করোনাকালীন লকডাউনে দেখা নেই জনপ্রতিনিধিদের

মাত্র কয়েকমাস আগেও যে সকল সমাজ সেবক জনগণের পরম বন্ধু হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন তাদের দেখা মিলছে না করোনার কবলে পড়া দুস্থদের পাশে। বিভিন্ন দেয়াল গাছে ফেস্টুন ও ব্যানারে যারা নিজেদের সমাজসেবক গরিবের বন্ধুসহ নামের আগে পরে বিশেষণের পর বিশেষণ যোগ করতেন, সুন্নতে খাতনা থেকে কুলখানির দাওয়াত মিস করতেন না এমনকি জানাজার নামাজে শরিক হবার জন্য সদা প্রস্তুত থাকতেন আজ তাদের কোন কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। এসব জনপ্রতিনিধিদের কর্মযজ্ঞে হতাশ হয়েছেন এলাকাবাসী। তবে গাংনী পৌর মেয়রের কাজের প্রশংসা করেছেন সচেতনমহল।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগতদিনে নির্বাচনের আগে বর্তমান জনপ্রতিনিধি ও নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক এমনকিছু লোক নিজেদের তরুণ কিংবা উদীয়মান সমাজসেবক হিসেবে প্রচার করে সাহায্য সহযোগিতা করেন। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তা পোস্ট করেন। গেল বছর মহামারী করোনার সময়ও তারা সস্তা দামের মাস্ক বিলি করে সুনাম কুড়িয়েছেন। আবার বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই সরকারি চাল ডাল ও তেল দুস্থদের মাঝে বিলিয়েছেন আবার কেউ কেউ নিজেই সামান্যকিছু অনুদান দিয়ে সমাজসেবক সেজেছেন। এবার সরকারি কোন সহযোগিতা না আসায় কোন সমাজসেবক জনপ্রতিনিধিদের কর্মযজ্ঞ নেই। জুগিরগোফা গ্রামের স্কুল শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, কয়েকমাস আগেও যারা মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বাজার ঘাট ও গ্রাম চষে বেড়িয়েছেন। দোয়া চেয়েছেন আবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। কোন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার হাত মাথায় রেখে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছেন। আবার চায়ের দোকানে গণহারে চা পান দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন তাদের কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। সাহায্য সহযোগিতা দূরের কথা সস্তা মাস্ক কিনেও বাজার ঘাটে বিলি করে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলছেন না।

একই গ্রামের চায়ের দোকানী সুন্নত জানান, মাসখানেক আগেও চেয়ারম্যান মেম্বর প্রার্থীরা এসে জনগণকে চা পান করিয়েছেন। আর একশ্রেণির লোকেরা তা পান করে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করেছিল আজ সেসব জনপ্রতিনিধিদের পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ আর খোঁজ রাখছেন না সাধারণ জনগণের। লকডাউনের কারণে কোন বেচা বিক্রি নেই। ঘরে খাবার আছে কিনা কেউ জানতেও চাচ্ছে না।

হাড়াভাঙ্গা গ্রামের ভিক্ষুক রমজান আলী জানান, গেলবার করোনার সময় চাল ডাল তেল ও আলু পেয়েছেন। অনেকেই সাহায্য করলেও এবার আর কোন সাহায্য তিনি পাননি। চেয়ারম্যান মেম্বর কোন খোঁজই রাখেননি। একই কথা জানালেন গোয়াল গ্রামের ভিক্ষুক খোদেজা বেগম। তিনি আরও জানান, আগে চেয়ারম্যান মেম্বররা দেখা হলে হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে কত কথা জিজ্ঞেস করতো এখন দেখা হলেও কোন কথা বলে না। কিছু দেয়ার ভয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। মটমুড়া ইউপির চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ জানান, সরকারি সহযোগিতা এখনও আসেনি তাই দেয়া হচ্ছে না। আর ব্যক্তিগত সাহায্য কতটুকুই বা করা সম্ভব  তবে আসন্ন ঈদে গরিবদের জন্য কিছু করা হবে বলেও জানান তিনি। একই কথা জানালেন তেতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও ধানখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান। সকল ইউপি চেয়ারম্যান সরকারি বরাদ্দের দিকে চেয়ে আছেন।

