সারাদেশে নিম্নমানের ভেজাল সেমাই বাজারে

রমজানের ঈদ সামনে রেখে এখন সারাদেশে নিম্নমানের নকল ভেজাল সেমাইর ছড়াছড়ি। এসব সেমাই কিনে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ভেজাল সেমাই জব্দ ও প্রতিষ্ঠানের মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। খোদ রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ভেজাল সেমাই তৈরির কারখানায় জরিমানা করা হয়েছে। এরপরও থামছে না ভেজাল সেমাইসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি।

ইনটেনসিভ মেডিসিন কেয়ার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, রং ও কেমিক্যাল মিশ্রিত নোংরা পরিবেশে তৈরি ভেজাল সেমাই ও আইসক্রিম খেয়ে লিভাল ডেমেজ হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। আর পেটের পিড়া ও ডায়রিয়ায় তাৎক্ষণিক আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, প্রতিবছর রমজান মাসে অসাধু ব্যবসায়ীরা নোংরা পরিবেশে অনুমোদন ছাড়াই ভেজাল সেমাই তৈরি করে।

কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স না নিয়ে সেমাই তৈরি করায় দুইটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। কামরাঙ্গীরচরের হুজুর পাড়ায় বোম্বে সুইট নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামান ও র‌্যাব-১০ একটি অভিযানিক দল যাত্রাবাড়ী, ডেমরায় অনুমোদনহীন ভেজাল খাবার (মিষ্টি, আইস ক্রিম, বিস্কুটসহ অন্যান্য খাবার সামগ্রী উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রি করার অপরাধে ৭ প্রতিষ্ঠানকে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। আরও ৫ লাখ টাকা মূল্যের অনুমোদনহীন ভেজাল খাবার ধ্বংস করা হয়।

তারা বেশ কিছুদিন ধরে অনুমোদনহীন ভেজাল খাবার, উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রি করের আসছিল বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির সূর্য জানান, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে পৃথক তিনটি অভিযানে নকল আইসক্রিম ও নকল লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানাকে ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিএসটিআইয়ের অনুমোদনবিহীন এসব কারখানায় ভেজালপণ্য বাজারজাত করার অপরাধে উৎপাদন সামগ্রী ধ্বংস করে কারখানা তিনটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও র‌্যাব সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদ ও হাজারীবাগ থানা এলাকায় অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে খাদ্য তৈরি ও বিক্রি করার অপরাধে ৪টি বেকারিকে ৬ লাখ জরিমানা করেছে।

জানা যায়, উপজেলার পাটেশ^রী বাজারে ওসমান গণির পূত্র সাহাদুজ্জামান ‘মুক্তা আইসক্রিম’ নামে একটি কারখানা, ভূরুঙ্গামারী বাজারে ঈসমাইল হোসেন নামে এক ব্যক্তি ‘ভাই ভাই আইসক্রিম’ এবং উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নের খাটামারী গ্রামের ঝুমুর আলীর পুত্র কাদের আলী খাটামারী গ্রামে নাম বিহীন লাচ্ছা সেমাই উৎপাদন করে নামিদামি ব্র্যান্ডের নামে প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করে আসছে।

দিনাজপুর থেকে নিজস্ব বার্তা পরিবেশক চিত্তঘোষ জানান, দিনাজপুরের হিলিতে অবৈধভাবে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে সেমাই উৎপাদন ও পরিবেশনের দায়ে ৭টি সেমাই কারখানাকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত মঙ্গলবার বিকেলে হিলির স্টেশন ডাঙ্গাপাড়া ও চন্ডিপুর এলাকায় পুলিশ ও বিএসটিআইয়ের সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নূর-এ আলম ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে এই জরিমানা করেন। এ সময় কারখানাগুলোর উৎপাদিত সেমাইগুলো ধ্বংস করা হয়।

অপরাধবিষয়ক বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন, নকল সেমাইসহ অন্যান্য খাদ্য-সামগ্রী যারা নকল তৈরির কাজে জড়িত তাদের অপরাধ হত্যার চেয়ে জঘন্য। এদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিয়মিত মামলা করে বিচারের আওতায় আনা দরকার।

মহাখালী রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, নকল সেমাইসহ অন্যান্য খাদ্য-সামগ্রী তৈরি প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানো দরকার। সবাইকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে। নকল ভেজাল খাদ্যে উপকার তো দূরের কথা যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

পুলিশের একজন অপরাধবিষয়ক গবেষক জানান, অল্পতে সবাই বেশি লাভবান হতে চায়। গেল এক বছর ব্যবসা বাণিজ্য ছিল না। তাই কমদামে পণ্য তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মানুষ এসব পণ্য না কিনলে বাজারে আসবে না। আর দণ্ডবিধিতে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান আছে। মেট্রোপলিটন ও জেলা শহরগুলোতে গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে ক্লু উদ্ঘাটন করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

আরও খবর
চীনের উপহারের ৫ লাখ টিকা আসছে ১২ মে’র মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রংপুরে শপিংমলগুলোতে চরম অরাজকতা, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন ব্যাখ্যা দিল মন্ত্রণালয়
করোনা-পরবর্তী জটিলতায় ভুগছেন খালেদা জিয়া
তৃতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নিলেন মমতা
সরকারকে ফাঁকি দেয়া যায় মৃত্যুকে নয় : কাদের
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নেতাদের মুক্তির জন্য হেফাজতের সাক্ষাৎ
এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনা ৩৯৭টি প্রাণ ঝরলো ৪৫২
দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করবে আ’লীগ : তথ্যমন্ত্রী
মুনিয়া হত্যার বিচার দাবিতে কুমিল্লায় প্রতিবাদ সমাবেশ
দোকানপাট শপিংমল খোলা রাত ৮টা পর্যন্ত

বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১ , ২৪ বৈশাখ ১৪২৮ ২৪ রমজান ১৪৪২

ঈদ সামনে রেখে

সারাদেশে নিম্নমানের ভেজাল সেমাই বাজারে

বাকী বিল্লাহ

রমজানের ঈদ সামনে রেখে এখন সারাদেশে নিম্নমানের নকল ভেজাল সেমাইর ছড়াছড়ি। এসব সেমাই কিনে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ভেজাল সেমাই জব্দ ও প্রতিষ্ঠানের মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। খোদ রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ভেজাল সেমাই তৈরির কারখানায় জরিমানা করা হয়েছে। এরপরও থামছে না ভেজাল সেমাইসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি।

ইনটেনসিভ মেডিসিন কেয়ার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, রং ও কেমিক্যাল মিশ্রিত নোংরা পরিবেশে তৈরি ভেজাল সেমাই ও আইসক্রিম খেয়ে লিভাল ডেমেজ হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। আর পেটের পিড়া ও ডায়রিয়ায় তাৎক্ষণিক আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, প্রতিবছর রমজান মাসে অসাধু ব্যবসায়ীরা নোংরা পরিবেশে অনুমোদন ছাড়াই ভেজাল সেমাই তৈরি করে।

কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স না নিয়ে সেমাই তৈরি করায় দুইটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। কামরাঙ্গীরচরের হুজুর পাড়ায় বোম্বে সুইট নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামান ও র‌্যাব-১০ একটি অভিযানিক দল যাত্রাবাড়ী, ডেমরায় অনুমোদনহীন ভেজাল খাবার (মিষ্টি, আইস ক্রিম, বিস্কুটসহ অন্যান্য খাবার সামগ্রী উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রি করার অপরাধে ৭ প্রতিষ্ঠানকে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। আরও ৫ লাখ টাকা মূল্যের অনুমোদনহীন ভেজাল খাবার ধ্বংস করা হয়।

তারা বেশ কিছুদিন ধরে অনুমোদনহীন ভেজাল খাবার, উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রি করের আসছিল বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির সূর্য জানান, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে পৃথক তিনটি অভিযানে নকল আইসক্রিম ও নকল লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানাকে ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিএসটিআইয়ের অনুমোদনবিহীন এসব কারখানায় ভেজালপণ্য বাজারজাত করার অপরাধে উৎপাদন সামগ্রী ধ্বংস করে কারখানা তিনটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও র‌্যাব সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদ ও হাজারীবাগ থানা এলাকায় অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে খাদ্য তৈরি ও বিক্রি করার অপরাধে ৪টি বেকারিকে ৬ লাখ জরিমানা করেছে।

জানা যায়, উপজেলার পাটেশ^রী বাজারে ওসমান গণির পূত্র সাহাদুজ্জামান ‘মুক্তা আইসক্রিম’ নামে একটি কারখানা, ভূরুঙ্গামারী বাজারে ঈসমাইল হোসেন নামে এক ব্যক্তি ‘ভাই ভাই আইসক্রিম’ এবং উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নের খাটামারী গ্রামের ঝুমুর আলীর পুত্র কাদের আলী খাটামারী গ্রামে নাম বিহীন লাচ্ছা সেমাই উৎপাদন করে নামিদামি ব্র্যান্ডের নামে প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করে আসছে।

দিনাজপুর থেকে নিজস্ব বার্তা পরিবেশক চিত্তঘোষ জানান, দিনাজপুরের হিলিতে অবৈধভাবে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে সেমাই উৎপাদন ও পরিবেশনের দায়ে ৭টি সেমাই কারখানাকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত মঙ্গলবার বিকেলে হিলির স্টেশন ডাঙ্গাপাড়া ও চন্ডিপুর এলাকায় পুলিশ ও বিএসটিআইয়ের সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নূর-এ আলম ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে এই জরিমানা করেন। এ সময় কারখানাগুলোর উৎপাদিত সেমাইগুলো ধ্বংস করা হয়।

অপরাধবিষয়ক বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন, নকল সেমাইসহ অন্যান্য খাদ্য-সামগ্রী যারা নকল তৈরির কাজে জড়িত তাদের অপরাধ হত্যার চেয়ে জঘন্য। এদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিয়মিত মামলা করে বিচারের আওতায় আনা দরকার।

মহাখালী রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, নকল সেমাইসহ অন্যান্য খাদ্য-সামগ্রী তৈরি প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানো দরকার। সবাইকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে। নকল ভেজাল খাদ্যে উপকার তো দূরের কথা যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

পুলিশের একজন অপরাধবিষয়ক গবেষক জানান, অল্পতে সবাই বেশি লাভবান হতে চায়। গেল এক বছর ব্যবসা বাণিজ্য ছিল না। তাই কমদামে পণ্য তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মানুষ এসব পণ্য না কিনলে বাজারে আসবে না। আর দণ্ডবিধিতে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান আছে। মেট্রোপলিটন ও জেলা শহরগুলোতে গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে ক্লু উদ্ঘাটন করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।