বাংলাদেশ সরকার হঠাৎ করে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় কলকাতায় আটকে পড়েছে কয়েক হাজার বাংলাদেশি নাগরিক। এদের মধ্যে বেশিরভাগই অসুস্থ রোগী যারা মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারতের ভেলর চেন্নাই, দিল্লি কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসার জন্য আসেন কিন্তু কলকাতায় পৌঁছে তারা পড়েছেন বিশাল অনিশ্চয়তার মধ্যে। এখন দেশে ফেরার ব্যাকুলতায় তারা এনওসি চেয়ে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কলকাতা উপ-কমিশন সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী সবাইকে এনওসি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে তারা জানালে দেশে ফেরার দাবিতে হাইকমিশনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করতে থাকে। এদের মধ্যে অনেকেই ভারতের চেন্নাই, ভেলরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, কাউকে চিকিৎসার পর ছুটি দিয়ে দেয়া হয়। যাদের চিকিৎসা চলছিল তাদেরও ভারতে ভয়ঙ্কর কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে হাসপাতাল থেকে দেশে ফিরে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ নিতে বলা হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তারা বাড়ি ফেরার জন্য কেউ ভেলর থেকে, কেউ চেন্নাই, ব্যাঙ্গালুরু বা দিল্লি থেকে কলকাতায় আসেন। এদের মধ্যে জটিল রোগে আক্রান্ত কিছু শিশুসন্তানও রয়েছে, যাদের হার্টসার্জারি হয়েছে।
বাড়ি ফেরার জন্য তারা কলকাতা এসে জানতে পারেন, এনওসি না দিলে তারা দেশে ফিরতে পারবে না। করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশ সরকার ২৬ এপ্রিল থেকে ৯ মে পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ভারতসহ সব বিদেশিকে বাংলাদেশে প্রবেশের ওপরে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ সরকার। তবে ভারতে চিকিৎসা করাতে বা অন্য কারণে যারা গেছেন যাদের ভিসার মেয়াদ এই নিষেধাজ্ঞা জারির মধ্যে শেষ হবে বা হচ্ছে, শুধু তারাই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেশে ফিরতে পারবেন। তবে তাদের কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাকমিশন থেকে এনওসি বা অনুমতিপত্র নিয়ে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্টসহ দেশে ঢুকতে হবে এবং বাংলাদেশে ঢুকে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
বেশিরভাগ নাগরিক সরকারি আইন মেনেও দেশে ফিরতে রাজি, কেননা দু’তিনদিন ধরে কলকাতায় অবস্থান করে তাদের এখন দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করতে হচ্ছে। তাদের সবার একটিই সমস্যা, কলকাতায় থাকার মতো টাকা নেই তাদের হাতে। এই কারণে তাদের থাকা-খাওয়ার খুবই অসুবিধা হচ্ছে, এমনকি শিশু রোগীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা টুকুও করতে পারছে না তারা। তাদের বেশিরভাগকে এখন কলকাতা উপ-হাইকমিশনের সামনের ফুটপাতে থাকতে হচ্ছে। তারা এখন কী করবেন, এই চিন্তায় অস্থির।
রোববার কলকাতা উপ-হাইকমিশনের সামনে অবস্থানরত এমন কয়েক বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে, এই সংবাদ প্রতিনিধিকে উপরিউক্ত কষ্টের কথা জানান তারা। অনেকের অভিযোগ, উপ-হাইকমিশন অফিসের কর্মকর্তারা আমাদের সহায়তা করছেন। কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে জানায়, সাহেবরা ১২টার আগে আসেবে না, পরে আসুন।
এ ব্যাপারে উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, আমাদের অফিসের কয়েকজন অফিসার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে।
কলকাতা উপ-হাইকমিশনের কন্স্যুলার বিভাগ জানায়, আটকেপড়া বাংলাদেশি রোগী ও অন্যদের দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে তারা। ইতোমধ্যে এমন ১৩০০ জনকে বাংলাদেশ সরকারের বিধি অনুযায়ী এনওসি দেয়া হয়েছে। তারা বেশিরভাগ বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বেনাপোল পৌঁছেছে এবং তাদের সবাইকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। কন্স্যুল বিভাগ আরও জানায়, দেশে ফেরার জন্য আরও ৮০০ আবেদনপত্র জমা নেয়া হয়েছে। তাদের আবেদনপত্র যাচাই করা হচ্ছে। যাদের সরকারি বিধির আওতায় থাকবে তাদের সোমবার অনুমতিপত্র দেয়া যেতে পারে।