এদিকে কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গেও কথা বলে জানা গেছে তাদের জনসেবার চিত্র। যারা নির্বাচনে জয়ী হলে এলাকার ও জনগণের উন্নয়ন ঘটাবেন করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ষোলটাকা ইউপির সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলবার হোসেন জানান, করোনাকালীণ কারও সহযোগিতা করা হয়নি। তবে ঈদ উপলক্ষে কিছু করা হবে।

অপরদিকে গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলীর ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সচেতনমহল। করোনা বিস্তার রোধে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রচার প্রচারণা এবং মাস্ক বিতরণ করছেন। সারাশহরে জীবাণুনাশক ও পানি ছিটাচ্ছেন। খেটে খাওয়া মানুষ যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন মেয়র আহম্মেদ আলী ব্যক্তিগতভাবে তাদের সহযোগিতা করছেন। ইতোমধ্যে একটি তালিকাও প্রণয়ন করেছেন দুস্থদের সহযোগিতা করার জন্য।

সচেতনমহলের মতে, সুযোগের সদ্ব্যবহার নয়, যিনি জনপ্রতিনিধি হবেন তিনি সব সময় মেহনতি মানুষের পাশে থাকবেন। যারা নিজেদের স্বার্থকে ত্যাগ করে জনগণের স্বার্থ দেখবেন। অথচ অনেক জনপ্রতিনিধি আছেন যারা শুধু নিজেদের স্বার্থকেই বড় করে দেখেন। করোনাকালে এটাই প্রমাণিত হয়েছে।

সোমবার, ০৩ মে ২০২১ , ২১ বৈশাখ ১৪২৮ ২১ রমজান ১৪৪২

করোনাকালীন লকডাউনে দেখা নেই জনপ্রতিনিধিদের

রফিকুল আলম, মেহেরপুর

মাত্র কয়েকমাস আগেও যে সকল সমাজ সেবক জনগণের পরম বন্ধু হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন তাদের দেখা মিলছে না করোনার কবলে পড়া দুস্থদের পাশে। বিভিন্ন দেয়াল গাছে ফেস্টুন ও ব্যানারে যারা নিজেদের সমাজসেবক গরিবের বন্ধুসহ নামের আগে পরে বিশেষণের পর বিশেষণ যোগ করতেন, সুন্নতে খাতনা থেকে কুলখানির দাওয়াত মিস করতেন না এমনকি জানাজার নামাজে শরিক হবার জন্য সদা প্রস্তুত থাকতেন আজ তাদের কোন কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। এসব জনপ্রতিনিধিদের কর্মযজ্ঞে হতাশ হয়েছেন এলাকাবাসী। তবে গাংনী পৌর মেয়রের কাজের প্রশংসা করেছেন সচেতনমহল।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগতদিনে নির্বাচনের আগে বর্তমান জনপ্রতিনিধি ও নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক এমনকিছু লোক নিজেদের তরুণ কিংবা উদীয়মান সমাজসেবক হিসেবে প্রচার করে সাহায্য সহযোগিতা করেন। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তা পোস্ট করেন। গেল বছর মহামারী করোনার সময়ও তারা সস্তা দামের মাস্ক বিলি করে সুনাম কুড়িয়েছেন। আবার বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই সরকারি চাল ডাল ও তেল দুস্থদের মাঝে বিলিয়েছেন আবার কেউ কেউ নিজেই সামান্যকিছু অনুদান দিয়ে সমাজসেবক সেজেছেন। এবার সরকারি কোন সহযোগিতা না আসায় কোন সমাজসেবক জনপ্রতিনিধিদের কর্মযজ্ঞ নেই। জুগিরগোফা গ্রামের স্কুল শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, কয়েকমাস আগেও যারা মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বাজার ঘাট ও গ্রাম চষে বেড়িয়েছেন। দোয়া চেয়েছেন আবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। কোন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার হাত মাথায় রেখে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছেন। আবার চায়ের দোকানে গণহারে চা পান দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন তাদের কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। সাহায্য সহযোগিতা দূরের কথা সস্তা মাস্ক কিনেও বাজার ঘাটে বিলি করে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলছেন না।

