করোনায় ‘নতুন দরিদ্র শ্রেণী’ বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ
করোনা মহামারীজনিত দুর্যোগকালে মহান মে দিবস। করোনার প্রভাবে যে শুধু মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বা প্রাণহানি হচ্ছে তা নয়, থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতেও। কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষ এখন কর্মহীন, ক্ষুধার্ত। পণ্য পরিবহনের সংকট কৃষি ও কৃষককে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এছাড়াও রপ্তানিমুখী শিল্পের বাইরে যে হাজার হাজার ছোট, মাঝারি, তাঁত ও কুটিরশিল্প আছে, যেগুলো দেশের চাহিদা মেটায় এবং তাদেরও এখন পথে বসার দশা। এছাড়া করোনায় বন্ধ হয়ে গেছে শত শত কলকারখানা, বন্ধ বহুবিধ নির্মাণের কাজ। করোনায় হাজার নি¤œআয়ের মানুষ, বিভিন্ন পেশার শ্রমিকেরা চরম মানবেতরভাবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রুখতে টানা ছুটির কারণে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। শ্রমজীবী এসব মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। একদিকে তারা যেতে পারছেন না কাজে, অপরদিকে ঘরে থাকা সঞ্চিত অর্থ ইতোমধ্যে হয়ে গেছে নিঃশেষ। পরিবার-পরিজনের মুখে দিতে পারছেন না দু’বেলা দু’মুঠো খাবার। নিদারুণ এ কষ্ট এখন তাদের নিত্যসঙ্গী।
পোশাকশিল্পের অনিশ্চয়তা এবং সরকারের প্রশ্রয়ে কারখানা মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা পোশাক শ্রমিকদের আর্থিক ও স্বাস্থ্যঝুঁকি দুই-ই বাড়িয়েছে, সেই সঙ্গে সংক্রমণের ভয় বাড়িয়েছে। বেসরকারি খাতের পেশাজীবীরাও বড় অনিশ্চয়তায়। শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক নেতারা মনে করেন, মহান মে দিবসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের অধিকার অর্জিত হওয়ার পরেও তা দেশে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
তারা মনে করেন, এখনও গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের নানা অজুহাতে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করানো হয়। যেখানে শ্রমিকদের জীবনীশক্তি ও উৎপাদন সক্ষমতা রক্ষার জন্য ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস বাস্তবায়ন করা জরুরি, সেখানে উল্টো সরকার বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৩২৪ ধারার ক্ষমতার অপব্যবহার করে গত ১৩ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এই প্রজ্ঞাপনে ১৭ এপ্রিল ২০২১ থেকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য কর্মঘণ্টা ও ওভারটাইম ভাতা সংক্রান্ত ধারার (১০০, ১০২, ১০৫) প্রয়োগ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর ফলে শ্রমিকরা আগের থেকে আরও বেশি করে শোষণ-বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার হবেন। বর্তমান করোনাকালে এই ঘোষণা শ্রমিকদের জীবন আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও নিরাপত্তাহীন করে তুলবে।’
নেতারা অবিলম্বে শ্রম আইনের কর্মঘণ্টা ও ওভারটাইমবিষয়ক ধারা স্থগিতের সরকারি প্রজ্ঞাপন বাতিলের আহ্বান জানান।
এদিকে নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই ‘নতুন দরিদ্র’ শ্রেণীর সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যা ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) করা যৌথ গবেষণার তৃতীয় ধাপে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
জরিপে যারা সাধারণত দারিদ্র্যসীমার ওপরেই বসবাস করেন কিন্তু যে কোন অভিঘাতে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারেন, তাদের ‘নতুন দরিদ্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে ‘নতুন দরিদ্র’ মানুষের সংখ্যা বেশি। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে ‘নতুন দরিদ্র’ মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ। এ হিসাব থেকে জাতীয় পরিসরে নতুন দরিদ্রের এ হিসাব (১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ) প্রাক্কলন করা হয়েছে।
দেশব্যাপী তিন ধাপে করা এই জরিপে কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্যের গতিপ্রকৃতি এবং স্বল্প আয়ের মানুষদের মাঝে এর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, শহুরে বস্তিতে কোভিড-১৯ পূর্ব অবস্থার আয়ের চেয়ে এখনকার আয় ১৪ শতাংশ কম।
