মাগুরায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদান বিতরণে দুর্নীতির বিচার দাবিতে শিল্পীদের আবেদন

মাগুরায় করোনায় কর্মহীন ৪৩৮ শিল্পী কলাকুশলীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেয়া ৪৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার দাবিতে গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন দিয়েছেন জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও শিল্পীরা। ওই তালিকায় ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে তারা মাগুরা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মো. জসিম উদ্দিন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীসহ কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে গোপনে তালিকা তৈরির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানান।

আবেদনে জেলার ২৬ জন সাংস্কৃতিক কর্মী স্বাক্ষরিত এক পত্রে অভিযোগ করেন- জেলা শিল্পকলা একাডেমির আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে জেলার সক্রিয় কোন সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের কোন প্রতিনিধিই উপস্থিতি ছিলেন না। তালিকায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী শুধু তার নিজ পরিবারেরই ১৫ জন সদস্যের নাম শিল্পী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। শুধু ব্যক্তিগত পরিচয় থাকায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর সহযোগিতায় জেলা শহরে ২টি ফ্ল্যাট ও একাধিক বাড়িসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিকের স্ত্রীকেও দেয়া হয়েছে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীর প্রণোদনা। বিশ্বজিতের সহায়তায় শিল্পকলার সংগীত শিক্ষক অজিত রায় ও অপর একটি সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকুমার পাল বিভিন্ন এলাকা থেকে অশিল্পীদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার কমিশন বাণিজ্য করেছে।

(যার একটি অডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে) এভাবে ওই চক্রটি একদিকে যেমন প্রকৃত শিল্পীদের বঞ্চিত করেছেন অপরদিকে গ্রামের সহজ-সরল সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অথচ মাগুরার বহু সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংগঠনের বাইরে থাকা অনেক গরিব শিল্পী কোন প্রণোদনাই পাননি। এমনকি ওই প্রণোদনা দেয়ার তথ্যও তাদের জানানোই হয়নি। এমনকি জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অশিল্পী ব্যক্তিকে শিল্পী হিসেবে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। তালিকায় দেখা যায়, ব্যক্তিগত পরিচয় থাকায় অন্য জেলার বাসিন্দা অনেকেই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। শিল্পকলার সরকারি কর্মচারীর পরিবারের সদস্যের নামেও নেয়া হয়েছে এ সহায়তা। এতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি মহতি উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যা নিয়ে ভেতরে ভেতরে বিক্ষুব্ধ জেলার সাধারণ শিল্পী সমাজ।

শিল্পীরা অভিযোগে জানান, সরকারিভাবে যখন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীদের সহায়তা দেয়ার জন্য নামের তালিকা আহ্বান করা হয় তখন জেলা কালচারাল অফিসার, শিল্পকলার সাউন্ড অপারেটর কামরুজ্জামান, সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, অজিত রায়সহ একটি অসাধুচক্র একত্রে বিভিন্ন পরিচিত ব্যক্তির নাম ও আইডি নম্বর সংগ্রহ করে নিজ মনগড়া একটি তালিকা প্রেরণ করে কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রকৃত শিল্পীদের বিষয়টি জানতেই দেয়া হয়নি অথবা তাদের আবেদন গ্রাহ্যই করা হয়নি। যার ফলে প্রকৃত শিল্পীরা বঞ্চিত হলেও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম দিয়ে তালিকা প্রেরণ করা হয়। ফলে সরকারের এত বড় একটি মহতি উদ্যোগ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। শিল্পী সংস্কৃতির বিকাশে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর মতো মানুষ মুখে প্রগতিশীলতার কথা বললেও স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে জেলার শিল্প সংস্কৃতির ব্যাপক ক্ষতি করছেন। শিল্পকলা একাডেমিকে নিজের পারিবারিক সম্পত্তির মতো ব্যবহারের ফলে শিল্প সংস্কৃতিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলার শিল্প সংস্কৃতির বিকাশে বিশ্বজিৎ গংয়ের হাত থেকে সংস্কৃতিকে রক্ষার আহ্বান জানান তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক জুলিয়া সুকায়না, বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক আব্দুল হাকিম, চিত্রশিল্পী শামসুজ্জামান পান্না, সংগীতশিল্পী হাসিয়ারা খাতুন হাসি, শিপ্রা দাস, হুমায়ুন আহমেদ, চিত্রশিল্পী আশিষ রায়, নাট্য শিল্পী শামীম শরীফ, কবি ও সাংবাদিক লিটন ঘোষ জয়, সাংস্কৃতিক সংগঠক কামরুজ্জামান বিপ্লব, শরীফ স্বাধীনসহ অন্যরা। শিল্পীরা জেলার দুটি আসনের সংসদ সদস্যসহ, সংস্কৃতি সচিব ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বরাবরে আবেদনের কপি প্রদান করেন।

বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমজান ১৪৪২

মাগুরায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদান বিতরণে দুর্নীতির বিচার দাবিতে শিল্পীদের আবেদন

প্রতিনিধি, মাগুরা

image

মাগুরায় করোনায় কর্মহীন ৪৩৮ শিল্পী কলাকুশলীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেয়া ৪৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার দাবিতে গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন দিয়েছেন জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও শিল্পীরা। ওই তালিকায় ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে তারা মাগুরা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মো. জসিম উদ্দিন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীসহ কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে গোপনে তালিকা তৈরির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানান।

আবেদনে জেলার ২৬ জন সাংস্কৃতিক কর্মী স্বাক্ষরিত এক পত্রে অভিযোগ করেন- জেলা শিল্পকলা একাডেমির আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে জেলার সক্রিয় কোন সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের কোন প্রতিনিধিই উপস্থিতি ছিলেন না। তালিকায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী শুধু তার নিজ পরিবারেরই ১৫ জন সদস্যের নাম শিল্পী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। শুধু ব্যক্তিগত পরিচয় থাকায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর সহযোগিতায় জেলা শহরে ২টি ফ্ল্যাট ও একাধিক বাড়িসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিকের স্ত্রীকেও দেয়া হয়েছে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীর প্রণোদনা। বিশ্বজিতের সহায়তায় শিল্পকলার সংগীত শিক্ষক অজিত রায় ও অপর একটি সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকুমার পাল বিভিন্ন এলাকা থেকে অশিল্পীদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার কমিশন বাণিজ্য করেছে।

(যার একটি অডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে) এভাবে ওই চক্রটি একদিকে যেমন প্রকৃত শিল্পীদের বঞ্চিত করেছেন অপরদিকে গ্রামের সহজ-সরল সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অথচ মাগুরার বহু সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংগঠনের বাইরে থাকা অনেক গরিব শিল্পী কোন প্রণোদনাই পাননি। এমনকি ওই প্রণোদনা দেয়ার তথ্যও তাদের জানানোই হয়নি। এমনকি জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অশিল্পী ব্যক্তিকে শিল্পী হিসেবে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। তালিকায় দেখা যায়, ব্যক্তিগত পরিচয় থাকায় অন্য জেলার বাসিন্দা অনেকেই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। শিল্পকলার সরকারি কর্মচারীর পরিবারের সদস্যের নামেও নেয়া হয়েছে এ সহায়তা। এতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি মহতি উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যা নিয়ে ভেতরে ভেতরে বিক্ষুব্ধ জেলার সাধারণ শিল্পী সমাজ।

শিল্পীরা অভিযোগে জানান, সরকারিভাবে যখন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীদের সহায়তা দেয়ার জন্য নামের তালিকা আহ্বান করা হয় তখন জেলা কালচারাল অফিসার, শিল্পকলার সাউন্ড অপারেটর কামরুজ্জামান, সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, অজিত রায়সহ একটি অসাধুচক্র একত্রে বিভিন্ন পরিচিত ব্যক্তির নাম ও আইডি নম্বর সংগ্রহ করে নিজ মনগড়া একটি তালিকা প্রেরণ করে কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রকৃত শিল্পীদের বিষয়টি জানতেই দেয়া হয়নি অথবা তাদের আবেদন গ্রাহ্যই করা হয়নি। যার ফলে প্রকৃত শিল্পীরা বঞ্চিত হলেও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম দিয়ে তালিকা প্রেরণ করা হয়। ফলে সরকারের এত বড় একটি মহতি উদ্যোগ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। শিল্পী সংস্কৃতির বিকাশে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর মতো মানুষ মুখে প্রগতিশীলতার কথা বললেও স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে জেলার শিল্প সংস্কৃতির ব্যাপক ক্ষতি করছেন। শিল্পকলা একাডেমিকে নিজের পারিবারিক সম্পত্তির মতো ব্যবহারের ফলে শিল্প সংস্কৃতিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলার শিল্প সংস্কৃতির বিকাশে বিশ্বজিৎ গংয়ের হাত থেকে সংস্কৃতিকে রক্ষার আহ্বান জানান তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক জুলিয়া সুকায়না, বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক আব্দুল হাকিম, চিত্রশিল্পী শামসুজ্জামান পান্না, সংগীতশিল্পী হাসিয়ারা খাতুন হাসি, শিপ্রা দাস, হুমায়ুন আহমেদ, চিত্রশিল্পী আশিষ রায়, নাট্য শিল্পী শামীম শরীফ, কবি ও সাংবাদিক লিটন ঘোষ জয়, সাংস্কৃতিক সংগঠক কামরুজ্জামান বিপ্লব, শরীফ স্বাধীনসহ অন্যরা। শিল্পীরা জেলার দুটি আসনের সংসদ সদস্যসহ, সংস্কৃতি সচিব ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বরাবরে আবেদনের কপি প্রদান করেন।