ধরাছোঁয়ার বাইরে মুসা ম্যানশনের মালিক মোস্তাক

পুরান ঢাকার আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানশন। আবাসিক এই ভবনের নিচতলায় ছিল অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউন। সেই ভবনে গত ২২ এপ্রিল ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে মারা যায় ৬ জন। ওই ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা গেলেও মামলার প্রধান আসামি ভবন মালিক মোস্তফা আহম্মেদ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। বংশাল থানা পুলিশ বলছে, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) দুইজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় সোপর্দ করেছে। এরপর আর কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। মামলার প্রধান আসামি ভবন মালিক মোস্তফা আহম্মেদ। তিনি পলাতক রয়েছেন। তার অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

গত ২২ এপ্রিল রাত ৩টা ১৮ মিনিটে হাজী মুসা ম্যানশনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় হাজী মুসা ম্যানশনে লাগা আগুন ২৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজন মারা যান। ওই ঘটনায় ২৩ এপ্রিল রাত ৯টায় বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী শিকদার বাদী হয়ে ভবন মালিক মোস্তফা আহম্মেদ ও কেমিক্যাল গোডাউন মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, মুসা ম্যানশনের মালিক মোস্তফা আহম্মেদসহ অন্য কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা ভবনের নিচতলায় দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যাল সংরক্ষণের জন্য দোকান বা গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করে। কেমিক্যালের গোডাউনে আগুন লাগার ফলে বিষাক্ত ধোঁয়া ও আগুনে দগ্ধ হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ভবনের বাসিন্দাদের বিভিন্ন আসবাবপত্র পুড়ে ও ভাঙচুর হয়ে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও লাভবান হওয়ার জন্য অবৈধভাবে আবাসিক ভবনে দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যাল সংরক্ষণ করেছে। অবহেলার ফলে মৃত্যু ও ক্ষতিসাধন করে পেনাল কোড আইনের ৩০৪-ক/৩৩৭/৪২৭ ধারায় অপরাধ করেছেন তারা। ঘটনার পর ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব, পিবিআই ও ডিবি পুলিশ। গত ২৬ এপ্রিল ভোরে র্যাবের বিশেষ অভিযানে দায়ের করা মামলার দুই নং আসামি মোস্তাফিজুর রহমানকে রাজধানীর উত্তরা থেকে ও তিন নং আসামি মোহাম্মদ মোস্তফাকে বগুড়ার নন্দীগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০ ও গোয়েন্দা বিভাগ।

পরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় গোডাউনে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থ মজুদ করেছিল। এ জাতীয় কেমিক্যাল মজুদের ব্যাপারে তাদের কাছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি ছিল না। প্রায় ৫/৭ বছর ধরে ওই ভবনের নিচতলা ভাড়া নিয়ে কেমিক্যাল ব্যবসা করত। মোস্তাফিজুর রহমান মঈন অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী ও মোহাম্মদ মোস্তফা মেসার্স আরএস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী। প্রতিষ্ঠান দুটি হাজী মুসা ম্যানশনের নিচ তলায় অবস্থিত। ওই ভবনের দোতলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন মোস্তফা। আগুনের রাতে পরিস্থিতি বুঝে মোস্তফা গ্রিল কেটে পালিয়ে যায়। ভবনের মালিক মোস্তাক সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল র?্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ভবনটিতে আগুন লাগা, মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ কিন্তু কেমিক্যাল। আর আবাসিক ভবনে কেমিক্যাল রাখা বা গোডাউন ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই অথচ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদন না নিয়ে ভবন মালিক মোস্তাক সেটিই করেছিলেন। আগুনের পর থেকে তিনি পলাতক। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকির বলেন, অবহেলাজনিত মৃত্যু ও অবৈধভাবে রাসায়নিক দ্রব্য রাখার দায়ে ভবন মালিক এবং গোডাউন মালিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধান আসামিসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার, ০৪ মে ২০২১ , ২২ বৈশাখ ১৪২৮ ২২ রমজান ১৪৪২

অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন

ধরাছোঁয়ার বাইরে মুসা ম্যানশনের মালিক মোস্তাক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পুরান ঢাকার আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানশন। আবাসিক এই ভবনের নিচতলায় ছিল অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউন। সেই ভবনে গত ২২ এপ্রিল ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে মারা যায় ৬ জন। ওই ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা গেলেও মামলার প্রধান আসামি ভবন মালিক মোস্তফা আহম্মেদ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। বংশাল থানা পুলিশ বলছে, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) দুইজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় সোপর্দ করেছে। এরপর আর কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। মামলার প্রধান আসামি ভবন মালিক মোস্তফা আহম্মেদ। তিনি পলাতক রয়েছেন। তার অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

গত ২২ এপ্রিল রাত ৩টা ১৮ মিনিটে হাজী মুসা ম্যানশনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় হাজী মুসা ম্যানশনে লাগা আগুন ২৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজন মারা যান। ওই ঘটনায় ২৩ এপ্রিল রাত ৯টায় বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী শিকদার বাদী হয়ে ভবন মালিক মোস্তফা আহম্মেদ ও কেমিক্যাল গোডাউন মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, মুসা ম্যানশনের মালিক মোস্তফা আহম্মেদসহ অন্য কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা ভবনের নিচতলায় দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যাল সংরক্ষণের জন্য দোকান বা গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করে। কেমিক্যালের গোডাউনে আগুন লাগার ফলে বিষাক্ত ধোঁয়া ও আগুনে দগ্ধ হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ভবনের বাসিন্দাদের বিভিন্ন আসবাবপত্র পুড়ে ও ভাঙচুর হয়ে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও লাভবান হওয়ার জন্য অবৈধভাবে আবাসিক ভবনে দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যাল সংরক্ষণ করেছে। অবহেলার ফলে মৃত্যু ও ক্ষতিসাধন করে পেনাল কোড আইনের ৩০৪-ক/৩৩৭/৪২৭ ধারায় অপরাধ করেছেন তারা। ঘটনার পর ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব, পিবিআই ও ডিবি পুলিশ। গত ২৬ এপ্রিল ভোরে র্যাবের বিশেষ অভিযানে দায়ের করা মামলার দুই নং আসামি মোস্তাফিজুর রহমানকে রাজধানীর উত্তরা থেকে ও তিন নং আসামি মোহাম্মদ মোস্তফাকে বগুড়ার নন্দীগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০ ও গোয়েন্দা বিভাগ।

পরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় গোডাউনে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থ মজুদ করেছিল। এ জাতীয় কেমিক্যাল মজুদের ব্যাপারে তাদের কাছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি ছিল না। প্রায় ৫/৭ বছর ধরে ওই ভবনের নিচতলা ভাড়া নিয়ে কেমিক্যাল ব্যবসা করত। মোস্তাফিজুর রহমান মঈন অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী ও মোহাম্মদ মোস্তফা মেসার্স আরএস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী। প্রতিষ্ঠান দুটি হাজী মুসা ম্যানশনের নিচ তলায় অবস্থিত। ওই ভবনের দোতলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন মোস্তফা। আগুনের রাতে পরিস্থিতি বুঝে মোস্তফা গ্রিল কেটে পালিয়ে যায়। ভবনের মালিক মোস্তাক সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল র?্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ভবনটিতে আগুন লাগা, মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ কিন্তু কেমিক্যাল। আর আবাসিক ভবনে কেমিক্যাল রাখা বা গোডাউন ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই অথচ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদন না নিয়ে ভবন মালিক মোস্তাক সেটিই করেছিলেন। আগুনের পর থেকে তিনি পলাতক। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকির বলেন, অবহেলাজনিত মৃত্যু ও অবৈধভাবে রাসায়নিক দ্রব্য রাখার দায়ে ভবন মালিক এবং গোডাউন মালিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধান আসামিসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।