জেলেদের জালে ধরা পড়ছে হাঙ্গরের দল

পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে হঠাৎ করে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে হাঙ্গর। ছয় ইঞ্চি থেকে দেড়ফুট সাইজের এই হাঙ্গর অধিকাংশ জেলের জালে ধরা পড়ছে গভীর সমুদ্রে। হাঙ্গর শিকার নিষেধ থাকায় অধিকাংশ জেলের জালে ধরা পড়া হাঙ্গরগুলো মাঝ সাগরে ফেলে দিলেও কিছু জেলে হাঙ্গরগুলো নিয়ে আসছেন উপকূলে। কলাপাড়া পায়রাবন্দর কোস্টগার্ডের অভিযানে রাবনাবাদ নদীর মোহনা থেকে এক ট্রলারভর্তি প্রায় ২০ মণ ছোট হাঙ্গর আটক করেছে। শুক্রবার দুপুরে আটক হাঙ্গর জনসম্মুখে পুড়িয়ে মাটি চাপা দিলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি শিকারিদের বিরুদ্ধে। তবে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, আটক করা হাঙ্গরগুলো হাতুড়ি বা কোলা প্রজাতির হাঙ্গর। সাগরে মাছ কমে গেলে অনেক সময় হাঙ্গরের দল সাগরের তলদেশ থেকে খাদ্যের জন্য উপরিভাগে চলে এলে এগুলো ধরা পড়ে।

উপকূলীয় বিশাল জলসীমায় প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে হাঙ্গর শিকার করেন জেলেরা। শীত মৌসুমে মূলত হাঙ্গর বেশি ধরা পড়ে। জেলেদের জালে ধরা পড়া হাঙ্গর তখন বিভিন্ন শুঁটকিপল্লীতে বিক্রি করে দেয়। যা শুঁটকি করে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। তবে বন বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের হাঙ্গর শিকার বন্ধে প্রচারণা ও শাস্তির বিষয়টি জেলেদের কাছে প্রচার না করায় গভীর সমুদ্রে অহরহ ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির হাঙ্গর। তবে কলাপাড়ায় ধরা পড়া হাঙ্গরগুলো মসৃণ হাতুড়ি প্রজাতির হাঙ্গর। যেটি বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকায় তফসিল-১ অনুযায়ী সংরক্ষিত। এগুলো প্রায় তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত বড় হয় বলে জানা যায়।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, কয়েকদিন প্রচ- দাবদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে সাগরের তলদেশে আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় হঠাৎ করে গভীর সমুদ্র থেকে সাগরের উপরিভাগে হাঙ্গরগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসছে বলে ধারণা করছেন। তবে এভাবে হাঙ্গরগুলো মারা পড়ছে সমুদ্রে খাদ্যশৃঙ্খলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে।

স্কুলছাত্র তাহমিদ হাসান ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাঠ্যবইয়ে হাঙ্গরের ছবির সঙ্গে এগুলো মেলাতে পারছি না। হাঙ্গরগুলো অনেক বড় হয় অথচ ধরা পড়া হাঙ্গরগুলো খুবই ছোট। এভাবে হাঙ্গর মারা পড়লে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই হাঙ্গর ধরা পড়া ট্রলারের মাঝি মো. মুসা ও জেলে রাব্বি জানান, তারা সাগরে ইলিশের জাল পাতলেও তাতে ধরা পড়ছে হাঙ্গর। কী কারণে এত হাঙ্গর ধরা পড়ছে তারা তা জানেন না বলে জানান। এগুলো বিক্রির জন্য মহিপুর মৎস্য বন্দরে নেয়ার পথে কোস্টগার্ড তাদের আটক করে। তবে এগুলো ধরা অবৈধ কিনা তা জানেন না বলে জানান। পায়রা বন্দর কোস্টগার্ডের পেটি অফিসার বেলায়েত হোসেন খান জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পায়রাবন্দর রাবনাবাদ চ্যানেল থেকে ট্রলারসহ ওই বিপুল পরিমাণ হাঙ্গর আটক করেন। শুক্রবার তারা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। যেহেতু হাঙ্গর শিকার নিষিদ্ধ তাই তারা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছেন পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম জানান, যেহেতু অনিচ্ছাকৃতভাবে জালে হাঙ্গর ধরা পড়েছে তাই জেলেসহ ট্রলারটি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আটক করা মাছ পুড়িয়ে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে বলে জানান।

