অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণা

একদিকে যেভাবে বাড়ছে অনলাইন শপিং, সাইটগুলোতে ঠিক তেমনিভাবেই বাড়ছে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার হার। ই-কমার্সের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা বা চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ের নামে প্রতারণার জাল বুনেছে এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী অসাধু চক্র। গত কয়েকদিন দিন আগে এক জৈনক ব্যক্তি ফেসবুকের ‘শপিং কম্পোজ’ নামে একটি পেইজে জামা বিক্রির প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অগ্রিম টাকা পরিশোধের মাধ্যমে দুটি জামা অর্ডার করে।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জামা না পাওয়ায় যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখে মোবাইল নম্বর ব্লক এবং ফেসবুক থেকেও ব্লক করা হয়েছে। কমেন্টে আরেক ভুক্তভোগী আরও একজন লিখেছেন- ফেসবুকের একটি বিজ্ঞাপন দেখে ই-কর্মাস সাইট থেকে শার্ট অর্ডার করেন তিনি। দু’দিনের মধ্যে পণ্য হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও বারবার যোগাযোগের পর ছয় দিনের মাথায় পণ্য হাতে পাওয়ার পর দেখা গেল খুবই নিম্নমানের পণ্য দেয়া হয়েছে তাকে।

দেশে অনলাইন কেনাকাটা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বাড়লেও অনেকের অভিজ্ঞতা হয়তো এখনও কম। অসাধু চক্র বিভিন্ন প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপনে সাধারণ গ্রাহককে আকৃষ্ট করে এক ধরনের পণ্য দেখিয়ে অন্য পণ্য গছিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া আসল পণ্যের মোড়কে নকল পণ্য সরবরাহ, কখনোবা পরিমাণে কম দেয়া, আবার কখনও আগাম অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া-এসব অসাধু চক্রের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের ই-কমার্সের ওপর। ফলে স্বস্তি ও আস্থার জায়গা হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে অনলাইন মার্কেটিং।

অসাধু চক্রের হাতে ই-কমার্স খাত জিম্মি হয়ে পড়ায় আস্থা হারাচ্ছে বহু সৎ উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষ। হাজারও উদ্যোক্তার কর্মস্থল ও জনসাধারণের আস্থা ও স্বস্তির জায়গা অনলাইন মার্কেটিংয়ে প্রতারণা রোধ করে একে নিরাপদ রাখতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার আইনের প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। সাইবার জগতেও বাড়াতে হবে নজরদারি। পাশাপাশি ই-কমার্স খাতে প্রণয়ন করতে হবে নতুন নীতিমালা ও আইন এবং এর সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে এ খাতের নিরাপত্তা।

সবচেয়ে বড় কথা, অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে প্রথমেই যেটি দরকার, তা হচ্ছে সচেতনতা। কোনো আকর্ষণীয় অফার বা বিজ্ঞাপন দেখে হুট করে পণ্য কিনতে যাওয়া ঠিক নয়। প্রথমেই প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা, ট্রেন্ড লাইসেন্স, মালিকের নাম-ঠিকানা ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। কুরিয়ারে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে রসিদ ও ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য গ্রহণ করতে হবে। ফেসবুক কেনাকাটার ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য পেজ বা গ্রুপ থেকে কেনা এবং রিভিউ দেখে নিতে হবে।

আর এজন্য ক্রেতা হিসেবে প্রথমে প্রয়োজন সচেতন থাকা। কোনো কিছু কেনা থেকে হাতে পাওয়া পর্যন্ত যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে:

১. লোভনীয় পপ-আপে ক্লিক করা ও লেনদেন করা যাবে না

২. অপরিচিত একেবারেই নতুন আর তেমন ফলোয়ার নাই এমন অনলাইন প্রতিষ্ঠানে লেনদেন না করাই ভালো

৩. পাসওয়ার্ডে নম্বর, সিম্বল, ছোট-বড় হাতের অক্ষর মিলিয়ে তৈরি করা

৪. পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে অনলাইনে কেনাকাটা না করা

৫. আপনি যে ওয়েবসাইটে লেনদেন করছেন তারা আপনার ডাটা কতটুকু নিরাপদে রাখবে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন

৫. ক্রেডিট কার্ড বিল ও ব্যাংক স্টেটমেন্টে লক্ষ্য রাখুন, যে অনাকাক্সিক্ষত কোন ট্রানজেকশন আছে কি না, থাকলে তা ব্যাংককে রিপোর্ট করুন

৬. কেনাকাটার পর আপনি একটি ফেরত মেইল পাবেন, সেটি চেক করুন

৭. আজকাল ম্যাসেঞ্জারে কথা রিমুভ করা যায়। তাই প্রয়োজনীয় তথ্যের অংশটুকু স্ক্রিনশট দিয়ে রাখুন

৮. সব সময় সঠিক ঠিকানা ও ফোন নাম্বার দিয়ে পণ্য সহজে পাঠাতে সাহায্য করুন।

কোনো ধরনের প্রতারণা হলে অবশ্যই (৯৯৯) এ কল করে পুলিশকে জানান। মনে রাখবেন, আমরা ভালো ও সচেতন ক্রেতা হলেই, বিক্রেতাদের কাছ থেকেও ভালো সেবা পাব।

