শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের পিচ ছিল ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্য। বোলারদের বধ্যভূমিতে ড্র হওয়া টেস্টের পর একই ভেন্যুতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) শুরু হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটা স্পোর্টিং উইকেটে হওয়ার আশাবাদ ছিল। তার ছিটেফোঁটাও দেখা গেলো না। দেখা গেলো টাইগারদের ক্যাচ ছাড়ার দৃশ্য। সদ্য সমাপ্ত নিউজিল্যান্ড সফরের ক্যাচ ছাড়াটা যে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা অভ্যাসে পরিণত করেছেন, তার স্বাক্ষর রেখে সেঞ্চুরি হাঁকালেন লঙ্কা দলপতি দ্বিমুথ করুনারত্নে, তার ওপেনিং পার্টনার লাহিরু থিরিমানে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অপরাজিত থাকলেন। দুইজনে নাম লেখালেন রেকর্ড বইয়ে। দিনশেষে শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে ২৯১ রানের বিপরীতে বাংলাদেশের দখলে মাত্র একটি উইকেট। অভিষিক্ত শরিফুলের এই উইকেটটা তার ব্যক্তিগত অর্জন তো অবশ্যই।
প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মোমিনুল হক। এবার উল্টোটা ঘটল। টস জিতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দ্বিমুথ করুনারত্নে সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যাটিংয়ের। ওপেনিং পার্টনার লাহিরু থিরিমানেকে নিয়ে প্রথম টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান করুনারত্নে শুরুর ঘণ্টাখানেক কিছুটা সতর্ক হয়ে ব্যাট চালান। দুইজনে থিতু হওয়ার পর ২০৯ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন। ২০১১ সালের পর শ্রীলঙ্কান ওপেনিং জুটি এবারই পেরোলো দুইশ রানের কোটা। আবার ২১ বছরের মধ্যে দেশের মাটিতেও এই ঘটনা ঘটল প্রথমবার। চা বিরতির পর বাংলাদেশের অভিষিক্ত বোলার শরিফুলের বলে করুণারত্নে কট-বিহাইন্ড হলে ভাঙে দুইজনের টানা তৃতীয় শতরানের পার্টনারশিপ।
ব্যক্তিগত ১১৮ রানে আউট হওয়ার আগে ১৯০ বলের ইনিংসে ১৫টি বাউন্ডারি হাঁকান লঙ্কা দলপতি। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরিটা পূর্ণ করার ইনিংসে তিনি পেরিয়ে গেছেন টেস্টে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক। শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের বর্তমান ব্যাটারদের মধ্যে করুনারত্নেই এখন সর্বোচ্চ টেস্ট রানের মালিক। আরেক ওপেনার লাহিরু থিরিমানে পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি, চলতি বছরে এটা তার দ্বিতীয় শতরানের ইনিংস। থিরিমানে দিনশেষে ২৫৩ বল মোকাবিলায় ১৪ বাউন্ডারিতে ১৩১ রানে অপরাজিত থেকেছেন। তার সঙ্গে অপরাজিত ব্যাটার ওশাদা ফার্নপান্দো ৯৮ বলে ৪০ রানে অপরাজিত আছেন।
দিনটা শ্রীলঙ্কার হলেও শুরুর সময়টা করুণারত্নে ও থিরিমানে খেলেছেন সতর্কভাবে। প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে মাত্র ৬৬ রান যোগ করেন তারা। শুরুতে বল থেকে বেশ মুভমেন্ট আদায় করে নিতে সক্ষম হচ্ছিলেন দুই টাইগার বোলার তাসকিন আহমেদ ও আবু জায়েদ। বিশেষ করে তাসকিনের প্রথম দুটো স্পেল ছিল দূর্দান্ত। সেঞ্চুরিয়ান করুণারত্নেকে আউট করার দারুণ একটা সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন তাসকিন। প্রথম সেশনে করুণারত্নের ব্যাটের কাণায় লাগা তাসকিনের বল স্লিপে তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি যে ক্যাচটা ছেড়েছেন, তা স্লিপ ফিল্ডারের জন্য খুবই সহজ একটা ক্যাচ। মাত্র ২৮ রানে পাওয়া জীবনটা করুণারত্নে কাজে লাগিয়েছেন সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে।
তাসকিন ও নবাগত শরীফুল শুরুর দিকে ভালো বোলিং করলেও, বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের চোখেমুখে ফুটে ওঠেছে ক্লান্তির ছাপ। আবু জায়েদ রাহী লাইন-লেন্থ বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন। দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজের বলে ধার-ভার কিছুই চোখে পড়েনি।
আর, প্রথম দিনেই রানের ভারে ক্লিষ্ট বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। শ্রীলঙ্কানরা বড় কোন ইনিংস টাইগার ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের ওপর চাপিয়ে দিলে, তা সামাল দেয়া যাবে কিনা, সেই শঙ্কা কিন্তু এখনই চোখ রাঙাচ্ছে।
শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১ , ১৮ বৈশাখ ১৪২৮ ১৮ রমজান ১৪৪২
