চীনের সিনোফার্ম’র টিকা জরুরি ব্যবহারে অনুমোদন

এবার চীনের সিনোফার্ম কোম্পানির তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। দেশে ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়া এটি তৃতীয় টিকা। এর আগে ২৭ এপ্রিল রাশিয়ার তৈরি ‘স্পুৎনিক ভি’ করোনা টিকা দেশে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান গতকাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘সিনোফার্ম যে টিকা উদ্ভাবন করেছে, আমরা আজকে সেটার ইমার্জেন্সি ইউজের অথরাইজেশন দিয়েছি।’

দেশে বর্তমানে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকা’র টিকা দিয়ে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী এখন টিকা সরবরাহ করতে পারছে না সেরাম ইনস্টিটিউট। টিকা সংকটের কারণে ইতোমধ্যে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের সবার জন্য দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করাও চ্যালেঞ্জের মুখে পরেছে।

গত ৮ জানুয়ারি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়। গত ২৭ এপ্রিল রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি স্পুৎনিক-ভি টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার আনুষ্ঠানিক নাম বিবিআইবিপি-সিওরভি (BBIBP-CorV)। এ টিকা ২৮ দিনের ব্যবধানে দুই ডোজ নিতে হয়। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এ টিকা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকারিতা পাওয়া গেছে বলে উৎপাদনকারীদের দাবি।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এই টিকা কেনা হবে সরকারি পর্যায়ে। চীন অনুদান হিসেবে ৫ লাখ ডোজ টিকা দিচ্ছে। এগুলো আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে আসবে।’

চীনে সিনোফার্মের টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল হয়েছে উল্লেখ করে মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল বিশ্বের পাঁচটি দেশের ৫৫ হাজার মানুষের ওপর হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি কমিটি এ টিকার সব নথিপত্র যাচাই করেছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমাদের যে কমিটি আছে, সেই কমিটি এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা আজ চীনের সিনোফার্মের এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছি।’

এই টিকা বাংলাদেশে আসার পর প্রথমে এক হাজার মানুষের ওপর প্রয়োগ করে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখব এই টিকার সেইফটি এবং অ্যাফিকেসি কেমন। এরপর গণটিকাদান কার্যক্রমে সিনোফার্মের টিকা ব্যবহার করা হবে।’

যারা প্রথম ডোজে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয় ডোজে সিনোফার্মের টিকা নিতে পারবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় ডোজে তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই নেবেন। অন্য কোন টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ আছেন, তাদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা একটা মিটিং করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।’

আমদানির পাশাপাশি স্পুৎনিক-ভি ও সিনোফার্মের টিকা দেশেই উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে বা কাঁচামাল নিয়ে এসে বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিতে টিকা উৎপাদন করা যাবে। টিকা উৎপাদনে বাংলাদেশের ইনসেপ্টা, পপুলার এবং হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সক্ষমতা রয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান শুরু হয়।

শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১ , ১৮ বৈশাখ ১৪২৮ ১৮ রমজান ১৪৪২

চীনের সিনোফার্ম’র টিকা জরুরি ব্যবহারে অনুমোদন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

এবার চীনের সিনোফার্ম কোম্পানির তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। দেশে ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়া এটি তৃতীয় টিকা। এর আগে ২৭ এপ্রিল রাশিয়ার তৈরি ‘স্পুৎনিক ভি’ করোনা টিকা দেশে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান গতকাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘সিনোফার্ম যে টিকা উদ্ভাবন করেছে, আমরা আজকে সেটার ইমার্জেন্সি ইউজের অথরাইজেশন দিয়েছি।’

দেশে বর্তমানে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকা’র টিকা দিয়ে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী এখন টিকা সরবরাহ করতে পারছে না সেরাম ইনস্টিটিউট। টিকা সংকটের কারণে ইতোমধ্যে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের সবার জন্য দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করাও চ্যালেঞ্জের মুখে পরেছে।

গত ৮ জানুয়ারি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়। গত ২৭ এপ্রিল রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি স্পুৎনিক-ভি টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার আনুষ্ঠানিক নাম বিবিআইবিপি-সিওরভি (BBIBP-CorV)। এ টিকা ২৮ দিনের ব্যবধানে দুই ডোজ নিতে হয়। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এ টিকা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকারিতা পাওয়া গেছে বলে উৎপাদনকারীদের দাবি।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এই টিকা কেনা হবে সরকারি পর্যায়ে। চীন অনুদান হিসেবে ৫ লাখ ডোজ টিকা দিচ্ছে। এগুলো আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে আসবে।’

চীনে সিনোফার্মের টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল হয়েছে উল্লেখ করে মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল বিশ্বের পাঁচটি দেশের ৫৫ হাজার মানুষের ওপর হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি কমিটি এ টিকার সব নথিপত্র যাচাই করেছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমাদের যে কমিটি আছে, সেই কমিটি এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা আজ চীনের সিনোফার্মের এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছি।’

এই টিকা বাংলাদেশে আসার পর প্রথমে এক হাজার মানুষের ওপর প্রয়োগ করে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখব এই টিকার সেইফটি এবং অ্যাফিকেসি কেমন। এরপর গণটিকাদান কার্যক্রমে সিনোফার্মের টিকা ব্যবহার করা হবে।’

যারা প্রথম ডোজে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয় ডোজে সিনোফার্মের টিকা নিতে পারবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় ডোজে তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই নেবেন। অন্য কোন টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ আছেন, তাদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা একটা মিটিং করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।’

আমদানির পাশাপাশি স্পুৎনিক-ভি ও সিনোফার্মের টিকা দেশেই উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে বা কাঁচামাল নিয়ে এসে বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিতে টিকা উৎপাদন করা যাবে। টিকা উৎপাদনে বাংলাদেশের ইনসেপ্টা, পপুলার এবং হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সক্ষমতা রয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান শুরু হয়।