জমি দখল ও হামলার মামলায় কক্সবাজার আ’লীগের ৩ নেতা ঢাকায় গ্রেপ্তার

কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল তেতৈয়া রফিকের ঘোনায় বিচারক পরিবার ও বনভূমির জায়গা জোরপূর্বক দখল করে অবৈধ বসতি স্থাপন ও বিচারক পরিবারের ওপর হামলা মামলায় ৩ আসামি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

তারা হলেন কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের বাদশা মিয়ার ছেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. কামাল উদ্দিন (৪০), তার ভাই শেখ কামাল মেম্বার (৩৮) ও মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক (৪১)। ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ গতকাল দুপুরে রাজধানীর ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।

এ খবর নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী বিচারক পরিবারের সদস্য ও হাইকোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানী। এছাড়া কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নারীনেত্রী নাজনীন সরওয়ার কাবেরী ফেইসবুকে এ সংক্রান্ত পোস্ট দিয়ে আলোচ্য তিন ভূমিদস্যূর গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন রব্বানী বলেন, মামলার পর থেকে আসামিরা নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। কিছু ভাড়াটে লোক দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই মানববন্ধনের নামে আমাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে লাগাতার বিষোদগার ও চরিত্রহনন করে আসছিল।

এর মাঝেই গ্রেপ্তার এড়াতে স্থানীয় একজন প্রভাবশালী নেতার পরামর্শে ঢাকায় আত্মগোপনে গিয়ে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় তিন আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়টা বিভিন্নজন থেকে শুনেছি। অফিসিয়ালি অবগত নই। সংশ্লিষ্ট থানা থেকে জানানো হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ২০ এপ্রিল কক্সবাজার মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন তেতৈয়া রফিকের ঘোনার মৃত হাজী আবুল হোছাইনের ছেলে রফিক আহমদ।

মামলার অন্য আসামিরা হলো মৃত ফজল করিমের ছেলে আবু ছৈয়দ প্রকাশ মুন্সি আবু ছৈয়দ (৪৫), জাফর আলমের ছেলে মো. ইলিয়াছ (৩৫), মৃত বেক্কুর ছেলে মো. কাসেম (৩৪), নুরুল ইসলামের ছেলে মনিউল আলম (৩৮), মৃত মোক্তার আহমদের ছেলে শাহিন আলম (৪০), আবদু সালামের ছেলে মিজানুর রহমান (২৯), আবদুল মজিদের ছেলে সেলিম উল্লাহ (৩১) ও জাফর আলমের ছেলে হামিদ হোসেন (৪৩)।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের তৈতৈয়া রফিকের ঘোনা এলাকায় চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দীনের পরিবারের ২ একরেরও বেশি কৃষি জমি ও কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের অধীনে বরাদ্দকৃত সামাজিক বানায়ন দখল করে ‘মুজিবনগর’ নাম দেয়া হয়। ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ণ’ ব্যানার টাঙিয়ে শতাধিক ঝুপড়িঘর নির্মাণ করে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের নেতৃত্বে একটি চিহ্নিত ভূমিদস্যূ চক্র।

দখলদারিত্ব বজায় রাখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়। ব্যানারে লেখা হয়, ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার।’

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দখলকৃত জমির মালিক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ব্রিটিশ ভারতের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ফৌজ আর্মির সদস্য মৃত আবুল হোসেন। তিনি খুরুশকুলের তেতৈয়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দিন, হাইকোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানীসহ পাঁচজন ব্যক্তি এসব কৃষিজমির মালিক। রয়েছে বন বিভাগের সৃজিত সামাজিক বনায়নভুক্ত জমিও।

উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন দলের পাতি নেতা সেজে এ ধরনের দখলবাজ ভূমিদস্যূ ও দালাল চক্র বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে সরকারি বনভূমি দখল করে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে আসছে যা দেখার কেউ নেই।

বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমজান ১৪৪২

জমি দখল ও হামলার মামলায় কক্সবাজার আ’লীগের ৩ নেতা ঢাকায় গ্রেপ্তার

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল তেতৈয়া রফিকের ঘোনায় বিচারক পরিবার ও বনভূমির জায়গা জোরপূর্বক দখল করে অবৈধ বসতি স্থাপন ও বিচারক পরিবারের ওপর হামলা মামলায় ৩ আসামি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

তারা হলেন কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের বাদশা মিয়ার ছেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. কামাল উদ্দিন (৪০), তার ভাই শেখ কামাল মেম্বার (৩৮) ও মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক (৪১)। ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ গতকাল দুপুরে রাজধানীর ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।

এ খবর নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী বিচারক পরিবারের সদস্য ও হাইকোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানী। এছাড়া কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নারীনেত্রী নাজনীন সরওয়ার কাবেরী ফেইসবুকে এ সংক্রান্ত পোস্ট দিয়ে আলোচ্য তিন ভূমিদস্যূর গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন রব্বানী বলেন, মামলার পর থেকে আসামিরা নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। কিছু ভাড়াটে লোক দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই মানববন্ধনের নামে আমাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে লাগাতার বিষোদগার ও চরিত্রহনন করে আসছিল।

এর মাঝেই গ্রেপ্তার এড়াতে স্থানীয় একজন প্রভাবশালী নেতার পরামর্শে ঢাকায় আত্মগোপনে গিয়ে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় তিন আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়টা বিভিন্নজন থেকে শুনেছি। অফিসিয়ালি অবগত নই। সংশ্লিষ্ট থানা থেকে জানানো হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ২০ এপ্রিল কক্সবাজার মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন তেতৈয়া রফিকের ঘোনার মৃত হাজী আবুল হোছাইনের ছেলে রফিক আহমদ।

মামলার অন্য আসামিরা হলো মৃত ফজল করিমের ছেলে আবু ছৈয়দ প্রকাশ মুন্সি আবু ছৈয়দ (৪৫), জাফর আলমের ছেলে মো. ইলিয়াছ (৩৫), মৃত বেক্কুর ছেলে মো. কাসেম (৩৪), নুরুল ইসলামের ছেলে মনিউল আলম (৩৮), মৃত মোক্তার আহমদের ছেলে শাহিন আলম (৪০), আবদু সালামের ছেলে মিজানুর রহমান (২৯), আবদুল মজিদের ছেলে সেলিম উল্লাহ (৩১) ও জাফর আলমের ছেলে হামিদ হোসেন (৪৩)।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের তৈতৈয়া রফিকের ঘোনা এলাকায় চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দীনের পরিবারের ২ একরেরও বেশি কৃষি জমি ও কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের অধীনে বরাদ্দকৃত সামাজিক বানায়ন দখল করে ‘মুজিবনগর’ নাম দেয়া হয়। ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ণ’ ব্যানার টাঙিয়ে শতাধিক ঝুপড়িঘর নির্মাণ করে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের নেতৃত্বে একটি চিহ্নিত ভূমিদস্যূ চক্র।

দখলদারিত্ব বজায় রাখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়। ব্যানারে লেখা হয়, ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার।’

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দখলকৃত জমির মালিক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ব্রিটিশ ভারতের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ফৌজ আর্মির সদস্য মৃত আবুল হোসেন। তিনি খুরুশকুলের তেতৈয়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দিন, হাইকোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানীসহ পাঁচজন ব্যক্তি এসব কৃষিজমির মালিক। রয়েছে বন বিভাগের সৃজিত সামাজিক বনায়নভুক্ত জমিও।

উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন দলের পাতি নেতা সেজে এ ধরনের দখলবাজ ভূমিদস্যূ ও দালাল চক্র বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে সরকারি বনভূমি দখল করে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে আসছে যা দেখার কেউ নেই।