আজ থেকে দ্বিতীয় টেস্ট

সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কা সফরে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটা ড্র হওয়ার খবর পুরানো হয়ে গেছে। এই ড্র হওয়া ম্যাচটা আবার একটা রেকর্ডও গড়েছে। টানা ২৮টা ম্যাচে ফলাফল আসার পর টেস্ট সিরিজের আয়োজক হিসাবে শ্রীলঙ্কা দেখল ড্র হওয়া টেস্ট। এবারের বাংলাদেশ সিরিজে পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের প্রথম টেস্ট ম্যাচের আগে ২০১৪ সাল থেকে গত প্রায় সাত বছরে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ২৮টা ম্যাচেই ফলাফল এসেছে। সময়ের হিসাবে এত লম্বা সময় পর কোন আয়োজক দেশে টেস্ট ম্যাচ ড্র হওয়ার রেকর্ড এটা। ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের ওই ম্যাচের পিচ ছিল সবুজ ঘাসে ছাওয়া। কিন্তু ফাস্ট বোলাররা কোন সুবিধাই পাননি। আবার পাঁচদিন ধরে ঘাস থাকার কারণে পিচ ভাঙেনি। ফলে স্পিনাররাও সুবিধা করতে পারেনি। সব মিলিয়ে পিচ হয়ে ওঠে ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্য, আর বোলারদের বধ্যভূমি।

প্রথম টেস্ট ড্র হওয়ার পর বাংলাদেশের টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন দ্বিতীয় টেস্টে স্পোর্টিং উইকেট পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে দশটায় ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। এই ম্যাচের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করবে সিরিজের ভাগ্য। বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কণ্ঠে ধ্বনিত হলো জয়ের প্রত্যয়। তিনি বলেছেন, আমরা সিরিজ জয়ের চেষ্টা করব। শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট সিরিজ জয়টা হবে বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন। বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের লক্ষ্য আমাদের। পাঁচদিনই আমাদের ভালো খেলতে হবে। শ্রীলঙ্কানদেরকে তাদের মাটিতে পরাজিত করা কঠিন। আমরা শুরুটা ভালো করতে চাই, সেশন বাই সেশন খেলতে চাই।

ডমিঙ্গোর আশাবাদী হওয়ার কারণও আছে। অন্তত প্রথম টেস্টে দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালের প্রথম ইনিংসে ৯০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৪ রানের সঙ্গে অধিনায়ক মোমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি, লিটন কুমার দাস ও মুশফিকুর রহিমের হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসগুলো আশা জাগানিয়া। একেবারে খারাপ করেনি বোলিং ডিপার্টমেন্টও। ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্যে আসলে বোলারদের করার কিছুই ছিলো না।

ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য নির্ধারণ করা পিচটাতেও ঘাস দেখা দেখা গেছে। এতে পানিও দেয়া হয়েছে নিয়মিত। তবে, ধারণা করা হচ্ছে যে, ম্যাচের আগে ঘাস ছেঁটে ফেলা হবে। সেক্ষেত্রে স্পিনাররাই সুবিধা পাবেন। এছাড়া শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ঠা-া টেস্ট ভেন্যু পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে নাকি পেস বোলিং সহায়ক পিচ বানানো কঠিন কাজ।

প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের মতোই দাপট দেখিয়েছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টও। অধিনায়ক দ্বিমুখ করুণারতেœর ডাবল সেঞ্চুরির সঙ্গে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাও খেলেন দেড় শতাধিক রানের ইনিংস। তবে দলটির জন্য দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে স্ট্রাইক বোলার লাহিরু কুমারার ইনজুরি। মরা পিচেও প্রাণ সঞ্চার করতে সক্ষম বলে তার সুনাম রয়েছে। স্পিনিং উইকেটে সিরিজের স্বাগতিক দলকে দুই রিস্ট স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও লক্ষণ সান্দাকানের ওপর নির্ভর করার বিকল্প নেই। তবে, এই দু’জনের কারো পক্ষেই একক বা যৌথ নৈপুণ্যে দলের জয় আনা সম্ভব বলে মনে করা হয় না। আবার অফ স্পিন বোলিং অল রাউন্ডার রমেশ মেন্ডিসকেও একাদশে রাখতে পারে শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজমেন্ট। বাংলাদেশের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের জন্য, এটা আশার খবর। যদি না, অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশ দলকে পেয়ে বসে। পাল্লেকেলের দ্বিতীয় টেস্টের পিচে বল বাউন্স করবে না। শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজমেন্টে একাদশে চমক হিসাবে রাখতে পারে ‘স্কিডি’ সিম বোলার আসিথা ফার্নান্দোকেও। অভিজ্ঞ সুরঙ্গা লাকমল এবং প্রথম টেস্টে ভালো করা বিশ্ব ফার্নান্দোর সঙ্গে বোলিং ডিপার্টমেন্টে কারা থাকছেন, তা বুঝা যাবে ম্যাচের আগ মুহূর্তে। এদিকে বাংলাদেশ দলে কোন পরিবর্তন আসছে না। টপ অর্ডারে সাইফ হাসান প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে যথাক্রমে ০ ও ১ রানে আউট হলেও তাকে থিতু হওয়ার সুযোগ দিতে চান প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো।

দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে মেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এর মধ্য দিয়ে পাওয়া আত্মবিশ্বাসের সুর ধ্বনিত হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের কন্ঠে। এখন মাঠের কাজটা করার দায়িত্ব টাইগারদের। নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যে, বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয়ের ক্ষমতা রাখেন, তার প্রমাণ হিসাবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচে পাওয়া জয়টাই তো আছে। প্রেরণার উৎস হিসাবে ওটাই কি যথেষ্ঠ নয়?

বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২১ , ১৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৬ রমজান ১৪৪২

আজ থেকে দ্বিতীয় টেস্ট

সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা

বিশেষ প্রতিনিধি

image

শ্রীলঙ্কা সফরে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটা ড্র হওয়ার খবর পুরানো হয়ে গেছে। এই ড্র হওয়া ম্যাচটা আবার একটা রেকর্ডও গড়েছে। টানা ২৮টা ম্যাচে ফলাফল আসার পর টেস্ট সিরিজের আয়োজক হিসাবে শ্রীলঙ্কা দেখল ড্র হওয়া টেস্ট। এবারের বাংলাদেশ সিরিজে পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের প্রথম টেস্ট ম্যাচের আগে ২০১৪ সাল থেকে গত প্রায় সাত বছরে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ২৮টা ম্যাচেই ফলাফল এসেছে। সময়ের হিসাবে এত লম্বা সময় পর কোন আয়োজক দেশে টেস্ট ম্যাচ ড্র হওয়ার রেকর্ড এটা। ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের ওই ম্যাচের পিচ ছিল সবুজ ঘাসে ছাওয়া। কিন্তু ফাস্ট বোলাররা কোন সুবিধাই পাননি। আবার পাঁচদিন ধরে ঘাস থাকার কারণে পিচ ভাঙেনি। ফলে স্পিনাররাও সুবিধা করতে পারেনি। সব মিলিয়ে পিচ হয়ে ওঠে ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্য, আর বোলারদের বধ্যভূমি।

প্রথম টেস্ট ড্র হওয়ার পর বাংলাদেশের টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন দ্বিতীয় টেস্টে স্পোর্টিং উইকেট পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে দশটায় ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। এই ম্যাচের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করবে সিরিজের ভাগ্য। বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কণ্ঠে ধ্বনিত হলো জয়ের প্রত্যয়। তিনি বলেছেন, আমরা সিরিজ জয়ের চেষ্টা করব। শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট সিরিজ জয়টা হবে বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন। বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের লক্ষ্য আমাদের। পাঁচদিনই আমাদের ভালো খেলতে হবে। শ্রীলঙ্কানদেরকে তাদের মাটিতে পরাজিত করা কঠিন। আমরা শুরুটা ভালো করতে চাই, সেশন বাই সেশন খেলতে চাই।

ডমিঙ্গোর আশাবাদী হওয়ার কারণও আছে। অন্তত প্রথম টেস্টে দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালের প্রথম ইনিংসে ৯০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৪ রানের সঙ্গে অধিনায়ক মোমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি, লিটন কুমার দাস ও মুশফিকুর রহিমের হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসগুলো আশা জাগানিয়া। একেবারে খারাপ করেনি বোলিং ডিপার্টমেন্টও। ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্যে আসলে বোলারদের করার কিছুই ছিলো না।

ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য নির্ধারণ করা পিচটাতেও ঘাস দেখা দেখা গেছে। এতে পানিও দেয়া হয়েছে নিয়মিত। তবে, ধারণা করা হচ্ছে যে, ম্যাচের আগে ঘাস ছেঁটে ফেলা হবে। সেক্ষেত্রে স্পিনাররাই সুবিধা পাবেন। এছাড়া শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ঠা-া টেস্ট ভেন্যু পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে নাকি পেস বোলিং সহায়ক পিচ বানানো কঠিন কাজ।

প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের মতোই দাপট দেখিয়েছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টও। অধিনায়ক দ্বিমুখ করুণারতেœর ডাবল সেঞ্চুরির সঙ্গে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাও খেলেন দেড় শতাধিক রানের ইনিংস। তবে দলটির জন্য দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে স্ট্রাইক বোলার লাহিরু কুমারার ইনজুরি। মরা পিচেও প্রাণ সঞ্চার করতে সক্ষম বলে তার সুনাম রয়েছে। স্পিনিং উইকেটে সিরিজের স্বাগতিক দলকে দুই রিস্ট স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও লক্ষণ সান্দাকানের ওপর নির্ভর করার বিকল্প নেই। তবে, এই দু’জনের কারো পক্ষেই একক বা যৌথ নৈপুণ্যে দলের জয় আনা সম্ভব বলে মনে করা হয় না। আবার অফ স্পিন বোলিং অল রাউন্ডার রমেশ মেন্ডিসকেও একাদশে রাখতে পারে শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজমেন্ট। বাংলাদেশের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের জন্য, এটা আশার খবর। যদি না, অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশ দলকে পেয়ে বসে। পাল্লেকেলের দ্বিতীয় টেস্টের পিচে বল বাউন্স করবে না। শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজমেন্টে একাদশে চমক হিসাবে রাখতে পারে ‘স্কিডি’ সিম বোলার আসিথা ফার্নান্দোকেও। অভিজ্ঞ সুরঙ্গা লাকমল এবং প্রথম টেস্টে ভালো করা বিশ্ব ফার্নান্দোর সঙ্গে বোলিং ডিপার্টমেন্টে কারা থাকছেন, তা বুঝা যাবে ম্যাচের আগ মুহূর্তে। এদিকে বাংলাদেশ দলে কোন পরিবর্তন আসছে না। টপ অর্ডারে সাইফ হাসান প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে যথাক্রমে ০ ও ১ রানে আউট হলেও তাকে থিতু হওয়ার সুযোগ দিতে চান প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো।

দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে মেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এর মধ্য দিয়ে পাওয়া আত্মবিশ্বাসের সুর ধ্বনিত হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের কন্ঠে। এখন মাঠের কাজটা করার দায়িত্ব টাইগারদের। নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যে, বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয়ের ক্ষমতা রাখেন, তার প্রমাণ হিসাবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচে পাওয়া জয়টাই তো আছে। প্রেরণার উৎস হিসাবে ওটাই কি যথেষ্ঠ নয়?