কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলায় এখনই কাউকে গ্রেপ্তার করবে না পুলিশ। তারা বলছেন, বিভিন্ন প্রমাণ যোগাড়ের পরই তারা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেবেন।
তবে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, মুনিয়ার মৃত্যুতে প্ররোচনা রয়েছে এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত থাকার কারণেই পুলিশ বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা নেয়।
গতকাল নিজ কার্যালয়ে মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা এসব কথা জানান।
তিনি জানান, মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ’ন্যায়বিচার নিশ্চিত’ করতে কাজ করছে পুলিশ। মুনিয়ার বোনের বক্তব্য শুনে পুলিশ স্বতপ্রণোদিত হয়েই মামলা করতে বলেছে। মামলার কারণে বাদী যদি হুমকিতে থাকেন তার নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা পুলিশ নিবে বলেও জানান তিনি।
ডিসি সুদীপ কুমার জানান, পুলিশ মুনিয়ার লেখা ৬টি ডায়েরি, দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে। ডায়েরির লেখাগুলো পুলিশ পড়েছে। সেখানে মুনিয়ার সঙ্গে আনভীরের গত ২ বছরের সম্পর্ক, সম্পর্কের টানাপোড়েন সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা আছে।
ডায়েরিতে তাদের দু’জনের সম্পর্ক সামাজিক স্বীকৃতি না পাওয়ার উদ্বেগ, আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার সম্পর্কের বাধা-বিপত্তির কথা উল্লেখ আছে। ডায়েরির ৪টি পাতায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা রয়েছে সেগুলো আত্মহত্যায় প্ররোচণা হিসেবে মনে করার মতো। তবে ডায়েরিতে সে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে এমন কোন লেখা বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলে জানান সুদীপ কুমার।
তিনি বলেন, মুনিয়ার দুটি ফোনের কললিস্ট যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে। ফরেনসিকের জন্য মোবাইল দুটি সিআইডিতে পাঠানো হবে। এছাড়া ডায়েরির লেখাগুলো সিআইডির হস্তলিপি বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে পর্যলোচনা করা হবে।
মুনিয়া কী আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থায় গিয়ে লাশটি পেয়েছে। ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো ছিল। পা বিছানার ছুঁই ছুঁই করছিল। তবে পায়ের ভর বিছানার উপর ছিল না। লাশ নামানোর পর প্রাথমিক সুরতহালে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গলায় গভীর ক্ষতের দাগ যেটি দীর্ঘক্ষণ ঝুলে থাকার কারণে হতে পারে সেটি পাওয়া গেছে। হাত ও পায়ে কালচে দাগ দেখে মনে হয়েছে লাশ দীঘক্ষণ ঝুলে থেকে রক্ত গিয়ে হাতের তালু ও পায়ের তালুতে জমাট বেধেছে যার কারণে কালচে দাগের সৃষ্টি হতে পারে।
আত্মহত্যায় প্ররোচনার কোন প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে কিনা, জানতে চাইলে সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, তারা ২০২০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত লেখা ডায়েরিতে কিছু তথ্য পেয়েছে। ওই ডায়েরিতে ধারাবাহিকভাবে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত লিখেছেন মুনিয়া। একটি পৃষ্ঠায় তিনি বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে লিখেছেন। কিন্তু তাতে কোন তারিখ ছিল না। ধারণা করা হচ্ছে, এটা তিনি লিখেছেন ২৬ এপ্রিল এবং এতে আত্মহত্যার ইঙ্গিত ছিল। ডায়েরির একটি জায়গায় মোসারাত তারিখ না দেয়া পৃষ্ঠাগুলো পড়ার অনুরোধ করেছেন, কোনভাবেই যেন ওই পৃষ্ঠাগুলো কেউ এড়িয়ে না যায় সে কথাও বলেছেন।
মুনিয়ার মৃত্যু কিভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে পুলিশ অপেক্ষা করছে ফরেনসিক প্রতিবেদন এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য। গতকাল পর্যন্ত পুলিশ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের কাছ থেকে কোন প্রতিবেদন পায়নি।
মুনিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ, আসামি প্রভাবশালী হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তবে ডিসি সুদীপ কুমার বলেন, ফ্ল্যাট থেকে মরদেহ উদ্ধারের পর তরুণীর বোন মামলা করতে অতটা ইচ্ছুক ছিলেন না। বাড়ির মালিক পুলিশকে জানান। সে রাতেই পুলিশ যা যা তথ্য সংগ্রহ করার দরকার, তার সব সংগ্রহ করে এবং তাৎক্ষণিক সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মামলা হয়।
ওই রাতে তিনিসহ গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার, সহকারী কমিশনার, গুলশান থানার ওসিসহ সব কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে ছিলেন। মামলা করার ক্ষেত্রে পুলিশ কোন বাধা পায়নি। এমনকি মামলার তদন্তে আসামি পক্ষে কোন তদবিরও কেউ করেনি বলেই তিনি দাবি করলেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা নিয়ে নির্বিঘেœœ পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
মুনিয়ার মৃত্যু রহসের্যর জট খুলতে পুলিশ এখন পর্যন্ত অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। যে ফ্লাটে মুনিয়ার লাশ মিলেছে সেই ফ্লাটের মালিক, তার মেয়ে ও মেয়ের জামাই, কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পিয়াসা নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবদ করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের একজন সংসদ সদস্যের ছেলের সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ।
মুনিয়া ও আনভীরের কথপোকথনের কথিত একটি অডিও ফাস হওয়ার পর সেটির সত্যতা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ফরেনসিকের জন্য অডিওটি সিআইডিতে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি বাসা থেকে কলেজ ছাত্রী মেমাসারাত মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে গুলশান থানায় মুনিয়ার বোন বাদী হয়ে একটি মামলা করে। সেই মামলায় মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনাকারী হিসেবে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে একমাত্র আসামী করা হয়। এরপর পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আনভীরের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়।
আনভীরের পক্ষে হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন কড়া হলে আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয় বর্তমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে তারা কোনও এই ধরনের আবেদনের শুনানি করবেন না।
শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১ , ১৮ বৈশাখ ১৪২৮ ১৮ রমজান ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলায় এখনই কাউকে গ্রেপ্তার করবে না পুলিশ। তারা বলছেন, বিভিন্ন প্রমাণ যোগাড়ের পরই তারা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেবেন।
তবে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, মুনিয়ার মৃত্যুতে প্ররোচনা রয়েছে এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত থাকার কারণেই পুলিশ বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা নেয়।
গতকাল নিজ কার্যালয়ে মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা এসব কথা জানান।
তিনি জানান, মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ’ন্যায়বিচার নিশ্চিত’ করতে কাজ করছে পুলিশ। মুনিয়ার বোনের বক্তব্য শুনে পুলিশ স্বতপ্রণোদিত হয়েই মামলা করতে বলেছে। মামলার কারণে বাদী যদি হুমকিতে থাকেন তার নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা পুলিশ নিবে বলেও জানান তিনি।
ডিসি সুদীপ কুমার জানান, পুলিশ মুনিয়ার লেখা ৬টি ডায়েরি, দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে। ডায়েরির লেখাগুলো পুলিশ পড়েছে। সেখানে মুনিয়ার সঙ্গে আনভীরের গত ২ বছরের সম্পর্ক, সম্পর্কের টানাপোড়েন সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা আছে।
ডায়েরিতে তাদের দু’জনের সম্পর্ক সামাজিক স্বীকৃতি না পাওয়ার উদ্বেগ, আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার সম্পর্কের বাধা-বিপত্তির কথা উল্লেখ আছে। ডায়েরির ৪টি পাতায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা রয়েছে সেগুলো আত্মহত্যায় প্ররোচণা হিসেবে মনে করার মতো। তবে ডায়েরিতে সে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে এমন কোন লেখা বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলে জানান সুদীপ কুমার।
তিনি বলেন, মুনিয়ার দুটি ফোনের কললিস্ট যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে। ফরেনসিকের জন্য মোবাইল দুটি সিআইডিতে পাঠানো হবে। এছাড়া ডায়েরির লেখাগুলো সিআইডির হস্তলিপি বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে পর্যলোচনা করা হবে।