কন্স্যুল অফিস জানায়, পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত একমাসে মেডিকেল ও অন্যান্য ভিসা নিয়ে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে এসেছে। দেশে ফিরতে গিয়ে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে বিপত্তিতে পড়েন তারা।
হাইকমিশনের সামনে অবস্থানরত চট্টগ্রামের বাসিন্দা আবুজাফর সুফিয়ান জানান, দেশে ফিরতে না পেরে শনিবার সকালে একটি আবাসিক হোটেলে মৃত্যু ঘটে রোজি এনাম (৬৯)-র। তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের রোগী ছিলেন তিনি। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কলকাতার কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কোভিড-১৯র কারণে কোন হাসপাতালেই তাকে ভর্তি করতে রাজি হয়নি। অগত্যা হোটেলেই নিয়ে আসা হয়। পরদিন সকালে তিনি মারা যান। স্বামীর চিকিৎসা করাতে এসে তার দেশে ফেরা আর হলো না। তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর আফসার উদ্দীনের শাশুড়ি।
আবু জাফর জানান, এই রকম অনেক রোগী আছেন যারা ক্যান্সার, বাইপাস সার্জারি, টিউমার অপারেশনসহ মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন তাদের দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করা না হলে এই রকম দুর্ঘটনা আরও ঘটতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
মাদারীপুরের বাসিন্দা অসুস্থ রোগী অমল মজুমদার, চট্টগ্রামের পারভিন আক্তার, খুলনার ক্যান্সার রোগী মৌসুমী ঘোষ, মোমেনশাহীর আনিসুজ্জামান, পটুয়াখালীর আব্দুল জলিল মৃধা বলেছেন, সহজ শর্তে আমাদের দেশে ফেরার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মানবিকভাবে আবেদন জানাচ্ছি।
সোমবার, ০৩ মে ২০২১ , ২১ বৈশাখ ১৪২৮ ২১ রমজান ১৪৪২
প্রতিনিধি, কলকাতা
বাংলাদেশ সরকার হঠাৎ করে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় কলকাতায় আটকে পড়েছে কয়েক হাজার বাংলাদেশি নাগরিক। এদের মধ্যে বেশিরভাগই অসুস্থ রোগী যারা মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারতের ভেলর চেন্নাই, দিল্লি কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসার জন্য আসেন কিন্তু কলকাতায় পৌঁছে তারা পড়েছেন বিশাল অনিশ্চয়তার মধ্যে। এখন দেশে ফেরার ব্যাকুলতায় তারা এনওসি চেয়ে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কলকাতা উপ-কমিশন সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী সবাইকে এনওসি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে তারা জানালে দেশে ফেরার দাবিতে হাইকমিশনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করতে থাকে। এদের মধ্যে অনেকেই ভারতের চেন্নাই, ভেলরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, কাউকে চিকিৎসার পর ছুটি দিয়ে দেয়া হয়। যাদের চিকিৎসা চলছিল তাদেরও ভারতে ভয়ঙ্কর কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে হাসপাতাল থেকে দেশে ফিরে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ নিতে বলা হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তারা বাড়ি ফেরার জন্য কেউ ভেলর থেকে, কেউ চেন্নাই, ব্যাঙ্গালুরু বা দিল্লি থেকে কলকাতায় আসেন। এদের মধ্যে জটিল রোগে আক্রান্ত কিছু শিশুসন্তানও রয়েছে, যাদের হার্টসার্জারি হয়েছে।