জরিপে দেখা গেছে, গত জুনে দরিদ্র নয় কিন্তু সেই ঝুঁকিতে থাকা এই মানুষের ৭২ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। তাদের আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘নতুন দরিদ্র’ হিসাবে। তাদের ৫০ শতাংশ এখনও ঝুঁকিতে থাকা মানুষের তালিকায় বিদ্যমান। যদিও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিগত জুন মাস থেকে উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারপরও কোভিড-১৯’র পূর্বে কাজ ছিল কিন্তু এখন বেকার এমন মানুষ রয়েছে ৮ শতাংশ। কর্মহীনতার এই ধারা নারীদের জন্য বেশ আশঙ্কাজনক। কোভিড১৯’র আগে কর্মজীবী ছিলেন এমন নারীদের এক-তৃতীয়াংশ গত বছর জুন মাস থেকে এখনও বেকার। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার নেমে এসেছে ১৬ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে। বিমানবন্দরে বিদেশফেরত কর্মীরা (ফাইল ফটো)।
অন্যদিকে, বছর পেরিয়ে গেলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের ৪৭ শতাংশই এখনও আয়ের জন্য কোন কাজে যুক্ত হতে পারেননি। ফলে দৈনন্দিন খরচ চালাতে তাদের অনেককেই পরিবারের আয় বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে। অপরদিকে ৫৩ শতাংশ কৃষিকাজ, ছোটখাটো ব্যবসা বা শ্রমিক হিসেবে নিজেকে যুক্ত করে বর্তমানে পরিবার চালাচ্ছেন। তবে বিদেশফেরতদের ৯৮ শতাংশই এখনও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম পরিচালিত ‘বিদেশফেরতদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি অন্বেষণ এবং বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল অনলাইনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন। তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ওই বছরের ২২ মে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ব্র্যাক। একবছর পর পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে, সেটা জানতেই ফের জরিপ করা হয়।
ব্র্যাক জানায়, গুণগত এবং পরিমাণগত উভয় পদ্ধতিতেই দেশের সাতটি বিভাগের অভিবাসনপ্রবণ ৩০ জেলায় এ বছরের মার্চ ও এপ্রিলে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। গতবছর যাদের সঙ্গে কথা বলেছিল ব্র্যাক, তারাসহ এবার মোট এক হাজার ৩৬০ জন বিদেশফেরত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে ব্র্যাক। এদের মধ্যে ২০৭ জন ইতোমধ্যেই বিদেশে চলে গেছেন। একটা বড় অংশকেই ফোনে পাওয়া যায়নি। অনেকেই তথ্য দিতে রাজি হননি। তবে ৪১৭ জন বিদেশফেরত বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তাদের উত্তরের ভিত্তিতেই জরিপ প্রতিবেদনটি করা।
শনিবার, ০১ মে ২০২১ , ১৯ বৈশাখ ১৪২৮ ১৯ রমজান ১৪৪২
করোনায় ‘নতুন দরিদ্র শ্রেণী’ বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
করোনা মহামারীজনিত দুর্যোগকালে মহান মে দিবস। করোনার প্রভাবে যে শুধু মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বা প্রাণহানি হচ্ছে তা নয়, থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতেও। কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষ এখন কর্মহীন, ক্ষুধার্ত। পণ্য পরিবহনের সংকট কৃষি ও কৃষককে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এছাড়াও রপ্তানিমুখী শিল্পের বাইরে যে হাজার হাজার ছোট, মাঝারি, তাঁত ও কুটিরশিল্প আছে, যেগুলো দেশের চাহিদা মেটায় এবং তাদেরও এখন পথে বসার দশা। এছাড়া করোনায় বন্ধ হয়ে গেছে শত শত কলকারখানা, বন্ধ বহুবিধ নির্মাণের কাজ। করোনায় হাজার নি¤œআয়ের মানুষ, বিভিন্ন পেশার শ্রমিকেরা চরম মানবেতরভাবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রুখতে টানা ছুটির কারণে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। শ্রমজীবী এসব মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। একদিকে তারা যেতে পারছেন না কাজে, অপরদিকে ঘরে থাকা সঞ্চিত অর্থ ইতোমধ্যে হয়ে গেছে নিঃশেষ। পরিবার-পরিজনের মুখে দিতে পারছেন না দু’বেলা দু’মুঠো খাবার। নিদারুণ এ কষ্ট এখন তাদের নিত্যসঙ্গী।
পোশাকশিল্পের অনিশ্চয়তা এবং সরকারের প্রশ্রয়ে কারখানা মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা পোশাক শ্রমিকদের আর্থিক ও স্বাস্থ্যঝুঁকি দুই-ই বাড়িয়েছে, সেই সঙ্গে সংক্রমণের ভয় বাড়িয়েছে। বেসরকারি খাতের পেশাজীবীরাও বড় অনিশ্চয়তায়। শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক নেতারা মনে করেন, মহান মে দিবসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের অধিকার অর্জিত হওয়ার পরেও তা দেশে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
