সিলেটে রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল আজ

সিলেটের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হচ্ছে আজ বুধবার। হত্যাকা-ের প্রায় ৭ মাস পর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ মামলার চার্জশিট দাখিল করছে। পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।

সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদ হত্যাকা-ের সাত মাস পেরোতে চলছে। অভিযোগপত্র প্রস্তুত হয়ে গেছে বলেও একমাস পার করে দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছিল রায়হানের পরিবারের মধ্যে। তবে দেরিতে হলেও অভিযোগপত্র দেয়ার খবরে খুশি রায়হানের মা সালমা বেগম। ছেলেকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।

গত বছরের ১১ অক্টোবর মধ্যরাতে নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে কাস্টঘর সুইপার কলোনি থেকে ধরে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ও তার সহকারীরা। কয়েক ঘণ্টা চলে পাশবিক নির্যাতন। পরে ভোরে রায়হানের নিথর দেহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করে পুলিশ।

পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তারে দাবিতে চলে নানা কর্মসূচি।

১২ অক্টোবর রাতে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন রায়হানের স্ত্রী। আলোচিত এ মামলাটির আসামি পুলিশ হওয়ায় একটি নির্ভুল, ত্রুটিমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য অভিযোগপত্র তৈরি করতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান। পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, করোনার বিরূপ পরিস্থিতি ও নিখুঁত তদন্তের স্বার্থে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হয়েছে।

পিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই মামলার তদন্তে রায়হানকে নির্যাতনের সঙ্গে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ (বরখাস্ত) এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, বরখাস্ত হওয়া টুআইসি এসআই হাসান আলীসহ কয়েক পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অভিযোগপত্রে তাদের আসামি করা হবে।

তবে রায়হান হত্যার পর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন ও প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে পালাতে সহায়তাকারী কথিত সাংবাদিক কোম্পানীগঞ্জের আবদুল্লাহ আল নোমানকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রায়হান হত্যাকা-ের ঘটনার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ৬ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই ৬ জন এখন কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস। এরমধ্যে আকবর হোসেন ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। তাকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক চেষ্টা করে। পরে গত বছরের ৯ নভেম্বর কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত থেকে জেলা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

রায়হানের মা সালমা বেগম জানান, দেরিতে হলেও মামলার অভিযোগপত্র প্রস্তুতের খবরে খুশি রায়হানের পরিবার। দ্রুত বিচারকাজ শুরু করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা।

বুধবার, ০৫ মে ২০২১ , ২৩ বৈশাখ ১৪২৮ ২৩ রমজান ১৪৪২

পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যু

সিলেটে রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল আজ

প্রতিনিধি, সিলেট

সিলেটের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হচ্ছে আজ বুধবার। হত্যাকা-ের প্রায় ৭ মাস পর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ মামলার চার্জশিট দাখিল করছে। পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।

সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদ হত্যাকা-ের সাত মাস পেরোতে চলছে। অভিযোগপত্র প্রস্তুত হয়ে গেছে বলেও একমাস পার করে দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছিল রায়হানের পরিবারের মধ্যে। তবে দেরিতে হলেও অভিযোগপত্র দেয়ার খবরে খুশি রায়হানের মা সালমা বেগম। ছেলেকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।

গত বছরের ১১ অক্টোবর মধ্যরাতে নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে কাস্টঘর সুইপার কলোনি থেকে ধরে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ও তার সহকারীরা। কয়েক ঘণ্টা চলে পাশবিক নির্যাতন। পরে ভোরে রায়হানের নিথর দেহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করে পুলিশ।

পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তারে দাবিতে চলে নানা কর্মসূচি।

১২ অক্টোবর রাতে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন রায়হানের স্ত্রী। আলোচিত এ মামলাটির আসামি পুলিশ হওয়ায় একটি নির্ভুল, ত্রুটিমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য অভিযোগপত্র তৈরি করতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান। পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, করোনার বিরূপ পরিস্থিতি ও নিখুঁত তদন্তের স্বার্থে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হয়েছে।

পিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই মামলার তদন্তে রায়হানকে নির্যাতনের সঙ্গে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ (বরখাস্ত) এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, বরখাস্ত হওয়া টুআইসি এসআই হাসান আলীসহ কয়েক পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অভিযোগপত্রে তাদের আসামি করা হবে।

তবে রায়হান হত্যার পর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন ও প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে পালাতে সহায়তাকারী কথিত সাংবাদিক কোম্পানীগঞ্জের আবদুল্লাহ আল নোমানকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রায়হান হত্যাকা-ের ঘটনার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ৬ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই ৬ জন এখন কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস। এরমধ্যে আকবর হোসেন ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। তাকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক চেষ্টা করে। পরে গত বছরের ৯ নভেম্বর কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত থেকে জেলা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

রায়হানের মা সালমা বেগম জানান, দেরিতে হলেও মামলার অভিযোগপত্র প্রস্তুতের খবরে খুশি রায়হানের পরিবার। দ্রুত বিচারকাজ শুরু করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা।