মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ সহায়তা বিতরণ উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

যে কোন উপায়ে হোক টিকা সংগ্রহ করা হবে

দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের জীবন রক্ষায় যেকোন উপায়েই হোক করোনার টিকা সংগ্রহ করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আরও বেশি টিকা নিয়ে আসছি। যত টাকাই লাগুক না কেন, আমরা আরও ভ্যাকসিন নিয়ে আসব।’

গতকাল করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দারিদ্র্য ও অসহায় মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সারাদেশের ৩৬ লাখ ৫০ হাজার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাবে। প্রধানমন্ত্রীর এই আর্থিক সহায়তা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদ, বিকাশ, রকেট ও শিওর ক্যাশের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে ভোলা, জয়পুরহাট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকরা ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। যতক্ষণ করোনার টিকা বাজারে আছে ততক্ষণ সরকার তার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকটা ভ্যাকসিনের ডোজ অর্থ খরচ করে সংগ্রহ করছি। কিন্তু জনগণের জীবন বাঁচাতে আমরা এসব ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, করোনার টিকা নেয়া হোক বা না নেয়া হোক, করোনা থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ঈদের আনন্দ সবার হবে। কিন্তু করোনাভাইরাসে ঘরে ঘরে মানুষ মারা গেছে, তাদের কথা একটু চিন্তা করবেন। নিজের বা পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের জীবনটা যেন নষ্ট না হয়। সেদিকে সবাই মিলে দৃষ্টি দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। অন্যকেও সুরক্ষিত করতে হবে। আমরা টিকা দিচ্ছি এবং টিকা আরও নিয়ে আসছি। যত টাকা লাগে আরও টিকা নিয়ে আসব। আমরা এদেশের মানুষের কাছে টিকা পৌঁছে দেব। কিন্তু আপনাদের সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার যেসব নির্দেশনা আমরা দিচ্ছি, সেগুলো আপনারা দয়া করে মেনে চলবেন।

তিনি বলেন, আমি জানি এখন রোজার সময় সামনে ঈদ। বহুদিন হয়েছে, আমরা আত্মীয়-স্বজন ও পরিবার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। তবু এখন তো মোবাইল ফোন আছে। টেলিভিশনে সব দেখতে পারেন।

‘তাই এটাই বলব, ঈদের আনন্দ সবার হবে। কিন্তু এই যে ঘরে ঘরে মানুষ মারা গেছে, তাদের কথা একটু চিন্তা করবেন। কাজেই নিজের জীবনটা যেন নষ্ট না হয় বা পরিবার-বন্ধু বান্ধবের জীবনটা নষ্ট না হয়। সেদিকে সবাই মিলে একটু দৃষ্টি দেবেন।’ তাই টিকা নেয়া সত্ত্বেও মাস্কটা পরে থাকার পাশাপাশি গরম পানির গর্গল করা, ভাপ নেয়াসহ করোনাভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি প্রতিপালনের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, যেহেতু আমরা আন্তঃজেলা যাতায়াতটা বন্ধ করেছি। তাতে অনেক পরিবহন শ্রমিক তাদের অসুবিধা হচ্ছে। আমরা তাদের প্রণোদনার ব্যবস্থা এবং তাদের জন্য কিছু সহযোগিতার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। যেসব এলাকায় এখন করোনা নাই, সেই জেলার ভিতর যোগাযোগটা যেন করতে পারে, সে ব্যবস্থাটা থাকবে। কিন্তু করোনাভাইরাস যেসব জেলায় আছে, সেখান থেকে আরেক জেলায় যেন যাতায়াতটা করতে না পারে। সেখান থেকে যাতে এটা সারাদেশে ছড়াতে না পারে। এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন হতে হবে।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়েও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসনসহ দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সব সময় যেকোন দুর্যোগ সংকটে দুর্গত মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ আছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলে থাকতে সব সময় দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সবার আগে আওয়ামী লীগ ছুটে যেত মানুষের পাশে। এটিই বিরোধী দলের কাজ। কিন্তু যারা নিজেদের বিরোধী দল বা প্রতিদিন সরকার উৎখাতের জন্য বক্ততা-বিবৃতি দিয়ে, আন্দোলনের নামে পোড়াও-জ্বালাও করে যাচ্ছেন, দুর্যোগে মানুষের পাশে কোথায় তারা?’

দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সংকটে দেশের মানুষের পাশে দলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আজকে ক্ষমতায়। আমদের সবার চেষ্টা হচ্ছে কিভাবে আমরা এই দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াব এবং সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর অন্যান্য কয়েকটা রাজনৈতিক দল। অনেকেই ভালো শক্তিশালি বিরোধী দল চায়। আমরাও তো বিরোধীদলে ছিলাম। আমরা বিরোধী দলে থাকতে সব সময় দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সবার আগে আওয়ামী লীগ ছুটে যেত মানুষের পাশে। এটাই বিরোধীদলের কাজ। কিন্তু আজকে যারা নিজেদের বিরোধী দল বা প্রতিদিন সরকার উৎখাতের জন্য বক্ততা-বিবৃতি আন্দোলনের নামে পোড়াও-জ্বালাও করে যাচ্ছে। দুর্যোগে মানুষের পাশে কোথায় তারা?’

‘কয়টা দুর্গত মানুষের মুখে তারা খাবার তুলে দিয়েছে? কয়টা মানুষের পাশে তারা দাঁড়িয়েছে? কয়টা মরা মানুষের কাফনের কাপড় কিনে দিয়েছে। কেউ নেই? হ্যাঁ, ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। একটা মাত্র টেলিভিশন ছিল। বেসরকারি খাতে প্রচুর টেলিভিশন রেডিও করে দিয়েছি। কয়েকটি মাত্র পত্রিকা ছিল, বেসরকারি খাতে অনেক পত্রিকা হয়ে গেছে। এখন তারা বেশ ঘরে বসে বিবৃতিই দিয়ে যাচ্ছেন।’

‘আর আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী আছে। যখন তাদের বুদ্ধি খোলে এবং পরামর্শ দেয় তার আগেই কিন্তু আমাদের সরকার আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে নেন। গরিবের কি দিতে হবে, মানুষের জন্য কী করতে হবে? করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে হবে কিনা বা মানুষকে কীভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে হবে, এসব কাজ যখন আমরা গুছিয়ে-টুছিয়ে নিয়ে আসি বা বাজেট আমাদের কীভাবে করব, বাজেটের কোন কোন খাতের ওপর আমরা বেশি গুরুত্ব দেব, এগুলো যখন আমাদের করা শেষ হয়ে যায় তখন তাদের বুদ্ধির দুয়ারটা খোলে এবং তারা আমাদের যে কাজগুলো সেগুলো আবার তারা আমাদের পরামর্শ দেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে, তারা বুদ্ধিজীবী। তারা তো বুদ্ধি বেঁচেই জীবন-যাপন করবেন। কাজেই সেজন্য তাদের পরামর্শের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। তবে আমি বলতে চাই তাদের এই পরামর্শ দেয়ার আগে আমাদের এই কাজগুলো আমরা কিন্তু করে ফেলি।’

‘কারণ এই দেশটি আমাদের। এই দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন এবং রাজনীতি আমাদের জনগণের জন্য। জনগণের কল্যাণের জন্য। এই কথাটা কখনও আমরা ভুলি না। আর সেই কথাটা ভুলি না বলেই আজকে মানুষের জন্য কাজ করাটাকেই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলেই আমরা মনে করি এবং সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।’

অন্যান্য রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা দল বা যারাই আছেন, প্রতিদিন কীভাবে সরকার উৎখাত করবেন সেই চিন্তাভাবনা করেন। তাদের এটি করতে হলে বা শক্তিশালি বিরোধী দল গড়তে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের বিশ্বাস আস্থা অর্জন করতে হবে। ’৭৫-এর জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর জাতীয় নেতাদের হত্যার পর তারা ভেবেছিল আওয়ামী লীগ কোনদিন আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। অপরাধ কী ছিল, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল, এটাই তো অপরাধ ছিল।’ কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই এদেশের মানুষ সেবা পাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদেশের মানুষ যদি কিছু পেয়ে থাকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই পেয়েছে। এই দেশটাকে কীভাবে উন্নত করতে হবে এটা আওয়ামী লীগ জানে। আওয়ামী লীগই করে যাচ্ছে। কারণ আওয়ামী লীগ তো জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এই আওয়ামী লীগই করেছে এবং স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। সেজন্য আমাদের একটা দায়িত্ববোধ আছে, দায়বোধ আছে। আর আমাদের রাজনৈতিক ফিলোসপিটাও তাই। মানুষের কল্যাণে কাজ করা এবং সেটাই আমরা করে যাচ্ছি।’ কাজেই একেবারে প্রতিটি এলাকায় আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলে অবহিত করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর যারা বলেন, সরকার এটি করে নাই, ওটা করেনি সমালোচনা করছেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন নিজে কটা লোককে সাহায্য করেছেন? তার একটি হিসাব পত্রিকায় দিয়ে দেন। তাহলে মানুষের আস্থা পাবেন, বিশ্বাস পাবেন সেটিই হচ্ছে বাস্তবতা।’

বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাদের বিশেষ করে বিত্তশালী আছেন, তাদের বলব, জনগণের পাশে দাঁড়ান। জনগণকে সাহায্য দেন, জনগণের জন্য কাজ করেন।’

image
আরও খবর
সব ভার্চুয়াল কোর্ট খুলে দিলে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়বে
করোনা মহামারীর থাবায় দেশের বৃহত্তম তাঁতশিল্প হুমকির মুখে
যে কোন উপায়ে হোক টিকা সংগ্রহ করা হবে
সব ভার্চুয়াল কোর্ট খুলে দিলে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়বে প্রধান বিচারপতি
পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৫ : সেতুমন্ত্রী
৪৩২টি সড়ক দুর্ঘটনা নিহত ৪৬৮
সড়কে ঝরলো একই পরিবারের ৪ জনসহ ৮
‘মাফিয়াচক্র’ নিয়ে দেশ চালাচ্ছে সরকার মির্জা ফখরুল
হত্যা মামলার আবেদন মুনিয়ার ভাইয়ের
কলেজছাত্রী মুনিয়া হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের হুমকি উপজেলা চেয়ারম্যানের
ছাত্রদল ও হেফাজত নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩
কর্মহীন পরিবারের মুড়ি আর পানি দিয়ে ইফতার, আলু সেদ্ধ খেয়ে সেহরি

সোমবার, ০৩ মে ২০২১ , ২১ বৈশাখ ১৪২৮ ২১ রমজান ১৪৪২

মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ সহায়তা বিতরণ উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

যে কোন উপায়ে হোক টিকা সংগ্রহ করা হবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের জীবন রক্ষায় যেকোন উপায়েই হোক করোনার টিকা সংগ্রহ করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আরও বেশি টিকা নিয়ে আসছি। যত টাকাই লাগুক না কেন, আমরা আরও ভ্যাকসিন নিয়ে আসব।’

গতকাল করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দারিদ্র্য ও অসহায় মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সারাদেশের ৩৬ লাখ ৫০ হাজার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাবে। প্রধানমন্ত্রীর এই আর্থিক সহায়তা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদ, বিকাশ, রকেট ও শিওর ক্যাশের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে ভোলা, জয়পুরহাট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকরা ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। যতক্ষণ করোনার টিকা বাজারে আছে ততক্ষণ সরকার তার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকটা ভ্যাকসিনের ডোজ অর্থ খরচ করে সংগ্রহ করছি। কিন্তু জনগণের জীবন বাঁচাতে আমরা এসব ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, করোনার টিকা নেয়া হোক বা না নেয়া হোক, করোনা থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ঈদের আনন্দ সবার হবে। কিন্তু করোনাভাইরাসে ঘরে ঘরে মানুষ মারা গেছে, তাদের কথা একটু চিন্তা করবেন। নিজের বা পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের জীবনটা যেন নষ্ট না হয়। সেদিকে সবাই মিলে দৃষ্টি দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। অন্যকেও সুরক্ষিত করতে হবে। আমরা টিকা দিচ্ছি এবং টিকা আরও নিয়ে আসছি। যত টাকা লাগে আরও টিকা নিয়ে আসব। আমরা এদেশের মানুষের কাছে টিকা পৌঁছে দেব। কিন্তু আপনাদের সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার যেসব নির্দেশনা আমরা দিচ্ছি, সেগুলো আপনারা দয়া করে মেনে চলবেন।

তিনি বলেন, আমি জানি এখন রোজার সময় সামনে ঈদ। বহুদিন হয়েছে, আমরা আত্মীয়-স্বজন ও পরিবার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। তবু এখন তো মোবাইল ফোন আছে। টেলিভিশনে সব দেখতে পারেন।

‘তাই এটাই বলব, ঈদের আনন্দ সবার হবে। কিন্তু এই যে ঘরে ঘরে মানুষ মারা গেছে, তাদের কথা একটু চিন্তা করবেন। কাজেই নিজের জীবনটা যেন নষ্ট না হয় বা পরিবার-বন্ধু বান্ধবের জীবনটা নষ্ট না হয়। সেদিকে সবাই মিলে একটু দৃষ্টি দেবেন।’ তাই টিকা নেয়া সত্ত্বেও মাস্কটা পরে থাকার পাশাপাশি গরম পানির গর্গল করা, ভাপ নেয়াসহ করোনাভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি প্রতিপালনের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, যেহেতু আমরা আন্তঃজেলা যাতায়াতটা বন্ধ করেছি। তাতে অনেক পরিবহন শ্রমিক তাদের অসুবিধা হচ্ছে। আমরা তাদের প্রণোদনার ব্যবস্থা এবং তাদের জন্য কিছু সহযোগিতার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। যেসব এলাকায় এখন করোনা নাই, সেই জেলার ভিতর যোগাযোগটা যেন করতে পারে, সে ব্যবস্থাটা থাকবে। কিন্তু করোনাভাইরাস যেসব জেলায় আছে, সেখান থেকে আরেক জেলায় যেন যাতায়াতটা করতে না পারে। সেখান থেকে যাতে এটা সারাদেশে ছড়াতে না পারে। এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন হতে হবে।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়েও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসনসহ দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সব সময় যেকোন দুর্যোগ সংকটে দুর্গত মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ আছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলে থাকতে সব সময় দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সবার আগে আওয়ামী লীগ ছুটে যেত মানুষের পাশে। এটিই বিরোধী দলের কাজ। কিন্তু যারা নিজেদের বিরোধী দল বা প্রতিদিন সরকার উৎখাতের জন্য বক্ততা-বিবৃতি দিয়ে, আন্দোলনের নামে পোড়াও-জ্বালাও করে যাচ্ছেন, দুর্যোগে মানুষের পাশে কোথায় তারা?’

দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সংকটে দেশের মানুষের পাশে দলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আজকে ক্ষমতায়। আমদের সবার চেষ্টা হচ্ছে কিভাবে আমরা এই দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াব এবং সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর অন্যান্য কয়েকটা রাজনৈতিক দল। অনেকেই ভালো শক্তিশালি বিরোধী দল চায়। আমরাও তো বিরোধীদলে ছিলাম। আমরা বিরোধী দলে থাকতে সব সময় দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সবার আগে আওয়ামী লীগ ছুটে যেত মানুষের পাশে। এটাই বিরোধীদলের কাজ। কিন্তু আজকে যারা নিজেদের বিরোধী দল বা প্রতিদিন সরকার উৎখাতের জন্য বক্ততা-বিবৃতি আন্দোলনের নামে পোড়াও-জ্বালাও করে যাচ্ছে। দুর্যোগে মানুষের পাশে কোথায় তারা?’

‘কয়টা দুর্গত মানুষের মুখে তারা খাবার তুলে দিয়েছে? কয়টা মানুষের পাশে তারা দাঁড়িয়েছে? কয়টা মরা মানুষের কাফনের কাপড় কিনে দিয়েছে। কেউ নেই? হ্যাঁ, ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। একটা মাত্র টেলিভিশন ছিল। বেসরকারি খাতে প্রচুর টেলিভিশন রেডিও করে দিয়েছি। কয়েকটি মাত্র পত্রিকা ছিল, বেসরকারি খাতে অনেক পত্রিকা হয়ে গেছে। এখন তারা বেশ ঘরে বসে বিবৃতিই দিয়ে যাচ্ছেন।’

‘আর আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী আছে। যখন তাদের বুদ্ধি খোলে এবং পরামর্শ দেয় তার আগেই কিন্তু আমাদের সরকার আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে নেন। গরিবের কি দিতে হবে, মানুষের জন্য কী করতে হবে? করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে হবে কিনা বা মানুষকে কীভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে হবে, এসব কাজ যখন আমরা গুছিয়ে-টুছিয়ে নিয়ে আসি বা বাজেট আমাদের কীভাবে করব, বাজেটের কোন কোন খাতের ওপর আমরা বেশি গুরুত্ব দেব, এগুলো যখন আমাদের করা শেষ হয়ে যায় তখন তাদের বুদ্ধির দুয়ারটা খোলে এবং তারা আমাদের যে কাজগুলো সেগুলো আবার তারা আমাদের পরামর্শ দেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে, তারা বুদ্ধিজীবী। তারা তো বুদ্ধি বেঁচেই জীবন-যাপন করবেন। কাজেই সেজন্য তাদের পরামর্শের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। তবে আমি বলতে চাই তাদের এই পরামর্শ দেয়ার আগে আমাদের এই কাজগুলো আমরা কিন্তু করে ফেলি।’

‘কারণ এই দেশটি আমাদের। এই দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন এবং রাজনীতি আমাদের জনগণের জন্য। জনগণের কল্যাণের জন্য। এই কথাটা কখনও আমরা ভুলি না। আর সেই কথাটা ভুলি না বলেই আজকে মানুষের জন্য কাজ করাটাকেই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলেই আমরা মনে করি এবং সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।’

অন্যান্য রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা দল বা যারাই আছেন, প্রতিদিন কীভাবে সরকার উৎখাত করবেন সেই চিন্তাভাবনা করেন। তাদের এটি করতে হলে বা শক্তিশালি বিরোধী দল গড়তে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের বিশ্বাস আস্থা অর্জন করতে হবে। ’৭৫-এর জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর জাতীয় নেতাদের হত্যার পর তারা ভেবেছিল আওয়ামী লীগ কোনদিন আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। অপরাধ কী ছিল, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল, এটাই তো অপরাধ ছিল।’ কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই এদেশের মানুষ সেবা পাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদেশের মানুষ যদি কিছু পেয়ে থাকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই পেয়েছে। এই দেশটাকে কীভাবে উন্নত করতে হবে এটা আওয়ামী লীগ জানে। আওয়ামী লীগই করে যাচ্ছে। কারণ আওয়ামী লীগ তো জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এই আওয়ামী লীগই করেছে এবং স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। সেজন্য আমাদের একটা দায়িত্ববোধ আছে, দায়বোধ আছে। আর আমাদের রাজনৈতিক ফিলোসপিটাও তাই। মানুষের কল্যাণে কাজ করা এবং সেটাই আমরা করে যাচ্ছি।’ কাজেই একেবারে প্রতিটি এলাকায় আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলে অবহিত করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর যারা বলেন, সরকার এটি করে নাই, ওটা করেনি সমালোচনা করছেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন নিজে কটা লোককে সাহায্য করেছেন? তার একটি হিসাব পত্রিকায় দিয়ে দেন। তাহলে মানুষের আস্থা পাবেন, বিশ্বাস পাবেন সেটিই হচ্ছে বাস্তবতা।’

বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাদের বিশেষ করে বিত্তশালী আছেন, তাদের বলব, জনগণের পাশে দাঁড়ান। জনগণকে সাহায্য দেন, জনগণের জন্য কাজ করেন।’