চট্টগ্রামে যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার করোনার ধরন শনাক্ত

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে চট্টগ্রামে যুক্তরাজ্য ধরনের আধিক্য পেয়েছেন গবেষকরা। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনেরও উপস্থিতি পেয়েছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গবেষক। তবে ভারতীয় ধরন পাওয়া যায়নি চট্টগ্রামের কোন নমুনায়।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইয়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) গবেষকরা ১০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে তাতে এই দু’টি দেশের ভ্যারিয়েন্টের আধিক্য পেয়েছেন। তবে এই ১০টি নমুনায় বর্তমানে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (বি. ১.৬১৭) এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

গবেষক দলের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় গত ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ১০ জন ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে জিনোম সিকোয়েন্স করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষকরা। এতে যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের অধিক উপস্থিতি পাওয়া যায়। তবে আরও বেশি নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করলে প্রকৃত চিত্র অধিকতর পরিষ্কার হতো।’

১০টি নমুনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোভিডে দ্বিতীয় ঢেউয়ে চট্টগ্রামে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ভ্যারিয়েন্টের আধিক্য ছিল। যদিও একই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টেরও উপস্থিতি ছিল। ১০টি নমুনার মধ্যে ছয়টিতে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.১.৭) এর উপস্থিতি মিলেছে। অপর তিনটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টে (বি.১.৩৫১) এবং বাকি একটিতে অস্ট্রেলিয়া, আইসল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডের ভ্যারিয়েন্টের (বি.১.১.১৪২) উপস্থিতি পাওয়া যায়। তবে কোনও নমুনায় বর্তমানে ভারতে চিহ্নিত হওয়া ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৬১৭) এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে নেয়া ১০টি নমুনার মধ্যে দুই নারীর। দুইজনের বয়স ছিল ২২ ও ২৪ বছর। বাকি ৮টি নমুনা পুরুষদের। যাদের বয়স ৩১-৬৪ বছরের মধ্যে। গবেষণার তথ্যে দেখা গেছে, আক্রান্ত যেসব রোগীর নমুনা নেয়া হয় তাদের মধ্য পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এদের মধ্যে ব্রিটেনের ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত তিনজন ছিলেন। বাকি দুজনের মধ্যে একজন দক্ষিণ আফ্রিকা ও অপরজন অস্ট্রেলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত ছিলেন।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ বলেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ে চট্টগ্রামে কোন ধরনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে তা জানার চেষ্টার অংশ হিসেবে আমরা (সিভাসু) ১০টি নমুনার জীবন রহস্য উন্মোচন করে। এই গবেষণা কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের সঙ্গে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) দুইজন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। ১০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে আমরা তাতে বর্তমানে ভারতে আক্রমণ করা ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৬১৭) এর কোনও উপস্থিতি পাইনি।’

গবেষণায় অগ্রভাগে কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক পরিতোষ কুমার বিশ্বাস ও অধ্যাপক শারমিন চৌধুরী। এতে সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোরশেদ হাসান সরকার ও গবেষক মো. সেলিম খান। গবেষণায় সহযোগী হিসেবে ছিলেন ভেটেরিনারি চিকিৎসক ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. ত্রিদিব দাশ, ডা. প্রণেশ দত্ত, ডা. সিরাজুল ইসলাম ও ডা. তানভীর আহমেদ নিজামী।

বুধবার, ০৫ মে ২০২১ , ২৩ বৈশাখ ১৪২৮ ২৩ রমজান ১৪৪২

নমুনা পরীক্ষা

চট্টগ্রামে যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার করোনার ধরন শনাক্ত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে চট্টগ্রামে যুক্তরাজ্য ধরনের আধিক্য পেয়েছেন গবেষকরা। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনেরও উপস্থিতি পেয়েছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গবেষক। তবে ভারতীয় ধরন পাওয়া যায়নি চট্টগ্রামের কোন নমুনায়।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইয়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) গবেষকরা ১০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে তাতে এই দু’টি দেশের ভ্যারিয়েন্টের আধিক্য পেয়েছেন। তবে এই ১০টি নমুনায় বর্তমানে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (বি. ১.৬১৭) এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

গবেষক দলের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় গত ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ১০ জন ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে জিনোম সিকোয়েন্স করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষকরা। এতে যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের অধিক উপস্থিতি পাওয়া যায়। তবে আরও বেশি নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করলে প্রকৃত চিত্র অধিকতর পরিষ্কার হতো।’

১০টি নমুনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোভিডে দ্বিতীয় ঢেউয়ে চট্টগ্রামে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ভ্যারিয়েন্টের আধিক্য ছিল। যদিও একই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টেরও উপস্থিতি ছিল। ১০টি নমুনার মধ্যে ছয়টিতে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.১.৭) এর উপস্থিতি মিলেছে। অপর তিনটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টে (বি.১.৩৫১) এবং বাকি একটিতে অস্ট্রেলিয়া, আইসল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডের ভ্যারিয়েন্টের (বি.১.১.১৪২) উপস্থিতি পাওয়া যায়। তবে কোনও নমুনায় বর্তমানে ভারতে চিহ্নিত হওয়া ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৬১৭) এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে নেয়া ১০টি নমুনার মধ্যে দুই নারীর। দুইজনের বয়স ছিল ২২ ও ২৪ বছর। বাকি ৮টি নমুনা পুরুষদের। যাদের বয়স ৩১-৬৪ বছরের মধ্যে। গবেষণার তথ্যে দেখা গেছে, আক্রান্ত যেসব রোগীর নমুনা নেয়া হয় তাদের মধ্য পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এদের মধ্যে ব্রিটেনের ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত তিনজন ছিলেন। বাকি দুজনের মধ্যে একজন দক্ষিণ আফ্রিকা ও অপরজন অস্ট্রেলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত ছিলেন।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ বলেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ে চট্টগ্রামে কোন ধরনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে তা জানার চেষ্টার অংশ হিসেবে আমরা (সিভাসু) ১০টি নমুনার জীবন রহস্য উন্মোচন করে। এই গবেষণা কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের সঙ্গে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) দুইজন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। ১০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে আমরা তাতে বর্তমানে ভারতে আক্রমণ করা ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৬১৭) এর কোনও উপস্থিতি পাইনি।’

গবেষণায় অগ্রভাগে কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক পরিতোষ কুমার বিশ্বাস ও অধ্যাপক শারমিন চৌধুরী। এতে সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোরশেদ হাসান সরকার ও গবেষক মো. সেলিম খান। গবেষণায় সহযোগী হিসেবে ছিলেন ভেটেরিনারি চিকিৎসক ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. ত্রিদিব দাশ, ডা. প্রণেশ দত্ত, ডা. সিরাজুল ইসলাম ও ডা. তানভীর আহমেদ নিজামী।