মুনিয়া কী আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থায় গিয়ে লাশটি পেয়েছে। ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো ছিল। পা বিছানার ছুঁই ছুঁই করছিল। তবে পায়ের ভর বিছানার উপর ছিল না। লাশ নামানোর পর প্রাথমিক সুরতহালে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গলায় গভীর ক্ষতের দাগ যেটি দীর্ঘক্ষণ ঝুলে থাকার কারণে হতে পারে সেটি পাওয়া গেছে। হাত ও পায়ে কালচে দাগ দেখে মনে হয়েছে লাশ দীঘক্ষণ ঝুলে থেকে রক্ত গিয়ে হাতের তালু ও পায়ের তালুতে জমাট বেধেছে যার কারণে কালচে দাগের সৃষ্টি হতে পারে।
আত্মহত্যায় প্ররোচনার কোন প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে কিনা, জানতে চাইলে সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, তারা ২০২০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত লেখা ডায়েরিতে কিছু তথ্য পেয়েছে। ওই ডায়েরিতে ধারাবাহিকভাবে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত লিখেছেন মুনিয়া। একটি পৃষ্ঠায় তিনি বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে লিখেছেন। কিন্তু তাতে কোন তারিখ ছিল না। ধারণা করা হচ্ছে, এটা তিনি লিখেছেন ২৬ এপ্রিল এবং এতে আত্মহত্যার ইঙ্গিত ছিল। ডায়েরির একটি জায়গায় মোসারাত তারিখ না দেয়া পৃষ্ঠাগুলো পড়ার অনুরোধ করেছেন, কোনভাবেই যেন ওই পৃষ্ঠাগুলো কেউ এড়িয়ে না যায় সে কথাও বলেছেন।
মুনিয়ার মৃত্যু কিভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে পুলিশ অপেক্ষা করছে ফরেনসিক প্রতিবেদন এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য। গতকাল পর্যন্ত পুলিশ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের কাছ থেকে কোন প্রতিবেদন পায়নি।
মুনিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ, আসামি প্রভাবশালী হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তবে ডিসি সুদীপ কুমার বলেন, ফ্ল্যাট থেকে মরদেহ উদ্ধারের পর তরুণীর বোন মামলা করতে অতটা ইচ্ছুক ছিলেন না। বাড়ির মালিক পুলিশকে জানান। সে রাতেই পুলিশ যা যা তথ্য সংগ্রহ করার দরকার, তার সব সংগ্রহ করে এবং তাৎক্ষণিক সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মামলা হয়।
ওই রাতে তিনিসহ গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার, সহকারী কমিশনার, গুলশান থানার ওসিসহ সব কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে ছিলেন। মামলা করার ক্ষেত্রে পুলিশ কোন বাধা পায়নি। এমনকি মামলার তদন্তে আসামি পক্ষে কোন তদবিরও কেউ করেনি বলেই তিনি দাবি করলেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা নিয়ে নির্বিঘেœœ পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
মুনিয়ার মৃত্যু রহসের্যর জট খুলতে পুলিশ এখন পর্যন্ত অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। যে ফ্লাটে মুনিয়ার লাশ মিলেছে সেই ফ্লাটের মালিক, তার মেয়ে ও মেয়ের জামাই, কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পিয়াসা নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবদ করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের একজন সংসদ সদস্যের ছেলের সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ।
মুনিয়া ও আনভীরের কথপোকথনের কথিত একটি অডিও ফাস হওয়ার পর সেটির সত্যতা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ফরেনসিকের জন্য অডিওটি সিআইডিতে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি বাসা থেকে কলেজ ছাত্রী মেমাসারাত মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে গুলশান থানায় মুনিয়ার বোন বাদী হয়ে একটি মামলা করে। সেই মামলায় মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনাকারী হিসেবে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে একমাত্র আসামী করা হয়। এরপর পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আনভীরের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়।
আনভীরের পক্ষে হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন কড়া হলে আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয় বর্তমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে তারা কোনও এই ধরনের আবেদনের শুনানি করবেন না।