বাড়ি ফেরার জন্য তারা কলকাতা এসে জানতে পারেন, এনওসি না দিলে তারা দেশে ফিরতে পারবে না। করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশ সরকার ২৬ এপ্রিল থেকে ৯ মে পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ভারতসহ সব বিদেশিকে বাংলাদেশে প্রবেশের ওপরে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ সরকার। তবে ভারতে চিকিৎসা করাতে বা অন্য কারণে যারা গেছেন যাদের ভিসার মেয়াদ এই নিষেধাজ্ঞা জারির মধ্যে শেষ হবে বা হচ্ছে, শুধু তারাই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেশে ফিরতে পারবেন। তবে তাদের কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাকমিশন থেকে এনওসি বা অনুমতিপত্র নিয়ে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্টসহ দেশে ঢুকতে হবে এবং বাংলাদেশে ঢুকে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
বেশিরভাগ নাগরিক সরকারি আইন মেনেও দেশে ফিরতে রাজি, কেননা দু’তিনদিন ধরে কলকাতায় অবস্থান করে তাদের এখন দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করতে হচ্ছে। তাদের সবার একটিই সমস্যা, কলকাতায় থাকার মতো টাকা নেই তাদের হাতে। এই কারণে তাদের থাকা-খাওয়ার খুবই অসুবিধা হচ্ছে, এমনকি শিশু রোগীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা টুকুও করতে পারছে না তারা। তাদের বেশিরভাগকে এখন কলকাতা উপ-হাইকমিশনের সামনের ফুটপাতে থাকতে হচ্ছে। তারা এখন কী করবেন, এই চিন্তায় অস্থির।
রোববার কলকাতা উপ-হাইকমিশনের সামনে অবস্থানরত এমন কয়েক বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে, এই সংবাদ প্রতিনিধিকে উপরিউক্ত কষ্টের কথা জানান তারা। অনেকের অভিযোগ, উপ-হাইকমিশন অফিসের কর্মকর্তারা আমাদের সহায়তা করছেন। কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে জানায়, সাহেবরা ১২টার আগে আসেবে না, পরে আসুন।
এ ব্যাপারে উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, আমাদের অফিসের কয়েকজন অফিসার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে।
কলকাতা উপ-হাইকমিশনের কন্স্যুলার বিভাগ জানায়, আটকেপড়া বাংলাদেশি রোগী ও অন্যদের দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে তারা। ইতোমধ্যে এমন ১৩০০ জনকে বাংলাদেশ সরকারের বিধি অনুযায়ী এনওসি দেয়া হয়েছে। তারা বেশিরভাগ বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বেনাপোল পৌঁছেছে এবং তাদের সবাইকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। কন্স্যুল বিভাগ আরও জানায়, দেশে ফেরার জন্য আরও ৮০০ আবেদনপত্র জমা নেয়া হয়েছে। তাদের আবেদনপত্র যাচাই করা হচ্ছে। যাদের সরকারি বিধির আওতায় থাকবে তাদের সোমবার অনুমতিপত্র দেয়া যেতে পারে।
কন্স্যুল অফিস জানায়, পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত একমাসে মেডিকেল ও অন্যান্য ভিসা নিয়ে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে এসেছে। দেশে ফিরতে গিয়ে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে বিপত্তিতে পড়েন তারা।
হাইকমিশনের সামনে অবস্থানরত চট্টগ্রামের বাসিন্দা আবুজাফর সুফিয়ান জানান, দেশে ফিরতে না পেরে শনিবার সকালে একটি আবাসিক হোটেলে মৃত্যু ঘটে রোজি এনাম (৬৯)-র। তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের রোগী ছিলেন তিনি। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কলকাতার কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কোভিড-১৯র কারণে কোন হাসপাতালেই তাকে ভর্তি করতে রাজি হয়নি। অগত্যা হোটেলেই নিয়ে আসা হয়। পরদিন সকালে তিনি মারা যান। স্বামীর চিকিৎসা করাতে এসে তার দেশে ফেরা আর হলো না। তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর আফসার উদ্দীনের শাশুড়ি।
আবু জাফর জানান, এই রকম অনেক রোগী আছেন যারা ক্যান্সার, বাইপাস সার্জারি, টিউমার অপারেশনসহ মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন তাদের দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করা না হলে এই রকম দুর্ঘটনা আরও ঘটতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
মাদারীপুরের বাসিন্দা অসুস্থ রোগী অমল মজুমদার, চট্টগ্রামের পারভিন আক্তার, খুলনার ক্যান্সার রোগী মৌসুমী ঘোষ, মোমেনশাহীর আনিসুজ্জামান, পটুয়াখালীর আব্দুল জলিল মৃধা বলেছেন, সহজ শর্তে আমাদের দেশে ফেরার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মানবিকভাবে আবেদন জানাচ্ছি।