রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান লিটনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিকদের তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে মোটরসাইকেল মহড়া প্রদর্শন করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। স্থানীয় ঘটনায় বিচার দাবি করে রংপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে তারাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের নেতারা।
এদিকে এ ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান আরও ক্ষিপ্ত হয়ে দীর্ঘ ২৯ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত আধাপাকা উপজেলা প্রেসক্লাব ভবনের কাছেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় সরকারি গাছপালা কেটে তার অনুসারী কয়েক সাংবাদিক দিয়ে রাতারাতি সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে টিনের বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করে পাল্টা একটি প্রেসক্লাব বানানো হয়েছে বলে সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন।
তারাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার তারাগঞ্জ প্রতিনিধি খবির উদ্দিন প্রমাণিক অভিযোগ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান লিটনের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির খবর স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তারাগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের উপজেলা পরিষদে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে মৌখিক নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তার অনুমতি ছাড়া কোন সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবে না বলে ঘোষণা দেন। এ ঘটনার পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্যাডাররা তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি- ধমকি, মোটরসাইকেল মহড়া প্রদর্শন করায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হয়। পুরো বিষয় লিখিতভাবে উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্যরা রংপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করেন গত ২৬ এপ্রিল। সেখানে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রদান ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত করে বিচার দাবি করা হয়।
অন্যদিকে তারাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাপ্তাহিক চিকলী পত্রিকার সম্পাদক ও দৈনিক সমাচার পত্রিকার তারাগঞ্জ প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রেসক্লাব তারাগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের একমাত্র আবাসস্থল। বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে অনিয়মের খবর প্রকাশ করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার অনুসারী সংবাদকর্মীকে দিয়ে আবারও একই নামে উপজেলা প্রেসক্লাব স্থাপন করে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের হেনস্তা ও তার অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকার পাঁয়তারা করছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রেসক্লাবের একশত গজ দূরে গত ২৮ এপ্রিল রাতের আঁধারে তার গুটিকয়েক পোষ্য সাংবাদিকের দিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করে উপজেলা প্রেসক্লাব নামক সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের বিপরীতে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের ধারে থাকা বেশ কিছু সরকারি গাছ কর্তন করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি বেদখল করে উক্ত ঘরটি নির্মাণ করা হয়। এ ব্যাপারে রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের তারাগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী পিন্টু সরকার বলেন, সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণে বাধা দিতে গেলে সেখানে উপস্থিত কয়েক সংবাদকর্মী উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রভাব দেখায়।
তারপরও সেখানে ঘর নির্মাণ করতে নিষেধ করে আমি চলে আসি। পরে খবর পেয়েছি আমাদের বাধা উপেক্ষা করে তারা সেখানে অবৈধভাবে ঘরটি নির্মাণ করেছে। তবে আমরা ঘরটি অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছি। এ ব্যাপারে রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ. কে. এম শফিকুজ্জামান বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে আমার অফিসের কর্মরত লোক পাঠিয়েছিলাম। তারা সেখানে গিয়ে ঘর নির্মাণের সত্যতা পেয়েছে। আমরা ঘরটি সরানোর জন্য উক্ত অভিযুক্ত সংবাদকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। তারা নির্দেশ না মানলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সার্বিক বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সোমবার, ০৩ মে ২০২১ , ২১ বৈশাখ ১৪২৮ ২১ রমজান ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান লিটনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিকদের তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে মোটরসাইকেল মহড়া প্রদর্শন করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। স্থানীয় ঘটনায় বিচার দাবি করে রংপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে তারাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের নেতারা।
এদিকে এ ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান আরও ক্ষিপ্ত হয়ে দীর্ঘ ২৯ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত আধাপাকা উপজেলা প্রেসক্লাব ভবনের কাছেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় সরকারি গাছপালা কেটে তার অনুসারী কয়েক সাংবাদিক দিয়ে রাতারাতি সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে টিনের বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করে পাল্টা একটি প্রেসক্লাব বানানো হয়েছে বলে সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন।
তারাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার তারাগঞ্জ প্রতিনিধি খবির উদ্দিন প্রমাণিক অভিযোগ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান লিটনের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির খবর স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তারাগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের উপজেলা পরিষদে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে মৌখিক নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তার অনুমতি ছাড়া কোন সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবে না বলে ঘোষণা দেন। এ ঘটনার পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্যাডাররা তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি- ধমকি, মোটরসাইকেল মহড়া প্রদর্শন করায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হয়। পুরো বিষয় লিখিতভাবে উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্যরা রংপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করেন গত ২৬ এপ্রিল। সেখানে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রদান ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত করে বিচার দাবি করা হয়।
অন্যদিকে তারাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাপ্তাহিক চিকলী পত্রিকার সম্পাদক ও দৈনিক সমাচার পত্রিকার তারাগঞ্জ প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রেসক্লাব তারাগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের একমাত্র আবাসস্থল। বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে অনিয়মের খবর প্রকাশ করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার অনুসারী সংবাদকর্মীকে দিয়ে আবারও একই নামে উপজেলা প্রেসক্লাব স্থাপন করে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের হেনস্তা ও তার অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকার পাঁয়তারা করছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রেসক্লাবের একশত গজ দূরে গত ২৮ এপ্রিল রাতের আঁধারে তার গুটিকয়েক পোষ্য সাংবাদিকের দিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করে উপজেলা প্রেসক্লাব নামক সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের বিপরীতে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের ধারে থাকা বেশ কিছু সরকারি গাছ কর্তন করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি বেদখল করে উক্ত ঘরটি নির্মাণ করা হয়। এ ব্যাপারে রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের তারাগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী পিন্টু সরকার বলেন, সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণে বাধা দিতে গেলে সেখানে উপস্থিত কয়েক সংবাদকর্মী উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রভাব দেখায়।
তারপরও সেখানে ঘর নির্মাণ করতে নিষেধ করে আমি চলে আসি। পরে খবর পেয়েছি আমাদের বাধা উপেক্ষা করে তারা সেখানে অবৈধভাবে ঘরটি নির্মাণ করেছে। তবে আমরা ঘরটি অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছি। এ ব্যাপারে রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ. কে. এম শফিকুজ্জামান বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে আমার অফিসের কর্মরত লোক পাঠিয়েছিলাম। তারা সেখানে গিয়ে ঘর নির্মাণের সত্যতা পেয়েছে। আমরা ঘরটি সরানোর জন্য উক্ত অভিযুক্ত সংবাদকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। তারা নির্দেশ না মানলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সার্বিক বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।