হার এড়ানোর অসম্ভব লড়াইয়ে টাইগাররা

স্কোর : শ্রীলঙ্কা ৪৯৩/৭ডি. ও ১৯৪/৯ডি।

বাংলাদেশ ২৫১ ও ১৭৭/৫

বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই চতুর্থ দিনের খেলা শেষ না হলে কি হতো বলা মুস্কিল। আপাতত বৃষ্টির ফোটা মাটিতে পড়ায় পতন থেমেছে বাংলাদেশের উইকেটের। হ্যাঁ, শ্রীলঙ্কা সফরে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিজেদের খুঁজে পাওয়া বাংলাদেশের টেস্ট দল দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরে গেছে চিরচেনা রূপে। শ্রীলঙ্কান দল ৭ উইকেটে ৪৯৩ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর ২৪২ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। বাংলাদেশ দলকে তৃতীয় দিনে ফলো অন না করিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কানরা ৯ উইকেটে ১৯৪ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করলে জয়ের সফরকারীদল পায় ৪৩৭ রানের জয়ের টার্গেট। বিশাল এই রান দেখেই হাত-পা কাঁপাকাপি শুরু হয় টাইগার ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের। ১৭৭ রান তুলতেই সাজঘরে ফিরেছেন তামিম-সাইফ-শান্ত-মোমিনুল-মুশফিক। ঝমঝম করে পাল্লেকেলের আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামার আম্পায়াররা এক ঘণ্টা আগেই গতকাল চতুর্থ দিনের খেলার ইতি টানেন। বৃষ্টিতে না হয় প্রকৃতি ঠা-া হলো, বাংলাদেশের উইকেট পতনও একটা রাতের জন্য রোধ করা গেলো। কিন্তু আজ পঞ্চম দিনে কি প্রকৃতিদেবী কৃপা করবেন টাইগারদের? তেমনটা না হলে নিশ্চিত পরাজয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ক্রিকেটের ‘গৌরবময় অনিশ্চয়তা’ শব্দযুগল মাথায় রেখে বাংলাদেশ দলের অন্ধ সমর্থকও এই টেস্টে টাইগারদের পরাজয় এড়ানোর সম্ভাবনার কথা বলবেন না।

এই টেস্ট বাঁচানোর জন্য যেখানে বাংলাদেশের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের উচিত ছিল রয়ে সয়ে সময় পার করা. সেখানে দেখা গেলো ঠিক উল্টো দৃশ্য। ব্যাটিং অ্যাপ্রোচই ছিল আগ্রাসী। চা বিরতির পূর্বে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারানোর পর শেষ সেশনেও টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাটিং দেখা গেল না কারো মধ্যে। সম্ভবত পিচ থেকে স্পিনারদের টার্ন ও বাউন্স আদায় করার বিষয়টা টেরই পাননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা।

টাইগারদের প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেট শিকার করা অভিষিক্ত স্পিনার প্রবীন জয়াবিক্রমা গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে আরও দুটো উইকেটের পতন ঘটান, আরেক অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিস শিকার করেন তিন উইকেট। আকিলা ধনঞ্জয়া ও আজন্তা মেন্ডিসের পর প্রবীন জয়াবিক্রমা তৃতীয় লঙ্কান বোলার হিসাবে অভিষেক টেস্টে আট উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখালেন। আজ পঞ্চম দিনে জয়াবিক্রমা অবশ্য আরও পাঁচ বাংলাদেশিকে শিকারের সুযোগ পাচ্ছেন।

চা বিরতির আগেই জয়াবিক্রমা ফেরান সাইফ হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তকে। অযথা শট খেলে কাভার পয়েন্টে সুরঙ্গা লাকমলের হাতে ধরা পড়ার আগে পাঁচ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন সাইফ হাসান। বিশাল রানের বোঝা মাথায় নিয়ে এবং পুরো দেড় দিনের বেশি সময় হাতে পেয়ে সাইফ হাসান কিসের ভরসায় এত আগ্রাসী স্টাইলে ব্যাট চালালেন, এর জবাব দিতে পারবেন তিনি আর টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকানো শান্ত টানা দুটো ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। তিনিও খেলেছেন দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে। ৪৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৪ রানে স্ট্যাম্প খোয়ান তিনি। বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল পুরো সিরিজ জুড়ে ধারাবাহিকভাবে ব্যাটিং করার পর কেনো আগ্রাসী হতে গেলেন, তাও বোধগম্য নয়। ২৬ বলে তিন বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় তামিমের ২৪ রানের ইনিংস কোনমতেই পাল্লেকেলে টেস্টের পরিস্থিতির উপযোগী ছিল না। স্পিনার রমেশ মেন্ডিসকে হাঁকাতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তামিম।

