প্রবৃদ্ধি নয় কর্মসংস্থানে নজর দিন

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে বাজেট নিয়ে সিপিডির প্রস্তাবনা

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কতটুকু হলো তার হিসাব-নিকাশ না করে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলানোর দিকেই সরকারকে নজর দেয়ার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সংস্থাটি বলছে, এখন বড় প্রকল্পে নজর দেয়ার সময় নয়। এখন নজর দেয়া উচিত কর্মসংস্থানের ওপর। এখন জিডিপি কত হবে তা নিয়ে না ভাবলেও চলবে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশও করেছে সিপিডি।

গতকাল এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সামনে ২০২১-২২ অর্থবছরের তাদের বাজেট পস্তাবনা তুলে ধরার সময় এসব কথা বলে সংস্থাটি।

সিপিডি বলছে, সরকার ৩৫ লাখ পরিবারকে যে নগদ সহায়তা দিচ্ছে, তা আরও বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে পরিবারের সংখ্যা ও নগদ সহায়তার পরিধিও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

আগামী বাজেটে নিয়ে সিপিডির প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। আর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সিপিডি বলছে, আগামী বাজেটে চারটি খাতের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। কোভিড মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে সেবা নিশ্চিত করা। সেজন্য এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। তৃতীয়ত, কর্মসংস্থান তৈরিতে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো। চতুর্থত, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও রপ্তানিমুখী শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকার গরিব মানুষকে নতুন করে নগদ সহায়তা দিতে যাচ্ছে। সত্যিকারের গরিব মানুষ যাতে এ সহায়তা পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, প্রণোদনার চেয়ে নগদ সহায়তা বেশি উপকারী। এ টাকায় চাহিদা তৈরি হয়। অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। তাই নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে গরিব মানুষের সংখ্যা এবং এর পরিধিও বাড়ানো উচিত।’

বছরে দুই থেকে তিনবার গরিব মানুষকে নগদ সহায়তার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এখানে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেশি দেখানোর একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই জিডিপি যদি কর্মসংস্থান তৈরি করতে না পারে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারে, তাহলে এই প্রবৃদ্ধির কোন অর্থই হয় না। পৃথিবীর অনেকে দেশেই প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে। তাতে কী হয়েছে ওই দেশের। তাই জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় এখন নয়।’

তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ আর রাখা ঠিক হবে না। কারণ, এই সুবিধা করকাঠামোর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।’ বরং যারা কর শনাক্তকরণ নম্বর নিয়েছেন, তাদের করের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সর্বোচ্চ করহার আগের জায়গায়, অর্থাৎ ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেছে সিপিডি, যেটা এখন ২৫ শতাংশ রয়েছে। এছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেট সম্প্রসারণমূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সিপিডি বলেছে, করোনার কারণে অর্থনীতির যে পরিবেশ, তাতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যেন বাস্তবসম্মত হয়। স্বাস্থ্যসেবাসংক্রান্ত যেসব সরঞ্জাম রয়েছে, সেসব আমদানিতে কর পরিহারের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

করোনার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা কার্যক্রমে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। মহামারীর কথা বিবেচনা করে ইন্টারনেট সেবায় ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১ শতাংশ সারচার্জ প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।

কোভিডের কারণে সংস্কার কার্যক্রম যাতে পিছিয়ে না যায়, সেদিকে নজর দেয়ার কথাও বলা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবে। স্বাস্থ্য খাতে যারা ফ্রন্টলাইনে আছেন, তারা এখনও প্রণোদনার টাকা পাননি। তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য যত দ্রুত সম্ভব প্রণোদনার টাকা ছাড়ের তাগিদ দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১ , ১৮ বৈশাখ ১৪২৮ ১৮ রমজান ১৪৪২

প্রবৃদ্ধি নয় কর্মসংস্থানে নজর দিন

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে বাজেট নিয়ে সিপিডির প্রস্তাবনা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কতটুকু হলো তার হিসাব-নিকাশ না করে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলানোর দিকেই সরকারকে নজর দেয়ার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সংস্থাটি বলছে, এখন বড় প্রকল্পে নজর দেয়ার সময় নয়। এখন নজর দেয়া উচিত কর্মসংস্থানের ওপর। এখন জিডিপি কত হবে তা নিয়ে না ভাবলেও চলবে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশও করেছে সিপিডি।

গতকাল এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সামনে ২০২১-২২ অর্থবছরের তাদের বাজেট পস্তাবনা তুলে ধরার সময় এসব কথা বলে সংস্থাটি।

সিপিডি বলছে, সরকার ৩৫ লাখ পরিবারকে যে নগদ সহায়তা দিচ্ছে, তা আরও বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে পরিবারের সংখ্যা ও নগদ সহায়তার পরিধিও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

আগামী বাজেটে নিয়ে সিপিডির প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। আর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সিপিডি বলছে, আগামী বাজেটে চারটি খাতের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। কোভিড মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে সেবা নিশ্চিত করা। সেজন্য এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। তৃতীয়ত, কর্মসংস্থান তৈরিতে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো। চতুর্থত, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও রপ্তানিমুখী শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকার গরিব মানুষকে নতুন করে নগদ সহায়তা দিতে যাচ্ছে। সত্যিকারের গরিব মানুষ যাতে এ সহায়তা পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, প্রণোদনার চেয়ে নগদ সহায়তা বেশি উপকারী। এ টাকায় চাহিদা তৈরি হয়। অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। তাই নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে গরিব মানুষের সংখ্যা এবং এর পরিধিও বাড়ানো উচিত।’

বছরে দুই থেকে তিনবার গরিব মানুষকে নগদ সহায়তার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এখানে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেশি দেখানোর একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই জিডিপি যদি কর্মসংস্থান তৈরি করতে না পারে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারে, তাহলে এই প্রবৃদ্ধির কোন অর্থই হয় না। পৃথিবীর অনেকে দেশেই প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে। তাতে কী হয়েছে ওই দেশের। তাই জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় এখন নয়।’

তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ আর রাখা ঠিক হবে না। কারণ, এই সুবিধা করকাঠামোর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।’ বরং যারা কর শনাক্তকরণ নম্বর নিয়েছেন, তাদের করের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সর্বোচ্চ করহার আগের জায়গায়, অর্থাৎ ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেছে সিপিডি, যেটা এখন ২৫ শতাংশ রয়েছে। এছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেট সম্প্রসারণমূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সিপিডি বলেছে, করোনার কারণে অর্থনীতির যে পরিবেশ, তাতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যেন বাস্তবসম্মত হয়। স্বাস্থ্যসেবাসংক্রান্ত যেসব সরঞ্জাম রয়েছে, সেসব আমদানিতে কর পরিহারের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

করোনার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা কার্যক্রমে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। মহামারীর কথা বিবেচনা করে ইন্টারনেট সেবায় ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১ শতাংশ সারচার্জ প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।

কোভিডের কারণে সংস্কার কার্যক্রম যাতে পিছিয়ে না যায়, সেদিকে নজর দেয়ার কথাও বলা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবে। স্বাস্থ্য খাতে যারা ফ্রন্টলাইনে আছেন, তারা এখনও প্রণোদনার টাকা পাননি। তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য যত দ্রুত সম্ভব প্রণোদনার টাকা ছাড়ের তাগিদ দেয়া হয়েছে।