একই গ্রামের চায়ের দোকানী সুন্নত জানান, মাসখানেক আগেও চেয়ারম্যান মেম্বর প্রার্থীরা এসে জনগণকে চা পান করিয়েছেন। আর একশ্রেণির লোকেরা তা পান করে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করেছিল আজ সেসব জনপ্রতিনিধিদের পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ আর খোঁজ রাখছেন না সাধারণ জনগণের। লকডাউনের কারণে কোন বেচা বিক্রি নেই। ঘরে খাবার আছে কিনা কেউ জানতেও চাচ্ছে না।

হাড়াভাঙ্গা গ্রামের ভিক্ষুক রমজান আলী জানান, গেলবার করোনার সময় চাল ডাল তেল ও আলু পেয়েছেন। অনেকেই সাহায্য করলেও এবার আর কোন সাহায্য তিনি পাননি। চেয়ারম্যান মেম্বর কোন খোঁজই রাখেননি। একই কথা জানালেন গোয়াল গ্রামের ভিক্ষুক খোদেজা বেগম। তিনি আরও জানান, আগে চেয়ারম্যান মেম্বররা দেখা হলে হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে কত কথা জিজ্ঞেস করতো এখন দেখা হলেও কোন কথা বলে না। কিছু দেয়ার ভয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। মটমুড়া ইউপির চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ জানান, সরকারি সহযোগিতা এখনও আসেনি তাই দেয়া হচ্ছে না। আর ব্যক্তিগত সাহায্য কতটুকুই বা করা সম্ভব  তবে আসন্ন ঈদে গরিবদের জন্য কিছু করা হবে বলেও জানান তিনি। একই কথা জানালেন তেতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও ধানখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান। সকল ইউপি চেয়ারম্যান সরকারি বরাদ্দের দিকে চেয়ে আছেন।

এদিকে কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গেও কথা বলে জানা গেছে তাদের জনসেবার চিত্র। যারা নির্বাচনে জয়ী হলে এলাকার ও জনগণের উন্নয়ন ঘটাবেন করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ষোলটাকা ইউপির সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলবার হোসেন জানান, করোনাকালীণ কারও সহযোগিতা করা হয়নি। তবে ঈদ উপলক্ষে কিছু করা হবে।

অপরদিকে গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলীর ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সচেতনমহল। করোনা বিস্তার রোধে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রচার প্রচারণা এবং মাস্ক বিতরণ করছেন। সারাশহরে জীবাণুনাশক ও পানি ছিটাচ্ছেন। খেটে খাওয়া মানুষ যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন মেয়র আহম্মেদ আলী ব্যক্তিগতভাবে তাদের সহযোগিতা করছেন। ইতোমধ্যে একটি তালিকাও প্রণয়ন করেছেন দুস্থদের সহযোগিতা করার জন্য।

সচেতনমহলের মতে, সুযোগের সদ্ব্যবহার নয়, যিনি জনপ্রতিনিধি হবেন তিনি সব সময় মেহনতি মানুষের পাশে থাকবেন। যারা নিজেদের স্বার্থকে ত্যাগ করে জনগণের স্বার্থ দেখবেন। অথচ অনেক জনপ্রতিনিধি আছেন যারা শুধু নিজেদের স্বার্থকেই বড় করে দেখেন। করোনাকালে এটাই প্রমাণিত হয়েছে।