শনিবার, ০১ মে ২০২১ , ১৯ বৈশাখ ১৪২৮ ১৯ রমজান ১৪৪২

জেলেদের জালে ধরা পড়ছে হাঙ্গরের দল

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে হঠাৎ করে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে হাঙ্গর। ছয় ইঞ্চি থেকে দেড়ফুট সাইজের এই হাঙ্গর অধিকাংশ জেলের জালে ধরা পড়ছে গভীর সমুদ্রে। হাঙ্গর শিকার নিষেধ থাকায় অধিকাংশ জেলের জালে ধরা পড়া হাঙ্গরগুলো মাঝ সাগরে ফেলে দিলেও কিছু জেলে হাঙ্গরগুলো নিয়ে আসছেন উপকূলে। কলাপাড়া পায়রাবন্দর কোস্টগার্ডের অভিযানে রাবনাবাদ নদীর মোহনা থেকে এক ট্রলারভর্তি প্রায় ২০ মণ ছোট হাঙ্গর আটক করেছে। শুক্রবার দুপুরে আটক হাঙ্গর জনসম্মুখে পুড়িয়ে মাটি চাপা দিলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি শিকারিদের বিরুদ্ধে। তবে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, আটক করা হাঙ্গরগুলো হাতুড়ি বা কোলা প্রজাতির হাঙ্গর। সাগরে মাছ কমে গেলে অনেক সময় হাঙ্গরের দল সাগরের তলদেশ থেকে খাদ্যের জন্য উপরিভাগে চলে এলে এগুলো ধরা পড়ে।

উপকূলীয় বিশাল জলসীমায় প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে হাঙ্গর শিকার করেন জেলেরা। শীত মৌসুমে মূলত হাঙ্গর বেশি ধরা পড়ে। জেলেদের জালে ধরা পড়া হাঙ্গর তখন বিভিন্ন শুঁটকিপল্লীতে বিক্রি করে দেয়। যা শুঁটকি করে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। তবে বন বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের হাঙ্গর শিকার বন্ধে প্রচারণা ও শাস্তির বিষয়টি জেলেদের কাছে প্রচার না করায় গভীর সমুদ্রে অহরহ ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির হাঙ্গর। তবে কলাপাড়ায় ধরা পড়া হাঙ্গরগুলো মসৃণ হাতুড়ি প্রজাতির হাঙ্গর। যেটি বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকায় তফসিল-১ অনুযায়ী সংরক্ষিত। এগুলো প্রায় তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত বড় হয় বলে জানা যায়।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, কয়েকদিন প্রচ- দাবদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে সাগরের তলদেশে আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় হঠাৎ করে গভীর সমুদ্র থেকে সাগরের উপরিভাগে হাঙ্গরগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসছে বলে ধারণা করছেন। তবে এভাবে হাঙ্গরগুলো মারা পড়ছে সমুদ্রে খাদ্যশৃঙ্খলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে।

স্কুলছাত্র তাহমিদ হাসান ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাঠ্যবইয়ে হাঙ্গরের ছবির সঙ্গে এগুলো মেলাতে পারছি না। হাঙ্গরগুলো অনেক বড় হয় অথচ ধরা পড়া হাঙ্গরগুলো খুবই ছোট। এভাবে হাঙ্গর মারা পড়লে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই হাঙ্গর ধরা পড়া ট্রলারের মাঝি মো. মুসা ও জেলে রাব্বি জানান, তারা সাগরে ইলিশের জাল পাতলেও তাতে ধরা পড়ছে হাঙ্গর। কী কারণে এত হাঙ্গর ধরা পড়ছে তারা তা জানেন না বলে জানান। এগুলো বিক্রির জন্য মহিপুর মৎস্য বন্দরে নেয়ার পথে কোস্টগার্ড তাদের আটক করে। তবে এগুলো ধরা অবৈধ কিনা তা জানেন না বলে জানান। পায়রা বন্দর কোস্টগার্ডের পেটি অফিসার বেলায়েত হোসেন খান জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পায়রাবন্দর রাবনাবাদ চ্যানেল থেকে ট্রলারসহ ওই বিপুল পরিমাণ হাঙ্গর আটক করেন। শুক্রবার তারা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। যেহেতু হাঙ্গর শিকার নিষিদ্ধ তাই তারা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছেন পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম জানান, যেহেতু অনিচ্ছাকৃতভাবে জালে হাঙ্গর ধরা পড়েছে তাই জেলেসহ ট্রলারটি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আটক করা মাছ পুড়িয়ে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে বলে জানান।