বাঁশখালীতে নিহতদের পরিবারকে ‘আপাতত’ ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গ-ামারায় নিহতদের পরিবারকে ‘আপাতত’ ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ হাইকোটের। এস আলমের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার প্লান্টে পুলিশের গুলিতে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে (আপতত) পাঁচ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতিসহ (বেলা) পাঁচটি সংগঠনের আলাদা দুটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে আদালত রুল দেন শ্রমিক হত্যার ঘটনায় কেন বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেয়া হবে না?

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেডআই খান পান্না, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সৈয়দা নাসরিন। এস আলম গ্রুপের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আরসাদুর রউফ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ও অরবিন্দু কুমার রায়।

এস আলম গ্রুপের আইনজীবী রউফ শুনানিতে বলেন, নিহতদের পরিবারকে ইতোমধ্যে ৩ লাখ টাকা করে দেয়া হয়েছে। তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ৩ লাখ টাকা করে দিয়েছেন, আরও ২ লাখ টাকা করে দেন।

পরে আদালত সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে পুলিশ প্রশাসন এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের করা দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।

সেই সঙ্গে ভুক্তভোগী ও আহত শ্রমিকদের কাকে কীভাবে কত টাকা খরচ দেয়া হয়েছে, আহতদের কী চিকিৎসা দেয়া হয়েছে, আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে এস আলম গ্রুপকে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।

এছাড়া শ্রমিক ও এলাকাবাসীকে যাতে ‘হয়রানি’ করা না হয়- প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করতে বলেছে উচ্চ আদালত। পাশাপাশি গত ১৭ এপ্রিল শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঁচ থেকে ছয়জন শ্রমিক নিহত ও শতাধিক শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে এবং হতাহতদের পরিবারের পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিবাদীদের ‘নিষ্ক্রিক্রয়তা-ব্যর্থতা’ কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না এবং নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে তিন কোটি ও আহত শ্রমিকদের দুই কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত। সংঘর্ষের ওই ঘটনা তদন্তে একটি বিচারিক তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, শিল্প সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, বাণিজ্য সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ সচিব, পরিবেশ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও এসএস পাওয়ার আই লিমিটেডসহ ১৯ ব্যক্তি ও দপ্তরকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গত ১৭ এপ্রিল বাঁশখালীর গ-ামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন ১৩২০ মোগাওয়াট ক্ষমতার ‘এসএস পাওয়ার প্লান্টে’ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সে সময় গুলিতে ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে আরও দুজন মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত শ্রমিকদের ভাষ্য, বকেয়া বেতন ও রোজায় কাজের সময় পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ থেকে সেদিন সেখানে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

ওই ঘটনায় নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে তিন কোটি টাকা করে এবং আহতদের প্রত্যেককে দুই কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে গত ১৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবসহ সাত সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ১৬ কর্মকর্তা বরাবর উকিল নোটিশ পাঠায় আসক। তাতে সাড়া না পেয়ে ২২ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট আবেদন করে তারা।

এরপর সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও বিচারিক তদন্তের নির্দেশনা চেয় গত ২৮ এপ্রিল আরেকটি রিট আবেদন করা হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নিজেরা করি, সেফটি অ্যান্ড রাইটস এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পক্ষ থেকে।

গত রোববার রিট দুটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠলে আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রিট দুটি একসঙ্গে শুনানির আরজি জানান। পরে আদালত গতকাল রিট দুটি শুনানির জন্য রাখেন।

বুধবার, ০৫ মে ২০২১ , ২৩ বৈশাখ ১৪২৮ ২৩ রমজান ১৪৪২

বাঁশখালীতে নিহতদের পরিবারকে ‘আপাতত’ ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ

আদালত বার্তা পরিবেশক

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গ-ামারায় নিহতদের পরিবারকে ‘আপাতত’ ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ হাইকোটের। এস আলমের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার প্লান্টে পুলিশের গুলিতে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে (আপতত) পাঁচ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতিসহ (বেলা) পাঁচটি সংগঠনের আলাদা দুটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে আদালত রুল দেন শ্রমিক হত্যার ঘটনায় কেন বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেয়া হবে না?

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেডআই খান পান্না, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সৈয়দা নাসরিন। এস আলম গ্রুপের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আরসাদুর রউফ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ও অরবিন্দু কুমার রায়।

এস আলম গ্রুপের আইনজীবী রউফ শুনানিতে বলেন, নিহতদের পরিবারকে ইতোমধ্যে ৩ লাখ টাকা করে দেয়া হয়েছে। তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ৩ লাখ টাকা করে দিয়েছেন, আরও ২ লাখ টাকা করে দেন।

পরে আদালত সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে পুলিশ প্রশাসন এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের করা দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।

সেই সঙ্গে ভুক্তভোগী ও আহত শ্রমিকদের কাকে কীভাবে কত টাকা খরচ দেয়া হয়েছে, আহতদের কী চিকিৎসা দেয়া হয়েছে, আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে এস আলম গ্রুপকে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।

এছাড়া শ্রমিক ও এলাকাবাসীকে যাতে ‘হয়রানি’ করা না হয়- প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করতে বলেছে উচ্চ আদালত। পাশাপাশি গত ১৭ এপ্রিল শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঁচ থেকে ছয়জন শ্রমিক নিহত ও শতাধিক শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে এবং হতাহতদের পরিবারের পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিবাদীদের ‘নিষ্ক্রিক্রয়তা-ব্যর্থতা’ কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না এবং নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে তিন কোটি ও আহত শ্রমিকদের দুই কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত। সংঘর্ষের ওই ঘটনা তদন্তে একটি বিচারিক তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, শিল্প সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, বাণিজ্য সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ সচিব, পরিবেশ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও এসএস পাওয়ার আই লিমিটেডসহ ১৯ ব্যক্তি ও দপ্তরকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গত ১৭ এপ্রিল বাঁশখালীর গ-ামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন ১৩২০ মোগাওয়াট ক্ষমতার ‘এসএস পাওয়ার প্লান্টে’ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সে সময় গুলিতে ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে আরও দুজন মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত শ্রমিকদের ভাষ্য, বকেয়া বেতন ও রোজায় কাজের সময় পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ থেকে সেদিন সেখানে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

ওই ঘটনায় নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে তিন কোটি টাকা করে এবং আহতদের প্রত্যেককে দুই কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে গত ১৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবসহ সাত সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ১৬ কর্মকর্তা বরাবর উকিল নোটিশ পাঠায় আসক। তাতে সাড়া না পেয়ে ২২ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট আবেদন করে তারা।

এরপর সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও বিচারিক তদন্তের নির্দেশনা চেয় গত ২৮ এপ্রিল আরেকটি রিট আবেদন করা হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নিজেরা করি, সেফটি অ্যান্ড রাইটস এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পক্ষ থেকে।

গত রোববার রিট দুটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠলে আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রিট দুটি একসঙ্গে শুনানির আরজি জানান। পরে আদালত গতকাল রিট দুটি শুনানির জন্য রাখেন।