বিভাজনের প্রচারই কি গড়ে দিল ব্যবধান

কংগ্রেসের দুই ঘাঁটিতে চমকে দেয়ার মতো ফল। মুর্শিদাবাদ ও মালদার ফলাফল দেখলেই বোঝা যায় সংখ্যালঘু ভোট একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কতটা একাট্টা হয়ে তৃণমূলের পক্ষে গেছে। মালদার একটা কেন্দ্র সুজাইপুরে কংগ্রেস কোনদিন হারেনি। এই আসনে বহুবার বিপুল জয় পেয়েছেন প্রয়াত এবিএ গনি খান চৌধুরী। এবার সেই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী তৃণমূলের কাছে হেরে গেলেন ১ লাখ ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে।

বিভাজনের রাজনীতির প্রচারে বড় সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। যেমন বাঙালি-অবাঙালি বিভেদের ব্যাপারে তৃণমূল নেত্রীর ‘অভিমত’ বাঙালি ভোটারদের মনে প্রভাব ফেলেছে। বিজেপির ‘এনআরসি’ ইস্যুটি সংখ্যালঘুদের যে বিপদ ডেকে আনবে এই বার্তাটি তৃণমূল ভালোমতো ঢোকাতে পেরেছে তাদের মনের মাঝে। তাই সংখ্যালঘুরা তৃণমূলকে এক যোগে ভোট দিয়েছে।

এর পাশাপাশি এই নির্বাচনে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি নিশ্চিতভাবে অনেক এগিয়ে দিয়েছে তৃণমূলকে। সেই সঙ্গে নারীদের প্রবল সমর্থন। তৃণমূল ক্ষমতায় এলে বিধবারা প্রতিমাসে পাবেন এক হাজার টাকা ভাতা, প্রত্যেক গৃহবধূকে হাত খরচের জন্য ৫০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতির ক্ষেত্রে সেটা বেড়ে হবে এক হাজার টাকা। এ ছাড়া কন্যাশ্রী, রূপশ্রী এসব কর্মসূচি মেয়েদের আকৃষ্ট করেছে।

সব চেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেক পরিবারকে স্বাস্থ্যসেবার জন্য এককালীন পাঁচ লাখ টাকার সুবিধা দিতে ভোটের মুখে সবাইকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটি বিশেষ করে নারীদের আকৃষ্ট করেছে। এর সঙ্গে অনেক মাত্রা যোগ হয়ে তৃণমূলকে ২শ’রও বেশি আসনে জয়লাভ করতে সহায়তা করেছে।

নির্বাচনের আগে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পায়ে গুরুতর আঘাত পান। এরপর দেখা যায়, তিনি হুইলচেয়ারে বসে রোডশো, সমাবেশ ও জনসভা করেছেন। পশ্চিমবাংলার অনেকেই তার এই চোটকে সহনুভূতির চোখেই দেখেছেন। বিশেষ করে নারীরা।

নির্বাচনের আগে বিজেপিও তাদের দলীয় ইশতেহারে প্রচুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ‘সোনার বাংলা’ গড়ার জন্য কী কী করবেন তারা, সেই সমস্ত বিষয় বহুবার তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, মানুষ ভরসা রেখেছেন এতদিন ধরে যেগুলো পেয়ে এসেছেন তার ওপরেই। অর্থাৎ চেনা নেতৃত্বকেই ধরে রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। আর সেখানই বাজিমাত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার, ০৩ মে ২০২১ , ২১ বৈশাখ ১৪২৮ ২১ রমজান ১৪৪২

বিভাজনের প্রচারই কি গড়ে দিল ব্যবধান

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

image

নন্দীগ্রাম আসনে মমতার পরাজয়, জয়ী শুভেন্দু অধিকারী

কংগ্রেসের দুই ঘাঁটিতে চমকে দেয়ার মতো ফল। মুর্শিদাবাদ ও মালদার ফলাফল দেখলেই বোঝা যায় সংখ্যালঘু ভোট একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কতটা একাট্টা হয়ে তৃণমূলের পক্ষে গেছে। মালদার একটা কেন্দ্র সুজাইপুরে কংগ্রেস কোনদিন হারেনি। এই আসনে বহুবার বিপুল জয় পেয়েছেন প্রয়াত এবিএ গনি খান চৌধুরী। এবার সেই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী তৃণমূলের কাছে হেরে গেলেন ১ লাখ ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে।

বিভাজনের রাজনীতির প্রচারে বড় সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। যেমন বাঙালি-অবাঙালি বিভেদের ব্যাপারে তৃণমূল নেত্রীর ‘অভিমত’ বাঙালি ভোটারদের মনে প্রভাব ফেলেছে। বিজেপির ‘এনআরসি’ ইস্যুটি সংখ্যালঘুদের যে বিপদ ডেকে আনবে এই বার্তাটি তৃণমূল ভালোমতো ঢোকাতে পেরেছে তাদের মনের মাঝে। তাই সংখ্যালঘুরা তৃণমূলকে এক যোগে ভোট দিয়েছে।

এর পাশাপাশি এই নির্বাচনে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি নিশ্চিতভাবে অনেক এগিয়ে দিয়েছে তৃণমূলকে। সেই সঙ্গে নারীদের প্রবল সমর্থন। তৃণমূল ক্ষমতায় এলে বিধবারা প্রতিমাসে পাবেন এক হাজার টাকা ভাতা, প্রত্যেক গৃহবধূকে হাত খরচের জন্য ৫০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতির ক্ষেত্রে সেটা বেড়ে হবে এক হাজার টাকা। এ ছাড়া কন্যাশ্রী, রূপশ্রী এসব কর্মসূচি মেয়েদের আকৃষ্ট করেছে।

সব চেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেক পরিবারকে স্বাস্থ্যসেবার জন্য এককালীন পাঁচ লাখ টাকার সুবিধা দিতে ভোটের মুখে সবাইকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটি বিশেষ করে নারীদের আকৃষ্ট করেছে। এর সঙ্গে অনেক মাত্রা যোগ হয়ে তৃণমূলকে ২শ’রও বেশি আসনে জয়লাভ করতে সহায়তা করেছে।

নির্বাচনের আগে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পায়ে গুরুতর আঘাত পান। এরপর দেখা যায়, তিনি হুইলচেয়ারে বসে রোডশো, সমাবেশ ও জনসভা করেছেন। পশ্চিমবাংলার অনেকেই তার এই চোটকে সহনুভূতির চোখেই দেখেছেন। বিশেষ করে নারীরা।

নির্বাচনের আগে বিজেপিও তাদের দলীয় ইশতেহারে প্রচুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ‘সোনার বাংলা’ গড়ার জন্য কী কী করবেন তারা, সেই সমস্ত বিষয় বহুবার তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, মানুষ ভরসা রেখেছেন এতদিন ধরে যেগুলো পেয়ে এসেছেন তার ওপরেই। অর্থাৎ চেনা নেতৃত্বকেই ধরে রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। আর সেখানই বাজিমাত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।