খুলনায় ৩০০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন

খুলনা বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে তরমুজ। যেখানে চোখ যায়, সেখানেই তরমুজ। সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে রসালো নানান আকারে তরমুজ যা দেখে থমকে দাঁড়ায় পথিক। ভরা মৌসুমে চাষিরা তরমুজ কাটা, পরিচর্যা, পরিবহন ও বাজারজাত করার কাজে ব্যস্ত। ক্ষেত, পথ-ঘাট, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, ট্রলার যত্রতত্র তরমুজের দেখা মিলছে। যথাসময়ে ভোক্তার হাতে তুলে দিতেই চলছে তরমুজ নিয়ে এ ছুটোছুটি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় এবার ৭ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এর মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। পানির অভাব না থাকলে ৫০০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন সম্ভব হতো।

খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা ও রূপসা উপজেলায় এ বছর তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। ক্ষেত থেকেই পাকা তরমুজ কেটে বিক্রি করছেন কৃষকরা। তাদের এখন দম ফেলার সুযোগ নেই। বৈশাখের তীব্র দাবদাহে দিনভর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরমুজ কেনার জন্য আসছেন পাইকার ও আশপাশের খুচরা বিক্রেতারা। কেউ কেউ খেত আগাম বিক্রি করে দিচ্ছেন। বর্তমানে প্রচুর দাবদাহ ও রমজানে তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। সেসঙ্গে পরিবহন সংকট না থাকায় ভালো দামে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। ফলে আগের বছরের তুলনায় এবার বেশি লাভবান হবেন তরমুজ চাষিরা।

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘খুলনা জেলার মধ্যে সবচেয়ে ভালো তরমুজ হয়েছে দাকোপে। এরপর রয়েছে বটিয়াঘাটা। এখনও দাম ভালো রয়েছে। তবে কত দিন থাকবে এটাই বিষয়। পানির অভাব না থাকলে খুলনা জেলা থেকে ৫০০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন করা কোন ব্যাপার না। এজন্য প্রয়োজন খাল খনন করে পানির ব্যবস্থা করা। বরাবরের মতো এবারও জেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে দাকোপ উপজেলায়। উপজেলার ছিটিবুনিয়া, খেজুরিয়া, উত্তর বানীশান্তা, কালিকাবাটি, হরিণটানা, লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, ধোপাদী, পশ্চিম বাজুয়া, পূর্ব বাজুয়ায় তরমুজ চাষ করা হয়েছে।

এছাড়া বটিয়াঘাটা উপজেলার দেবীতলা, বরুণপাড়া, গঙ্গারামপুর, বয়ারভাঙা ও রূপসা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে এবার তরমুজ চাষ করা হয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলার ঝালতলা, শরাফপুর, বাহির আকড়া, মাগুরখালী, শোভনা, শিবপুর, মাদারতলা বিলেও তরমুজ চাষ করা হয়েছে। পাইকগাছার দেলুটি ও গড়ইখালী ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করা হয়েছে।

দাকোপ ইউনিয়নের ছিটিবুনিয়ার তরমুজ চাষি দীপক রায় বলেন, ‘এবার চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো আছে। প্রতি বিঘায় এক লাখ টাকা করে দাম বলছে পাইকাররা। তিনি জানান, দাকোপে মূলত দুই জাতের তরমুজ বেশি লাগানো হয়। ড্রাগন ও পাকিজা জাতের। দাকোপের তরমুজ খুলনা থেকে বিভিন্ন জেলায় যায়। এছাড়া দাকোপ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, কুষ্টিয়া, মাগুরায় তরমুজ যায়।’

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, ‘দাকোপে ৬০ শতাংশ তরমুজ কর্তন করা হয়েছে। উপজেলার ৩ হাজার ৪০৭ টেক্টর জমিতে এবার তরমুজ চাষ করা হয়। ফলনও ভালো হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থায় কোন সংকট নেই। বটিয়াঘাটা উপজেলার গাওঘরা গ্রামের তরমুজ ক্ষেতের মালিক ফরিদ রানা বলেন, বৃষ্টির কারণে তরমুজের ফলন ভালো পাইনি তবে, দাম ভালো পাওয়ায় তা পুষিয়ে গেছে। প্রথম পর্বের তরমুজ কর্তন শুরু হয়েছে।’

পাইকগাছার গড়াইখালী ইউনিয়নের উত্তর কুংখালী গ্রামের সুখেশ কুমার ম-ল বলেন, এক বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি।

এখানে তরমুজের মান হিসেবে বিঘা প্রতি ৭০ হাজার ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম ওঠেছে। আমাদের এলাকার খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি থাকছে না। এতে খেতে পানি দেয়ার সমস্যা হয়েছে। সময় মতো পানি না দিতে পারায় কাক্সিক্ষত আকারের তরমুজ অনেকেরই হয়নি।

ডুমুরিয়া উপজেলার ছোটবন গ্রামের মৃত্যুঞ্জয় নামে এক চাষি বলেন, ‘তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তবে আরও ভালো ফলন হতো যদি বৃষ্টি হতো।’

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘ডুমুরিয়ায় তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর ৪৫০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।’

রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এখনও রূপসা উপজেলায় তরমুজ কাটা শুরু হয়নি।’

বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২১ , ১৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৬ রমজান ১৪৪২

খুলনায় ৩০০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

খুলনা বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে তরমুজ। যেখানে চোখ যায়, সেখানেই তরমুজ। সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে রসালো নানান আকারে তরমুজ যা দেখে থমকে দাঁড়ায় পথিক। ভরা মৌসুমে চাষিরা তরমুজ কাটা, পরিচর্যা, পরিবহন ও বাজারজাত করার কাজে ব্যস্ত। ক্ষেত, পথ-ঘাট, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, ট্রলার যত্রতত্র তরমুজের দেখা মিলছে। যথাসময়ে ভোক্তার হাতে তুলে দিতেই চলছে তরমুজ নিয়ে এ ছুটোছুটি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় এবার ৭ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এর মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। পানির অভাব না থাকলে ৫০০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন সম্ভব হতো।

খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা ও রূপসা উপজেলায় এ বছর তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। ক্ষেত থেকেই পাকা তরমুজ কেটে বিক্রি করছেন কৃষকরা। তাদের এখন দম ফেলার সুযোগ নেই। বৈশাখের তীব্র দাবদাহে দিনভর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরমুজ কেনার জন্য আসছেন পাইকার ও আশপাশের খুচরা বিক্রেতারা। কেউ কেউ খেত আগাম বিক্রি করে দিচ্ছেন। বর্তমানে প্রচুর দাবদাহ ও রমজানে তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। সেসঙ্গে পরিবহন সংকট না থাকায় ভালো দামে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। ফলে আগের বছরের তুলনায় এবার বেশি লাভবান হবেন তরমুজ চাষিরা।

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘খুলনা জেলার মধ্যে সবচেয়ে ভালো তরমুজ হয়েছে দাকোপে। এরপর রয়েছে বটিয়াঘাটা। এখনও দাম ভালো রয়েছে। তবে কত দিন থাকবে এটাই বিষয়। পানির অভাব না থাকলে খুলনা জেলা থেকে ৫০০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন করা কোন ব্যাপার না। এজন্য প্রয়োজন খাল খনন করে পানির ব্যবস্থা করা। বরাবরের মতো এবারও জেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে দাকোপ উপজেলায়। উপজেলার ছিটিবুনিয়া, খেজুরিয়া, উত্তর বানীশান্তা, কালিকাবাটি, হরিণটানা, লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, ধোপাদী, পশ্চিম বাজুয়া, পূর্ব বাজুয়ায় তরমুজ চাষ করা হয়েছে।

এছাড়া বটিয়াঘাটা উপজেলার দেবীতলা, বরুণপাড়া, গঙ্গারামপুর, বয়ারভাঙা ও রূপসা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে এবার তরমুজ চাষ করা হয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলার ঝালতলা, শরাফপুর, বাহির আকড়া, মাগুরখালী, শোভনা, শিবপুর, মাদারতলা বিলেও তরমুজ চাষ করা হয়েছে। পাইকগাছার দেলুটি ও গড়ইখালী ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করা হয়েছে।

দাকোপ ইউনিয়নের ছিটিবুনিয়ার তরমুজ চাষি দীপক রায় বলেন, ‘এবার চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো আছে। প্রতি বিঘায় এক লাখ টাকা করে দাম বলছে পাইকাররা। তিনি জানান, দাকোপে মূলত দুই জাতের তরমুজ বেশি লাগানো হয়। ড্রাগন ও পাকিজা জাতের। দাকোপের তরমুজ খুলনা থেকে বিভিন্ন জেলায় যায়। এছাড়া দাকোপ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, কুষ্টিয়া, মাগুরায় তরমুজ যায়।’

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, ‘দাকোপে ৬০ শতাংশ তরমুজ কর্তন করা হয়েছে। উপজেলার ৩ হাজার ৪০৭ টেক্টর জমিতে এবার তরমুজ চাষ করা হয়। ফলনও ভালো হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থায় কোন সংকট নেই। বটিয়াঘাটা উপজেলার গাওঘরা গ্রামের তরমুজ ক্ষেতের মালিক ফরিদ রানা বলেন, বৃষ্টির কারণে তরমুজের ফলন ভালো পাইনি তবে, দাম ভালো পাওয়ায় তা পুষিয়ে গেছে। প্রথম পর্বের তরমুজ কর্তন শুরু হয়েছে।’

পাইকগাছার গড়াইখালী ইউনিয়নের উত্তর কুংখালী গ্রামের সুখেশ কুমার ম-ল বলেন, এক বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি।

এখানে তরমুজের মান হিসেবে বিঘা প্রতি ৭০ হাজার ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম ওঠেছে। আমাদের এলাকার খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি থাকছে না। এতে খেতে পানি দেয়ার সমস্যা হয়েছে। সময় মতো পানি না দিতে পারায় কাক্সিক্ষত আকারের তরমুজ অনেকেরই হয়নি।

ডুমুরিয়া উপজেলার ছোটবন গ্রামের মৃত্যুঞ্জয় নামে এক চাষি বলেন, ‘তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তবে আরও ভালো ফলন হতো যদি বৃষ্টি হতো।’

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘ডুমুরিয়ায় তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর ৪৫০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।’

রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এখনও রূপসা উপজেলায় তরমুজ কাটা শুরু হয়নি।’