খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর পক্ষে মেডিকেল বোর্ড

সরকারের কাছে কোন আবেদন আসেনি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী 

করোনা আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর পক্ষে মত দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে গত সোমবার বিকেলে সিসিইউতে নেয়া হয়।

এরপর তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখে। একদিন পরই মেডিকেল বোর্ড সুপারিশ করেছে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য নেয়া জরুরি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর বিষয়ে কোন আবেদন পাননি বলে জানিয়েছেন। করোনা আক্রান্ত খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, তাকে সিসিইউতে স্থানান্তরসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৈঠক করে মেডিকেল বোর্ড। বৈঠক শেষে তারা খালেদা জিয়াকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর সুপারিশ করেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেলবোর্ড মনে করে, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। তার ফুসফুসের পানি কমেছে। তবে অক্সিজেন সাপোর্ট এখনও চলছে।

এদিকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে চিকিৎসকদের সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে খালেদা জিয়া বা তার পরিবার সরকারের কাছে কোন আবেদন করেনি। তবে খালেদা জিয়াকে পরবর্তী কোন সুবিধা নিতে হলে আদালতের মাধ্যমেই আসতে হবে। গতকাল রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নাজনীন হাইস্কুল মাঠে অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়া যে সাজা ভোগ করছিলেন সেটি স্থগিত করে তাকে চিকিৎসার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। তিনি বর্তমানে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তার ইচ্ছা অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন, এ পর্যন্ত আমাদের জানা। তিনি যাতে উন্নত চিকিৎসা পান সেজন্য প্রধানমন্ত্রী দেশে থেকেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। খালেদা জিয়া যদি বিদেশ যেতে আবেদন করেন তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে কি ব্যবস্থা নেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি আদালতের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী যে ধারায় সাজা স্থগিত রেখে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন, এর বাইরে অন্য কোন সুযোগ নিতে চাইলে তাকে আদালতে যেতে হবে।

এদিকে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে কিনা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সরকারকে এ বিষয়ে (চিকিৎসার জন্য খালেদাকে বিদেশে পাঠানো) আদালতে আসতে হতে পারে।

কারণ সরকার এটি (জেল সাজা স্থগিত করেছে) ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১-এর অধীনে করেছে। তবুও প্রাসঙ্গিক দলিল ও আইন না দেখে আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না। অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘তার (খালেদা) জন্য কী চিকিৎসা প্রয়োজন এবং দেশে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সম্ভব কিনা তাসহ সব বিষয় বিবেচনা করেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নেবে।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত ১১ এপ্রিল থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন খালেদা জিয়া। ১৪ দিন পর আবার পরীক্ষা করা হলে তখনও তার করোনাভাইরাস ‘পজেটিভ’ আসে। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৭ এপ্রিল রাতে তাকে এভারকেয়ার হাসপপাতালে নেয়া হয়।

চেস্টের সিটি স্ক্যান ও কয়েকটি পরীক্ষার পর সেই রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর থেকে কেবিনে রেখেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছিল। গত ৩ মে সোমবার সকালে হঠাৎ খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এরপর বিকেলেই তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউতে) নেয়া হয়।

বুধবার, ০৫ মে ২০২১ , ২৩ বৈশাখ ১৪২৮ ২৩ রমজান ১৪৪২

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর পক্ষে মেডিকেল বোর্ড

সরকারের কাছে কোন আবেদন আসেনি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী 

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

করোনা আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর পক্ষে মত দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে গত সোমবার বিকেলে সিসিইউতে নেয়া হয়।

এরপর তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখে। একদিন পরই মেডিকেল বোর্ড সুপারিশ করেছে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য নেয়া জরুরি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর বিষয়ে কোন আবেদন পাননি বলে জানিয়েছেন। করোনা আক্রান্ত খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, তাকে সিসিইউতে স্থানান্তরসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৈঠক করে মেডিকেল বোর্ড। বৈঠক শেষে তারা খালেদা জিয়াকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর সুপারিশ করেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেলবোর্ড মনে করে, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। তার ফুসফুসের পানি কমেছে। তবে অক্সিজেন সাপোর্ট এখনও চলছে।

এদিকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে চিকিৎসকদের সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে খালেদা জিয়া বা তার পরিবার সরকারের কাছে কোন আবেদন করেনি। তবে খালেদা জিয়াকে পরবর্তী কোন সুবিধা নিতে হলে আদালতের মাধ্যমেই আসতে হবে। গতকাল রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নাজনীন হাইস্কুল মাঠে অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়া যে সাজা ভোগ করছিলেন সেটি স্থগিত করে তাকে চিকিৎসার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। তিনি বর্তমানে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তার ইচ্ছা অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন, এ পর্যন্ত আমাদের জানা। তিনি যাতে উন্নত চিকিৎসা পান সেজন্য প্রধানমন্ত্রী দেশে থেকেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। খালেদা জিয়া যদি বিদেশ যেতে আবেদন করেন তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে কি ব্যবস্থা নেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি আদালতের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী যে ধারায় সাজা স্থগিত রেখে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন, এর বাইরে অন্য কোন সুযোগ নিতে চাইলে তাকে আদালতে যেতে হবে।

এদিকে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে কিনা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সরকারকে এ বিষয়ে (চিকিৎসার জন্য খালেদাকে বিদেশে পাঠানো) আদালতে আসতে হতে পারে।

কারণ সরকার এটি (জেল সাজা স্থগিত করেছে) ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১-এর অধীনে করেছে। তবুও প্রাসঙ্গিক দলিল ও আইন না দেখে আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না। অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘তার (খালেদা) জন্য কী চিকিৎসা প্রয়োজন এবং দেশে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সম্ভব কিনা তাসহ সব বিষয় বিবেচনা করেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নেবে।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত ১১ এপ্রিল থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন খালেদা জিয়া। ১৪ দিন পর আবার পরীক্ষা করা হলে তখনও তার করোনাভাইরাস ‘পজেটিভ’ আসে। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৭ এপ্রিল রাতে তাকে এভারকেয়ার হাসপপাতালে নেয়া হয়।

চেস্টের সিটি স্ক্যান ও কয়েকটি পরীক্ষার পর সেই রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর থেকে কেবিনে রেখেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছিল। গত ৩ মে সোমবার সকালে হঠাৎ খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এরপর বিকেলেই তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউতে) নেয়া হয়।