দিনের শেষ সেশনের পাঁচ ওভারের মধ্যেই মেন্ডিসের নির্বিষ একটা বল স্ট্যাম্পে টেনে এনে আউট হন ৩২ রান করা বাংলাদেশের অধিনায়ক মোমিনুল হক। মুশফিকুর রহিম ভাগ্যের ছোঁয়া পেয়েও ৪০-এ থেমে যান। একবার ৬ রানে লাহিরু থিরিমানের হাতে জীবন পান মুশফিক। তার ক্যাচটা ধরতে পারেননি থিরিমানে। এরপর উইকেটকিপার নিরোশান ডিকওয়েলা স্ট্রাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন। মেন্ডিসের বলে শর্ট লেগে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে ধরা পড়ে সাজঘর মুখো হন মুশফিক।

দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময়ে লিটন কুমার দাস ১৪ ও মেহেদি হাসান মিরাজ ৪ রানে অপরাজিত।

বলে রাখা প্রয়োজন যে, চতুর্থ দিনে মধ্যাহ্ন বিরতির সামান্য সময় পরই ৯ উইকেটে ১৯৪ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেছিল শ্রীলঙ্কা। মাত্র ৩৫.২ ওভারে তারা তোলে ১৭৭ রান। সিরিজ জুড়ে ধারাবাহিকতার প্রতিমূর্তি শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দ্বিমুথ করুনারতেœর ৬৬ রানই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর। এই সিরিজে করুনারতেœ সংগ্রহ করেছেন ৪২৮ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কান হিসাবে চার শতাধিক রান করলেন করুনারতেœ।

বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মাঝে হারিয়ে যেতে বসেছে স্পিনার তাইজুলের কৃতিত্ব। শ্রীলঙ্কানরা চতুর্থ দিনে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কৌশল নিয়েছিল। কিন্তু তাইজুলের কারণে তাদের বারবার থমকে যেতে হয়েছে। বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো টেস্টে পাঁচ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। পঞ্চম দিনে কোন বিশেষ নাটকীয়তায় বাংলাদেশ দল পরাজয় এড়াতে পারলেই কেবল তাইজুলের এই কৃতিত্বটা সামনে আসবে। নাহলে, তাইজুলের এই কৃতিত্ব কেই বা মনে রাখবে?

সোমবার, ০৩ মে ২০২১ , ২১ বৈশাখ ১৪২৮ ২১ রমজান ১৪৪২

হার এড়ানোর অসম্ভব লড়াইয়ে টাইগাররা

বিশেষ প্রতিনিধি

স্কোর : শ্রীলঙ্কা ৪৯৩/৭ডি. ও ১৯৪/৯ডি।

বাংলাদেশ ২৫১ ও ১৭৭/৫

বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই চতুর্থ দিনের খেলা শেষ না হলে কি হতো বলা মুস্কিল। আপাতত বৃষ্টির ফোটা মাটিতে পড়ায় পতন থেমেছে বাংলাদেশের উইকেটের। হ্যাঁ, শ্রীলঙ্কা সফরে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিজেদের খুঁজে পাওয়া বাংলাদেশের টেস্ট দল দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরে গেছে চিরচেনা রূপে। শ্রীলঙ্কান দল ৭ উইকেটে ৪৯৩ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর ২৪২ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। বাংলাদেশ দলকে তৃতীয় দিনে ফলো অন না করিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কানরা ৯ উইকেটে ১৯৪ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করলে জয়ের সফরকারীদল পায় ৪৩৭ রানের জয়ের টার্গেট। বিশাল এই রান দেখেই হাত-পা কাঁপাকাপি শুরু হয় টাইগার ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের। ১৭৭ রান তুলতেই সাজঘরে ফিরেছেন তামিম-সাইফ-শান্ত-মোমিনুল-মুশফিক। ঝমঝম করে পাল্লেকেলের আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামার আম্পায়াররা এক ঘণ্টা আগেই গতকাল চতুর্থ দিনের খেলার ইতি টানেন। বৃষ্টিতে না হয় প্রকৃতি ঠা-া হলো, বাংলাদেশের উইকেট পতনও একটা রাতের জন্য রোধ করা গেলো। কিন্তু আজ পঞ্চম দিনে কি প্রকৃতিদেবী কৃপা করবেন টাইগারদের? তেমনটা না হলে নিশ্চিত পরাজয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ক্রিকেটের ‘গৌরবময় অনিশ্চয়তা’ শব্দযুগল মাথায় রেখে বাংলাদেশ দলের অন্ধ সমর্থকও এই টেস্টে টাইগারদের পরাজয় এড়ানোর সম্ভাবনার কথা বলবেন না।

এই টেস্ট বাঁচানোর জন্য যেখানে বাংলাদেশের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের উচিত ছিল রয়ে সয়ে সময় পার করা. সেখানে দেখা গেলো ঠিক উল্টো দৃশ্য। ব্যাটিং অ্যাপ্রোচই ছিল আগ্রাসী। চা বিরতির পূর্বে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারানোর পর শেষ সেশনেও টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাটিং দেখা গেল না কারো মধ্যে। সম্ভবত পিচ থেকে স্পিনারদের টার্ন ও বাউন্স আদায় করার বিষয়টা টেরই পাননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা।

টাইগারদের প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেট শিকার করা অভিষিক্ত স্পিনার প্রবীন জয়াবিক্রমা গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে আরও দুটো উইকেটের পতন ঘটান, আরেক অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিস শিকার করেন তিন উইকেট। আকিলা ধনঞ্জয়া ও আজন্তা মেন্ডিসের পর প্রবীন জয়াবিক্রমা তৃতীয় লঙ্কান বোলার হিসাবে অভিষেক টেস্টে আট উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখালেন। আজ পঞ্চম দিনে জয়াবিক্রমা অবশ্য আরও পাঁচ বাংলাদেশিকে শিকারের সুযোগ পাচ্ছেন।

চা বিরতির আগেই জয়াবিক্রমা ফেরান সাইফ হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তকে। অযথা শট খেলে কাভার পয়েন্টে সুরঙ্গা লাকমলের হাতে ধরা পড়ার আগে পাঁচ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন সাইফ হাসান। বিশাল রানের বোঝা মাথায় নিয়ে এবং পুরো দেড় দিনের বেশি সময় হাতে পেয়ে সাইফ হাসান কিসের ভরসায় এত আগ্রাসী স্টাইলে ব্যাট চালালেন, এর জবাব দিতে পারবেন তিনি আর টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকানো শান্ত টানা দুটো ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। তিনিও খেলেছেন দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে। ৪৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৪ রানে স্ট্যাম্প খোয়ান তিনি। বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল পুরো সিরিজ জুড়ে ধারাবাহিকভাবে ব্যাটিং করার পর কেনো আগ্রাসী হতে গেলেন, তাও বোধগম্য নয়। ২৬ বলে তিন বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় তামিমের ২৪ রানের ইনিংস কোনমতেই পাল্লেকেলে টেস্টের পরিস্থিতির উপযোগী ছিল না। স্পিনার রমেশ মেন্ডিসকে হাঁকাতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তামিম।

দিনের শেষ সেশনের পাঁচ ওভারের মধ্যেই মেন্ডিসের নির্বিষ একটা বল স্ট্যাম্পে টেনে এনে আউট হন ৩২ রান করা বাংলাদেশের অধিনায়ক মোমিনুল হক। মুশফিকুর রহিম ভাগ্যের ছোঁয়া পেয়েও ৪০-এ থেমে যান। একবার ৬ রানে লাহিরু থিরিমানের হাতে জীবন পান মুশফিক। তার ক্যাচটা ধরতে পারেননি থিরিমানে। এরপর উইকেটকিপার নিরোশান ডিকওয়েলা স্ট্রাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন। মেন্ডিসের বলে শর্ট লেগে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে ধরা পড়ে সাজঘর মুখো হন মুশফিক।

দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময়ে লিটন কুমার দাস ১৪ ও মেহেদি হাসান মিরাজ ৪ রানে অপরাজিত।

বলে রাখা প্রয়োজন যে, চতুর্থ দিনে মধ্যাহ্ন বিরতির সামান্য সময় পরই ৯ উইকেটে ১৯৪ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেছিল শ্রীলঙ্কা। মাত্র ৩৫.২ ওভারে তারা তোলে ১৭৭ রান। সিরিজ জুড়ে ধারাবাহিকতার প্রতিমূর্তি শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দ্বিমুথ করুনারতেœর ৬৬ রানই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর। এই সিরিজে করুনারতেœ সংগ্রহ করেছেন ৪২৮ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কান হিসাবে চার শতাধিক রান করলেন করুনারতেœ।

বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মাঝে হারিয়ে যেতে বসেছে স্পিনার তাইজুলের কৃতিত্ব। শ্রীলঙ্কানরা চতুর্থ দিনে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কৌশল নিয়েছিল। কিন্তু তাইজুলের কারণে তাদের বারবার থমকে যেতে হয়েছে। বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো টেস্টে পাঁচ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। পঞ্চম দিনে কোন বিশেষ নাটকীয়তায় বাংলাদেশ দল পরাজয় এড়াতে পারলেই কেবল তাইজুলের এই কৃতিত্বটা সামনে আসবে। নাহলে, তাইজুলের এই কৃতিত্ব কেই বা মনে রাখবে?