তারা মনে করেন, এখনও গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের নানা অজুহাতে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করানো হয়। যেখানে শ্রমিকদের জীবনীশক্তি ও উৎপাদন সক্ষমতা রক্ষার জন্য ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস বাস্তবায়ন করা জরুরি, সেখানে উল্টো সরকার বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৩২৪ ধারার ক্ষমতার অপব্যবহার করে গত ১৩ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এই প্রজ্ঞাপনে ১৭ এপ্রিল ২০২১ থেকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য কর্মঘণ্টা ও ওভারটাইম ভাতা সংক্রান্ত ধারার (১০০, ১০২, ১০৫) প্রয়োগ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর ফলে শ্রমিকরা আগের থেকে আরও বেশি করে শোষণ-বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার হবেন। বর্তমান করোনাকালে এই ঘোষণা শ্রমিকদের জীবন আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও নিরাপত্তাহীন করে তুলবে।’
নেতারা অবিলম্বে শ্রম আইনের কর্মঘণ্টা ও ওভারটাইমবিষয়ক ধারা স্থগিতের সরকারি প্রজ্ঞাপন বাতিলের আহ্বান জানান।
এদিকে নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই ‘নতুন দরিদ্র’ শ্রেণীর সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যা ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) করা যৌথ গবেষণার তৃতীয় ধাপে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
জরিপে যারা সাধারণত দারিদ্র্যসীমার ওপরেই বসবাস করেন কিন্তু যে কোন অভিঘাতে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারেন, তাদের ‘নতুন দরিদ্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে ‘নতুন দরিদ্র’ মানুষের সংখ্যা বেশি। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে ‘নতুন দরিদ্র’ মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ। এ হিসাব থেকে জাতীয় পরিসরে নতুন দরিদ্রের এ হিসাব (১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ) প্রাক্কলন করা হয়েছে।
দেশব্যাপী তিন ধাপে করা এই জরিপে কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্যের গতিপ্রকৃতি এবং স্বল্প আয়ের মানুষদের মাঝে এর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, শহুরে বস্তিতে কোভিড-১৯ পূর্ব অবস্থার আয়ের চেয়ে এখনকার আয় ১৪ শতাংশ কম।
জরিপে দেখা গেছে, গত জুনে দরিদ্র নয় কিন্তু সেই ঝুঁকিতে থাকা এই মানুষের ৭২ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। তাদের আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘নতুন দরিদ্র’ হিসাবে। তাদের ৫০ শতাংশ এখনও ঝুঁকিতে থাকা মানুষের তালিকায় বিদ্যমান। যদিও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিগত জুন মাস থেকে উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারপরও কোভিড-১৯’র পূর্বে কাজ ছিল কিন্তু এখন বেকার এমন মানুষ রয়েছে ৮ শতাংশ। কর্মহীনতার এই ধারা নারীদের জন্য বেশ আশঙ্কাজনক। কোভিড১৯’র আগে কর্মজীবী ছিলেন এমন নারীদের এক-তৃতীয়াংশ গত বছর জুন মাস থেকে এখনও বেকার। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার নেমে এসেছে ১৬ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে। বিমানবন্দরে বিদেশফেরত কর্মীরা (ফাইল ফটো)।
অন্যদিকে, বছর পেরিয়ে গেলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের ৪৭ শতাংশই এখনও আয়ের জন্য কোন কাজে যুক্ত হতে পারেননি। ফলে দৈনন্দিন খরচ চালাতে তাদের অনেককেই পরিবারের আয় বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে। অপরদিকে ৫৩ শতাংশ কৃষিকাজ, ছোটখাটো ব্যবসা বা শ্রমিক হিসেবে নিজেকে যুক্ত করে বর্তমানে পরিবার চালাচ্ছেন। তবে বিদেশফেরতদের ৯৮ শতাংশই এখনও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম পরিচালিত ‘বিদেশফেরতদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি অন্বেষণ এবং বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল অনলাইনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন। তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ওই বছরের ২২ মে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ব্র্যাক। একবছর পর পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে, সেটা জানতেই ফের জরিপ করা হয়।
ব্র্যাক জানায়, গুণগত এবং পরিমাণগত উভয় পদ্ধতিতেই দেশের সাতটি বিভাগের অভিবাসনপ্রবণ ৩০ জেলায় এ বছরের মার্চ ও এপ্রিলে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। গতবছর যাদের সঙ্গে কথা বলেছিল ব্র্যাক, তারাসহ এবার মোট এক হাজার ৩৬০ জন বিদেশফেরত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে ব্র্যাক। এদের মধ্যে ২০৭ জন ইতোমধ্যেই বিদেশে চলে গেছেন। একটা বড় অংশকেই ফোনে পাওয়া যায়নি। অনেকেই তথ্য দিতে রাজি হননি। তবে ৪১৭ জন বিদেশফেরত বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তাদের উত্তরের ভিত্তিতেই জরিপ প্রতিবেদনটি করা।