করোনায় বিধ্বস্ত

ভারতে এবার মাঠে নামছে সেনাবাহিনী

কমছে না সংক্রমণ ও মৃত্যু

ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। টানা সপ্তম দিনে মৃতের সংখ্যা পার করেছে দুই হাজার। এর মধ্য দিয়ে ভারতে করোনাভাইরাসে মৃত্যু দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য ডাকা হয়েছে।

টেস্টের সংখ্যা কম হলেও ভারতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২৩ হাজার ১৪৪ জন। একই সময়ে মারা গেছেন ২ হাজার ৭৭১ জন। রয়টার্স

হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েই চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। রাজধানী নয়াদিল্লিসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশিরভাগ হাসপাতালে অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্তান টাইমসের খবর অনুযায়ী পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রাত্রিকালীন কারফিউসহ বিভিন্ন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে টিকাদান কার্যক্রম । পাশাপাশি দেশটির হাসপাতালগুলোতে সেনবাহিনীর সদস্যদের সাহায্য করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সেনাবাহিনীর জন্য মজুদ করা অক্সিজেন হাসপাতালগুলোতে সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন দেশটির চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়ান। এর পরই সেনাপ্রধান তার বাহিনীর প্রতি এই নির্দেশনা দেন।

গত দুই বছরে অবসর নেয়া সশস্ত্র বাহিনীর চিকিৎসকদেরও কাজে ফেরানো হচ্ছে। তাদের বাড়ির কাছে থাকা করোনা সেন্টারে কাজ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর অবসর নেয়া নার্সিং স্টাফদেরও করোনা যুদ্ধের মাঠে নামতে বলা হয়েছে।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর এক গবেষণার ভিত্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, লকডাউন ও সামাজিক দূরত্বের মতো বিষয়গুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হলে একজন করোনা রোগীর কাছ থেকে ৩০ দিনে সংক্রমিত হতে পারে আরও ৪০৬ জন।

এদিন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরল, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, গুজরাট ও তামিলনাড়ুতে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা লক্ষাধিক।

নীতি আয়োগের সদস্য ড. ভিকে পাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই করোনা আবহে দয়া করে অকারণে বাড়ি থেকে বের হবেন না। পরিবারের মাঝেও মাস্ক পরে থাকুন। মাস্ক পরা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজের বাড়িতে অন্য কাউকে আমন্ত্রণ জানাবেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় বলেও উল্লেখ করেন ড. ভিকে পাল। ভারতে দৈনিক সংক্রমণ সাড়ে তিন লাখের গ-ি ছাড়িয়েছে। ভারতে তো বটেই, বিশ্বেও এই প্রথম কোনও একটি দেশে একদিনে এতো বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হলো। গত বছর কোভিডের প্রথম ঢেউয়ে দেশটিতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কখনও এক লাখ পেরোয়নি। ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো দৈনিক সংক্রমণ এক লাখ অতিক্রম করে। তার ১০ দিন পর, ১৫ এপ্রিল শনাক্ত ছাড়ায় দুই লাখের গ-ি। এর এক সপ্তাহের মাথায় এ সংখ্যা তিন লাখ ছাড়ায়, যা এরইমধ্যে সাড়ে তিন লাখ পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে তিন লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের পাশাপাশি দৈনিক মৃত্যুও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৮১২ জনের। সক্রিয় রোগীও বাড়তে বাড়তে ২৮ লাখ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সংক্রমণের হার পুরো মহামারি পর্বে সর্বোচ্চ। যত জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে তাদের প্রতি চার জনের মধ্যে এক জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা এক কোটি ৭৩ লাখ ১৩ হাজার ১৬৩। এখন পর্যন্ত করোনায় এক লাখ ৯৫ হাজার জনের মৃত্যুর কথা রেকর্ড করা হয়েছে। শনাক্তের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরেই দেশটির অবস্থান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার পরিসর ক্রমেই কমে আসছে। অনেক ক্ষেত্রেই একই শয্যায় একাধিক রোগীকে শুয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। অক্সিজেনের অভাব সামাল দিতে মাঠে নেমেছে প্রশাসনও। অনেক জায়গাতেই অস্থায়ী কোভিড কেয়ার কেন্দ্র তৈরি করে পরিস্থিতি মোবাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যের সরকার। এদিকে, ভারতে চাপা পড়ছে হাজারও মৃত্যুর খবর, বাড়িতে মরলে হিসাবই নেই করোনাভাইরাস মহামারীর সামনে একপ্রকার অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে ভারত। হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই, অক্সিজেন সংকটে রোজ মারা যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। শ্মশানগুলোতে দিনরাত জ্বলছে চিতার আগুন। সরকারি হিসাবে গত সাতদিন দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন দেশটিতে। কিন্তু এই সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর সরকারি হিসাব থেকে বাদ পড়ছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি শুধু দিল্লি ঘুরেই মৃতের সংখ্যা নিয়ে বড় ধরনের বিভ্রান্তি খুঁজে পেয়েছে। দিল্লি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (এমসিডি) পরিচালিত ২৬টি শ্মশান ঘুরে এনডিটিভি জানতে পেরেছে, গত ১৮ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত শহরটিতে ৩ হাজার ৯৬ জন করোনা রোগীর মরদেহ দাহ করা হয়েছে।