বিশেষ প্রতিনিধি
শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের পিচ ছিল ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্য। বোলারদের বধ্যভূমিতে ড্র হওয়া টেস্টের পর একই ভেন্যুতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) শুরু হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটা স্পোর্টিং উইকেটে হওয়ার আশাবাদ ছিল। তার ছিটেফোঁটাও দেখা গেলো না। দেখা গেলো টাইগারদের ক্যাচ ছাড়ার দৃশ্য। সদ্য সমাপ্ত নিউজিল্যান্ড সফরের ক্যাচ ছাড়াটা যে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা অভ্যাসে পরিণত করেছেন, তার স্বাক্ষর রেখে সেঞ্চুরি হাঁকালেন লঙ্কা দলপতি দ্বিমুথ করুনারত্নে, তার ওপেনিং পার্টনার লাহিরু থিরিমানে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অপরাজিত থাকলেন। দুইজনে নাম লেখালেন রেকর্ড বইয়ে। দিনশেষে শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে ২৯১ রানের বিপরীতে বাংলাদেশের দখলে মাত্র একটি উইকেট। অভিষিক্ত শরিফুলের এই উইকেটটা তার ব্যক্তিগত অর্জন তো অবশ্যই।
প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মোমিনুল হক। এবার উল্টোটা ঘটল। টস জিতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দ্বিমুথ করুনারত্নে সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যাটিংয়ের। ওপেনিং পার্টনার লাহিরু থিরিমানেকে নিয়ে প্রথম টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান করুনারত্নে শুরুর ঘণ্টাখানেক কিছুটা সতর্ক হয়ে ব্যাট চালান। দুইজনে থিতু হওয়ার পর ২০৯ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন। ২০১১ সালের পর শ্রীলঙ্কান ওপেনিং জুটি এবারই পেরোলো দুইশ রানের কোটা। আবার ২১ বছরের মধ্যে দেশের মাটিতেও এই ঘটনা ঘটল প্রথমবার। চা বিরতির পর বাংলাদেশের অভিষিক্ত বোলার শরিফুলের বলে করুণারত্নে কট-বিহাইন্ড হলে ভাঙে দুইজনের টানা তৃতীয় শতরানের পার্টনারশিপ।
ব্যক্তিগত ১১৮ রানে আউট হওয়ার আগে ১৯০ বলের ইনিংসে ১৫টি বাউন্ডারি হাঁকান লঙ্কা দলপতি। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরিটা পূর্ণ করার ইনিংসে তিনি পেরিয়ে গেছেন টেস্টে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক। শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের বর্তমান ব্যাটারদের মধ্যে করুনারত্নেই এখন সর্বোচ্চ টেস্ট রানের মালিক। আরেক ওপেনার লাহিরু থিরিমানে পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি, চলতি বছরে এটা তার দ্বিতীয় শতরানের ইনিংস। থিরিমানে দিনশেষে ২৫৩ বল মোকাবিলায় ১৪ বাউন্ডারিতে ১৩১ রানে অপরাজিত থেকেছেন। তার সঙ্গে অপরাজিত ব্যাটার ওশাদা ফার্নপান্দো ৯৮ বলে ৪০ রানে অপরাজিত আছেন।
দিনটা শ্রীলঙ্কার হলেও শুরুর সময়টা করুণারত্নে ও থিরিমানে খেলেছেন সতর্কভাবে। প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে মাত্র ৬৬ রান যোগ করেন তারা। শুরুতে বল থেকে বেশ মুভমেন্ট আদায় করে নিতে সক্ষম হচ্ছিলেন দুই টাইগার বোলার তাসকিন আহমেদ ও আবু জায়েদ। বিশেষ করে তাসকিনের প্রথম দুটো স্পেল ছিল দূর্দান্ত। সেঞ্চুরিয়ান করুণারত্নেকে আউট করার দারুণ একটা সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন তাসকিন। প্রথম সেশনে করুণারত্নের ব্যাটের কাণায় লাগা তাসকিনের বল স্লিপে তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি যে ক্যাচটা ছেড়েছেন, তা স্লিপ ফিল্ডারের জন্য খুবই সহজ একটা ক্যাচ। মাত্র ২৮ রানে পাওয়া জীবনটা করুণারত্নে কাজে লাগিয়েছেন সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে।
তাসকিন ও নবাগত শরীফুল শুরুর দিকে ভালো বোলিং করলেও, বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের চোখেমুখে ফুটে ওঠেছে ক্লান্তির ছাপ। আবু জায়েদ রাহী লাইন-লেন্থ বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন। দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজের বলে ধার-ভার কিছুই চোখে পড়েনি।
আর, প্রথম দিনেই রানের ভারে ক্লিষ্ট বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। শ্রীলঙ্কানরা বড় কোন ইনিংস টাইগার ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের ওপর চাপিয়ে দিলে, তা সামাল দেয়া যাবে কিনা, সেই শঙ্কা কিন্তু এখনই চোখ রাঙাচ্ছে।