বিভাগীয় নগরী রংপুরে সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে দিন আয় দিন খাওয়া পরিবারগুলো কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছেন। মুড়ি আর পানি দিয়ে ইফতার, আলু সেদ্ধ খেয়ে সেহরি করছেন হতদরিদ্র পরিবারগুলো।
রংপুর নগরীর অভিজাত এলাকা লালবাগে রেলওয়ে বস্তিতে বাস করে হাজারো পরিবার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানকার মানুষের ভয়াবহ অবস্থা। জহুরুল ইসলাম জানালেন, একটি কাঠের মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। প্রতিদিন আয় হতো ৫ থেকে ৬শ’ টাকা।
স্ত্রী হোসনে আরা লালবাগ এলাকায় অবস্থিত দু’শতাধিক বেসরকারি মেস রয়েছে, সেখানে রান্নার কাজ করতেন তিনি। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখেই বাস করছিলেন তারা। করোনার কারণে জহুরুল প্রায় একমাস ধরে একেবারে বেকার। তিনি জানালেন ৩/৪ দিন এক বেলা কাজ করে পেয়েছেন ২শ’ টাকা মজুরি। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর অনেকদিন ধরে স্ত্রী হোসনে আরা বেকার। জহুরুল ইসলাম জানান, লালবাগ বস্তিতে খুপরি ঘরে বাস করলেও সংসারে শান্তি ছিল।
তিন বেলা পেট ভরে খাবার পেতাম আমরা কিন্তু এখন পুরোপুরি বেকার, কোন কাজ নেই। ধারদেনা করে কয়েকদিন চলেছি এখন আর কিছুই জোটে না। এক সপ্তাহ ধরে শুধু মুড়ি আর পানি পান করে ইফতার করছি, রাতে আলু সেদ্ধ করে সেহরি করছি। এর মাঝে দু’দিন রাতে আধা সের চাল কিনে এনে ভাত আর আলু ভর্তা করে খেয়েছি বলে জানালেন তিনি। এক মাস হয়ে গেল লকডাউন চলছে কই সরকারিভাবে এক ছটাক চালও পাওয়া যায়নি।
এমনকি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা কিংবা ব্যক্তিগতভাবেও কেউ আসেনি। তার একটাই প্রশ্নÑ এভাবে আমরা বাঁচব কীভাবে? আমাদের কি বাঁচার অধিকার নেই? তার স্ত্রী হোসনে আরা জানালেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে মেসগুলো ফাঁকা, কোন কর্ম নেই। টেলিভিশনে বড় বড় কথা শুনি কিন্তু কই আমাদের জন্য কি খাবার ব্যবস্থা করা যায় না? জহুরুল আর তার স্ত্রী হোসনে আরার অভুক্ত থাকার কথা শুনে কোন জবাব নেই আমাদের।
একইভাবে শুধু লালবাগ বস্তিতে হাজারো পরিবার কর্মহীন অবস্থায় অনাহারে মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছেন। এরা রংপুরের বিভিন্ন জেলার চরাঞ্চল থেকে এসেছেন। তাদের জমি জমা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় তারা বস্তিতে আশ্রয় নিয়ে আছেন। এই বস্তির বেশিরভাগ নারী বেসরকারি ছাত্রী ও ছাত্র মেসে রান্নার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এক বছরেও বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা কর্মহীন। অনেকেই বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে এখন বাসাবাড়িতে কাজে নেয় না বলে বসবাসকারী নারীরা জানালেন। অন্যদিকে পুরুষ যারা বাস করেন তারা কেউ রিকশা চালান, কেউ ভ্যান শ্রমিক কেউবা বাদাম বুট বিক্রয় করে অনেকেই শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন কিন্তু লকডাউনের কারণে পুরো এক মাস ধরে বেকার হয়ে পড়ে আছে। তাদের এক বেলা ভাত জুটছে না। লালবাগ বস্তির মতো রংপুর নগরীতেই দেড় লাখ পরিবার অনাহারে মানবেতরভাবে দিন কাটালেও তাদের খাবার সরবরাহ করার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এখনও।
এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আখতার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পরিবারপ্রতি ৫শ’ টাকা করে বরাদ্দ পাওয়া গেছে দ্রুতই বিতরণ করা হবে।
এদিকে করেনার দুর্যোগকালে গ্রাম-শহরের শ্রমজীবীদের এক মাসের খাদ্য ও ৫ হাজার টাকা করে প্রদানের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট নগরীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।
সোমবার, ০৩ মে ২০২১ , ২১ বৈশাখ ১৪২৮ ২১ রমজান ১৪৪২
লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
বিভাগীয় নগরী রংপুরে সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে দিন আয় দিন খাওয়া পরিবারগুলো কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছেন। মুড়ি আর পানি দিয়ে ইফতার, আলু সেদ্ধ খেয়ে সেহরি করছেন হতদরিদ্র পরিবারগুলো।
রংপুর নগরীর অভিজাত এলাকা লালবাগে রেলওয়ে বস্তিতে বাস করে হাজারো পরিবার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানকার মানুষের ভয়াবহ অবস্থা। জহুরুল ইসলাম জানালেন, একটি কাঠের মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। প্রতিদিন আয় হতো ৫ থেকে ৬শ’ টাকা।
স্ত্রী হোসনে আরা লালবাগ এলাকায় অবস্থিত দু’শতাধিক বেসরকারি মেস রয়েছে, সেখানে রান্নার কাজ করতেন তিনি। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখেই বাস করছিলেন তারা। করোনার কারণে জহুরুল প্রায় একমাস ধরে একেবারে বেকার। তিনি জানালেন ৩/৪ দিন এক বেলা কাজ করে পেয়েছেন ২শ’ টাকা মজুরি। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর অনেকদিন ধরে স্ত্রী হোসনে আরা বেকার। জহুরুল ইসলাম জানান, লালবাগ বস্তিতে খুপরি ঘরে বাস করলেও সংসারে শান্তি ছিল।
তিন বেলা পেট ভরে খাবার পেতাম আমরা কিন্তু এখন পুরোপুরি বেকার, কোন কাজ নেই। ধারদেনা করে কয়েকদিন চলেছি এখন আর কিছুই জোটে না। এক সপ্তাহ ধরে শুধু মুড়ি আর পানি পান করে ইফতার করছি, রাতে আলু সেদ্ধ করে সেহরি করছি। এর মাঝে দু’দিন রাতে আধা সের চাল কিনে এনে ভাত আর আলু ভর্তা করে খেয়েছি বলে জানালেন তিনি। এক মাস হয়ে গেল লকডাউন চলছে কই সরকারিভাবে এক ছটাক চালও পাওয়া যায়নি।
এমনকি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা কিংবা ব্যক্তিগতভাবেও কেউ আসেনি। তার একটাই প্রশ্নÑ এভাবে আমরা বাঁচব কীভাবে? আমাদের কি বাঁচার অধিকার নেই? তার স্ত্রী হোসনে আরা জানালেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে মেসগুলো ফাঁকা, কোন কর্ম নেই। টেলিভিশনে বড় বড় কথা শুনি কিন্তু কই আমাদের জন্য কি খাবার ব্যবস্থা করা যায় না? জহুরুল আর তার স্ত্রী হোসনে আরার অভুক্ত থাকার কথা শুনে কোন জবাব নেই আমাদের।
একইভাবে শুধু লালবাগ বস্তিতে হাজারো পরিবার কর্মহীন অবস্থায় অনাহারে মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছেন। এরা রংপুরের বিভিন্ন জেলার চরাঞ্চল থেকে এসেছেন। তাদের জমি জমা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় তারা বস্তিতে আশ্রয় নিয়ে আছেন। এই বস্তির বেশিরভাগ নারী বেসরকারি ছাত্রী ও ছাত্র মেসে রান্নার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এক বছরেও বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা কর্মহীন। অনেকেই বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে এখন বাসাবাড়িতে কাজে নেয় না বলে বসবাসকারী নারীরা জানালেন। অন্যদিকে পুরুষ যারা বাস করেন তারা কেউ রিকশা চালান, কেউ ভ্যান শ্রমিক কেউবা বাদাম বুট বিক্রয় করে অনেকেই শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন কিন্তু লকডাউনের কারণে পুরো এক মাস ধরে বেকার হয়ে পড়ে আছে। তাদের এক বেলা ভাত জুটছে না। লালবাগ বস্তির মতো রংপুর নগরীতেই দেড় লাখ পরিবার অনাহারে মানবেতরভাবে দিন কাটালেও তাদের খাবার সরবরাহ করার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এখনও।
এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আখতার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পরিবারপ্রতি ৫শ’ টাকা করে বরাদ্দ পাওয়া গেছে দ্রুতই বিতরণ করা হবে।
এদিকে করেনার দুর্যোগকালে গ্রাম-শহরের শ্রমজীবীদের এক মাসের খাদ্য ও ৫ হাজার টাকা করে প্রদানের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট নগরীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।