কিন্তু একই সময়ে দিল্লি সরকারের প্রকাশিত হিসাবে দেখানো হচ্ছে, মারা গেছেন ১ হাজার ৯৩৮ জন। অর্থাৎ অন্তত ১ হাজার ১৫৮ জন করোনা রোগীর নাম সরকারি খাতায় ওঠেনি। হিসাবের এমন গরমিলের কারণ এখনও অজানা। দিল্লি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি।

তাছাড়া, এমসিডি শুধু তাদেরই করোনায় মৃত বলে গুনছে যাদের হাসপাতাল থেকে আনা হচ্ছে। বাড়ি থেকে কারও মরদেহ পৌঁছালে সেটি ভিন্ন তালিকায় যোগ করা হয়। দিল্লি উপকণ্ঠে অবস্থিত গাজিপুর শ্মশানের এক কর্মী বলেন, হাসপাতাল থেকে যারা আসে, তারা অ্যাম্বুলেন্সে আসে। অন্যরা [মরদেহ] আনে বাড়ি থেকে। কিন্তু মৃত্যুর কারণের দিকে তাকালে দেখা যায় তারা শ্বাসযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।

অনুজ বানসাল নামে ওই কর্মী আরও বলেন, আমরা মৃত্যুর কারণ করোনাভাইরাস অথবা স্বাভাবিক লিখি। মৃত্যু যদি হাসপাতালে হয়, আমরা জানতে পারি এটি করোনা কি না। কিন্তু মৃত্যু বাড়িতে হলে সেটি নিশ্চিত হয় না, তখন আমরা এটি স্বাভাবিক কারণ লিখে রাখি।

দিল্লি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনও বাড়িতে মৃত্যুকে করোনায় মৃত্যু হিসেবে গোনে না। পরিবার যদি জানায় কেউ করোনায় ভুগছিল, তাহলে সেটিকে বড়জোর ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে ভিন্ন একটি তালিকায় যোগ করা হয়। অবশ্য সেক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রোটোকল মেনেই মরদেহ দাহ করা হয়।

এতে প্রশ্ন উঠছে, শুধু দিল্লিতেই যদি প্রতিদিন এত মানুষের মৃত্যু গোনার বাইরে থাকে, তাহলে গোটা দেশে কত মানুষের মৃত্যু গোপন থেকে যাচ্ছে?

