি মেনে চলা যায় তবে আক্রান্তের হার রকেট গতিতে কমতে থাকবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বৃদ্ধির কারণে আগামী ২ মে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ভোট গণনার দিন বা পরের দিন যে কোন ধরনের বিজয় মিছিলসহ যে কোন জনসমাবেশের ওপর নিষিদ্ধ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন মঙ্গলবার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

জানা গেছে, এই নির্দেশকে কার্যকর করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের একটি নির্দেশের পরে নির্বাচন কমিশন এই পদক্ষেপ নেয়।

কলকাতা হাইকোর্টে কোভিড-১৯ কালীন প্রচার বন্ধ নিয়ে একটি মামলার শুনানি ছিল গতকাল। আর সেই মামলার শুনানিতেই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানায়, নির্বাচনের সঙ্গে যে সব আধিকারিক যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের প্রত্যেককে কড়াভাবে নজর রাখতে হবে, ভোটের ফলাফলের দিন কোথাও যাতে কোন বিজয় মিছিল বের করা না হয়। কমিশনের নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী-সমর্থকরা যদি বিজয় মিছিল বের করে সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

এ ছাড়া সোমবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে কমিশনকে ভর্ৎসনা করেছিল মাদ্রাজ হাইকোর্টও। মাদ্রাজ হাইকোর্টের নির্দেশের পর পরই কোভিড-১৯ বিধি নিয়ে কড়া অবস্থান নেয় নির্বাচন কমিশন।

কমিশনের জারি করা নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, ভোট গণনার পর রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রশংসাপত্র নিতে বিজয়ী প্রার্থী বা তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে দুজনের বেশি লোক থাকতে পারবে না।

কমিশন আগামী ২ মে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু , কেরল, আসাম ও পন্ডিচেরির বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনার দিন ধার্য করেছে। সেই সঙ্গে ওই দিন বিভিন্ন রাজ্যের উপনির্বাচনগুলোরও ভোট গণনা হবে। উল্লেখ্য, ঐ নির্দেশের পাশাপাশি একই সঙ্গে ২০২০-র ২১ আগস্ট জারি করা নির্বাচনবিধির বৃহত্তর নির্দেশিকাগুলোও বহাল থাকবে।

অপরদিকে মাদ্রাজ আদালুও বলেছে, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী একমাত্র নির্বাচন কমিশনই। কমিশনের অফিসারদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হওয়া উচিত।’ মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি ছিল , ‘সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ২ মে ভোট গণনা বন্ধ করে দেয়া হবে।’

ভোটের প্রচার সমাবেশে লোক সমাগমের ক্ষেত্রে করোনাবিধি লঙ্ঘন নিয়ে কড়া মন্তব্য করে মাদ্রাজ আদালু বলেছিল, ‘ভোট প্রচার যখন চলছিল, তখন আপনারা কি অন্য গ্রহে ছিলেন? আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কোভিড-১৯ প্রটোকল নিশ্চিত করতে পারেনি কেন কমিশন? গণনার দিন কোভিড-১৯ প্রটোকল মানা নিয়ে কী ভাবছে কমিশন? ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জানাতে হবে কমিশনকে।’ নির্বাচন কমিশনকে এই নির্দেশ দিয়েছিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট।

বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমজান ১৪৪২

বিধি না মানলে

একজন আক্রান্তের কাছ থেকে এক মাসে ৪০৬ জন আক্রান্ত হতে পারে আইসিএমআর

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

সঠিকভাবে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চললে, একজন করোনা আক্রান্ত রোগী থেকে এক মাসের মধ্যে ৪০৬ জন সংক্রমিত হতে পারে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর গবেষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে, তাই এর জন্য লকডাউনের কোন বিকল্প নেই। গবেষণা জানাচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে না চলাই সংক্রমণের ব্যাপক বৃদ্ধির মূল কারণ।

এ নিয়ে এক সংবাদ বৈঠক করেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব লব অগরওয়াল। সেখানেই সবার উদ্দেশে ঐ গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনা ৬ ফুটের বেশি দূরত্বেও ছড়াতে পারে। তাই সব সময় মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা। এমনকি নির্জনে থাকলেও মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক না পরলে সংক্রমণের হার হবে ৯০ শতাংশে। মাস্ক পরলে সংক্রমণের হার কমে দাঁড়াবে ৩০ শতাংশে। সবসময় মাস্ক পরে থাকলে সংক্রমণ কমে হবে ১.৫ শতাংশে।

ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকেই ভাবছেন আর ভয় নেই। কিন্তু ভুল ধারণা। ভ্যাকসিন নিলেও যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে তা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যাবে না। আপনার শরীরের ভেতরে থাকা অ্যান্টিবডি সহজেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে। বড়সড় কিছু না হলেও আপনি অন্যের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। অর্থাৎ আপনার আক্রান্ত হওয়া সংক্রমণ অন্যের দেহে আক্রান্ত করতে পারে সহজেই। তাই এখনই ভাবনা-চিন্তা বদলে ফেলুন। করোনাবিধি পা থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত মেনে চলুন। কারণ, গবেষণার যে তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে তা অতীব ভয়ঙ্কর।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিকভাবে সামাজিক দূরত্ব বিধি না মেনে চললে, একজন করোনা রোগীর থেকে এক মাসের মধ্যে ৪০৬ জন সংক্রমিত হতে পারেন। তার জন্য লকডাউনের বিকল্প নেই।

কেন্দ্রীয় নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য বিভাগের সদস্য ভিকে পাল জানাচ্ছেন, সামাজিক দূরত্ববিধি যদি অর্ধেকও মেনে চলেন, তাহলে একজন করোনা রোগীর থেকে আক্রান্ত হবেন মাত্র ১৫ জন। ৭৫ শতাংশ মানলে ১ জনের থেকে আক্রান্ত হবেন মাত্র ২.৫ জন। তাই ভিকে পাল বাড়িতেও মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন সবাইকে। যদি করোনাবিধি মেনে চলা যায় তবে আক্রান্তের হার রকেট গতিতে কমতে থাকবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বৃদ্ধির কারণে আগামী ২ মে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ভোট গণনার দিন বা পরের দিন যে কোন ধরনের বিজয় মিছিলসহ যে কোন জনসমাবেশের ওপর নিষিদ্ধ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন মঙ্গলবার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

জানা গেছে, এই নির্দেশকে কার্যকর করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের একটি নির্দেশের পরে নির্বাচন কমিশন এই পদক্ষেপ নেয়।

কলকাতা হাইকোর্টে কোভিড-১৯ কালীন প্রচার বন্ধ নিয়ে একটি মামলার শুনানি ছিল গতকাল। আর সেই মামলার শুনানিতেই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানায়, নির্বাচনের সঙ্গে যে সব আধিকারিক যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের প্রত্যেককে কড়াভাবে নজর রাখতে হবে, ভোটের ফলাফলের দিন কোথাও যাতে কোন বিজয় মিছিল বের করা না হয়। কমিশনের নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী-সমর্থকরা যদি বিজয় মিছিল বের করে সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

এ ছাড়া সোমবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে কমিশনকে ভর্ৎসনা করেছিল মাদ্রাজ হাইকোর্টও। মাদ্রাজ হাইকোর্টের নির্দেশের পর পরই কোভিড-১৯ বিধি নিয়ে কড়া অবস্থান নেয় নির্বাচন কমিশন।

কমিশনের জারি করা নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, ভোট গণনার পর রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রশংসাপত্র নিতে বিজয়ী প্রার্থী বা তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে দুজনের বেশি লোক থাকতে পারবে না।

কমিশন আগামী ২ মে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু , কেরল, আসাম ও পন্ডিচেরির বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনার দিন ধার্য করেছে। সেই সঙ্গে ওই দিন বিভিন্ন রাজ্যের উপনির্বাচনগুলোরও ভোট গণনা হবে। উল্লেখ্য, ঐ নির্দেশের পাশাপাশি একই সঙ্গে ২০২০-র ২১ আগস্ট জারি করা নির্বাচনবিধির বৃহত্তর নির্দেশিকাগুলোও বহাল থাকবে।

অপরদিকে মাদ্রাজ আদালুও বলেছে, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী একমাত্র নির্বাচন কমিশনই। কমিশনের অফিসারদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হওয়া উচিত।’ মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি ছিল , ‘সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ২ মে ভোট গণনা বন্ধ করে দেয়া হবে।’

ভোটের প্রচার সমাবেশে লোক সমাগমের ক্ষেত্রে করোনাবিধি লঙ্ঘন নিয়ে কড়া মন্তব্য করে মাদ্রাজ আদালু বলেছিল, ‘ভোট প্রচার যখন চলছিল, তখন আপনারা কি অন্য গ্রহে ছিলেন? আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কোভিড-১৯ প্রটোকল নিশ্চিত করতে পারেনি কেন কমিশন? গণনার দিন কোভিড-১৯ প্রটোকল মানা নিয়ে কী ভাবছে কমিশন? ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জানাতে হবে কমিশনকে।’ নির্বাচন কমিশনকে এই নির্দেশ দিয়েছিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট।