চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব জাফর আহমদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে একজন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতাও আছেন। জাফর আহমদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন হাটহাজারী থানায় আক্রমণ, ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ হেফাজতের তা-বে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গ্রেপ্তার বাকি দু’জন হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য আকরাম উদ্দিন পাভেল ও হেফাজত কর্মী মো. সালাহউদ্দিন। গত শনিবার দুপুরে তাদের হাটহাজারী থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৬ মার্চ হাটহাজারীতে যে তা-বের ঘটনা ঘটেছে, এর ইন্ধনদাতা হিসেবে জাফর আহমদের সম্পৃক্ততা আমরা তদন্তে পেয়েছি।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় সরাসরি জড়িত একজন হেফাজত কর্মী এবং মদতদাতা হিসেবে ছাত্রদলের একজন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন গত ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় ভাঙচুর, স্থানীয় ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ রক্তক্ষয়ী সংঘাতে লিপ্ত হয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে হেফাজতে ইসলামের চারকর্মী নিহত হন। এর জেরে তিন দিন ধরে হাটহাজারী থানার অদূরে হেফাজতের মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে ইটের দেয়াল তুলে অবরোধ তৈরি করে রাখেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। একই ঘটনার জেরে চট্টগ্রামের পটিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় প্রথমে সাতটি মামলা দায়ের করা হয়, এতেকোন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। গত ২২ এপ্রিল আরও তিনটি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে দু’টিতে প্রধান আসামি করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে। আরেক মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলালসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এদিকে, সংঘাতের পর থেকে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব ও মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক হারুন ইজাহারসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতার নামে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিল হেফাজতে ইসলাম, যাতে ইন্ধন দিয়েছিল বিএনপি ও জামায়াত। তবে হেফাজতের সাবেক আমির জুনায়েদ বাবুনগরী কয়েকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বার্তা ও গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতের কোন কর্মসূচি ছিল না।
এমনকি হেফাজতে ইসলাম ‘সরকারবিরোধী’ নয় বা বর্তমান সরকারকে হটিয়ে অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসানোর কোন এজেন্ডা হেফাজতের ছিল না বলে বাবুনগরীর দাবি করেন। এ অবস্থায় হেফাজত নেতাদের একটি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে দেখাও করেন। তবে হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। সর্বশেষ গত ২৫ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে আকস্মিকভাবে জুনায়েদ বাবুনগরী ফেইসবুকে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। আবার এ ঘোষণার রেশ না কাটতেই রাত সাড়ে ৩টার দিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ফেইসবুক পেজ থেকে তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথাও প্রচার করা হয়। পরে আরও দু’জনকে সদস্য হিসেবে সংযুক্ত করার কথাও জানানো হয়।
সোমবার, ০৩ মে ২০২১ , ২১ বৈশাখ ১৪২৮ ২১ রমজান ১৪৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব জাফর আহমদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে একজন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতাও আছেন। জাফর আহমদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন হাটহাজারী থানায় আক্রমণ, ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ হেফাজতের তা-বে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গ্রেপ্তার বাকি দু’জন হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য আকরাম উদ্দিন পাভেল ও হেফাজত কর্মী মো. সালাহউদ্দিন। গত শনিবার দুপুরে তাদের হাটহাজারী থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৬ মার্চ হাটহাজারীতে যে তা-বের ঘটনা ঘটেছে, এর ইন্ধনদাতা হিসেবে জাফর আহমদের সম্পৃক্ততা আমরা তদন্তে পেয়েছি।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় সরাসরি জড়িত একজন হেফাজত কর্মী এবং মদতদাতা হিসেবে ছাত্রদলের একজন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন গত ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় ভাঙচুর, স্থানীয় ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ রক্তক্ষয়ী সংঘাতে লিপ্ত হয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে হেফাজতে ইসলামের চারকর্মী নিহত হন। এর জেরে তিন দিন ধরে হাটহাজারী থানার অদূরে হেফাজতের মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে ইটের দেয়াল তুলে অবরোধ তৈরি করে রাখেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। একই ঘটনার জেরে চট্টগ্রামের পটিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় প্রথমে সাতটি মামলা দায়ের করা হয়, এতেকোন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। গত ২২ এপ্রিল আরও তিনটি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে দু’টিতে প্রধান আসামি করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে। আরেক মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলালসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এদিকে, সংঘাতের পর থেকে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব ও মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক হারুন ইজাহারসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতার নামে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিল হেফাজতে ইসলাম, যাতে ইন্ধন দিয়েছিল বিএনপি ও জামায়াত। তবে হেফাজতের সাবেক আমির জুনায়েদ বাবুনগরী কয়েকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বার্তা ও গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতের কোন কর্মসূচি ছিল না।
এমনকি হেফাজতে ইসলাম ‘সরকারবিরোধী’ নয় বা বর্তমান সরকারকে হটিয়ে অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসানোর কোন এজেন্ডা হেফাজতের ছিল না বলে বাবুনগরীর দাবি করেন। এ অবস্থায় হেফাজত নেতাদের একটি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে দেখাও করেন। তবে হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। সর্বশেষ গত ২৫ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে আকস্মিকভাবে জুনায়েদ বাবুনগরী ফেইসবুকে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। আবার এ ঘোষণার রেশ না কাটতেই রাত সাড়ে ৩টার দিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ফেইসবুক পেজ থেকে তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথাও প্রচার করা হয়। পরে আরও দু’জনকে সদস্য হিসেবে সংযুক্ত করার কথাও জানানো হয়।