ভয় জাগাচ্ছে মৃতের সংখ্যাও। সরকারি হিসাবে, দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৭৭১ জন করোনায় মারা গেছেন। তবে সেখানে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা যে আরও বেশি তা বলাই বাহুল্য।

বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমজান ১৪৪২

করোনায় বিধ্বস্ত

ভারতে এবার মাঠে নামছে সেনাবাহিনী

কমছে না সংক্রমণ ও মৃত্যু

image

ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। টানা সপ্তম দিনে মৃতের সংখ্যা পার করেছে দুই হাজার। এর মধ্য দিয়ে ভারতে করোনাভাইরাসে মৃত্যু দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য ডাকা হয়েছে।

টেস্টের সংখ্যা কম হলেও ভারতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২৩ হাজার ১৪৪ জন। একই সময়ে মারা গেছেন ২ হাজার ৭৭১ জন। রয়টার্স

হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েই চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। রাজধানী নয়াদিল্লিসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশিরভাগ হাসপাতালে অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্তান টাইমসের খবর অনুযায়ী পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রাত্রিকালীন কারফিউসহ বিভিন্ন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে টিকাদান কার্যক্রম । পাশাপাশি দেশটির হাসপাতালগুলোতে সেনবাহিনীর সদস্যদের সাহায্য করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সেনাবাহিনীর জন্য মজুদ করা অক্সিজেন হাসপাতালগুলোতে সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন দেশটির চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়ান। এর পরই সেনাপ্রধান তার বাহিনীর প্রতি এই নির্দেশনা দেন।

গত দুই বছরে অবসর নেয়া সশস্ত্র বাহিনীর চিকিৎসকদেরও কাজে ফেরানো হচ্ছে। তাদের বাড়ির কাছে থাকা করোনা সেন্টারে কাজ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর অবসর নেয়া নার্সিং স্টাফদেরও করোনা যুদ্ধের মাঠে নামতে বলা হয়েছে।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর এক গবেষণার ভিত্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, লকডাউন ও সামাজিক দূরত্বের মতো বিষয়গুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হলে একজন করোনা রোগীর কাছ থেকে ৩০ দিনে সংক্রমিত হতে পারে আরও ৪০৬ জন।

এদিন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরল, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, গুজরাট ও তামিলনাড়ুতে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা লক্ষাধিক।

নীতি আয়োগের সদস্য ড. ভিকে পাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই করোনা আবহে দয়া করে অকারণে বাড়ি থেকে বের হবেন না। পরিবারের মাঝেও মাস্ক পরে থাকুন। মাস্ক পরা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজের বাড়িতে অন্য কাউকে আমন্ত্রণ জানাবেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় বলেও উল্লেখ করেন ড. ভিকে পাল। ভারতে দৈনিক সংক্রমণ সাড়ে তিন লাখের গ-ি ছাড়িয়েছে। ভারতে তো বটেই, বিশ্বেও এই প্রথম কোনও একটি দেশে একদিনে এতো বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হলো। গত বছর কোভিডের প্রথম ঢেউয়ে দেশটিতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কখনও এক লাখ পেরোয়নি। ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো দৈনিক সংক্রমণ এক লাখ অতিক্রম করে। তার ১০ দিন পর, ১৫ এপ্রিল শনাক্ত ছাড়ায় দুই লাখের গ-ি। এর এক সপ্তাহের মাথায় এ সংখ্যা তিন লাখ ছাড়ায়, যা এরইমধ্যে সাড়ে তিন লাখ পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে তিন লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের পাশাপাশি দৈনিক মৃত্যুও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৮১২ জনের। সক্রিয় রোগীও বাড়তে বাড়তে ২৮ লাখ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সংক্রমণের হার পুরো মহামারি পর্বে সর্বোচ্চ। যত জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে তাদের প্রতি চার জনের মধ্যে এক জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা এক কোটি ৭৩ লাখ ১৩ হাজার ১৬৩। এখন পর্যন্ত করোনায় এক লাখ ৯৫ হাজার জনের মৃত্যুর কথা রেকর্ড করা হয়েছে। শনাক্তের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরেই দেশটির অবস্থান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার পরিসর ক্রমেই কমে আসছে। অনেক ক্ষেত্রেই একই শয্যায় একাধিক রোগীকে শুয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। অক্সিজেনের অভাব সামাল দিতে মাঠে নেমেছে প্রশাসনও। অনেক জায়গাতেই অস্থায়ী কোভিড কেয়ার কেন্দ্র তৈরি করে পরিস্থিতি মোবাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যের সরকার। এদিকে, ভারতে চাপা পড়ছে হাজারও মৃত্যুর খবর, বাড়িতে মরলে হিসাবই নেই করোনাভাইরাস মহামারীর সামনে একপ্রকার অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে ভারত। হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই, অক্সিজেন সংকটে রোজ মারা যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। শ্মশানগুলোতে দিনরাত জ্বলছে চিতার আগুন। সরকারি হিসাবে গত সাতদিন দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন দেশটিতে। কিন্তু এই সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর সরকারি হিসাব থেকে বাদ পড়ছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি শুধু দিল্লি ঘুরেই মৃতের সংখ্যা নিয়ে বড় ধরনের বিভ্রান্তি খুঁজে পেয়েছে। দিল্লি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (এমসিডি) পরিচালিত ২৬টি শ্মশান ঘুরে এনডিটিভি জানতে পেরেছে, গত ১৮ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত শহরটিতে ৩ হাজার ৯৬ জন করোনা রোগীর মরদেহ দাহ করা হয়েছে।