তারেক আল মুনতাছির

বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমজান ১৪৪২

অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণা

image

একদিকে যেভাবে বাড়ছে অনলাইন শপিং, সাইটগুলোতে ঠিক তেমনিভাবেই বাড়ছে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার হার। ই-কমার্সের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা বা চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ের নামে প্রতারণার জাল বুনেছে এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী অসাধু চক্র। গত কয়েকদিন দিন আগে এক জৈনক ব্যক্তি ফেসবুকের ‘শপিং কম্পোজ’ নামে একটি পেইজে জামা বিক্রির প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অগ্রিম টাকা পরিশোধের মাধ্যমে দুটি জামা অর্ডার করে।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জামা না পাওয়ায় যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখে মোবাইল নম্বর ব্লক এবং ফেসবুক থেকেও ব্লক করা হয়েছে। কমেন্টে আরেক ভুক্তভোগী আরও একজন লিখেছেন- ফেসবুকের একটি বিজ্ঞাপন দেখে ই-কর্মাস সাইট থেকে শার্ট অর্ডার করেন তিনি। দু’দিনের মধ্যে পণ্য হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও বারবার যোগাযোগের পর ছয় দিনের মাথায় পণ্য হাতে পাওয়ার পর দেখা গেল খুবই নিম্নমানের পণ্য দেয়া হয়েছে তাকে।

দেশে অনলাইন কেনাকাটা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বাড়লেও অনেকের অভিজ্ঞতা হয়তো এখনও কম। অসাধু চক্র বিভিন্ন প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপনে সাধারণ গ্রাহককে আকৃষ্ট করে এক ধরনের পণ্য দেখিয়ে অন্য পণ্য গছিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া আসল পণ্যের মোড়কে নকল পণ্য সরবরাহ, কখনোবা পরিমাণে কম দেয়া, আবার কখনও আগাম অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া-এসব অসাধু চক্রের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের ই-কমার্সের ওপর। ফলে স্বস্তি ও আস্থার জায়গা হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে অনলাইন মার্কেটিং।

অসাধু চক্রের হাতে ই-কমার্স খাত জিম্মি হয়ে পড়ায় আস্থা হারাচ্ছে বহু সৎ উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষ। হাজারও উদ্যোক্তার কর্মস্থল ও জনসাধারণের আস্থা ও স্বস্তির জায়গা অনলাইন মার্কেটিংয়ে প্রতারণা রোধ করে একে নিরাপদ রাখতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার আইনের প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। সাইবার জগতেও বাড়াতে হবে নজরদারি। পাশাপাশি ই-কমার্স খাতে প্রণয়ন করতে হবে নতুন নীতিমালা ও আইন এবং এর সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে এ খাতের নিরাপত্তা।

সবচেয়ে বড় কথা, অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে প্রথমেই যেটি দরকার, তা হচ্ছে সচেতনতা। কোনো আকর্ষণীয় অফার বা বিজ্ঞাপন দেখে হুট করে পণ্য কিনতে যাওয়া ঠিক নয়। প্রথমেই প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা, ট্রেন্ড লাইসেন্স, মালিকের নাম-ঠিকানা ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। কুরিয়ারে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে রসিদ ও ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য গ্রহণ করতে হবে। ফেসবুক কেনাকাটার ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য পেজ বা গ্রুপ থেকে কেনা এবং রিভিউ দেখে নিতে হবে।

আর এজন্য ক্রেতা হিসেবে প্রথমে প্রয়োজন সচেতন থাকা। কোনো কিছু কেনা থেকে হাতে পাওয়া পর্যন্ত যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে:

১. লোভনীয় পপ-আপে ক্লিক করা ও লেনদেন করা যাবে না

২. অপরিচিত একেবারেই নতুন আর তেমন ফলোয়ার নাই এমন অনলাইন প্রতিষ্ঠানে লেনদেন না করাই ভালো

৩. পাসওয়ার্ডে নম্বর, সিম্বল, ছোট-বড় হাতের অক্ষর মিলিয়ে তৈরি করা

৪. পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে অনলাইনে কেনাকাটা না করা

৫. আপনি যে ওয়েবসাইটে লেনদেন করছেন তারা আপনার ডাটা কতটুকু নিরাপদে রাখবে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন

৫. ক্রেডিট কার্ড বিল ও ব্যাংক স্টেটমেন্টে লক্ষ্য রাখুন, যে অনাকাক্সিক্ষত কোন ট্রানজেকশন আছে কি না, থাকলে তা ব্যাংককে রিপোর্ট করুন

৬. কেনাকাটার পর আপনি একটি ফেরত মেইল পাবেন, সেটি চেক করুন

৭. আজকাল ম্যাসেঞ্জারে কথা রিমুভ করা যায়। তাই প্রয়োজনীয় তথ্যের অংশটুকু স্ক্রিনশট দিয়ে রাখুন

৮. সব সময় সঠিক ঠিকানা ও ফোন নাম্বার দিয়ে পণ্য সহজে পাঠাতে সাহায্য করুন।

কোনো ধরনের প্রতারণা হলে অবশ্যই (৯৯৯) এ কল করে পুলিশকে জানান। মনে রাখবেন, আমরা ভালো ও সচেতন ক্রেতা হলেই, বিক্রেতাদের কাছ থেকেও ভালো সেবা পাব।

তারেক আল মুনতাছির