কিন্তু একই সময়ে দিল্লি সরকারের প্রকাশিত হিসাবে দেখানো হচ্ছে, মারা গেছেন ১ হাজার ৯৩৮ জন। অর্থাৎ অন্তত ১ হাজার ১৫৮ জন করোনা রোগীর নাম সরকারি খাতায় ওঠেনি। হিসাবের এমন গরমিলের কারণ এখনও অজানা। দিল্লি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি।

তাছাড়া, এমসিডি শুধু তাদেরই করোনায় মৃত বলে গুনছে যাদের হাসপাতাল থেকে আনা হচ্ছে। বাড়ি থেকে কারও মরদেহ পৌঁছালে সেটি ভিন্ন তালিকায় যোগ করা হয়। দিল্লি উপকণ্ঠে অবস্থিত গাজিপুর শ্মশানের এক কর্মী বলেন, হাসপাতাল থেকে যারা আসে, তারা অ্যাম্বুলেন্সে আসে। অন্যরা [মরদেহ] আনে বাড়ি থেকে। কিন্তু মৃত্যুর কারণের দিকে তাকালে দেখা যায় তারা শ্বাসযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।

অনুজ বানসাল নামে ওই কর্মী আরও বলেন, আমরা মৃত্যুর কারণ করোনাভাইরাস অথবা স্বাভাবিক লিখি। মৃত্যু যদি হাসপাতালে হয়, আমরা জানতে পারি এটি করোনা কি না। কিন্তু মৃত্যু বাড়িতে হলে সেটি নিশ্চিত হয় না, তখন আমরা এটি স্বাভাবিক কারণ লিখে রাখি।

দিল্লি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনও বাড়িতে মৃত্যুকে করোনায় মৃত্যু হিসেবে গোনে না। পরিবার যদি জানায় কেউ করোনায় ভুগছিল, তাহলে সেটিকে বড়জোর ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে ভিন্ন একটি তালিকায় যোগ করা হয়। অবশ্য সেক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রোটোকল মেনেই মরদেহ দাহ করা হয়।

এতে প্রশ্ন উঠছে, শুধু দিল্লিতেই যদি প্রতিদিন এত মানুষের মৃত্যু গোনার বাইরে থাকে, তাহলে গোটা দেশে কত মানুষের মৃত্যু গোপন থেকে যাচ্ছে?

ভয় জাগাচ্ছে মৃতের সংখ্যাও। সরকারি হিসাবে, দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৭৭১ জন করোনায় মারা গেছেন। তবে সেখানে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা যে আরও বেশি তা বলাই বাহুল্য।